বাংলাদেশ - আয়ারল্যান্ড সিরিজ

ইবাদত-নাসুমের দুর্দান্ত বোলিংয়ে বাংলাদেশের রেকর্ড গড়া জয়

ক্রিকফ্রেঞ্জি ডেস্ক

ক্রিকফ্রেঞ্জি ডেস্ক
প্রকাশের তারিখ: 13:36 শনিবার, 18 মার্চ, 2023

|| ডেস্ক রিপোর্ট ||

ওয়ানডে ক্রিকেটে রানের ব্যবধানে সবচেয়ে বড় জয়টি ছিল জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ১৬৯ রানে। ২০২০ সালে বাংলাদেশের করা ৩২১ রানের জবাবে ১৫২ রানে অল আউট হয়ে গিয়েছিল জিম্বাবুয়ে। ফলে টাইগাররা জয় পেয়েছিল ১৬৯ রানে। এবার আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে সেই ব্যবধানকেও ছাড়িয়ে গেছে টাইগাররা। এই ম্যাচে আগে ব্যাট করে ওয়ানডে ক্রিকেটে নিজেদের সর্বোচ্চ ৩৩৮ রানের সংগ্রহ দাঁড় করিয়েছিল বাংলাদেশ। জবাবে আয়ারল্যান্ড অল আউট হয়েছে ১৫৫ রানে। ফলে বাংলাদেশ জয় পায় ১৮৩ রানের রেকর্ড ব্যবধানে।

এই ম্যাচে পেসারদের সঙ্গে পাল্লা নিয়ে দারুণ বোলিং করেছেন স্পিনাররাও। নাসুম আহমেদ একাই নিয়েছেন ৩ উইকেট, সাকিব আল হাসান ৯৩ রানের ইনিংস খেলার পর নিয়েছেন একটি উইকেট। পেসারদের মধ্যে ইবাদত হোসেন সর্বোচ্চ ৪টি উইকেট নিয়েছেন ও তাসকিন আহমেদ ৩ টি উইকেট নিয়েছেন। আর তাতেই গুটিয়ে গেছে আয়ারল্যান্ডের ইনিংস।

বাংলাদেশের দেয়া বড় লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে দারুণ শুরু পেয়েছিল আয়ারল্যান্ড। পাওয়ার প্লেতে বাংলাদেশের বোলারদের কোনো সুযোগই দেননি দুই আইরিশ ওপেনার পল স্টার্লিং ও স্টিভেন ডোহেনি। প্রথম দশ ওভারে তারা তোলেন ৫১ রান।

অবশ্য ইনিংসের তৃতীয় ওভারেই ফিরতে পারতেন স্টার্লিং। মুস্তাফিজুর রহমানের করা ওভারের শেষ বলে লাইন মিস করেছিলেন তিনি। বল সোজা আঘাত হেনেছিল স্টার্লিংয়ের প্যাডে। আম্পায়ার তানভীর আহমেদ এলবিডব্লিউয়ের সিদ্ধান্তও দিয়েছিলেন। তবে রিভিউ নিয়ে বেঁছে যান এই আইরিশ ওপেনার।

এরপর বাংলাদেশ প্রথম উইকেটের দেখা পেয়েছে ১২তম ওভারে। সাকিবের করা অফ স্টাম্পের বাইরের পিচ করা বল বেড়িয়ে যাওয়ার মুখে খেলতে গিয়ে ডোহেনি আউট হয়েছেন উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে। দ্বিতীয় উইকেট পেতে বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি বাংলাদেশকে।

পরের ওভারেই আরেক ওপেনার স্টার্লিংকে সাজঘরে ফিরিয়েছেন এবাদত হোসেন। এই টাইগার পেসারের লেগ স্টাম্পের ওপর করা বাউন্স করা বল পুল করতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন তিনি। সেই ক্যাচ ঝাঁপিয়ে গিয়ে লুফে নিয়েছেন মুশফিক।

নিজের দ্বিতীয় ওভার করতে এসে আরেক আইরিশ ব্যাটার হ্যারি টেক্টরকেও আউট করেন এবাদত। এবারও তার অফ স্টাম্পের বাইরের বল দূর থেকে ড্রাইভ করতে গিয়ে মুশফিকের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ৩ রান করে। এরপর অ্যান্ড্রু বালবার্নি তাসকিন আহমেদের বলে ড্রাইভ করতে গিয়ে বিট হয়ে বোল্ড হয়েছেন। লরকান টাকান ও কার্টিস ক্যাম্ফার মিলে বিপর্যয় সামাল দিতে চেয়েছিলেন।

