নারী এশিয়া কাপ

ডাক্তার বা আর্মি হতে না পারার আক্ষেপ থেকেই লেগ স্পিনার তুবা

মমিনুল ইসলাম

মমিনুল ইসলাম
প্রকাশের তারিখ: 18:22 বুধবার, 05 অক্টোবর, 2022

|| ক্রিকফ্রেঞ্জি করেসপন্ডেন্ট, সিলেট থেকে ||

দেশের প্রতি ভালোবাসা ও মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে পাকিস্তানের সেবা করতে চেয়েছিলেন তুবা হাসান। পড়াশোনার শুরুর দিকটায় ডাক্তার বা আর্মি হওয়ার শখ ছিল পাকিস্তানের এই লেগ স্পিনারের। তবে গলিতে খেলতে খেলতে ক্রিকেটের প্রতি আলাদা আবেগ কাজ করতে শুরু করে তার। ক্রিকেটীয় পরিবার হওয়ায় বাবাসহ অন্যদের সমর্থনটাও পেয়েছিলেন তুবা। এরপর থেকেই ক্রিকেটের শুরু।

ক্রিকেটে এসেই লেগ স্পিন দিয়ে সবাইকে চমকে দিয়েছিলেন তিনি। অভিষেক ম্যাচে দারুণ এক ডেলিভারিতে হার্ষিতা সামাবিক্রমাকে বোল্ড করে আলোড়ন তুলেছিলেন। জাতীয় দলের হয়ে এশিয়া কাপে প্রথমবার খেলছেন এই লেগ স্পিনার। সিলেটে খেলতে এসে ক্রিকফ্রেঞ্জিকে দেয়া সাক্ষাৎকারে ক্রিকেটে উঠে আসা, শাদাব খানের প্রশংসার অনুভূতি, গলির ক্রিকেট খেলার অভিজ্ঞতা এবং পাকিস্তানের এশিয়া কাপ জয়ের সম্ভাবনার কথা মমিনুল ইসলামকে জানিয়েছেন তুবা।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: আপনার প্রথম এশিয়া কাপ। কেমন উপভোগ করছেন?

এটা আমার প্রথম এশিয়া কাপ। এখন পর্যন্ত বেশ উপভোগ করছি। বাংলাদেশের আবহাওয়া, পরিবেশ, সবকিছুই আসলে সুন্দর। এখানে খেলতে এসে বেশ ভালো লাগছে।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: আপনি তো গলির ক্রিকেট খেলেছেন। সেই সময়টার কথা যদি বলতেন...

শুরুর দিকে ক্রিকেট খেলাটা কঠিন ছিল। খেলার জন্য পরিবেশটা পক্ষে ছিল না। আমি যখন খেলা শুরু করি তখন আসলে স্কুলে মেয়েদের ক্রিকেট হতো না। বাবা আমাকে ক্রিকেট খেলতে নিয়ে যেতো। গলিতে আমি প্রচুর ক্রিকেট খেলেছি। সেখানে ছেলেরাই বেশি খেলতো। দেখা যেতো ১০ জন ছেলে খেলছে সেখানে তাদের সঙ্গে আমিই একমাত্র মেয়ে। তবে এখন সময় অনেকটা বদলে গেছে। পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড ভালোভাবে নজর দিচ্ছে। ইমার্জিং ক্রিকেটার নিয়ে কাজ করছে। এটা ভালো ব্যাপার।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: আপনি বলছিলেন যে ছেলেদের সঙ্গে ক্রিকেট খেলেছেন। তাদের সঙ্গে মানিয়ে নেয়া কতটা কঠিন ছিল?

আমার মনে হয় শুরুর দিকে ছেলেদের বিপক্ষে খেলাটা এত বেশি কঠিন ছিল না। আমার মনে আছে তাদের সঙ্গে খেলার কারণে আত্মবিশ্বাস বেড়েছে। তখন আমার ভাবনায় শুধু এটা ছিল যে প্রতিপক্ষে ছেলে বা মেয়ে যেই থাকুক না কেন আত্মবিশ্বাসী থাকতে হবে।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: আপনার তো ডাক্তার বা আর্মি হওয়ার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু আপনি তো ক্রিকেটার হয়ে গেলেন...

