ক্রিকেট লিজেন্ডস

কলিন ব্লান্ডঃ দ্য গোল্ডেন ঈগল

ক্রিকফ্রেঞ্জি করেসপন্ডেন্ট

ক্রিকফ্রেঞ্জি করেসপন্ডেন্ট
প্রকাশের তারিখ: 11:54 শনিবার, 30 জুন, 2018

একজন আফ্রিকান ক্রিকেটারের নাম বলুন তো যিনি ব্যাটিং কিংবা বোলিং থেকেও ফিল্ডিং দিয়ে নিজের জাতটা বেশি চিনিয়েছেন? হ্যাঁ, উত্তরে জন্টি রোডসের নামটাই আসবে সবার আগে। কিন্তু রোডসের আগেও একজন ছিলেন যিনি তাঁর দুর্দান্ত ফিল্ডিং প্রতিভা দিয়ে ক্রিকেট বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলেন। তিনি হলেন কলিন ব্ল্যান্ড; দক্ষিণ আফ্রিকার বিখ্যাত ফিল্ডিং লিগ্যাসির সূচনাটা যার হাত ধরেই হয়েছিল। 

১৯৩৮ সালের ৫ এপ্রিল, তৎকালীন রোডেশিয়ার বুলাওয়েতে জন্মগ্রহণ করেন বিশ্বনন্দিত এই তারকা ফিল্ডার। কলিন ব্ল্যান্ডকে মনে করা হয় রোডেশিয়ান ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় তারকা, রোডেশিয়ান ক্রিকেটকে সর্বপ্রথম যিনি বিশ্ব দরবারে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। তাঁকে আফ্রিকার তো বটেই; 'তর্কসাপেক্ষে' ক্রিকেট ইতিহাসেরই সর্বকালের সেরা আউটফিল্ডার বলে মানেন অনেকে। ঈগলের মত তীক্ষ্ণ দৃষ্টিশক্তি, ক্ষিপ্রতা আর ধূর্ততার কারণে তাঁকে ডাকা হত 'দ্য গোল্ডেন ঈগল' নামে।

এরকমটা বলা হয়ে থাকে যে, আউটফিল্ডিংকে নাকি রীতিমতো একটা শিল্পে পরিনত করেছিলেন কলিন ব্ল্যান্ড। চিতার ন্যায় গতি, ক্ষিপ্রতা আর চমৎকার রিফ্লেক্সের পাশাপাশি তাঁর ছিল দুর্দান্ত স্ট্যামিনা আর ন্যাচারাল অ্যাথলেটিসিজম। আর ছিল নিখুঁত ও শক্তিশালী থ্রোয়িং আর্ম। বুলেটগতির 'ডেড আই' থ্রোয়ের জন্য তাঁর ছিল দুনিয়াজোড়া খ্যাতি। যেকোন দুরত্ব ও অ্যাঙ্গেল থেকে সরাসরি থ্রোতে স্টাম্পে হিট করার ক্ষমতা রাখতেন তিনি। 

তাঁর একটি বিশেষ ক্ষমতা ছিল যে তিনি ফুল স্পিডে দৌড়ানো অবস্থাতেই নিখুঁত হিটে স্টাম্পে লাগাতে পারতেন। তাঁর ক্যারিয়ারের বেশিরভাগ রান আউটগুলো তিনি করেছেন কভার এবং মিড উইকেট অঞ্চল থেকে। 'সাইড অন' একশনে মাত্র এক স্টাম্প দেখা যায় এমন দুরূহ অ্যাঙ্গেল থেকেও অনায়াসে স্টাম্পে হিট করেছেন অসংখ্যবার।

ব্ল্যান্ড সবসময়ই বলতেন, “The more I practise, the luckier I get.” প্র্যাকটিস সেশনে তিন স্টাম্প নয় বরং এক স্টাম্প লক্ষ্য করে তাতে নিয়মিত হিট করতেন তিনি। বিভিন্ন দুরত্ব ও অ্যাঙ্গেল থেকে ঘন্টার পর ঘন্টা ডিরেক্ট থ্রোয়ের অনুশীলন করে যেতেন। এমনকি তাঁর প্র্যাকটিস সেশন দেখার জন্যও রীতিমতো ভিড় জমে যেত। মাঠে আসা দর্শকদের মোটেও নিরাশ করতেন না তিনি। 

একবার ভাবুন তো, সেই ষাটের দশকে একজন খেলোয়াড়ের ফিল্ডিং অনুশীলন দেখতে মানুষ ভিড় করছে! কলিন ব্ল্যান্ডের জনপ্রিয়তাটা ঠিক কোন পর্যায়ে পৌঁছেছিল সেটা নিশ্চয়ই আন্দাজ করতে পারছেন। 

ফিল্ডার হিসেবে কলিন ব্ল্যান্ডের শ্রেষ্ঠত্ব ও অসাধারণত্ব সম্পর্কে ক্রিকইনফো বলছে, "Bulawayo-born Colin Bland will go down in cricket history as one of the greatest cover fielders. He combined speed, perfect balance and a quite exceptional throwing arm, and thrilled spectators and intimidated opposing batsmen in equal measure. Even in the modern era, when outstanding fielders are more commonplace, Bland would have stood out.”

