১২০ রানের লক্ষ্যে ভারতের কাছে ৬ রানে হারল পাকিস্তান

ছবি:

|| ডেস্ক রিপোর্ট ||
পাকিস্তান ক্রিকেট অ্যাট ইটস ভেরি বেস্ট... ওয়ান মিনিট ডাউন দ্য নেক্সট মিনিট আপ। ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ধারাভাষ্য কক্ষ থেকে নাসের হুসাইনের করা এই উক্তিটিকে আবারও ঠিক প্রমাণ করল পাকিস্তান। চলমান টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সুপার ওভারে হার, দেয়ালে পিঠ ঠেকে যায় বাবর আজমের দলের। সুপার এইটের পথ খোলা রাখতে তাই ভারতের বিপক্ষে জয়ের বিকল্প ছিল না দলটির সামনে। আর গুরুত্বপূর্ণ এই ম্যাচে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের কাছে খুব কাছে গিয়ে হারল পাকিস্তান। ফলে চলতি আসর থেকে ছিটকে যাওয়া অনেকটাই নিশ্চিত এখন তাদের।
আইসিসি টুর্নামেন্টে ভারত-পাকিস্তানের লড়াই বরাবরই শেষ হাসি হাসে ভারত। শুধু মাত্র ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতকে হারাতে সক্ষম হয়েছিল পাকিস্তান। ৩ বছর পর এবার আবারও আইসিসি টুর্নামেন্টে ভারতের বিপক্ষে জয় তুলে নেয়ার খুব কাছে ছিল পাকিস্তান। লো-স্কোরিং ম্যাচে ভারতের ছুঁড়ে দেয়া ১২০ রানের লক্ষ্যে ১১৩ রান তুলতে সক্ষম হয় বাবরবাহিনী। ৬ রানের জয়ে সুপার এইটের আরও কাছে ভারত।
বৃষ্টির বাঁধায় ভারত-পাকিস্তানের ম্যাচটি নির্ধারিত সময়ে শুরু হয়নি। তবে নিউ ইয়র্কের উইকেটের মন্থর ভাবনা থেকেই টস জিতে বোলিং নিতে দেরি করেননি বাবর। বৃষ্টি বাঁধায় ৫০ মিনিট দেরিতে শুরু হওয়া ম্যাচে এক ওভার গড়াতেই আবার হানা দেয় বৃষ্টি। ১৫ মিনিটের বিরতির পর আবারও শুরু হয় খেলা। প্রথম ওভারে শাহীন আফ্রিদিকে ফ্লিকে ছক্কা হাঁকিয়ে ওভারে ৮ রান তুলে নেন রোহিত শর্মা। তবে বৃষ্টি থামার পর ব্যাটিংয়ে নেমে প্রথম বলেই কাভার ড্রাইভে দারুণ এক চার মারা কোহলি আউট হন তৃতীয় বলেই।
নাসিম শাহর বলে কাভার পয়েন্টে উসমান খানের হাতে ক্যাচ দেন তিনি। ৪ রানে কোহলি ফেরার পর ১৩ রান করে বিদায় নেন অধিনায়ক রোহিতও। আফ্রিদির বলে ডিপ স্কয়ার লেগে হারিস রউফের হাতে ক্যাচ দিয়ে বসেন তিনি। ১৯ রানের মধ্যেই দুই ওপেনারকে হারালেও পাওয়ার প্লেতে খারাপ করেনি ভারত। আর কোনো উইকেট না হারিয়ে দলটি প্রথম ৬ ওভারে তোলে ৫০ রান। অক্ষর প্যাটেল ও ঋষভ পান্ত, দুজনই অপরাজিত থাকেন ১৫ রান করে।