হ্যাঁ, ইচ্ছে ছিল। তবে সবসময় আপনি যা চাইবেন তা পাবেন না। মাঝে মাঝে কিছু পেতে হলে অনেক কিছু বিসর্জন দিতে হয়। আমি পাকিস্তানের জন্য কিছু করতে চাইতাম। সে কারণেই আসলে ডাক্তার হবার বা আর্মিতে যাওয়ার শখ ছিল। দুইটার একটাও যেহেতু হতে পারিনি তাই ক্রিকেটার হয়েছি। এটাও ভালো লাগছে, দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করছি।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: আপনার কি মনে হয় ছেলেদের বিপক্ষে খেলার কারণে আপনার ক্রিকেটের উন্নতি হয়েছে...

হ্যাঁ। আসলে আসল ব্যাপারটা হচ্ছে আপনি যখন ছেলেদের বিপক্ষে খেলবেন তখন ব্যাপারটা খুবই ভালো। কারণ টি-টোয়েন্টির মতো ছেলেদের ক্রিকেটও অনেক দ্রুত। আমার মনে হয় ক্লাব ক্রিকেটে ছেলেদের বিপক্ষে খেলা আপনাকে অনেক কাজে দেবে।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: আপনি তো শুরু থেকেই লেগস্পিনার হতে চেয়েছিলেন। লেগ স্পিনার হিসেবে কাকে আদর্শ মানেন?

হ্যাঁ, আমি শুরু থেকেই লেগ স্পিনার হতে চেয়েছি। রশিদ খান এবং শাদাব খানকে আমি আমার আদর্শ মানি।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: অভিষেকে হার্শিতাকে বোল্ড করার পর আপনাকে নিয়ে শাদাব খান টুইটারে লিখেছিলেন, তারকা তৈরি হচ্ছে। এটা দেখার পর অনুভূতি কেমন ছিল?

পাকিস্তানি ক্রিকেটার হিসেবে আমার মনে হয় এটি আমার জন্য অনেক সম্মানের। এখন পাকিস্তানের পুরুষ ক্রিকেটাররা আমাদের সমর্থন করতে শুরু করেছে। এটা দারুণ ব্যাপার এবং এই সমর্থনটাই আমাদের প্রয়োজন বিশ্ব ক্রিকেট এবং পাকিস্তানি ছেলেদের থেকে।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: প্রথমবার পাকিস্তানের হয়ে খেলতে নামার আগের রাতের অভিজ্ঞতাটা যদি একটু বলতেন...

আসলে, ওই রাতে আমি অনেক বেশি রোমাঞ্চিত ছিলাম। কারণ জানতাম কাল আমার অভিষেক হচ্ছে। আমার মনে আছে ওই রাতে আমি ঠিক মতো ঘুমাতেও পারিনি। মাথায় অনেক কিছুই চলছিল। খুবই রোমাঞ্চিত ছিলাম।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: এসিসি ইমার্জিং কাপ খেলার পর দল থেকে বাদ পড়েছিলেন। এখন জাতীয় দল খেলছেন। সেই সময়টা নিশ্চয় কঠিন ছিল?

আমার মনে হয় না সেটা খুবই কঠিন সময় ছিল। ওই সময়টায় আমি অনেক কিছুই শিখছিলাম, আমি আমার লক্ষ্যে আরও অবিচল হচ্ছিলাম। সবচেয়ে বড় কথা হলো আমি আমার ক্রিকেটটাকে ছাড়িনি। আমি স্বপ্নের পেছনে ছুটছিলাম এবং সেটা অর্জন করতে চেয়েছিলাম।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: অল্প বয়সেই উত্থান-পতন দেখেছেন। মাঝে হতাশা কাজ করেছে নিশ্চয়...

না। যেহেতু আপনাকে বলছিলাম খেলায় আসতে আমার বাবা আমাকে অনেক সমর্থন দিয়েছে। সে সবসময় সমর্থন দিতো এবং খেলতে সাহায্য করতো। আর একটা ব্যাপার হচ্ছে আমাদের পরিবারটা ক্রিকেটীয় ছিল। তাই ব্যাপারগুলো সহজ হয়েছে।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: ভারতের মতো প্রতিপক্ষকে টেক্কা দিয়ে এশিয়া কাপ জেতা সম্ভব বলে মনে হয়?

আমরা বেশি আশাবাদী (এশিয়া কাপের ট্রফি জিততে)। এটা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই যে ভারত খুব ভালো দল। তবে আমাদেরও প্রত্যেক ম্যাচ জেতার সক্ষমতা রয়েছে। টি-টোয়েন্টি খুব ছোট পরিসরের খেলা। আমাদের বিশ্বাস আছে আমরা পারবো।