বাংলাদেশ - আয়ারল্যান্ড সিরিজ

এমন দিনেরই তো অপেক্ষায় ছিলেন সুজন...

ক্রিকফ্রেঞ্জি ডেস্ক

ক্রিকফ্রেঞ্জি ডেস্ক
প্রকাশের তারিখ: 18:57 বৃহস্পতিবার, 23 মার্চ, 2023

|| ডেস্ক রিপোর্ট ||

সিলেটে বাংলাদেশের পেসারদের স্বপ্নের দিন! এমন লাইন নিশ্চয় কয়েক শতবার শুনে ফেলেছেন। না শুনে উপায় কি? ওয়ানডেতে এক ইনিংসে পেসারদের ১০ উইকেট, এমন দিন হয়তো আর প্রতিদিন আসে না। তাই সিলেটের এই দিনটা বাংলাদেশের জন্য বিশেষ। রঙিন দিনে অবশ্য খানিকটা আক্ষেপ দিয়ে শুরু করা যাক।

দিনটা ২০২১ সালের ৭ ডিসেম্বর, গোধুলি লগ্নে সেদিন মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন খালেদ মাহমুদ সুজন। খানিকটা ভাঙা ভাঙা গলায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছিলেন বাংলাদেশের সাবেক এই ক্রিকেটার। নিউজিল্যান্ডে যাওয়ার কদিন আগে সুজনের কাছে পেসার কেন্দ্রিক প্রশ্নটা অনুমেয়ই ছিল।

স্পিন নির্ভর বাংলাদেশে পেসাররা যেন খানিকটা সৎ ভাইয়ের মতো। সেসময়ের প্রেক্ষাপটে দেশের মাটিতে পেসারদের গুরত্ব দেয়ার ভিত্তিতে এটাই বোধহয় যথাযথ শব্দ। ঘরের মাঠে খেলতে না পারা নিয়ে পেসারদের হাহাকারের কমতি ছিল না। কদিন পরই যেহেতু নিউজিল্যান্ড সফর, তাই পেসাররা বাড়তি একটা ভূমিকা পালন করবেন।

বড় দলগুলোর ক্ষেত্রে পেসাররাই মূলত ম্যাচ জয়ের গল্প লেখেন। গুরুত্বপূর্ণ সময়ে দলকে ব্রেক থ্রু এনে দেয়ার কাজটাও তারাই করেন। তবে এমন দৃশ্যপট মেলে না বাংলাদেশে, ঘাটতিটা উইকেট টেকিং বোলারের। তাই সাংবাদিকদের জানতে চাওয়া ছিল বাংলাদেশ কবে নাগাদ উইকেট টেকিং পেস বোলার পাবে।

খানিকটা আক্ষেপের সুরেই উত্তর দিতে হলো সুজনকে। সাবেক এই ক্রিকেটার বললেন, ‘এটা যেদিন আল্লাহ দেয়। এ ছাড়া আর কী বলব।’ শুধু এতেই থেমে থাকেননি তিনি। পেসারদের কমনসেন্স নিয়ে প্রশ্ন তুলে সুজন বলেন, ‘কোচ তো কাউকে গুলিয়ে খাইয়ে দিতে পারবে না। এটা ‘কমন সেন্সের’ বিষয়। কোচরা অনুশীলন করায়, কিন্তু খেতে তো হবে আপনার। চিবোতে হবে আপনার। আপনি যদি চিবোতে না পারেন…।’

সুজন যখন এমন আক্ষেপের সুর বেঁধেছিলেন তখন ওটিস গিবসনের সঙ্গে নিয়মিতই নিজেকে উন্নতির চেষ্টায় ব্যস্ত ছিলেন তাসকিন আহমেদ-ইবাদত হোসেনরা। যার ফল মিলেছে মাসখানেক বাদেই। নিউজিল্যান্ডের মাউন্ট মঙ্গানুইতে সেদিন রূপকথার গল্পের নায়ক ছিলেন ইবাদত। স্মরণীয় হয়ে থাকা ডানহাতি এই পেসারের সেই স্পেল বাংলাদেশের ক্রিকেটের ইতিহাসেরই অংশ।

