টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ

২০১ রানের ইনিংসটি ব্যাটিং গড় বাড়িয়ে দিয়েছে: গিলেস্পি

আবিদ মোহাম্মদ

আবিদ মোহাম্মদ
প্রকাশের তারিখ: 20:24 বৃহস্পতিবার, 10 নভেম্বর, 2022

|| অ্যাডিলেড থেকে আবিদ মোহাম্মদ ||

ক্যারিয়ারের পড়ন্ত বিকেলে দ্বিশতক হাঁকিয়ে সবাইকে চমকে দিয়েছিলেন জেসন গিলেস্পি। নাইট ওয়াচম্যান হিসেবে নেমে ইতিহাসে নাম লেখানো ম্যাচটিই ছিল এই পেসারের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে শেষ ম্যাচ। ১০ বছরের আন্তর্জাতিক খেলা গিলেস্পি ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার দুটি ওয়ানডে বিশ্বকাপ জয়ী দলের সদস্য। খেলা ছাড়লেও এখনও ক্রিকেটের সঙ্গে সখ্যতা রয়েছে তার।

২০০৬ সালে সর্বশেষ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা গিলেস্পি এখন কোচিং নিয়ে ব্যস্ত। বিগ ব্যাশ, শেফিল্ড শিল্ডে লম্বা সময় ধরেই এই গুরু দায়িত্ব পালন করে আসছেন তিনি। ক্রিকফ্রেঞ্জির সঙ্গে আলাপকালে গিলেস্পি ফিরে গেলেন ২০০৬ সালের বাংলাদেশ সফরে।
সেই সঙ্গে কথা বলছেন অস্ট্রেলিয়া দলের বিশ্বকাপ, নিজের কোচিং ক্যারিয়ার ও ভবিষ্যত ভাবনা নিয়ে।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: বাংলাদেশ সফরের কথা আপনার মনে আছে নিশ্চয়ই। টেস্টে নাইট ওয়াচম্যান হিসেবে নেমে দ্বিশতক হাঁকিয়েছিলেন?

জেসন গিলেস্পি: বাংলাদেশ সফর নিয়ে বললে আসলে শেষ করা যাবে না। সেখানে মাঠ ও মাঠের বাইরে আমার অনেক স্মৃতি। সুন্দর একটি দেশ, সেখানকার মানুষগুলো খুবই ভালো। আমার টেস্ট ক্যারিয়ার শেষ হয়েছে ওখানে। ওই সিরিজে রান পাওয়াটা ছিল দারুণ ব্যাপার। সেদিক থেকে বাংলাদেশে আমার খুবই ভালো স্মৃতি রয়েছে। খেলোয়াড়ী জীবনের রোমাঞ্চকর কিছু স্মৃতি জড়িয়ে আছে।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: কখনও ভেবেছিলেন কি ক্যারিয়ারের শেষ টেস্টে এমন কিছু করবেন?

গিলেস্পি: সে সময় রিকি পন্টিং অধিনায়ক ছিল। আমি নাইট ওয়াচম্যান হিসেবে যখন ক্রিজে গিয়েছিলাম তখন সে বলেছিল কিছু রান করতে। মাইক হাসির সঙ্গে আমার ভালো একটা জুটি হয়। সত্যিই খুব উপভোগ করেছি। ক্যারিয়ারের শেষটা অত ভালো হলে কার না ভালো লাগে। ২০১ রানের ইনিংসটি অবশ্যই আমার ক্যারিয়ারের গড় বাড়াতে সাহায্য করেছে, সত্যি বলতে দারুণ একটা অভিজ্ঞতা।

আমার কিন্তু সাধারণ গেম প্ল্যান নিয়েই খেলেছি। বিশেষ কিছু করতে হবে, বড় স্কোর হবে তেমন না। বাংলাদেশি বোলিং বড় ইনিংস খেলতে সাহায্য করেছে। খুব বেশি টার্ন ও বাউন্স ছিল না। একটা জিনিস মাথায় ছিল সামনের পায়ে বল লাগলে এলবিডব্লু হবো। আমি সেটা ভালোভাবে ম্যানেজ করার চেষ্টা করেছি এবং পেরেছি।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: শুধু আপনিই না, গ্লেন ম্যাকগ্রা, ব্রেট লিরাও টেস্টে হাফ সেঞ্চুরি পেয়েছেন। তারা সেঞ্চুরি না ছুঁলেও ম্যাকগ্রার সঙ্গে আপনার বেশ কয়েকটি দারুণ জুটি রয়েছে ব্যাটিংয়ে। নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে দুজন হাফ সেঞ্চুরি করে নেচেছিলেনও! সেই স্মৃতি মনে আছে কি?

গিলেস্পি: আমাদের বোঝাপড়াটা খুবই ভালো ছিল। সে আমরা খুব ভালো বন্ধু। আমরা খুব মজা করতাম। কে দ্রুত গতির, কে সেরা। খুব মজা হতো। খুব ভালো বোলিং করত সে। একদিকে আমি অন্য দিকে গ্লেন বোলিং করেছে। স্পেল ধরে খুব ভালো বোলিং করত। আমরা চেষ্টা করতাম প্রতিপক্ষ বুঝে বোলিং করতে। রান চেক দিতে। ব্যাটারদের লুজ বল কম দেওয়ার চেষ্টা করেছি। স্ট্যাম্পে রাখার চেষ্টা থাকত। ভালো লাইন লেন্থে বল করলে ব্যাটারের কিছু করার থাকে না। আমরা সেটাই করতাম। সত্যি বলতে আমাদের দুজনের বোলিং জুটি জমত। ব্যাটিংয়েও একে ওপরকে চ্যালেঞ্জ করতাম, কে বেশি রান করতে পারে। দিনগুলো মনে আছে এখনও।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: খানিকটা বিশ্বকাপ নিয়ে কথা বলা যাক। ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ, তবুও অস্ট্রেলিয়া সেমিফাইনাল বা ফাইনাল খেলতে পারেনি। নিশ্চয় হতাশাজনক?