১৯৬৫ সালে লর্ডস টেস্টে 'অবিশ্বাস্য' ও 'শ্বাসরুদ্ধকর' দুটো ডিরেক্ট হিটে ইংলিশ ব্যাটসম্যান কেন ব্যারিংটন ও জিম পার্কসকে রান আউট করেছিলেন তিনি। খেলার মোড় ঘুরিয়ে দেয়া ওই দুটো অসাধারণ রান আউটই পরবর্তীতে সিরিজ নির্ধারক হয়ে দাঁড়িয়েছিল।

ব্যারিংটনকে রান আউট করার অপরূপ দৃশ্যটি বর্ণনা করতে গিয়ে উইজডেন লিখেছে, “From mid-wicket, the lean, rangy form of Colin Bland was seen darting towards the square-leg umpire. The naked eye strained to capture the blur as in one magnificent motion the Rhodesian swooped on the ball, swung his torso at that hurtling speed and unleashed a throw with not a part of the body in touch with earth. It travelled like an arrow, along an absolute horizontal trajectory, and hit the stumps at the non-striker’s end.”

ইংল্যান্ডের বিখ্যাত ধারাভাষ্যকার ব্রায়ান জন্সটন ১৯৬৫ সালের সেই সিরিজ সম্পর্কে স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে একবার বলেছিলেন, "For the first time I heard people saying that they must go to a match especially to watch a fielder. His fielding ability was almost mythical."

ব্ল্যান্ড ফিল্ডিং করতেন মূলত কভারে। কখনোবা মিড উইকেট কিংবা স্কয়ার লেগেও দেখা যেত তাঁকে। সেযুগের অনেকের মতে, উপস্থিত বুদ্ধি আর অ্যান্টিসিপেশন ক্ষমতার জোরে তিনি নাকি আগেভাগেই বলের গতিপথ নির্ণয় করতে পারতেন। নিজের ফিল্ডিং এরিয়ার অনেকখানি কৌণিক দুরত্ব কাভার করতে পারতেন একাই। 

যে অঞ্চলে ব্ল্যান্ড থাকতেন, সেদিকে ব্যাটসম্যানরা সাধারণত সিঙ্গেল নিতে চাইতেন না। ঐ সময় নাকি একটা প্রবাদই ছিল, 'যতই তেড়েফুঁড়ে তুমি কভারে বল পাঠাও না কেন, রান তুমি পাবে না, কারণ ওখানে থাকেন কলিন ব্ল্যান্ড'! ব্ল্যান্ডকে ফাঁকি দিয়ে সিঙ্গেল বের করাটা ছিল তাই অসম্ভবের কাছাকাছি। তাঁর নিখুঁত থ্রোয়িং আর্মকে চ্যালেঞ্জ জানানোর মত সাধ কিংবা সাধ্য কারোই ছিল না।

ফিল্ডিংয়ে অভিনব সব কৌশল কিংবা ট্যাকটিক্স প্রয়োগের জন্যও তাঁর নামডাক ছিল। তিনি মিড অফ কিংবা মিড অনে থাকা ফিল্ডারটিকে কিছুটা ডিপে থাকতে বলতেন যেন ব্যাটসম্যান ওই অঞ্চল বরাবর আলতো করে ড্রাইভ খেলে সিঙ্গেল নেওয়ার চেষ্টা করে। ব্যাটসম্যান মিড অফ কিংবা মিড অন বরাবর সিঙ্গেলের আশায় যেইনা পুশ করতেন, তৎক্ষণাৎ তিনি কভার অঞ্চল থেকে ক্ষিপ্রগতিতে ছুটে যেতেন বলের দিকে এবং ধরেই ডিরেক্ট থ্রো করতেন নন স্ট্রাইক এন্ডের উইকেট বরাবর। এভাবে ব্যাটসম্যানকে ফাঁদে ফেলেও অনেক রান আউট আদায় করে নিতেন তিনি।

দলের প্রয়োজনে অনেক সময় বাউন্ডারিতেও ফিল্ডিং করেছেন তিনি। এবং যথারীতি সেখানেও দিয়েছেন দক্ষতার পরিচয়। দ্রুত দৌড়ানোর ক্ষমতা ও লম্বা স্টেপ নিতে পারার কারণে চমৎকারভাবে বলকে চেজ করতে পারতেন তিনি। পাশাপাশি অনেক দূর থেকে পাওয়ারফুল ও এক্যুরেট থ্রো করাতেও ছিল তাঁর  পারদর্শিতা। 

