দাসুন শানাকার ওমন ঝড়ো হাফ সেঞ্চুরির পরও মুস্তাফিজুর রহমানদের বোলিংয়ে শ্রীলঙ্কাকে ১৬৮ রানে আটকে দেয় বাংলাদেশ। এমন লক্ষ্য তাড়ায় ভালো শুরুর বিকল্প ছিল না টাইগারদের হাতে। অথচ তানজিদ হাসান তামিম আবারও ফিরলেন ডাক মেরে। তবে সাইফ হাসান ও লিটন মিলে বাংলাদেশকে পথ দেখালেন। পাশাপাশি জয়ের ভিতটাও গড়ে দিলেন। সাইফের পর হাফ সেঞ্চুরি পেলেন তাওহীদ হৃদয়ও। তাদের দুজনের পঞ্চাশ ছোঁয়া ইনিংসেই সুপার ফোরে শ্রীলঙ্কাকে ৪ উইকেটে হারাল বাংলাদেশ। লিটনদের পরের দুই ম্যাচ ভারত ও পাকিস্তানের বিপক্ষে ২৪ ও ২৫ সেপ্টেম্বর।
দুবাই ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামে জয়ের জন্য ১৬৯ রানের লক্ষ্য তাড়ায় শুরুটা ভালো হয়নি বাংলাদেশের। ইনিংসের প্রথম ওভারেই তানজিদ হাসান তামিমের উইকেট হারায় তারা। নুয়ান থুসারার স্লোয়ার লেংথের ডেলিভারিতে ডাউন দ্য উইকেটে এসে খেলতে চেয়েছিলেন বাঁহাতি এই ওপেনার। তবে স্লোয়ার বুঝতে না পারায় বলের লাইন মিস করে বোল্ড হয়েছেন রানের খাতা খুলতে না পারা তানজিদ। উইকেট হারালেও বাংলাদেশকে পথ হারাতে দেননি লিটন ও সাইফ।
একেবারে শুরু থেকেই আক্রমণাত্বক ব্যাটিং করতে থাকেন তারা দুজন। বিশেষ করে চার-ছক্কায় দ্রুত রান বাড়িয়েছেন সাইফ। আরেক ব্যাটার লিটনও পরবর্তীতে দ্রুত রান তুলেছেন। তাদের দুজনের ব্যাটে পাওয়ার প্লেতে ৫৯ রান তোলে বাংলাদেশ। যদিও পাওয়ার প্লে শেষ হতেই উইকেট হারায় তারা। ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গার ঝুলিয়ে দেয়া ডেলিভারিতে সুইপ করতে গিয়ে ডিপ ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগে পাথুম নিশাঙ্কাকে ক্যাচ দিয়েছেন লিটন।
১৬ বলে ২৩ রান করে আউট হয়েছেন বাংলাদেশের অধিনায়ক। লিটন ফিরলেও সহজাত ব্যাটিংয়ে হাফ সেঞ্চুরি পেয়েছেন সাইফ। ওয়েলালাগের বলে অন সাইডে ঠেলে দিয়ে ৩৬ বলে পঞ্চাশ ছুঁয়েছেন তিনি। পরবর্তীতে হৃদয়কে নিয়ে দেখেশুনে খেলেছেন সাইফ। পাশাপাশি প্রায় ওভারেই একটি করে ছক্কা কিংবা চার মারার চেষ্টা করেছেন। দুনিথ ওয়েলালাগেকে ছক্কা মেরে হাতখুলে খেলার চেষ্টা করেছেন হৃদয়।
যদিও একটু পর আউট হয়েছেন সাইফ। তাদের জমে ওঠা জুটি ভাঙেন হাসারাঙ্গা। ডানহাতি লেগ স্পিনারের ঝুলিয়ে দেয়া ডেলিভারিতে ছক্কা মারতে গিয়ে টপ এজ হয়ে শর্ট থার্ডম্যানে ক্যাচ দিয়েছেন সাইফ। ৪ ছক্কা ও ২ চারে ৪৫ বলে ৬১ রানের ইনিংস খেলে ফিরেছেন তিনি। একটু পর ব্যাট হাতে ঝড় তুলেন হৃদয়। লম্বা সময় ধরে ব্যাট হাতে ধুঁকলেও লঙ্কানদের বিপক্ষে ছন্দ খুঁজে পেয়েছেন তিনি। কামিন্দু মেন্ডিসের এক ওভারে দুইটি চারের সঙ্গে একটি ছক্কাও মেরেছেন তিনি।
আক্রমণাত্বক ব্যাটিংয়ে ৩১ বলে হাফ সেঞ্চুরি পেয়েছেন ডানহাতি এই ব্যাটার। ১৭ ইনিংস পর আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে পঞ্চাশ ছোঁয়া ইনিংস খেললেন তিনি। সবশেষ ২০২৪ সালের অক্টোবরে ভারতের বিপক্ষে হাফ সেঞ্চুরি করেছিলেন হৃদয়। হাফ সেঞ্চুরির পরও রান তোলার গতি কমেনি। বরং দ্রুত ম্যাচ শেষ করতে হৃদয়ের সঙ্গে দ্রুত রান তোলার চেষ্টা করেছেন শামীম হোসেনও। বাংলাদেশ যখন জয়ের খুব কাছে তখন ৫৮ রানের ইনিংস খেলে ফিরেছেন হৃদয়। পরবর্তীতে শামীম ও নাসুম আহমেদ মিলে বাংলাদেশের জয় নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে উড়ন্ত সূচনা পায় শ্রীলঙ্কা। তারা ওপেনিং জুটিতেই তোলে ৪৪ রান। তাসকিন আহমেদ ওপেনিং জুটি ভেঙেছেন ১৫ বলে ২২ রান করা পাথুম নিশাঙ্কাকে ফিরিয়ে। পাওয়ার প্লেতে বিপজ্জনক হয়ে ওঠার আগেই মেহেদী আউট করেন কুশল মেন্ডিসকে (৩৪)। পরের ওভারে কামিল মিশারাকেও আউট করেন তিনি। এরপর শ্রীলঙ্কার রান কিছুটা ধীর হয়ে যায়। দারুণ শুরুর পরও ৬৫ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলে তারা।
একপ্রান্ত আগলে রেখে শ্রীলঙ্কার রান বাড়িয়েছেন শানাকা। শেষ দিকে রান বন্যা বইয়ে দিয়ে শ্রীলঙ্কার সংগ্রহ ১৮০ পার করার ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন শানাকা। যদিও মুস্তাফিজ ডেথ ওভারে দারুণ বোলিং করে শ্রীলঙ্কাকে ১৭০ এর আগেই বেধে রাখেন। এর মধ্যে ইনিংসের ১৯তম ওভারে নিজের শেষ ওভার করতে এসে মাত্র ৫ রান খরচ করেন মুস্তাফিজ। এক রান আউটসহ ৩ উইকেট তুলে নেয় বাংলাদেশ।
৪ ওভারে ২০ রান দিয়ে ৩ উইকেট শিকার করেন বাঁহাতি এই পেসার। শানাকা একবার জীবন পেয়ে ৩৭ বলে ৩ চার ও ৬ ছক্কায় খেলেন অপরাজিত ৬ ৪ রানের ইনিংস। আরও একবার করে জীবন পেয়েছেন কুশাল পেরেরা ও চারিথ আসালাঙ্কাও। শেষ ওভারে তাসকিন মাত্র ১০ রান দিলে ২০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ১৬৮ রানের পুঁজি পায় শ্রীলঙ্কা।