বাংলাদেশ বনাম জিম্বাবুয়ে

তবুও টেস্ট ক্রিকেটে অস্তিত্ব সংকটে রিয়াদ!

জুবাইর

জুবাইর
প্রকাশের তারিখ: 15:43 শুক্রবার, 02 নভেম্বর, 2018

|| ক্রিকফ্রেঞ্জি করেসপন্ডেন্ট ||

২০০৯ সাল থেকে টেস্ট ক্রিকেট খেলে আসা মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ২০১৮ সালে এসে টেস্ট দলের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বছরের শুরুতে বাংলাদেশকে টেস্টে নেতৃত্বভার পান তিনি। 

যে কোন ক্রিকেটারের সর্বোচ্চ স্বপ্ন থাকে দেশকে টেস্ট ক্রিকেটে নেতৃত্ব দেয়ার। রিয়াদের সেই স্বপ্ন স্বাদও অপূর্ণ থাকে নি। নিয়মিত অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের অনুপস্থিতিতে শ্রীলঙ্কা সিরিজে টেস্ট অধিনায়ক ছিলেন মাহমুদুল্লাহ। 

ঘরের মাঠে দুই টেস্টে দলের নেতৃত্ব দেয়ার পর ফের জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে দলের নেতৃত্ব রিয়াদকেই সামলাতে হচ্ছে। আর এবারও আপদকালীন টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে। ২০১৮ সালে নেতৃত্বে আসা অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহর ক্যারিয়ার কখনই মসৃণ পথ ধরে অগ্রসর হয় নি। 

রিয়াদের দীর্ঘ ক্যারিয়ারে বহু জখমের দাগ স্পষ্ট প্রতিমেয়। ৩৯ টেস্ট খেলা মাহমুদুল্লাহর নামের পাশে টেস্ট সেঞ্চুরি মাত্র একটি। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ২০১০ সালে করা সেঞ্চুরির বয়স এখন আট বছর। 

টেস্ট ক্রিকেটার হিসেবে ২০১০ সাল মাহমুদুল্লাহর জন্য স্মরণীয় ছিল। লোয়ার মিডেল অর্ডারে ব্যাট করেও সাত ম্যাচ ও ১৪ ইনিংসে প্রায় ৪২ গড়ে রান তুলেছেন তিনি। এক সেঞ্চুরির বিপরিতে চারটি ফিফটি এসেছে রিয়াদের ব্যাট থেকে। 

এদের মধ্যে ভারতের বিপক্ষে ৯৬ রানের অপরাজিত ইনিংস ছিল। সেই সময়ে লোয়ার মিডেল অর্ডারে বিশ্বের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান ছিলেন তিনি। কিন্তু ২০১০ সালের ধারাবাহিকতা আগলে রাখতে পারেননি মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। 

২০১১, ২০১২ ও ২০১৩ মৌসুমে ১৫ ইনিংসে মাত্র তিনবার অর্ধশতর দেখা পেয়েছেন তিনি। ২০১৪ সালে এসে ফের ফর্ম খুঁজে পান তিনি। ছয় ম্যাচের ১১ ইনিংসে ৩৮ গড় ও পাঁচ ফিফটিতে পাঁচশর কাছাকাছি রান করেন মাহমুদুল্লাহ। তবে সেঞ্চুরির ভাটা কাটছিল না তাঁর। 

বরং ক্যারিয়ারের সবচেয়ে কঠিন সময়টা সামনেই অপেক্ষা করছিল না। ২০১৫ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ১২টি টেস্ট ও ২২ ইনিংসে ব্যাট করে মাত্র তিনবার অর্ধশতর দেখা পেয়েছিলেন তিনি।

ধারাবাহিকভাবে ইনিংসের ভাল সূচনা করে গেলেও বড় ইনিংস আসছিল না রিয়াদের উইলো থেকে। ঠিক তখনই রিয়াদ তাঁর টেস্ট ক্যারিয়ারে সবচেয়ে বড় ধাক্কার সম্মুখীন হন। শ্রীলঙ্কায় জয় বাংলা সিরিজের দ্বিতীয় এবং বাংলাদেশের শততম টেস্টের দল থেকে বাদ দেয়া হয় তাঁকে। 

'আমি সবসময় বিশ্বাস করি যদি আমি ব্যর্থ হই তাহলে সেটা আমারই দোষ। আমি সেই সময় আলো পারফর্ম করছিলাম না। এগুলোই জীবনের শিক্ষার অংশ। আমি সেই জিনিস গুলো থেকে শেখার চেষ্টা করি ও ওই শিক্ষা গুলোই আমাকে সামনে আরও কঠোর পরিশ্রম করার ক্ষেত্রে উৎসাহ দেয়,' শততম টেস্ট থেকে বাদ পড়া প্রসঙ্গে বলেছেন মাহমুদুল্লাহ। 

ক্যারিয়ারের সবচেয়ে 'লো পয়েন্ট' থেকে আবার ঘুরে দাঁড়াতে বেশি সময় লাগে নি মাহমুদুল্লাহর। সাকিব আল হাসান টেস্ট ক্রিকেট থেকে ছুটি নেয়ায় দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজেই অভিজ্ঞতার কারণে টেস্ট স্কোয়াডে টিকে যান তিনি। 

ফেরার ম্যাচে ৬৬ রানের ইনিংস খেলে শিরোনাম কাড়েন তিনি। রিয়াদের জন্য দক্ষিণ আফ্রিকা সফরকে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় অধ্যায় বলা চলে। এরপর যেই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দল থেকে বাদ পড়েছিলেন, সেই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্টে প্রথমবারের মত অধিনায়কত্ব করেন তিনি।

অধিনায়ক হিসেবে নিজের প্রথম ইনিংসে চিটাগাং টেস্টে অপরাজিত ৮৩ রানের ইনিংস খেলেন তিনি, দ্বিতীয় ইনিংসে খেলেন সমান গুরুত্বপূর্ণ ৬৫ বলে ২৮ রানের অপরাজিত ইনিংস, যা বাংলাদেশকে ম্যাচ বাঁচাতে সাহায্য করেছে। 

তাঁর নেতৃত্বে ঢাকা টেস্টে বাংলাদেশকে হারতে হয়। ব্যাট হাতেও ব্যর্থ হন তিনি। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজে আবার সাকিব আল হাসানের ডেপুটি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। সেখানেও রান আসেনি এই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানের ব্যাট থেকে। 

ক্যারিয়ারের এই পর্যায়ে এসে টেস্ট দলকে নেতৃত্ব দিতে হচ্ছে রিয়াদকে। যেখানে তাঁর সমসাময়িক সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল ও মুশফিকুর রহিমরা ইতিমধ্যেই টেস্ট ক্রিকেটে নিজেদের জায়গা পাকা করে ফেলেছেন এবং ছুটছেন কিংবদন্তী হওয়ার পথে।

সেই পথ থেকে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের দূরত্ব অনেক। 'আমার মনে হয় আমার অনেক কিছুই প্রমান করার আছে, বিশেষ করে টেস্ট ক্রিকেটে। আমার মনে হয় আমার উন্নতির অনেক জায়গা আছে,' জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিলেট টেস্টের পূর্বে সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন মাহমুদুল্লাহ।