পেরেরা-রাজার ঝড়ে পিএসএলের চ্যাম্পিয়ন রিশাদ-সাকিবদের লাহোর

ছবি: লাহোর কালান্দার্স

পরের ওভারে পেরেরার ব্যাটে খুররাম শাহজাদের বিপক্ষে ১৬ রান তোলে লাহোর। ফলে শিরোপা জিততে শেষ ১২ বলে ৩১ রান করতে হতো পেরেরা ও রাজাকে। ইনিংসের ১৯তম ওভারে বোলিংয়ে আসা আমিরকে চার মেরে শুরু করেন পেরেরা। শেষ দুই বলে মেরেছেন চার-ছক্কাও। বাঁহাতি পেসারের ওভার থেকে এসেছে ১৮ রান। শেষ ওভারে লাহোরের সমীকরণটা নেমে আসে তাই ১৩ রানে। অধিনায়ক সাউদ সাকিল বল তুলে দেন ফাহিম আশরাফের হাতে।
রিশাদের স্পিন আর আফ্রিদির পেসে ইসলামাবাদকে উড়িয়ে ফাইনালে লাহোর
২৪ মে ২৫
প্রথম তিন বলে সুবিধা করতে না পারলেও চতুর্থ বলে ছক্কা মেরে কাজটা সহজ করে আনেন রাজা। পরের বলে চার মেরে লাহোরের শিরোপা জয় নিশ্চিত করেন জিম্বাবুয়ের এই অলরাউন্ডার। তৃতীয়বারের মতো পিএসএলের শিরোপা উঁচিয়ে ধরলো লাহোর। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার দিনে একাদশে সুযোগ পাননি সাকিব আল হাসান ও মেহেদী হাসান মিরাজ। একাদশে থাকা রিশাদ হোসেন অবশ্য এক উইকেট নিতে ৪ ওভারে খরচ করেছেন ৪২ রান।
জয়ের জন্য ২০১ রান তাড়ায় লাহোরকে ভালো শুরু এনে দিয়েছিলেন ফখর জামান ও মুহাম্মদ নাইম। তাদের দুজনের জমে ওঠা জুটি অবশ্য গলার কাঁটা হয়ে উঠতে দেননি আবরার আহমেদ। উইকেটের আশায় ইনিংসের চতুর্থ ওভারেই আবরারকে বোলিংয়ে আনেন সাউদ সাকিল। অধিনায়কের আস্থার প্রতিদান দিয়ে নিজের দ্বিতীয় বলেই উইকেট এনে দিয়েছেন ডানহাতি এই স্পিনার। আবরারের বলে সুইপ করতে গিয়ে লেগ বিফোর হয়েছেন ফখর।
দারুণ ছন্দে থাকা বাঁহাতি ওপেনার ফিরেছেন ১১ রানে। দ্বিতীয় উইকেটে আব্দুল্লাহ শফিককে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে যেতে থাকেন নাইম। চার-ছক্কায় দ্রুত রানও বাড়িয়েছেন তিনি। লাহোরকে পথ দেখানো নাইমকে ফেরান ফাহিম আশরাফ। ডানহাতি পেসারের শর্ট ডেলিভারিতে পুল করতে চেয়েছিলেন নাইম। তবে টাইমিংয়ে গড়বড় হওয়ায় ডিপ স্কয়ার লেগে আভিস্কা ফার্নান্দোকে ক্যাচ দিয়েছেন ৬ ছক্কা ও এক চারে ২৭ বলে ৪৬ রান করা নাইম।

