বিশেষ সাক্ষাৎকার

'রাস্তায় খেলা শিশুদের যদি কাজে লাগাতে পারতাম!'

জুবাইর

জুবাইর
প্রকাশের তারিখ: 23:59 শুক্রবার, 23 মার্চ, 2018

শাহিদুল আলম রতন, বাংলাদেশ ক্রিকেটের স্বাদ নিয়েছেন আশি -নব্বই এর দশকে। তবে বাংলার এই সন্তান পরিচিতি পায় একজন কোচ হিসেবে। ব্রিটিশ মুল্লুকে বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করছেন একজন পুরস্কারপ্রাপ্ত (ইসিবি ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড ২০১৬) কোচ হিসেবে। ২০০৮ সালে ইংল্যান্ডের ক্যাপিটাল কিড্স ক্রিকেট এর ডেভোলাপমেন্ট হেড কোচ হিসেবে যোগদান করেন তিনি। তখন থেকেই ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ডের অধীনে বিভিন্ন প্রজেক্টে কাজ করে যাচ্ছেন। বর্তমানে তিনি এই প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহীর দায়িত্বে আছেন। এর আগে তিনি মালয়েশিয়া অনূর্ধ্ব ঊনিশ দলের কোচ হিসেবে ২০০৮ বিশ্বকাপে দায়িত্ব পালন করেছেন সুনামের সাথে। দায়িত্বে ছিলেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের কোচ হিসেবেও। সবার প্রিয় রতন স্যার ছিলেন ২০০৪ সালে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব ঊনিশ দলের সহকারী কোচ পদে। 

তৃণমূল পর্যায়ে ক্রিকেটে বিশেষজ্ঞ রতন স্যার বাংলাদেশ ক্রিকেটের কাঠামোর জন্মলগ্ন থেকেই সাথে ছিলেন। বিকেএসপির মাঠে দেখেছেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ তারকাদের বেড়ে উঠতে।শুধু কোচ হিসেবেই নয়, একজন অ্যাডমিন্সট্রেটর হিসেবে দেশে বিদেশে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন শহিদুল আলম রতন স্যার। সম্প্রতি ক্রিকফ্রেঞ্জির সাথে আলাপকালে বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নিয়ে কথা বলেছেন তিনি।

পাঠকদের জন্য সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হল...

*কোচিং দিয়ে শুরু করি। আপনি বিসিবির হয়ে কাজ করেছেন বেশ কিছু বছর। বাংলাদেশে কোচিংয়ের অভিজ্ঞতাকে আপনার বর্তমান অবস্থান থেকে কিভাবে দেখেন?

-বিসিবির গেইম ডেভলাপমেন্ট শুরু হয়েছিল ২০০০ সালের শুরুর দিকে। তখন শ্রীলঙ্কা থেকে তিন-চারজন কোচ এনেছিল বিসিবি। শ্রীলঙ্কার কোচরা আমাদের অনেক সাহায্য করেছিল। তখন থেকেই বয়স ভিত্তিক ক্রিকেটের শুরু। এভাবেই সবকিছুর শুরু। ভালোই চলছিল তখনকার সিস্টেম। আমাদের সাথে যারা কাজ করেছে, সবাই উপভোগ করেছে। জালাল চৌধুরী,সরোয়ার ইমরান, ওসমান খান, দিপু রায় প্রমুখ তখন আমাদের সিনিয়র ছিলেন। উনাদের পর পরেই আমি জইন করেছিলাম। তখন ভালো সুযোগ সুবিধা না থাকার কারনে ট্রেনিং প্রোগ্রাম গুলো বিকেএসপিতে হত। আমি ২০০৩ সাল থেকে বেশি হাই-পারফন্যাসে ইনভল্ভ ছিলাম। ২০০৪ সালে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে দলের সাথে ছিলাম, অনেক কিছু শিখেছি এর মধ্যে। 

*আপনার সময় থেকে এখনকার সময়ের পার্থক্যকে কিভাবে বিচার করবেন। স্ট্রাকচার থেকে শুরু করে কোচ, ক্রিকেটার ও অ্যাডমিন্সট্রেশনে বেশ পরিবর্তন এসেছে। কিছু ইতিবাচক আবার কিছু নেতিবাচকও আছে। বিষয় গুলোকে দূর থেকে কিভাবে বিচার করেন আপনি?

