আইপিএল ২০২১

প্রথম ম্যাচের 'ফাঁড়া' কাটাতে পারল না মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স

আবিদ মোহাম্মদ

আবিদ মোহাম্মদ
প্রকাশের তারিখ: 00:01 শনিবার, 10 এপ্রিল, 2021

|| ডেস্ক রিপোর্ট ||

ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) উদ্বোধনী ম্যাচে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স সর্বশেষ জয় পেয়েছিল ২০১২ মৌসুমে। এরপর ৮ মৌসুমে ৫ বার টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী ম্যাচে পরাজিত দল হিসেবে মাঠ ছেড়েছিল রোহিত শর্মার দল। এছাড়া গেল ৮ মৌসুমে নিজেদের প্রত্যেকটি প্রথম ম্যাচে হেরেছে দলটি। ২০২১ মৌসুমে এসে সুযোগ ছিল এই ইতিহাস বদলানোর। কিন্তু শুক্রবার রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর বিপক্ষে তা আর হল না। আবারও টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী ম্যাচ এবং দলটির প্রথম ম্যাচে পরাজয় নিয়ে মাঠ ছাড়তে হল আইপিএলের ৫ বারের চ্যাম্পিয়নদের।

করোনার কারণে এই মৌসুমে ঘরের মাঠের সুবিধা পাচ্ছে না কোনো দলই। চেন্নাইয়ের মাঠে টস ভাগ্যে জিতে বিরাট কোহলি বললেন,'হোম অ্যাডভান্টেজ' এর সুবিধা ছাড়াই জিততে আত্মবিশ্বাসী তার দল। মাঠের লড়াইয়েও সেটারই প্রমাণ দিল টুর্নামেন্টের তিনবারের রানার্স আপরা। 

টস জিতে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সকে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানান বিরাট। শুরুতে উইকেট স্লো থাকায় বল ঠিক মতো ব্যাটে আসছিল না। প্রথম ৪ ওভারে সেটারই সুবিধা নিয়েছেন মোহাম্মাদ সিরাজ-হার্শাল প্যাটেলরা। রোহিত শর্মার রান আউটের সঙ্গে বেশি ধুকছিলেন গেল মৌসুম পুরোটা বেঞ্চে কাটিয়ে দেয়া ক্রিস লিন।

পাওয়ার প্লে'র শেষ ওভারে এসে যুবেন্দ্র চহলের ওভারে ছক্কা এবং চার হাঁকিয়ে স্বস্তি পান লিন। এরপর থেকে দ্রুত রান তুলেছেন এই ব্যাটসম্যান। সূর্যকুমার যাদবকে সঙ্গে নিয়ে ৭ ওভারে যোগ করেছেন ৭০ রান। একাদশ ওভারে ছক্কা খেলেও সূর্যকে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফেরান আইপিএলের অভিষিক্ত পেসার কাইল জেমিসন। 

খানিক পর হাফ সেঞ্চুরির পথে হাঁটতে থাকা লিন ফেরেন ৪৯ রানে সুন্দরকে ক্যাচ দিয়ে। সে সময় ১২.৫ ওভারে মুম্বাইয়ের রান ১০৫। ক্রিজে নামা ইশান কিশান এবং হার্দিক পান্ডিয়া হাত খুলে খেলতে শুরু করলে মনে হচ্ছিল স্কোর ১৮০ বা এর কাছাকাছি যাবে। কিন্তু সে সময় থেকেই বিরাটবাহিনীকে ম্যাচে ফেরান হার্শাল।

১৬, ১৮ এবং ২০ নম্বর ওভারে তার বোলিংয়ের সামনে দাঁড়াতেই পারেনি মুম্বাইয়ের ব্যাটসম্যানরা। একে একে ফিরেছেন কিশান, পান্ডিয়া ব্রাদার্স,  কাইরন পোলার্ড এবং মার্কো ইয়ানসেন। শেষ ওভারে জোড়া শিকার করে হ্যাটট্রিকের সুযোগ পেয়ে তা করতে না পারলেও পরের বলেই নিয়েছেন উইকেট। 

শেষ ওভারে তার তিন উইকেট এবং এক রান সহ ৪ উইকেট হারিয়ে রোহিতের দল ২০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে স্কোরবোর্ডে তোলে ১৫৯ রানে। হার্শাল ২৭ রান দিয়ে তুলে নেন ৫ উইকেট। মুম্বাইয়ের বিপক্ষে ১৪ম মৌসুমে তিনিই প্রথম বোলার যিনি ৫ উইকেট নিয়েছেন। শেষ ২৪ বলে ২৪ রান নেয় ৫ বারের চ্যাম্পিয়নরা। কিন্ত উইকেট হারায় ৫টি।

