বাংলাদেশ ক্রিকেট

‘পারফরম্যান্স আজকে হচ্ছে না কালকে হবে’

মমিনুল ইসলাম

মমিনুল ইসলাম
প্রকাশের তারিখ: 12:56 শনিবার, 22 এপ্রিল, 2023

|| ক্রিকফ্রেঞ্জি করেসপন্ডেন্ট ||

নাজমুল হোসেন শান্তর প্রতিভা কিংবা সক্ষমতা নিয়ে কখনই প্রশ্ন ছিল না কারও। বিদেশি কোচ থেকে দেশি কোচ সবাই সবসময় তার প্রতি মুগ্ধতার কথা জানিয়েছেন। তবুও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি তিনি। যে কারণে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিনিয়ত ট্রলের শিকার হতে হয়েছে। সেসব কাটিয়ে অবশ্য সুসময়ের দেখা পেয়েছেন বাঁহাতি এই ব্যাটার।

বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) থেকে শুরু করে ইংল্যান্ড কিংবা আয়ারল্যান্ড সিরিজ, সবখানে ছিলেন বাংলাদেশের নিয়মিত পারফর্মার। একান্ত সাক্ষাৎকার রাসেল ডমিঙ্গোর সমর্থন, ২০২৩ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সম্ভাবনা, খারাপ সময়ের গল্প, সেখান থেকে বেরিয়ে আসার কথা ক্রিকফ্রেঞ্জিকে শুনিয়েছেন শান্ত।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: আপনাকে নিয়ে নির্বাচক বা টিম ম্যানেজমেন্টের আস্থার কমতি ছিল না। কিন্তু আপনি ঠিকঠাক পারফর্ম করতে পারছিলেন না। তবুও রাসেল ডমিঙ্গো আপনাকে ব্যাক করেছে। তার সঙ্গে আপনার রসায়নটা কেমন ছিল?

নাজমুল হোসেন: ওর সঙ্গে আমার রসায়নটা খুবই ভালো ছিল। কোচিং স্টাফ, বিসিবি, নির্বাচক বা আরও যারা আছে সবাই অনেক সাপোর্ট করেছে। শুরু থেকেই ম্যাচ খেলার সুযোগ করে দিয়েছে। আমার মনে হয় যে প্রত্যেকটা খেলোয়াড়েরই সেটা প্রয়োজন। রাসেল ডমিঙ্গোর কথা বললেন, এখন হয়ত আমার দুই-একটা সিরিজ ভালো গেল বা বিপিএল ভালো খেললাম, আমার মনে হয় এখানে রাসেল ডমিঙ্গোর বড় একটা অবদান আছে।

ওই সময় সে চেষ্টা করেছে ম্যাচগুলো খেলানোর। শুধু ওর কথা বললে ভুল হবে। এখানে আরও অনেকে ছিলেন, নির্বাচকরা, সুজন স্যার ছিলেন, সবাই অনেক সহযোগিতা করেছেন। এটার জন্যই হয়ত এখন ভালো করছি। প্রত্যেকটা খেলোয়াড় যদি পর্যাপ্ত সুযোগ পায় তাহলে আমার মনে হয় সবাই ভালো করতে পারবে।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: রাসেল ডমিঙ্গো আপনাকে ব্যাক করেছে। কিন্তু পারফরম্যান্স চোখে পড়ছে চান্দিকা হাথুরুসিংহের আমলে। পরিবর্তনটা আসলে কোথায়? আর আপনার চোখে হাথুরুসিংহে মাষ্টার হিসেবে কেমন?

নাজমুল হোসেন: জিনিসটা আসলে এরকম না। আমরা সবাই আসলে উপভোগ করছি। আপনি যদি আমাদের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স খেয়াল করেন খুবই ভালো। খেলোয়াড়দের চিন্তাভাবনা অনেক পরিবর্তন এসেছে। খেলোয়াড়রাও এটাতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। স্কিলের চেয়ে আমাদের চিন্তাভাবনায় বেশি হেল্প হয়েছে। আমরা যদি এটা ধরে রাখতে পারি তাহলে আশা করি সামনের সিরিজগুলাও ভালো খেলবো।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: আমরা যেকোন দলকে হারাতে পারবো এই বিশ্বাসটা আগের থেকে বেশি কিনা...