-এখন কিভাবে চলছে আমি খুব ভালো জানি না। তবে আমাদের ট্রেনিং সিস্টেম অনেকেই পছন্দ করত না। অনেকেই কঠোর পরিশ্রম করতে চাইত না। জাতীয় দলে খেলা কয়েকজন ক্রিকেটাররাও আমাদের ট্রেনিং সিস্টেম পছন্দ করেনি। আমরা নিয়ম কানুনের অনেক কড়াকড়ি দিয়েছিলাম। যার জন্য আমাদের অনেক বিদেশী কোচদের সাথেই জাতীয় দলে খেলা ক্রিকেটারদের অনেক সম্পর্কের অবণতি ঘটে।তবে কিছু ক্রিকেটার উঠে এসেছিল ওই সময়, যারা সমসময় নিয়ম শৃঙ্খলা মেনে চলার চেষ্টা করত। আমি অনেক দিন দেশের বাইরে, স্পষ্ট করে বলতে পারছি না কিন্তু মুশফিক, তামিম, সাকিব, মাশরাফি... ওই সময় মাহমুদুল্লাহও এসেছিল। এরাই গত ১০-১৫ বছর ধরে বাংলাদেশ দলে খেলছে। আর বাকীরা বেশিরভাগই আসা যাওয়ার মধ্যে আছে। এর কারন হচ্ছে  নিয়ম শৃঙ্খলার এবং সঠিক ডেভোলাপমেন্ট প্রোগ্রামের অভাব। আমাদের পর যারা গেইম ডেভোলাপমেন্ট এ যারা কাজ করেছে তারা হয়তো সঠিক দিক নির্দেশনা পাচ্ছে না।এখানে বলে রাখা ভাল যে, ২০০৩-২০০৬ পর্যন্ত যে হাই-পারফরমেন্স প্রোগ্রাম চলেছে এর পরে আমার জানা মতে ঐ ধরনের কোন প্রোগ্রাম হয়নি। ক্রিকেট সম্পূর্ণ নিয়ম শৃঙ্খলার খেলা। এর মূল্য যদি ক্রিকেটাররা একদম তরুন বয়স থেকে না বুঝে তাহলে ওরা বড় হয়ে বেশি দূর যেতে পারবে না।

*কোন জায়গায় ক্রিকেট কর্তাদের কাজ করা উচিত বলে আপনি মনে করেন?

-বাংলাদেশের মিডিয়া, বিসিবির কর্তারা সবাই ক্রিকেটের অনেক উন্নয়নের কথা বলা, কাজ করে। কিন্তু কেউই ক্রিকেটের বেসিক জিনিস নিয়ে কথা বলে না। জেলায় জেলায় জুনিয়রদের জন্য ক্রিকেট খেলার মাঠ করে অবকাঠামো গড়ে তোলায় কাজটা করা দরকার। আমাদের টাকার অভাব নেই কিন্তু আমরা এইসব করছি না। তৃণমূল ক্রিকেটে অনেক কাজ করার বাকী আছে আমাদের। আমাদের কোচদেরও অনেক কিছুর শেখার আছে। শেখার কোন শেষ নেই। প্লেয়ারদের ব্যক্তিত্ব বিচার করে ওদের সাথে যোগাযোগ বৃদ্ধি করা, এইসব সময়ের সাথে সাথে বদলে যায়। কোচদেরও সময়ের চাহিদার সাথে মানিয়ে নিতে হবে। এখানে কোচদের একটা বড় ভূমিকা রাখতে হয়। আমিও একজন কোচ, সেদিন থেকেই বলছি... আমার কাছে মনে হয় আমরা একটু বেশিই কোচিং করাই। শুরু থেকেই অতিরিক্ত কোচিং আবার ভালো না। 

*ক্রিকেটের ক্ষেত্রে ফলাফলের চেয়ে প্রক্রিয়া বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আপনার কি মনে হয়, আমাদের ক্রিকেটের মৌলিক বিষয় গুলো কি একটা সঠিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে?