গিলেস্পি: এটা খুবই হতাশাজনক। অস্ট্রেলিয়ায় বিশ্বকাপ হচ্ছে, কিন্তু সেমিফাইনালে স্বাগতিকরা নেই। ফাস্ট বোলারদের সেভাবে জ্বলতে দেখিনি। ব্যাটারদের থেকেও হতাশাজনক পারফরম্যান্স পেয়েছি। এটা নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে। প্রতিক্রিয়া আছে। দেশের মাটিতে অস্ট্রেলিয়ার ভালো খেলা উচিৎ ছিল। এমনকি দল নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ব্যক্তিগত পারফরমপ্যান্স নিয়ে কথা হচ্ছে। আমার মনে হয় অস্ট্রেলিয়া টি-টোয়েন্টি দল কিছুটা পরিবর্তন হবে। সেমিফাইনালে খেলতে না পারা খুবই হতাশাজনক।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: ব্যাটারদের কথা বললেন, ফিঞ্চ খানিকটা ভুগছে। স্টিভ স্মিথ তো সেভাবে সুযোগই পেলেন না। কিভাবে দেখছেন?

গিলেস্পি: অ্যারন শেষ ম্যাচে ভালো করেছে। ফিফটি আছে তার। সামনে ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে বিগব্যাশ আছে, আশা করি ওখানে খেলে ফিরে আসবে। আমার মনে হয় নির্বাচক এবং কোচিং স্টাফ বিষয়টি দেখবে। স্টিভেন স্মিথেরটা হতাশাজনক। তাকে বেঞ্চে না বসিয়ে অভিজ্ঞতা কাজে লাগানোর সুযোগ ছিল।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: অস্ট্রেলিয়ার মতো বাংলাদেশও শুরুতেই বাদ পড়েছে। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বাংলাদেশের ভালো না করার কারণ কি?

গিলেস্পি: বাংলাদেশে অনেক ভালো ক্রিকেটার আছে। আমার কাছে মনে হয় টি-টোয়েন্টিতে ভালো দল তারা। কিছু জায়গায় উন্নতি করতে হবে। তারা যেটা করে ছয় সাত ওভারের মধ্যে উইকেট হারিয়ে ফেলে। মাঝেও উইকেট ধরে রাখতে পারে না। কয়েক বলের মধ্যে তিন উইকেট হারিয়ে ফেললে চাপে পড়বেই। বড় স্কোর হবে না। এক্ষেত্রে ইনিংস গড়ে তোলা কঠিন।

প্রথমত নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারানো বন্ধ করতে হবে। ইনিংস বিল্ডআপ করতে হবে। তাহলে ভালো করার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে। বোলাররা তো খুবই ভালো। ডিফেন্সিভ বোলার আছে। ভালো দল এবং এভারেজ দলের মধ্যে পার্থক্য হলো ভালো দল কঠিন মুহূর্তে ম্যাচ বের করতে পারে। বাংলাদেশ ভারত ও পাকিস্তানের বিপক্ষে অসাধারণ ক্রিকেট খেলেছে। আমার মনে হয় ঠিক পথেই আছে তারা।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: রশিদ খান বিগ ব্যাশে আপনার দলে খেলছে। লেগ স্পিনার থেকে অলরাউন্ডার হয়ে উঠছে। রশিদের মতো বাংলাদেশের ক্রিকেটাররাও তো পরিশ্রম আর অনুশীলন করছে। পরিবর্তনের ক্ষেত্রে পার্থক্যের কারণ কি?

গিলেস্পি: দেখুন পুরো ব্যাপারটাই হচ্ছে অনুশীলনের। রশিদ বুঝেছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বা ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে কি প্রয়োজন। সেভাবেই সে নিজেকে বদলেছে। এখন ওর ব্যাটিং দেখেন, কেউ ভেবেছিল ও এমন করতে পারবে? বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের ক্ষমতা নেই তা আমি বলছি না। কিন্তু ওরা কতদূর নিজেদের নিয়ে ভাবতে চাইছে এটা ওদের বুঝতে হবে। কি করতে চাইছে সেটাও বুঝতে হবে। অনুশীলনের ওপর কোন ওষুধ নেই।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: টেস্টে এখন কেউ দ্বিশতক হাঁকালেই আপনি টুইট করেন। অনেকদিন কোন টুইট দেখছি না। সেটার কারণ কি?

গিলেস্পি: আমি টুইটারে মজা করতাম। খুব ভালো লাগতো, আমার দলে খেলোয়াড়রা যোগ দিচ্ছে এটা ভেবে। যেহেতু আমি বোলার হিসেবে দ্বিশতক হাঁকিয়েছিলাম ওদের ক্লাবে আমন্ত্রণ জানাতাম। কিন্তু এখন টুইটার চালাই না, ডিলেট করে দিয়েছি। অনেক বাজে বাজে লোক আছে ওখানে, অশালীন মন্তব্য করে।