টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ

বেন স্টোকস তো এমনই

ক্রিকফ্রেঞ্জি ডেস্ক

ক্রিকফ্রেঞ্জি ডেস্ক
প্রকাশের তারিখ: 01:43 সোমবার, 14 নভেম্বর, 2022

|| ডেস্ক রিপোর্ট ||

বাট দিস টাইম ইজ বাটলার বয়েস...। মোহাম্মদ ওয়াসিম জুনিয়রের বলে মিড উইকেটে ঠেলে দিয়ে ব্যাট আর হাত উঁচিয়ে হুঙ্কার দিলেন বেন স্টোকস। ইংলিশ ম্যানের হুঙ্কারে ছিন্নভিন্ন হয়ে গেল পাকিস্তানের ট্রফির স্বপ্ন। লিয়াম লিভিংস্টোন যখন স্টোকসকে আলিঙ্গনে ব্যস্ত তখন ডাগ আউটে থাকা স্যাম কারানদের থামায় কে? দৌড়ে এসে স্টোকসের কোলে ঝাঁপিয়ে পড়ে হয়তো কারান খানিকটা বোঝানোর চেষ্টা করলেন কতটা আনন্দ ছুঁয়ে গেছে তাদের।

সবাই যখন উল্লাসে মাতোয়ারা তখন প্রেসবক্সে মাইক্রোফোন হাতে কথার ফুলঝুঁড়ি নিয়ে বসেছেন নাসের হুসেন। ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক বলেই বসলেন, ‘ইটস বেন স্টোকস উইথ দ্য উইনিং রান, হু এলস, ইটস অলওয়েজ বেন স্টোকস।’ এরপর পুরো দুনিয়াকে যেন ফিরিয়ে নিয়ে গেলেন ২০১৬তে। মাইক্রোফোন হাতে বলে উঠলেন, ‘হি হ্যাজ হিস রিডেমশন ফ্রম ২০১৬ কলকাতা। হোয়েন হি বল দ্যাট ফাইনাল ওভার ইন ইংল্যান্ড ওয়্যার দ্য লুসিং সাইড।’

স্টোকস, কার্লোস ব্র্যাথয়েট, চার ছক্কা এবং ইয়ান বিশপের ‘রিমেম্বার দ্য নেইম’ জায়গা করে নিয়েছে ইতিহাসের পাতায়। সেদিন চার ছক্কায় নায়ক বনে গিয়েছিলেন ব্রাথওয়েট। মুদ্রার ওপট দেখতে হয়েছিল স্টোকস। ব্রাথওয়েটের মতো নায়ক নয়, সেদিন ইংলিশদের ভিলেন হয়ে কলকাতা ছেড়েছিলেন ইংলিশ ম্যান। তবে নিজেকে ছাড়েননি, বরং জীবনে যুদ্ধ করেছেন, মাঠের ক্রিকেটে লড়ে জিতেছেন।

স্টোকসের ভিলেন থেকে নায়ক বনে যাওয়ার গল্পের শুরুটা ওয়ানডে বিশ্বকাপ দিয়ে। অপরাজিত ৮৪ রানের ইনিংস খেলে সেদিন নাটক, রোমাঞ্চ আর উত্তেজনায় ঠাসা ম্যাচ জিতেছিলেন স্টোকস। আক্ষেপ ঘুচিয়ে ইংলিশদের স্বপ্নের সোনালি ট্রফি ছুঁয়ে দেখার মঞ্চ তৈরি করেছিলেন তিনি। ইংল্যান্ডকে প্রথমবার ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতানোয় তাই সমর্থকদের কাছে নায়ক বনে গিয়েছিলেন স্টোকস।

এরপরের গল্পটা সাদা পোশাকে, হেডিংলিতে। প্যাট কামিন্স, হেজেলউডদের আগুনে বোলিংয়ে সেদিন চূর্ণ হয়ে গিয়েছিল ইংলিশদের ব্যাটারদের প্রতিরোধ। জ্যাক লিচকে নিয়ে স্টোকস যখন ব্যাটিং করছিলেন তখন জয় থেকে অনেকটা দূরে দাঁড়িয়ে ইংল্যান্ড। সবার কাছে ছিল কেবলই অসম্ভব। তবে অতিমানবীয় ইনিংস খেলে কঠিন সব সমীকরণ বদলে দিয়েছিলেন তিনি। অ্যাশেজ নিজেদের করে রাখতে না পারলেও সেদিন হেডিংলিতে রূপকথা লিখেছিলেন অভিজ্ঞ এই অলরাউন্ডার।

এসবের পরও বাজে সময় পিছু ছাড়েনি স্টোকসের। বাবার মৃত্যুর সঙ্গে আঙুলের চোট, সবমিলিয়ে ক্রিকেট থেকে অনির্দিষ্টকালের ছুটিতে যেতে হয়েছিল তাকে। চ্যাম্পিয়ন ক্রিকেটার হয়েও খেলা হয়নি ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। তাতে সুযোগ মেলেনি ২০ ওভারের ক্রিকেটে বিশ্বকাপে দায়মোচনের। বছরখানেক পরই সেই সুযোগ পেলেন, কাজেও লাগালেন। মেলবোর্নে এদিন ইংল্যান্ডের জন্য সমীকরণটা কঠিন কিছু ছিল না।

ব্যাটিং বিভাগের গভীরতায় ১৩৮ রান ছুঁয়ে ফেলাটা সময়ের ব্যাপার ছিল ইংলিশদের জন্য। তবে সেটা এত সহজে হতে দেননি হারিস রউফ-নাসিম শাহরা। বল পুরোনো হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তি সুইং পেতে শুরু করেছিলেন পাকিস্তানের পেসাররা। নাসিমের গতিময় সুইংয়ের সঙ্গে যেন কোনভাবেই পেরে উঠতে পারছিলেন না স্টোকস। ম্যাচের দৈর্ঘ্য যত ছোট হয়ে আসছিল স্টোকসের উপর ততই চাপ বাড়ছিল। শেষ পর্যন্ত চাপে নুয়ে পড়েননি।

চাপের মুখে দাঁড়িয়ে থাকা স্টোকসের জন্য খানিকটা খুশির বার্তা বয়ে আনে শাহীন আফ্রিদির চোট। বিকল্প বোলার হিসেবে ইফতিখার আহমেদ বল হাতে নিতেই ইংলিশ অলরাউন্ডারের আক্রমণ। কভার দিয়ে চার মারার পরের বলে লং অন দিয়ে ছক্কা। মোমেন্টাম বদলে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ তখন ইংল্যান্ডের দিকে। ইংলিশদের ট্রফি জয়ের আনন্দে ভাসিয়ে ৪৯ বলে অপরাজিত ৫২ রানে শেষ করেন স্টোকস।

ম্যাচ শেষ হতেই হার্শা ভোগলে টুইট করে জানতে চান, ‘বিশ্ব ক্রিকেটে বেন স্টোকসের চেয়ে ভালো চাপ সামালানোর ক্রিকেটার আছে?’ স্টোকস কতটা চাপ সামলাতে পারেন জনপ্রিয় এই ক্রিকেট বিশ্লেষকের টুইটই হয়তো বুঝিয়ে দিচ্ছে। চাপের মাঝে দাঁড়িয়ে জেতানোটা যেন অভ্যাসে পরিণত করে ফেলেছেন স্টোকস। তাই তো বলতে ইচ্ছে হয় বেন স্টোকস তো এমনই।