বিধ্বংসী চেজে পিষ্ট ইংল্যান্ড

ছবি: গেটি ইমেজ

|| ডেস্ক রিপোর্ট ||
উইন্ডিজ স্পিনার রস্টন চেজের বিধ্বংসী বোলিংয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ছিন্নভিন্ন হয়েছে ইংল্যান্ডের ব্যাটিং লাইন আপ। ৬২৮ রানের লক্ষ্যে এক দিনেই সব উইকেট হারিয়েছে সফরকারী দলটি, গুঁটিয়ে গিয়েছে ২৪৬ রানে। ৩৮১ রানের বিশাল জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছে ক্যারিবিয়ানরা, যা তাদের টেস্ট ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি রানে জেতা তৃতীয় সর্বোচ্চ এবং ঘরের মাঠে সবচেয়ে বড় জয়।
ক্যারিয়ার সেরা বোলিং করেছেন চেজ, ৬০ রানে নিয়েছেন আটটি উইকেট। এটা শুধু তাঁর ব্যক্তিগত সেরা বোলিং ফিগার না, ১৯৭১ সালের পর উইন্ডিজ কোন স্পিনারের সেরা বোলিং ইনিংস। প্রথম ইনিংসে কিমার রোচের ভয়ানক বোলিংয়ে ৭৭ রানেই গুঁটিয়ে যাওয়া ইংল্যান্ডের কাছে দ্বিতীয় ইনিংসে চেজের বোলিংও কম আতঙ্কের ছিল না।
তবে শুরুটা ভালোই করেছিল সফরকারীরা। দুই ওপেনার কিটন জেনিংস এবং ররি বার্নস দুইজনে পঞ্চাশ ছাড়ানো জুটি গড়েছিলেন। তৃতীয় দিন নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে ৫৬ রানে কোন উইকেট না হারানো উইন্ডিজরা চতুর্থ দিনের শুরুতেই ১৪ রান করা জেনিংসকে হারিয়েছিল।
কিন্তু এক প্রান্ত আগলে রেখে নিজের ব্যক্তিগত অর্ধশতক তুলে নিয়েছিলেন বার্নস। জনি বেয়ারস্টোর সাথে ৪৯ রানের জুটি গড়ার পর ৮৪ রানে আউট হয়েছেন বার্নস। তাঁকে ফিরিয়েই নিজের উইকেটের খাতা খুলেছিলেন চেজ। ৩০ রান করা বেয়ারস্টো আউট হয়েছেন শ্যানন গ্যাব্রিয়েলের বলে।
এরপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি চেজকে। একে একে তুলে নিয়েছেন ইংল্যান্ডের অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানদের উইকেট। মিডেল অর্ডারে জুটি গড়ার চেষ্টায় ছিলেন ইংলিশ অধিনায়ক জো রুট, অলরাউন্ডার বেন স্টোকস, উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান জস বাটলাররা। কিন্তু নিজেদের ইনিংস গুলো বেশি লম্বা করতে পারেননি তারা।
চেজের স্পিন জাদুতে ফিরেছেন বাকি সব ব্যাটসম্যানরা। রুট দলের খাতায় যোগ করেছিলেন ২২ রান, স্টোকস ৩৪ এবং বাটলারের ব্যাট থেকে এসেছে ২৬ রান। শেষের দিকেও উইন্ডিজ অফ স্পিনার চেজের সামনে দাঁড়াতে পারেনি ইংল্যান্ডের কোন ব্যাটসম্যান। স্যাম কুরানের ১৭ রানের ইনিংস ছাড়া আর কেউ দুই অংকের ঘরে যেতে পারেননি।

অবশ্য ইংল্যান্ড হেরে গিয়েছিল প্রথম ইনিংসেই। টস জিতে ব্যাটিং করতে নেমে শাই হোপ, রস্টন চেজ এবং শিমরন হেটমায়ারের অর্ধশতকে ২৮৯ রান সংগ্রহ করেছিল স্বাগতিক দল। তাদের এই রানের ধারে কাছেও যেতে পারেনি ইংল্যান্ড।
১৭ রানে পাঁচ উইকেট নেয়া রোচের বিধ্বংসী বোলিংয়ে ৭৭ রানে অলআউট হওয়ার পর ২১২ রানে পিছিয়ে পড়েছিলো তাঁরা। প্রথম ইনিংসে ইংল্যান্ডের হয়ে পাঁচ উইকেট নিয়েছিলেন ???েসার জেমস অ্যান্ডারসন এবং বেন স্টোকস নিয়েছেন চারটি।
এরপর নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে আবার ব্যাটিংয়ে নেমে ইংলিশদের সামনে আকাশচুম্বী লক্ষ্য ছুঁড়ে দিয়েছিল স্বাগতিকরা। কিন্তু ইনিংসের শুরুতে বড় ধরণের হোঁচট খেয়েছিল। ৬১ রানেই পাঁচ উইকেট হারিয়েছিল তারা।
এরপর ১২০ রানে আরেকটি উইকেট হারায় স্বাগতিক দলটি। কিছুটা ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখেছিল ইংল্যান্ড। কিন্তু তাদের স্বপ্ন ভেঙ্গে দেন উইন্ডিজ দুই ব্যাটসম্যান জেসন হোল্ডার এবং শেন ডওরিচ। সপ্তম উইকেট জুটিতে ২৯৫ রান যোগ করেন তারা।
ডওরিচ টেস্ট মেজাজে ব্যাটিং করে গেলেও হোল্ডার ছিলেন পুরোপুরি ওয়ানডে মেজাজে। ২২৯ বলে ২০২ রানের ইনিংস খেলেছিলেন তিনি, যা তাঁর টেস্ট ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ রানের ইনিংস। তাঁর সাথে দারুণ সঙ্গ দেয়া ডওরিচ খেলেছেন ২২৪ বলে ১১৬ রানের ইনিংস।
তৃতীয় দিনের শেষ সেশনে এসে ৪৫১ রানে ইনিংস ঘোষণা করে উইন্ডিজ দল। দুই ব্যাটসম্যানই ছিলেন অপরাজিত। এই ইনিংসে বল হাতে ভালো শুরু করেছিলেন মইন আলি। তিন উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। ক্যারিয়ারের প্রথম দ্বিশতক হাঁকিয়ে ম্যাচ সেরা হয়েছেন উইন্ডিজ অধিনায়ক জেসন হোল্ডার।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
উইন্ডিজ ১ম ইনিংসঃ ২৮৯ অলআউট (১০১.৩ ওভার); (হেটমায়ার ৮১, হোপ ৫৭; অ্যান্ডারসন ৫/৪৬)
ইংল্যান্ড ১ম ইনিংসঃ ৭৭ অলআউট (৩০.২ ওভার); (জেনিংস ১৭, কুরান ১৪; রোচ ৫/১৭)
উইন্ডিজ ২য় ইনিংসঃ ৪১৫/৬ ডিঃ (১০৩.১); (হোল্ডার ২০২*, ডওরিচ ১১৬*; মইন ৩/৭৮)
ইংল্যান্ড ২য় ইনিংঃ ২৪৬ অলআউট (৮০.৪ ওভার); (বার্নস ৮৪, স্টোকস ৩৪; চেজ ৮/৬০)