বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ

হোয়াইটওয়াশ বাংলাদেশ

আবিদ মোহাম্মদ

আবিদ মোহাম্মদ
প্রকাশের তারিখ: 14:20 রবিবার, 14 ফেব্রুয়ারি, 2021

|| ক্রিকফ্রেঞ্জি করেসপন্ডেন্ট ||

ব্যাটসম্যানদের আসা-জাওয়ার মিছিলে ঢাকা টেস্টের ফলাফল সম্পর্কে আঁচ পাওয়া যাচ্ছিল। কিন্তু চতুর্থ দিন শেষ বিকেলে মেহেদি হাসান মিরাজের লড়াই টেস্ট জয়ের স্বপ্ন দেখে বাংলাদেশ। শেষ পর্যন্ত সেই স্বপ্নে বাঁধা হয়ে দাঁড়ান জোমেল ওয়ারিকেন। স্লিপে অসাধারণ রিফলেক্স ক্যাচ নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের জয় নিশ্চিত করেন রাকিম কর্নওয়াল।

১৭ রান দূর থেকে মাঠ ছাড়ে মুমিনুল হকের দল। শেষ বিকেলে মিরাজের এই লড়াই এড়াতে পারেনি ঘরের মাঠে বাংলাদেশ দলের হোয়াইটওয়াশ। সর্বশেষ ২০১২ সালে ঘরের মাঠে হোয়াইটওয়াশের লজ্জা পেয়েছিল বাংলাদেশ। সেটাও ছিল এই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষেই। ৯ বছর পর আবারও ঘরের মাঠে এমন লজ্জা পেল মুমিনুল-তামিমদের বাংলাদেশ।

২৩১ রানের লক্ষ্য তাড়া করা জন্য বাংলাদেশের হাতে ছিল দেড় দিন অর্থাৎ পাঁচ সেশন। কিন্তু দুই সেশন এবং এক দিন হাতে থাকতেই ২১৩ রানে অলআউট হয় রাসেল ডমিঙ্গোর শিষ্যরা। সর্বোচ্চ ৫০ রান আসে ওপেনার তামিম ইকবালের ব্যাট থেকে। 

স্বাগতিকদের ১০ উইকেটই নেন ক্যারিবিয়ান স্পিনাররা। সর্বোচ্চ ৪টি কর্নওয়াল এবং ৩টি করে নেন ওয়ারিকন ও ক্রেইগ ব্রাথওয়েট। আর দুই পেসার আলজারি জোসেফ এবং শ্যানন গ্যাব্রিয়েল মিলে ৬১.৩ ওভারের মধ্যে বল করেছেন মাত্র ৪ ওভার। 

চট্টগ্রাম টেস্টে হারের পর সিরিজে সমতা আনতে বাংলাদেশকে গড়তে হত রেকর্ড এবং পাল্টাতে হতো ইতিহাসও। কারণ চতুর্থ ইনিংসে এর আগে এতো বড় লক্ষ্য কখনও তাড়া করেনি টাইগাররা। সর্বোচ্চ ছিল ২১৫, ২০০৯ সালে এই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষেই। 

দুই ওপেনার তামিম ইকবাল এবং সৌম্য সরকার শুরুর ভিতটা গড়ে দেন। শুরু থেকেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ বোলারদের বিপক্ষে হাত খুলে খেলতে থাকেন তামিম। অন্যপ্রান্তে থাকা সৌম্য সঙ্গীতে শুধু সাপোর্ট দিয়ে গেছেন। দ্রুত রান তুলে দলকে ৫০'র ওপর নিয়ে যান তামিম। প্রতিপক্ষের বোলাররা চাপে রাখলেও দলীয় ৫৯ রানে ১৩ রান কয়রা সৌম্যকে বিদায় করেন অনিয়মিত স্পিনার ক্রেইগ ব্রাথওয়েট।