১৬০ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে মুম্বাইয়ের পুরো উল্টো সূচনা করে বেঙ্গালুরু। ওয়াশিংটন সুন্দর শুরুতে জীবন পেয়ে ধীরে খেললেও দ্রুত রান তোলেন বিরাট কোহলি। তবে পঞ্চম ওভারে ১০ রানে সুন্দর ফেরেন ক্রুনালের শিকার হয়ে। খানিক পর রজত পাতিদারকে ইনসাইড এজে বোল্ড করেন ট্রেন্ট বোল্ট।

২ উইকেট হারিয়েও দলকে টেনে নিতে থাকেন বিরাট। তাকে দারুণ সঙ্গ দেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। গত মৌসুমে একটি ছক্কাও হাঁকাতে না পারা এই অস্ট্রেলিয়ান ক্রুনালকে ১০০ মিটার দূরে ছক্কা হাঁকিয়ে আক্ষেপ দূর করেন। কিন্তু ১৩তম ওভারে এসে কোহলিকে ৩৩ রানে লেগ বিফরের ফাঁদে ফেলেন বুমরাহ।

শেষ ৭ ওভারে বেঙ্গালুরুর প্রয়োজন ছিল ৬১ রান। ম্যাচের নাটাই কোন দলের পক্ষে যাবে তা তখনও অনেকটাই অনিশ্চিত। ১৫তম ওভারে বোলিংয়ে এসে ম্যাক্সওয়েল এবং শাহবাজকে ফিরিয়ে ম্যাচে আরেকটু রোমাঞ্চ নিয়ে আসেন ইয়ানসেন। কিন্তু অপরপ্রান্তে থাকা ডি ভিলিয়ার্স পরের ওভারে রাহুল চাহারকে ছক্কা-চার মেরে আবারও ম্যাচ আরসিবির নাগালে নিয়ে আসেন।

শেষ ২৪ বলে জয়ের জন্য বেঙ্গালুরুর প্রয়োজন ছিল ৩৯ রান। ১৭তম ওভারে ড্যানিয়েল ক্রিস্টিয়ানকে ফিরিয়ে দেন বুমরাহ। কিন্তু ১৮তম ওভারে বোল্টের প্রথম বলে ছক্কা হাঁকিয়ে বসেন ডি ভিলিয়ার্স। ওভারে আসে একটি বাউন্ডারিও। ১২ বলে ১৯ রান প্রয়োজন হলে ১৯তম ওভারে বুমরাহকে প্রথম বলে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ম্যাচ বেঙ্গালুরুর নাগালে নিয়ে আসেন এই প্রোটিয়া।

ওভারের তৃতীয় বলে আপার কাটে ৪ মেরে মুম্বাইকে ম্যাচ থেকে আরও ছিটকে দেন ডি ভিলিয়ার্স। সেই ওভারে জেমিসন রান আউট হলেও স্ট্রাইক পান এই ব্যাটসম্যান। শেষ ৬ বলে ৮ রান প্রয়োজন ছিল কোহলিবাহিনীর। শেষ ৩ বলে ৩ রান প্রয়োজন হলে ২ রান নিতে গিয়ে ৪৮ রানে রান আউট হন এবি ডি ভিলিয়ার্স।

শেষ বলের আগের বলে সিরাজের প্যাডে বল লাগলেও সিঙ্গেল নিতে সক্ষম হন এই ব্যাটসম্যান। শেষ এক বলে এক রানের প্রয়োজন ছিল আরসিবির। কিন্তু ইয়ানসেনের বল লেগে ঠেলে দিয়ে সিঙ্গেল নিয়ে দলকে জয়ের বন্দরে নিয়ে যান হার্শাল। ৩ উইকেট জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে বেঙ্গালুরু। ২০১২ সালের পর এই নিয়ে টানা ৯ মৌসুম নিজেদের প্রথম ম্যাচে পরাজয় নিয়ে মাঠ ছাড়ল রোহিত শর্মার দল। 

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স: ১৫৯/৯ (২০ ওভার) (লিন ৪৯) (হার্শাল ৫।২৭)

রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু: ১৬০/৭ (২০ ওভার) (ডি ভিলিয়ার্স ৪৮) (বুমরাহ ২/২৬)