কয়েক দফায় বাংলাদেশের টিম ডিরেক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করা সুজন অবশ্য আক্ষেপ প্রকাশ করেছিলেন পেসারদের টেস্ট পারফরম্যান্স নিয়ে। তবে গলদ ছিল ওয়ানডেতেও। ঘরের মাঠে জেতা বেশিরভাগ সিরিজেই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অস্ত্র স্পিনাররা। তাসকিনের হাত ধরে সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে টাইগাররা। তাসকিনের বদলে যাওয়ার মূলমন্ত্র কেবলই প্রক্রিয়া।

সেটা মানতে আর বুঝতে শুরু করেছেন ইবাদত, মুস্তাফিজুর রহমান কিংবা হাসান মাহমুদরা। তারাও যেন একাই ম্যাচ জেতাতে পারেন সেই বিশ্বাসটা হয়তো পেয়েছেন মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্ট থেকে। সাউথ আফ্রিকায় তাসকিনের সেই ৫ উইকেটেও হয়ত অনুপ্রেরণার অংশ। সেটা যাই হোক বিশ্বাস আর প্রক্রিয়ার ভেলায় চড়ে সিলেটে মনে রাখার মতো একদিন এনে দিয়েছেন পেসাররা।

বাংলাদেশের পেসারদের উন্নতিটা বেশ কমাস ধরেই পরিলক্ষিত। সবশেষ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তাসকিন-হাসানরা দেখিয়েছেন নিজেদের সক্ষমতা। তবে এদিন সবকিছুকে ছাড়িয়ে গেছেন তাসকিন-হাসান-ইবাদতরা। অফ স্টাম্পের বাইরের ডেলিভারিতে জায়গায় দাঁড়িয়ে খেলতে চেয়েছিলেন স্টিফেন দোহানি। তবে সেটা ঠিকঠাক করতে পারেননি তিনি। দোহানির ব্যাটের কানায় লাগা বল লুফে নিতে ভুল করেননি মুশফিকুর রহিম।

দোহানিকে ফিরিয়ে হাসানের শুরু। এরপর একে একে আউট করেছেন পল স্টার্লিং, হ্যারি টেক্টর, কার্টিস ক্যাম্ফার ও গ্রাহাম হিউমকে। মাঝে উইকেট তোলার লড়াইয়ে যোগ দিয়েছিলেন তাসকিন-ইবাদতরা। হাসানের বলে তাসকিনের হাতে ক্যাচ দিয়ে নবম ব্যাটার হিসেবে আউট হন ক্যাম্ফার। আইরিশ এই ব্যাটারের বিদায়েই রেকর্ডের পাতায় উঠে যায় বাংলাদেশের পেসাররা।

এর আগে ১২ ম্যাচে এক ইনিংসে ৮টি করে উইকেট নেয়া বাংলাদেশের পেসাররা এদিন ছাপিয়ে যান নিজেদের পুরোনো রেকর্ডকে। হিউমকে আউট করে রেকর্ডটা আরও একটু দূরে নিয়ে গেছেন ক্যারিয়ারে প্রথমবার পাঁচ উইকেট নেয়া হাসান। এদিন তাসকিনের তিন আর ইবাদতের শিকার ২ উইকেট। তাতে প্রথমবারের মতো ওয়ানডেতে ইনিংসে ১০ উইকেট নেয়ার কীর্তি গড়েন টাইগার পেসাররা।

সুজনের সেই আক্ষেপের পর বদলে গেছে বাংলাদেশের পেস ইউনিট। মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্ট জয়, সাউথ আফ্রিকায় তাসকিনের দাপুটে পারফরম্যান্সে, বিশ্বকাপে পেস বাজিমাত আর ঘরের মাঠে সবশেষ ১০ উইকেট। ১৪ মাসের ব্যবধানে পেসারদের বদলে যাওয়া দেখেন এদিন নিশ্চয় খুশিতে উল্লাস করছেন সুজন।