- আমাদের তৃণমূল পর্যায়ের ক্রিকেটটা এখনও ঠিক করতে পারি নি। আমরা অনেক চেষ্টা করেছিলাম সমস্যা দূর করার জন্য। 'এ' দলের প্রোগ্রাম থেকে শুরু করে জুনিয়র দল গুলো হাই পারফর্মেন্সের নিয়ন্ত্রনে ছিল। আমরা ট্রেনিংয়ের সাথে আলাদা ক্লাসের আয়োজন করতাম ক্ষুদে ক্রিকেটারদের জন্য। আমি আর সরোয়ার ভাই ফরজের নামাজ পড়ে বিকেএসপিতে যেতাম। সকাল থেকে শুরু হওয়া ট্রেনিং চলত বিকেল চারটা পর্যন্ত। আমরা ট্রেনিংয়ের মধ্যেই ম্যাচের আবহ তৈরি করতাম। এভাবেই সব জায়গায় অনুশীলন করা হয়ে থাকে। 

আমরা আমাদের জুনিয়র ক্রিকেটারদের তো এখন ম্যাচই খেলতে দিতে পারছি না। এখানে দেখা যায় যে আমরা ৭০-৮০ ভাগ ট্রেনিং আর বাকীটা ম্যাচ প্র্যাকটিস। অথচ জুনিয়র লেভেলে ম্যাচ প্র্যাকটিস বেশি হওয়ার কথা। এভাবেই আপনি ক্রিকেট শিখবেন। ক্রিকেট মানসিক খেলা। কোন একটা ছেলের ভাল ব্যাটিং দেখেই খেলতে নামিয়ে দিলে সফল হয় না। কত ব্যাটসম্যান আছে টেকনিকের দিক থেকে খুবই ভালো কিন্তু সফল ক্যারিয়ার গড়তে পারে না। ব্যাটিং এ অনেক শর্ট আছে।এর মধ্যে চার-পাঁচটা শর্ট ভালভাবে শিখলেই আন্তর্জাতিক মানের ক্রিকেটার হওয়া সম্ভব যদি মানসিকতা শক্ত থাকে। আর এই বিষয়গুলো একেবারে জুনিয়র ক্রিকেট থেকেই শিখে আসতে হয় ক্রিকেটারদের। সত্যিকারের ক্রিকেট কাঠামো নেই বাংলাদেশে। সবকিছুর একটা মূল কাঠামো থাকে। আমাদের মূল কাঠামোই ঠিক নেই। তারপরও আমরা এতদূর এসেছি এটাই বড় কথা। 

আমাদের এখন যারা সিনিয়র ক্রিকেটার এরা যে এত ভালো খেলছে এর পেছনে কিছু কারন আছে ।বিকেএসপি ওদের সাফল্যের পেছনের একটি বড় কারন। বিকেএসপিতে যারা খেলা শিখে, তারা জুনিয়র লেভেলের ক্রিকেটে বাংলাদেশের যে কোন জায়গা থেকেই বেশি ম্যাচ খেলার সুযোগ পায়। ম্যাচ খেলার সাথে সাথে অন্য ডিসিপ্লিনে অনেক কাজ করার সুযোগ পায় ছেলেরা। আপনি যখন ১৭ বছর পার করে ফেলবেন, আপনার শরীরের মাসল,হাড়ের বৃদ্ধি সম্পন্ন হয়ে যায়। ক্রিকেট শেখার বয়স হচ্ছে ১০ থেকে ১৭ বছর পর্যন্ত। ক্রিকেট খুবই টেকনক্যাল খেলা, আর টেকনিক আপনাকে খুবই তরুন বয়স থেকে শিখতে হবে। এরপর একটা বয়স থেকে একজন ক্রিকেটারের পরিপক্বতা আসতে থাকে।

*আপনার সময়ে আপনি বেশ কিছু তরুন ক্রিকেটারকে খুব কাছে থেকে দেখেছেন ০৫-০৬ এ। তাদের মধ্যে কেউ কি আপনাদের প্রত্যাশা পূরণ করতে পেরেছে? 

-মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, তামিম ইকবাল... এরাই বলতে গেলে প্রত্যাশা পূরণ করতে পেরেছে। মাশরাফির সাথে আমরা বেশি কাজ করি নি, সে দ্রুতই জাতীয় দলে খেলার সুযোগ পেয়েছিল। এদের বাইরে আর কেউ নেই। অনেকে বলে সাকিব-তামিম নিয়ম শৃঙ্খলা মানত না। কিন্তু ওরা নিজেদের ক্রিকেটের ব্যাপারে কখনই ছাড় দিত না। ২০০৩-০৪ সালের দিকে যখন আমরা হাই পারফর্মেন্স স্কোয়াড করলাম, তখন সিনিয়রদের সাথে এদেরকেই ভবিষ্যতের জন্য বিবেচনা করেছিলাম। এদের সাথে সোহরাওয়ার্দী শুভ ছিল। শাহরিয়ার নাফিস অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ খেলতে পারেনি। পরে সে হাই পারফর্মেন্স স্কোয়াডে ছিল। ওরা অনেক ট্যালেন্টেড ছিল। তামিম তো ১০-১২ বছর থেকেই অনূর্ধ্ব-১৩ দলে খেলেছিল। আগেই বলেছি আমরা ট্রেনিংয়ের বাইরেও আরও অনেক কিছুতে ক্রিকেটারদের ব্যস্ত রাখতাম। ক্রিকেটার দিন শেষে মানুষ, তাকে মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার কাজও করতাম আমরা। 

*আপনি বিসিবির দায়িত্ব ছেড়ে মালয়েশিয়ার কাজ করেছেন। ওই সময়ে কি কোচিং ক্যারিয়ারের কথা ভেবেই এই সিদ্ধান্ত নেয়া? 

-বাংলাদেশের ক্রিকেটে থাকলে আমি কত দূর এগিয়ে যেতে পারতাম সেটা বলতে পারব না। হয়তো যেই পজিশনে ছিলাম সেখানেই থাকতাম। আর মালয়েশিয়াতে যাওয়া অবশ্যই আমার ক্যারিয়ারের জন্য বড় পরিবর্তন ছিল। একমাত্র বাংলাদেশি হিসেবে দুইটি দেশের অনূর্ধ্ব-১৯ দলের কোচের দায়িত্ব বিশ্ব কাপে পালন করেছি, আমি গর্ববোধবব করি। আমাকে সাক্ষাৎকার দিয়েই মালয়েশিয়ায় যেতে হয়েছে। আমি দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া ও শ্রীলঙ্কার কোচদের সামনে সাক্ষাৎকার দিয়েছি। আমি গর্ববোধ করি যে আমি নির্বাচিত হয়েছিলাম। আমি বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ দলের কোচের দায়িত্ব পালন করেছি। সেখান থেকে ইংল্যান্ডে যাওয়ার প্রস্তাব দেয়া হয়। আমি আমার পরিবারের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে ইংল্যান্ডে কোচিংয়ের দায়িত্ব নেই। আর আমি টেস্ট খেলুড়ে দেশের কোচিং সংস্কৃতির অংশ হতে চেয়েছিলাম। 

*আপনার ইচ্ছা আছে এখন না হলেও কোন এক সময় নিজের দেশের ক্রিকেটকে কিছু দেয়ার?

-আমাদের বোর্ডে যারা আছে তারা সবাই কিন্তু ক্রিকেটের উন্নতির জন্য চেষ্টা করে। কিন্তু সঠিক পন্থাটা হয়তো উনারা কিছুটা কম জানে। আমি গত ছয় সাত বছরে তৃণমূল ক্রিকেট, স্কুল ক্রিকেটের উন্নয়নের জন্য অনেক প্রস্তাব দিয়েছি বোর্ডের কাছে। কেউই খুব একটা গায়ে মাখে নি কারন আমি একজন বাংলাদেশি। আমি যদি মিঃ রতন না হয়ে মিঃ রবার্ট হতাম তাহলে হয়তো বিষয়টিকে আরও গুরুত্ব দিত। আমি ইংল্যান্ডে যেই দায়িত্ব আছি, সেখান থেকে অনেকেই এখন অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ডের, ভারত, ওয়েস্ট ইন্ডিজ সহ কাউন্টি দলের কোচিংয়ের দায়িত্ব পালন করছে। তৃণমূল ক্রিকেট, কোচ মেন্টরিং, ডেভলাপমেন্ট এইসব জায়গায় আমি কাজ করে আসছি। আমাকে যদি প্রস্তাব দেয়া হয়, আমি অবশ্যই দেশের জন্য কাজ করবো।

*আপনি এখন ইংলিশ ক্রিকেটের সাথে জড়িত। সেখানকার অভিজ্ঞতা কেমন?