প্রথম ৬ ওভারে পাকিস্তানি ফিল্ডাররা অবশ্য দুটি কঠিন ক্যাচ নিতে পারেননি। তবে অষ্টম ওভারে নাসিমকে সামনে এগিয়ে মারতে গিয়ে বোল্ড হন অক্ষর। ২০ রানে ফেরেন তিনি। এরপর হাল ধরার চেষ্টা করেন সুর্যকুমার ও পান্ত। তবে ১২তম ওভারের প্রথম বলেই আউট হন সূর্যকুমার। হারিস রউফকে মিড অফ দিয়ে উড়িয়ে মারতে গিয়ে মোহাম্মদ আমিরের হাতে ক্যাচ তোলেন সূর্য। এরপরই শুরু হয় ভারতের ব্যাটারদের আসা-যাওয়া।
১৪তম ওভারের দ্বিতীয় বলে নাসিম শাহর স্লোয়ারে বিভ্রান্ত হয়ে বোলারের হাতেই ফিরতি ক্যাচ তোলেন শিবম দুবে। দ্রুতই ২ উইকেট হারিয়ে বিপাকে পড়ে ভারত। এরপর ১৫তম ওভারের প্রথম দুই বলে মোহাম্মদ আমির ফেরান ৪২ রান করা পন্ত ও রবীন্দ্র জাদেজাকে। উইকেটের একপ্রান্তে সতীর্থদের আসা-যাওয়া দেখতে থাকা হার্দিক পান্ডিয়াও দলের জন্য বড় কিছু করতে পারেননি।
ফলে ২৪ রানে শেষ ৬ উইকেট হারিয়ে ১১৯ রানে অলআউট হয় ভারত। দলটির হয়ে সর্বোচ্চ ৪২ রান করেন পন্ত। পাকিস্তানের চার পেসার মিলেই নেন ৯ উইকেট। যেখানে নাসিম ও হারিস উইকেট নেন ৩টি করে। মোহাম্মদ আমির ২টি ও শাহিন আফ্রিদি নিয়েছেন ১টি উইকেট।
১২০ রানের ছোট লক্ষ্যে ব্যাট করতে নামলেও শুরু থেকেই সাবধানী ছিলেন বাবর আজম ও মোহাম্মদ রিজওয়ান। পাওয়ার প্লে'তে দুজন দেখে শুনে খেলতে থাকলেও জাসপ্রিত বুমরাহ'র বিপক্ষে হার মানেন বাবর। স্লিপে দারুণ ক্যাচ নিয়ে বাবরকে প্যাভিলিয়নের পথ দেখান সূর্য।
১০ বলে ১৩ রান করে বাবর বিদায় নিলে তিনে নামা উসমান খানকে নিয়ে রান যোগ করতে থাকেন রিজওয়ান। অনেকটা ধীরগতিতেই এগোতে থাকে পাকিস্তান। তবে বোলিংয়ে এসে নিজের প্রথম বলেই উসমানকে লেগ বিফরের ফাঁদে ফেলেন অক্ষর। এরপর ফখর জামান নেমে শুরুটা আক্রমণাত্মক করলেও ৮ বলে ১৩ রান করে হার্দিকের শিকার হন। এরপর রিজওয়ানকে সঙ্গ দিতে আসেন ইমাদ। কিন্তু ১৫তম ওভারের প্রথম বলে ৪৪ বলে ৩১ রান করা রিজওয়ানকে বোল্ড করেন বুমরাহ।
এরপর হার্দিকের বাউন্সারে উইকেট বিলিয়ে দেন শাদাব খানও। ৮৮ রানে ৫ উইকেট হারানো পাকিস্তানের সে সময় প্রয়োজন ২১ বলে ৩২ রান। এরপর ইফতিখার আহমেদকে সঙ্গে নিয়ে পাকিস্তানকে ১০০'র ঘরে নিয়ে যান ইমাদ। শেষ ১১ বলে পাকিস্তানের জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ২০ রান।
১৯তম ওভারে বুমরাহর বিপক্ষে রানই বের করতে পারেনি পাকিস্তানের ব্যাটাররা। উল্টো উইকেট ছুঁড়ে দিয়ে ফেরেন ইফতিখার আহমেদ। এরপর শেষ ওভারের প্রথম বলে আর্শদীপ ইমাদকে ফিরিয়ে দিলে আর ম্যাচে ফিরতে পারেনি পাকিস্তান। নাসিম শাহ চেষ্টা করলেও ৬ রানে হারে দলটি। ১১৩ রানে থামে পাকিস্তানের ইনিংস।