যদিও তাসকিনের ব্যাক অফ লেন্থ ডেলিভারিতে আলগা শট খেলতে গিয়ে স্লিপে ইয়াসির আলী রাব্বির সহজ ক্যাচ হয়েছেন এই আইরিশ ব্যাটার। ফলে ৭৬ রানে ৫ ব্যাটার হারিয়ে ধুঁকতে থাকে আইরিশরা। এ সময় আশার প্রদীপ হয়ে ধরা দেন দুই অলরাউন্ডার কার্টিস ক্যাম্ফার।

এই দুজনে ষষ্ঠ উইকেটে যোগ করেন ৩৩ রান। তাদের জুটি ভেঙেছেন নাসুম আহমেদ। এই টাইগার বাঁহাতি স্পিনারের মিডল লেগ স্টাম্পে পিচ করা বল ডিফেন্স করতে গিয়ে লাইন মিস করে এলবিডব্লিউ হন ক্যাম্ফার। এরপর রিভিউ নিলেও কোনো লাভ হয়নি।

এরপর আরও দুই আইরিশ ব্যাটারকে নিজের শিকার বানিয়েছেন নাসুম। নিজের ষষ্ঠ ওভারে জোড়া উইকেট তুলে নেন এই স্পিনার। পঞ্চম বলে গারেথ ডেলানি মাত্র ১ রান করে এলবিডব্লিউ হন নাসুমের বলের লাইন মিস করে। পরের বলে অ্যান্ডি ম্যাকব্রেইনকে উইকেটের পেছনে ক্যাচ বানান নাসুম।

বাংলাদেশের ফিল্ডারদের জোড়ালো আবেদনে সাড়া দিয়ে আম্পায়ার আঙুল তুলে দিলেও রিভিউ নিয়েছিল আয়ারল্যান্ড। তবে রিভিউতে দেখা যায় বল ডেলানির গ্লাভস স্পর্ষ করেছে। ফলে সাজঘরে ফিরতে হয় তাকে। এতো চাপেও একপ্রান্ত আগলে রেখে দ্রুত রান তুলেছেন আইরিশ ব্যাটার জর্জ ডকরেল। তাকে খুব বেশিক্ষণ সঙ্গ দিতে পারেননি মার্ক অ্যাডায়ার। তিনি ১৩ রান করে এবাদতের বলে কাট করতে গিয়ে উইকেটের পেছনে মুশফিকের হাতে ক্যাচ দেন। একপ্রান্ত আগলে রাখা ডকরেলের স্টাম্প ছত্রভঙ্গ করে আয়ারল্যান্ডের ইনিংস গুটিয়ে দিয়েছেন ইবাদত। ওয়েনডে ক্রিকেটে এটাই তার সেরা বোলিং পরিসংখ্যান।

এর আগে টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে ভালো শুরু পায়নি বাংলাদেশ। ব্যাট হাতে ইংল্যান্ড সিরিজটা ভালো কাটেনি তামিম ইকবালের। নিশ্চিতভাবেই আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ব্যর্থতা থেকে বেড়িয়ে আসতে চেয়েছিলেন বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ক। তবে সেটা পারলেন না বাঁহাতি এই ওপেনার। ইনিংসের তৃতীয় ওভারে মার্ক অ্যাডায়ারের অফ স্টাম্পের বাইরের বলে ড্রাইভ করতে গিয়ে স্লিপে থাকা স্টার্লিংয়ের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ৩ রান করা তামিম।

বাঁহাতি এই ওপেনারের বিদায়ের পর জুটি গড়ার চেষ্টা করেন লিটন দাস ও নাজমুল হোসেন শান্ত। তবে সেটি বড় করতে দেননি কার্টিস ক্যাম্ফায়ার। পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে ক্যাম্ফায়ারের লেংথ ডেলিভারিতে পুশ করতে চেয়েছিলেন লিটন। তবে নিয়ন্ত্রণ না থাকায় টাইমিংয়ে গড়বড় করে স্টার্লিংকে ক্যাচ দিয়ে ফিরতে হয় তাকে। ডানহাতি এই ওপেনার এদিন আউট হয়েছেন ২৬ রানে।