নাজমুল হোসেন: অবশ্যই বেশি (আত্মবিশ্বাস)। এখন তো প্রতিযোগিতা অনেক বেশি। আমার তো মনে হয় প্রত্যেকটা জায়গায় আগের থেকে বেশি প্রতিযোগিতা। খেলার ধরণ বদলেছে, দলওগুলোও এখন ভালো। এই জিনিসগুলোতে পরিবর্তন এসেছে, আমাদের চিন্তাভাবনাতেও অনেক পরিবর্তন এসেছে। আমরা যে দলের সঙ্গেই খেলি জেতার জন্য খেলি। মানসিকতা সবার মাঝেই আছে। যারা আগে খেলেছে তারা না বা যারা নতুন আসছি বা আসছে তাদের সবার মাঝেই ওই চিন্তাভাবনাটা আছে আমরা যেকোন দলের সঙ্গে যেকোন সময় জিততে পারি।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: তিন সংস্করণের কথা যদি বলি সেক্ষেত্রে আপনি সাদা পোশাকেই প্রথম সাফল্য পেতে শুরু করেছিলেন। সেসময় টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে মুমিনুলের সাপোর্ট কতটা পেয়েছিলেন?

নাজমুল হোসেন: ভালো কিংবা খারাপ সময়, সে সবসময় আমাকে ব্যাক করেছে এবং সাপোর্ট করেছে। তার অধিনায়কত্বে সেই সময়ের ম্যাচগুলো অনেক উপভোগ করেছি।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: আপনি তো বয়সভিত্তিক দলে অধিনায়কত্ব করেছেন। ভবিষ্যতে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিতে প্রস্তুত কিনা..

নাজমুল হোসেন: আমি এই মুহূর্তে প্রস্তুতের কথা বলতে চাই না। আমি আগে থেকেই অধিনায়কত্ব করি, আমার অভিজ্ঞতা আছে। বয়সভিত্তিক, ‘এ’ দল বা আমাদের রাজশাহী দলে করেছি। সব জায়গায় করি। যদি কখনও সুযোগ আসে অবশ্যই করার জন্য প্রস্তুত। আমার মনে হয় না এখন এই বিষয় নিয়ে চিন্তা করার অপশন আছে। আমি এই বিষয়টা নিয়ে চিন্তাও করছি না।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: বাংলাদেশে এক ম্যাচ খারাপ খেললেই ভিলেন বানিয়ে দেয়া হয়। একটা বুঝতে কতটা সময় লেগেছে।

নাজমুল হোসেন: শুরুর দিকে তো খুব ভালো অবস্থায় ছিলাম। বয়সভিত্তিক কিংবা ‘এ’ দল যেখানেই খেলেছি সব জায়গায় ভালো অবস্থাতে ছিলাম। কিন্তু যখন খারাপটা আসলো তখন অবশ্যই কঠিন একটা সময় পার করেছি। তবে যেটা সবসময় চিন্তা করেছি সেটা হলো আমি যদি পারফর্ম করি তাহলে এই জিনিসগুলো হবে না। বুঝতে পারার যে কথাটা বললেন সেটা অনেক আগেই এসেছে যে আমি একজন খারাপ খেললে সেটা নিয়ে সমালোচনা হবে। কিন্তু এসব নিয়ে খুব বেশি চিন্তা হয় না। এখন চেষ্টা করি কিভাবে প্রতিদিন দলের জন্য অবদান রাখতে পারি।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: আপনার কি এটা কখনও মনে হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কিংবা মিডিয়া এসব ট্রল বা সমালোচনা করতে মানুষকে প্রভাবিত করেছে?