এরপর অবশ্য হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন তামিম। কিন্তু মাইলফলকে পৌঁছে তিনিও উইন্ডিজ দলপতিকে উইকেট ছুঁড়ে দেন। ২ উইকেট হারিয়ে বসা বাংলাদেশকে আরও বিপদে ফেলেন নাজমুল হোসেন। রাখিম কর্নওয়ালের বলে শর্ট লেগে ক্যাচ দিয়ে বসেন তিনি। ১১ রান করা এই ব্যাটসম্যানের বিদায়ে পর চা বিরতিতে যায় বাংলাদেশ।

শেষ সেশনে নেমেই মুশফিকুর রহিমের মতো অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে ব্যাকফুটে চলে যায় স্বাগতিকরা। ওয়ারিকেনের বলে উইকেটের পেছনে ১৪ রানে ক্যাচ দিয়ে বসেন তিনি। তবে সে সময় দলের স্কোর ১০০ পেরিয়েছে। খানিক পর মোহাম্মদ মিঠুনকে ১০ রানে বিদায় করেন কর্নওয়াল।

ব্যাটসম্যানরা আসা-জাওয়ায় ব্যস্ত থাকলেও এক প্রান্তে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিলেন মুমিনুল হক। কিন্তু দলীয় ১৪৭ রানে তাঁকেও বিদায় করেন ওয়ারিকেন। লিটন দাস ২২ রানে ফেরেন কর্নওয়ালকে উইকেট দিয়ে। এরপর দলকে টেনে নেয়ার দায়িত্ব পরে নীচের সারির ব্যাটসম্যানদের কাঁধে।

এক প্রান্তে মেহেদি হাসান মিরাজ স্কোরবোর্ডে রান যোগ করতে থাকেন। তাকে সঙ্গ দেয়া তাইজুল ফেরেন ৮ রানে এবং নাঈম হাসান বিদায় নেন ১৩ রানে দিনের খেলা শেষ হবে ঠিক তখন। কিন্তু ৯ উইকেট পরে যাওয়ায় ওভার বাড়িয়ে দেন আম্পায়াররা।

সে সময় মিরাজও হাত খুলে খেলতে শুরু করেন। বাউন্ডারি-ওভারবাউন্ডারি মেরে দলকে জয়ের খুব কাছে নিয়ে যান।ওপরপ্রান্তে উইকেটে টিকে থাকার লড়াই চালিয়ে যান আবু জায়েদ। কিন্তু দিনের খেলার আর ৬ ওভার থাকতে ওয়ারিকেনের বলে স্লিপে ক্যাচ আউট হন মিরাজ। ভেঙ্গে যায় বাংলাদেশের সিরিজ সমতায় শেষ করার স্বপ্ন। হোয়াইটওয়াশের লজ্জা নিয়েই মাঠ ছাড়ে দল।

এদিন অবশ্য দুই দল মিলিয়ে মোট পতন হয়েছে ১৭ উইকেটের। ৩ উইকেটে ৪১ রান নিয়ে খেলতে নেমে ক্রেইগ ব্রাথওয়েটের দল গুটিয়ে যায় ১১৭ রানে। সর্বোচ্চ ৪টি উইকেট নেন তাইজুল ইসলাম। এর আগে প্রথম ইনিংসে ৪০৯ করেছিল সফরকারীরা। বাংলাদেশ অল আউট হয় ২৯৬ রানে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

ওয়েস্ট ইন্ডিজ (প্রথম ইনিংস): ৪০৯/১০ (ওভার ১৪২.২) (বোনার ৯০, জশুয়া ৯২, আলজারি ৮২), (রাহি ৪/৩৯৮)

বাংলাদেশ (প্রথম ইনিংস): ২৯৬/১০ (৯৬.৫ ওভার) (মুশফিক ৫৪, লিটন ৭১, মিরাজ ৫৭, কর্নওয়াল ৫/৭৪)

ওয়েস্ট ইন্ডিজ (দ্বিতীয় ইনিংস): ১১৭/১০ (ওভার ৪৮) (বোনার ৩৮ দা সিলভা ২০ তাইজুল ৪/৩৬, নাইম ৩/৩৪ রাহি ২/৩২)

বাংলাদেশ (দ্বিতীয় ইনিংস): ২১৩/১০ (ওভার ৬১.৩) (তামিম ৫০) ; কর্নওয়াল ৪/১০৫)