-ইংল্যান্ডের কাঠামো দেখে মাঝে মাঝে মনে হয় দেশের জন্য কিছুই করতে পারলাম না। আমাদের অনেক কিছুই করা সম্ভব। তৃণমূল পর্যায়ে যদি বিসিবি কাজ করে, তাহলে আমাদের ক্রিকেট অনেক এগিয়ে যাবে যা নাকি আমরা চিন্তাও করতে পারব না। আমি রাস্তা ঘাটে এত এত প্রতিভা দেখি আর আক্ষেপ হয়, রাস্তার খেলা ছোট ছোট শিশুদের যদি আমরা কাজে লাগাতে পারতাম?

*একটু ভিন্ন প্রসঙ্গে যাই। আমরা একটা জিনিস খেয়াল করেছি, ২০১৫ সালে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সাথে হারের পর ইংল্যান্ড ক্রিকেটে বড় পরিবর্তন এসেছে। বিশেষ করে সাদা বলের ক্রিকেটে, আপনি কি ইংল্যান্ডের ক্রিকেটে আমুল পরিবর্তনকে কিভাবে দেখছেন?

-ইংল্যান্ড এমন পরিবর্তনটা আনতে বাধ্য হয়েছে। অন্য দেশ গুলো যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, সেই দিক অনেকটা পিছিয়ে ছিল। আইপিএল, বিগ ব্যাশের মত টি-টুয়েন্টি টুর্নামেন্ট তো এখন সব জায়গায় হচ্ছে। ইংল্যান্ডেও ২০১৯ সালের পর একটি লীগ চালু হতে যাচ্ছে। ইতিমধ্যেই বড় অংকের টিভি সত্ত্ব বিক্রি করে করেছে ইসিবি। তারা ঐতিহ্য ধরে রাখতে চায়। কিন্তু তারা ধীরে ধীরে টি-টুয়েন্টির দিকেও ঝুঁকছে। ইংল্যান্ডে ন্যাটওয়েস্ট টি-টুয়েন্টি কিন্তু ভালোই চলে। রয়্যাল লন্ডন ওয়ানডে কাপও বেশ জনপ্রিয়। 

*টি-টিয়েন্টি জনপ্রিয় হলেও টেস্টের জনপ্রিয়তা ইংল্যান্ডের মত অন্য কোন দেশে নেই...

-একমাত্র ইংল্যান্ডেই টেস্ট ম্যাচে দর্শক ভরা থাকে। কারন এটা এখানে ঐতিহ্যে পছন্দ করে। এখনো মানুষ মাঠে আসতে চায় ও খেলা দেখতে চায়। 

*ইংল্যান্ডের আগামী প্রজন্ম টেস্ট ক্রিকেটকে কিভাবে দেখে? 