নাজমুল হোসেন: দেখুন, বাইরের মানুষ বাইরে থেকে একটা মন্তব্য করতেই পারে। কিন্তু আমি কিভাবে চিন্তা করছি সেটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সমালোচনা হবেই কিন্তু সেই মানুষটা তার কাজের প্রতি কতটা সৎ সেটা বোঝা আসলে গুরুত্বপূর্ণ। আসলে আমি কারও দোষই দিতে চাই না যে কারও কারণে আমাকে মানুষ বেশি অপছন্দ করছে বা পছন্দ করছে।

এটা যার যার চিন্তা থেকে আসা উচিত যে আমার কাজের প্রতি আমি কতটা সৎ বা আমার কাজটা ঠিক মতো করার চেষ্টা করছি কিনা। পারফরম্যান্স করা বা না করা তো ভিন্ন জিনিস। একদিন পারফর্ম করবো আরেকদিন করবো না, এটাই তো হয় বা হবে। আমি কিভাবে অনুশীলন করছি বা প্রস্তুতি নিচ্ছি এটা আসলে গুরুত্বপূর্ণ। আমি কাউকে দোষ দেবো না যে কারও কারণে আমাকে নিয়ে সমালোচনা বেশি হয় বা কম হয়।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: একটা সময় আপনি যেমন ট্রলের শিকার হয়েছেন এখন তেমনটা ইয়াসির আলী রাব্বির সঙ্গে হচ্ছে। এসব নিয়ে দলের মাঝে বা আপনাদের মাঝে কথা হয় কিনা?

নাজমুল হোসেন: না, এসব নিয়ে দলের মধ্যে কথা হয় না। আমরা সবাই জানি যে সমালোচনা হবেই। এটা নিয়ে খুব বেশি চিন্তা করার অপশন নেই। আমার মনে হয় বাইরের মানুষ এসব নিয়ে বেশি চিন্তা করে। আপনারাও হয়ত ভাবেন সমালোচনা হচ্ছে। আমাদের কোনো ক্রিকেটারই এসব নিয়ে চিন্তিত না। আমরা আমাদের কাজ কতটা সৎভাবে করছি সেটাই ফোকাস করি। পারফরম্যান্স আজকে হচ্ছে না কালকে হবে, এটা আমরা সবাই বিশ্বাস করি। বেশি চিন্তা করি না আর করতেও চাই না।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপ নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে। সবাই মনে করে এবার আমাদের ভালো করার সুযোগ আছে। সত্যিকার্থে দল আসলে কতটা বিশ্বাস করে, আমাদের কতদূর যাওয়া সম্ভব?

নাজমুল হোসেন: এটা তো আসলে এই মুহূর্তে বলা মুশকিল। তবে আমাদের এখনকার দলটা খুবই ভালো। সবশেষ কিছুদিন ধরে আমরা যেভাবে খেলে আসছি খুবই ভালো একটা দল। আমাদের লক্ষ্য থাকবে ম্যাচ বাই ম্যাচ, সিরিজ বাই সিরিজ। সামনে যে খেলাগুলো আছে সেগুলো দিয়ে আমরা বিশ্বকাপের জন্য কতটা প্রস্তুত হতে পারি সেটা গুরুত্বপূর্ণ।

আমরা ভালো দল তখনই যখন মাঠে পারফর্ম করবো। যেটা আলহামদুলিল্লাহ আমাদের হচ্ছে। সবার প্রত্যাশা থাকবে কিন্তু দিনশেষে আমাদের ভালো খেলাটা গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের প্রস্তুতি এখন পর্যন্ত ভালো, সামনে আরও কিছু ম্যাচ আছে, আমরা যদি ভালো প্রস্তুতি নিয়ে যেতে পারি তাহলে অনেক দূরে যাওয়া সম্ভব।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: বাংলাদেশ নিশ্চয় বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মানসিকতা নিয়েই যাবে...

নাজমুল হোসেন: অবশ্যই। যেটা বললাম প্রত্যেকটা ম্যাচ জেতার জন্যই খেলি। আমাদের মানসিকতা ওইরকমই আছে আমরা যে জিনিসটা বিশ্বকাপে করতে পারিনি সেটাই করার চেষ্টা করবো। কিন্তু এটা তো এখন বলা মুশকিল। জিনিসটা এমন হবে একটা করে ম্যাচ, দিন আমরা কিভাবে ভালো করতে পারি। আমরা এত লম্বা চিন্তা না করে ছোট ছোট চিন্তা করে যদি এগোই তাহলে মনে হয় ভালো করবো।