এদিকে ভালো শুরুর পর ইনিংস বড় করতে পারেননি শান্ত। অ্যান্ড্রু ম্যাকব্রাইনের অফ স্টাম্পের বাইরে পড়ে ভেতরে ঢোকা বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন বাঁহাতি এই ব্যাটার। শান্তর ব্যাট থেকে এসেছে ২৬ রান। এদিন ওয়ানডেতে ৭ হাজার পূর্ণ করেছেন সাকিব আল হাসান। ক্যাম্ফায়ারের বলে মিড উইকেটে ঠেলে দিয়ে এক রান নিয়ে বাংলাদেশের দ্বিতীয় ব্যাটার হিসেবে এমন কীর্তি গড়েন তিনি।

এদিকে শান্তর বিদায়ের পর তৌহিদ হৃদয়কে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশের হাল ধরেন সাকিব। তাদের দুজনের জুটি পঞ্চাশ পেরোনোর পর হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেনে সাকিব। ক্যাম্ফাারের বলে এক রান নিয়ে ৬৫ বলে হাফ সেঞ্চুরি করেছেন তিনি। তাতে টানা তিন হাফ সেঞ্চুরি করলেন তিনি। আগের দুই ম্যাচে ৭৫ ও ৫৮ রান করেছেন সাকিব। নিজের অভিষেক ম্যাচে বাজিমাত করেছেন হৃদয়। 

সাকিবের সঙ্গে জুটি গড়ার সঙ্গে দারুণ ব্যাটিং করেছেন তিনি। এদিকে হাফ সেঞ্চুরির পর আইরিশ বোলারদের ওপর চড়াও হন সাকিব। বিশেষ করে হ্যারি টেক্টরের এক ওভারে পাঁচটি চার মেরে ২২ রান এনেছেন বাঁহাতি এই ব্যাটার। সাকিব যখন সেঞ্চুরির খুব কাছে তখন হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন হৃদয়। হিউমের বলে কভার দিয়ে এক রান নিয়ে ক্যারিয়ারের প্রথম ম্যাচেই হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন তিনি।

ফরহাদ রেজা ও নাসির হোসেনের পর তৃতীয় বাংলাদেশি হিসেবে অভিষেকে হাফ সেঞ্চুরি করেছেন হৃদয়। এদিকে তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে সেঞ্চুরি হাতছাড়া করেছেন সাকিব। হিউমের ওয়াইড লাইনের বলে খেলতে গিয়ে ৯৩ রানে আউট হয়েছেন অভিজ্ঞ এই ব্যাটার। সাকিবের বিদায়ের পর বাংলাদেশকে টানছেন হৃদয় ও মুশফিকুর রহিম। ছয়ে নেমে এদিন শুরু থেকেই আক্রমণাত্বক তিনি। 

গ্যারেথ ডেলানিকে স্লগ ‍সুইপ করে দুটি ছক্কা মারা যেন সেটারই প্রমাণ। বাহারি সব শটের পসরা সাজিয়ে সেঞ্চুরির পথে হেঁটেছিলেন হৃদয়। তবে সেঞ্চুরি পাওয়া হয়নি তার। হিউমের বলে বোল্ড হয়ে ৯২ রানে ফিরে যান তরুণ এই ব্যাটার। তাতে বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটার হিসেবে অভিষেকে সেঞ্চুরি পাওয়া হলো না হৃদয়ের। এদিকে দারুণ ব্যাটিং করা মুশফিক সাজঘরে ফেরেন ২৬ বলে ৪৪ রানের ইনিংস।

শেষ দিকে প্রত্যাশিত ফিনিশ করতে পারেনি বাংলাদেশ। উইকেটে স্বীকৃত ব্যাটার হিসেবে ইয়াসির থাকলেও সুবিধা করতে পারেননি। ডানহাতি এই ব্যাটার আউট হয়েছেন ১০ বলে ১৭ রান করে। তাসকিন আহমেদের ব্যাট থেকে এসেছে ৭ বলে ১১ রান। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ থামে ৩৩৮ রানে। আয়ারল্যান্ডের হয়ে চারটি উইকেট নিয়েছেন হিউম।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ-  ৩৩৮/৮ (৪৬ ওভার) (তামিম ৩, লিটন ২৬, শান্ত ২৬, সাকিব ৯৩, হৃদয় ৯২, মুশফিক ৪৪, ইয়াসির ১৭; হিউম ৪/৬১)

আয়ারল্যান্ড-  ১৫৫/১০ (৩০.৫ ওভার) (ডোহানি ৩৪, স্টার্লিং ২২, ডকরেল ৪৫; তাসকিন ২/১৫, ইবাদত ৪/৪২, নাসুম ৩/৪৩)