দলের রান একশ পেরিয়ে যাওয়ার পর আউট হয়েছেন শফিক। স্পিনার উসমান তারিকের বলে উড়িয়ে মারার চেষ্টায় খুররাম শাহজাদকে ক্যাচ দেন তিনি। শফিকের ব্যাট থেকে এসেছে ২৮ বলে ৪১ রান। তারা দুজন ফেরার পর জুটি গড়ার চেষ্টা করেন পেরেরা ও রাজাপাকশে। শুরুতে অবশ্য প্রত্যাশিত রান তুলতে পারছিলেন না তাদের দুজনের কেউই। চাপের মুখে সুবিধা করতে না পেরে মোহাম্মদ আমিরের বলে ১৪ রান করে বিদায় নিয়েছেন রাজাপাকশে।
সাকিব-মিরাজের সঙ্গে পিএসএল খেলতে ফের পাকিস্তানে রিশাদ
২২ মে ২৫
লঙ্কান ব্যাটার ফেরার পর ব্যাটিংয়ে এসেই দারুণ শুরু করেন রাজা। অন্যপ্রান্তে থাকা পেরেরাও একের পর এক চার ছক্কায় লাহোরের সমীকরণ সহজ করে নিয়ে এসেছেন। দারুণ ব্যাটিংয়ে হাফ সেঞ্চুরিও তুলে নেন পেরেরা। এক বল বাকি থাকতেই ৬ উইকেটের জয় নিশ্চিত হওয়া ম্যাচে ৩১ বলে ৬২ রানের ইনিংস খেলে অপরাজিত ছিলেন পেরেরা। ৭ বলে ২২ রানের ক্যামিও ইনিংস খেলেন রাজা।
এর আগে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুটা ভালো করতে পারেনি কোয়েটা। ইনিংসের তৃতীয় ওভারেই সাউদ সাকিলের উইকেট হারায় তারা। শাহীন আফ্রিদির লেগ স্টাম্পের বাইরের বলে ফ্লিক করতে গিয়ে এজ হয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়েছেন কোয়েটার অধিনায়ক। সাকিলকে ফিরতে হয় মাত্র ৪ রানে। আরেক ওপেনার ফিন অ্যালেনও সুবিধা করে উঠতে পারেননি। সালমান মির্জার দারুণ এক ডেলিভারিতে টপ এজ হয়ে হারিস রউফের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন শর্ট থার্ডম্যানে।
১২ রান করা অ্যালেন ফেরার পর জুটি গড়ে তোলার চেষ্টা করেন রাইলি রুশো ও হাসান নাওয়াজ। প্রাথমিক ধাক্কা সামাল দিলেও বড় জুটি গড়তে পারেননি তারা দুজন। পাওয়ার প্লে শেষে বোলিংয়ে এসেই তাদের জুটি ভাঙেন রাজা। জিম্বাবুইয়ান স্পিনারের অফ স্টাম্পের বাইরের বলে ড্রাইভ করতে গিয়ে শাহীন আফ্রিদির হাতে ক্যাচ দিয়েছেন ১১ বলে ২২ রান করা রুশো। তবে দারুণ ব্যাটিংয়ে ২১ বলে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন হাসান নাওয়াজ। ইনিংসের অষ্টম ওভারে প্রথমবারের মতো বোলিংয়ে আনা হয় রিশাদকে।
যদিও শুরুটা ভালো হয়নি তাঁর। হাসান নাওয়াজের দুই চারে সেই ওভারে দিয়েছেন ১০ রান। পরের ওভারে আরও খরুচে ছিলেন বাংলাদেশের এই লেগ স্পিনার। দুই চার ও এক ছক্কায় ১৬ রান দিয়েছেন। তৃতীয় ওভারের শুরুটাও ভালো হয়নি রিশাদের। প্রথম চার বলেই দুই চারে দেন ১০ রান। পঞ্চম বলে অবশ্য দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ান ডানহাতি এই লেগ স্পিনার। রিশাদকে ছক্কা মারার চেষ্টায় ৩০ গজের ভেতর শাহীন আফ্রিদিকে ক্যাচ দেন আভিস্কা ফার্নান্দো।
শ্রীলঙ্কান ব্যাটারকে ফিরিয়ে ওই ওভারে রিশাদ দিয়েছেন ১১ রান। নিজের শেষ ওভারে অবশ্য মিতব্যয়ী ছিলেন রিশাদ। সেই ওভারে কোনো বাউন্ডারি হজম না করে ৫ রান দিয়েছেন। সবমিলিয়ে পিএসএলের ফাইনালে ৪ ওভারে ৪২ রান খরচা করে একটি উইকেট নিয়েছেন ডানহাতি এই লেগ স্পিনার। হাফ সেঞ্চুরির পরও নিজের সেরা ছন্দেই ব্যাটিং করতে থাকেন হাসান নাওয়াজ। তাকে দারুণভাবে সঙ্গ দেয়ার পাশাপাশি আক্রমণাত্বক ব্যাটিং শুরু করেন দীনেশ চান্দিমাল।
যদিও তাকে ইনিংস বড় করতে দেননি শাহীন আফ্রিদি। বাঁহাতি পেসারের ফুলটস ডেলিভারিতে ফ্লিক করতে গিয়ে আজাবের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন ১৩ বলে ২২ রান করা চান্দিমাল। একই ওভারে হাসান নাওয়াজকেও ফেরান লাহোরের অধিনায়ক। শাহীন আফ্রিদির গুড লেংথ ডেলিভারিতে লং অনের উপর দিয়ে খেলার চেষ্টায় রাজার হাতে ক্যাচ দিয়েছেন ৪৩ বলে ৭৬ রান করা এই ব্যাটার। শেষের দিকে ফাহিমের ৮ বলে ২৮ রানের ক্যামিওতে ২০১ রানের পুঁজি পায় কোয়েটা।