-তরুন ইংলিশ ক্রিকেটাররা সাদা বলের ক্রিকেট পছন্দ করে কিন্তু তারা টেস্ট ক্রিকেটকেও সমান গুরুত্ব দেয়। আমি ভবিষ্যতে সাদা বলের ক্রিকেটে টেস্ট দেখার ব্যাপারে আশাবাদী। হয়তো দুইটি বল ব্যবহার করতে হতে পারে। লাল বলে ৮০ ওভার পর বল পরিবর্তন হয়, বলের অবস্থার কারনে তখন হয়তো ৬০ ওভার পর বল পরিবর্তন করতে হবে। কিন্তু অসম্ভব নয়, ভবিষ্যতে আমরা সাদা বলে টেস্ট ক্রিকেট দেখতেই পারি। এছাড়া আমি ইংল্যান্ডে আরেকটা জিনিস শুরু করেছিলাম। টি-টুয়েন্টি ম্যাচের পর সুপার ওভার হিসেবে আলাদা করে খেলা শুরু করেছিলাম আমি। টেলিগ্রাফ এটা নিয়ে রিপোর্টও করেছিল। দর্শকদের আকর্ষণ বাড়ানোর জন্য এটা করা যায়। একটি টি-টুয়েন্টি ম্যাচের পর আলাদা করে একটি সুপার ওভারের ম্যাচে, এই ম্যাচে যে জিতবে তার জন্য আলাদা পয়েন্ট থাকবে। ক্রিকেটটাকে আরও আকর্ষণীয় করা আর কি। ক্রিকেটে এমন পরিবর্তন আসবে, কারন ক্রিকেট অন্য খেলা গুলোর সাথে লড়াই করছে। মূলত ফুটবলের সাথে ক্রিকেটের লড়াই চলছে। উপমহাদেশে এটা হচ্ছে না কিন্তু বহির্বিশ্বে তো খেলা ছড়িয়ে দিতে হবে। 

*এসেক্সে তামিম ইকবাল কিছুদিন আগে খেলে এসেছিল। মুস্তাফিজও খেলে এসেছিল। কিন্তু ইংল্যান্ডে চ্যাম্পিয়নশিপ ক্রিকেট খেলা বাংলাদেশের ক্রিকেটারের সংখ্যা খুবই কম। সাকিব ছাড়া কেউই নেই। এটার কোন বিশেষ কারন আছে?

-চ্যাম্পিয়নশিপ ক্রিকেটে মাত্র একজন বিদেশি ক্রিকেটার খেলানো হয়। বেশিরভাগ সময় কাউন্টি মৌসুমের সময় বাংলাদেশের খেলা থাকে। আর খেলা না থাকলেও কন্ডিশন অনুযায়ী বিদেশি ক্রিকেটারদের চাহিদার দিক থেকে বাংলাদেশিদের অবস্থান একেবারে তলানিতে।

*বর্তমান বাংলাদেশ দলের কাকে সবচেয়ে এক্সাইটিং ট্যালেন্ট মনে হয়? কোন প্লেয়ার হতে পারে, যাকে দেখলে মনে হয়...’একজন ভবিষ্যৎ সম্পদ পাওয়া গেল।’

-সত্যি কথা বলতে কেউই না। পাঁচ সিনিয়র ক্রিকেটার ছাড়া আমার কাউকেই এখনো ভবিষ্যতের জন্য যোগ্য মনে হয় না। আমি ভুল হতে পারি কিন্তু যা দেখছি, সেই দিক থেকে এখনো কাউকেই প্রস্তুত মনে হয়নি।

*২০১৭ এ ইংল্যান্ডে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে বাংলাদেশ ভালো খেলেছিল। ২০১৯ বিশ্বকাপও ইংল্যান্ডে হবে। কি মনে হয়, আগামী সামারে বাংলাদেশের চান্স কেমন থাকবে?

-২০১৭ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে বাংলাদেশের ভাগ্য ভালো ছিল, এটা আমরা সবাই জানি অস্ট্রেলিয়ার ম্যাচটায় বৃষ্টিতে পয়েন্ট ভাগাভাগি হওয়ায় বাংলাদেশের সুবিধা হয়েছে। আগামী গ্রীষ্মে ইংলিশ কন্ডিশনে আমি আশা করি বাংলাদেশ ভালো করবে কিন্তু কাজটা কঠিন হবে। আমাদের ভালো ফাস্ট বোলার দরকার এবং আমাদের টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানদের রান করতে হবে। মে মাসে ইংল্যান্ডে আবহাওয়ার কারনে উইকেট একটু ড্যাম্প থাকবে। কখনো কখনো বৃষ্টি থাকবে, বল সুইং করবে। ইংল্যান্ডে মে মাসে খেলা এক রকম, জুলাই মাসে খেলা আরেকরকম। যেহেতু বিশ্বকাপটা একটু আগে হবে, সেহেতু বাংলাদেশের জন্য অনেক চ্যালেঞ্জ সামলাতে হবে।