উইজডেনের বর্ণনা থেকে জানতে পারি, “His throws from more than 80 metres travelled in a blink, traversing the whole distance at the level of the bails.”
কেবল ধ্রুপদী ফিল্ডার হিসেবেই নয়; ব্যাটিং সামর্থ্যের বিবেচনাতেও খুব একটা পিছিয়ে ছিলেন না বুলাওয়েতে জন্মগ্রহণকারী কিংবদন্তীতুল্য এই ক্রিকেটার। ২১ টেস্টে ৪৯.০৮ গড়ে তাঁর সংগ্রহ ১৬৬৯ রান। ৩ সেঞ্চুরির পাশে ফিফটি আছে ৯টা।

তাঁর ব্যাটিংয়ের হাতটা যে মন্দ ছিল না পরিসংখ্যানই তার প্রমান। আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ের জন্য দর্শকদের মাঝে তুমুল জনপ্রিয় এই রোডেশিয়ান একজন 'ক্লিন হিটার' হিসেবেও যথেষ্ট সুনাম কুড়িয়েছেন। কভার কিংবা মিড উইকেটের ওপর দিয়ে লফটেড শট খেলায় ছিল তাঁর বিশেষ পারদর্শিতা। ব্যাট হাতে ইনিংসের শুরুতেই ছক্কা হাঁকানোটা ছিল তাঁর ট্রেডমার্ক। 

১৯৬১-৬২ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে হোম সিরিজ দিয়ে তাঁর আন্তর্জাতিক অভিষেক। ডারবানের কিংসমিডে আয়োজিত অভিষেক টেস্টে অবশ্য ব্যাট হাতে তেমন কিছু করতে পারেন নি তিনি। দুই ইনিংস মিলে করেছিলেন মাত্র ৩৫ রান। 

৫ ম্যাচের টেস্ট সিরিজের সবগুলোতে অংশ নেয়া ব্ল্যান্ডের ব্যাট থেকে এসেছিল ৯ ইনিংসে মাত্র ২০৫ রান। ব্যাটিং গড় ২২.৭৮, কোন ফিফটি ছিল না, সর্বোচ্চ ইনিংস ছিল ৪২ রানের।

ব্যাটিংয়ে রান না পেলেও সিরিজের সবচাইতে আলোচিত ঘটনাটির জন্ম দিয়েছিলেন ব্ল্যান্ডই। নিশ্চিত বাউন্ডারি হতে যাওয়া একটি বলকে শূন্যে ভাসমান অবস্থায় ছোঁ মেরে 'অবিশ্বাস্য' ক্যাচে পরিণত করেছিলেন তিনি। 

জোহানেসবার্গের নিউ ওয়ান্ডারার্সে অনুষ্ঠিত সিরিজের চতুর্থ ম্যাচের ঘটনা। শুরু থেকেই দারুণ খেলতে থাকা কিউই অধিনায়ক জন রিডের সংগ্রহ তখন ৬০ রান, ৮৪ বলে। তাঁকে ফেরাতে হলে এক্সট্রা অর্ডিনারি কিছুই করতে হত আফ্রিকান দলটিকে। বাউন্ডারি লাইনে ফিল্ডিংরত অবস্থায় 'অতিমানবীয়' এক ক্যাচ নিয়ে ঠিক সেটাই করে দেখালেন কলিন ব্ল্যান্ড। ওই ক্যাচটি নেয়ার পর থেকেই তাঁর নিকনেম হয়ে যায় 'গোল্ডেন ঈগল'। 

দুর্ধর্ষ সেই ক্যাচের বর্ণনায় উইজডেন লিখেছে, “Reid struck it hard and low, a boundary written all over it. Bland flew and swooped, the very motion which earned him the tag ‘Golden Eagle’, and came up with the ball as the players and spectators pinched themselves."

কলিন ব্ল্যান্ডের অসামান্য এই ক্যাচটিকে 'ক্যাচ অফ দ্য সেঞ্চুরি' বলেও রায় দিয়েছেন অনেকে।

পরবর্তী সিরিজটা ছিল দেশের বাইরে, ১৯৬৩ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। ক্যারিয়ারের প্রথম বিদেশ সফরেই ব্যাট হাতে নিজের জাত চিনিয়েছিলেন তিনি। ৪ টেস্টে ১ সেঞ্চুরি আর ৩ ফিফটিতে করেছিলেন ৩৬৭ রান। ব্যাটিং গড় ৬১.১৬! অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে গ্রাহাম ম্যাকেঞ্জি, নিল হক, রিচি বেনোর মত ওয়ার্ল্ড ক্লাস বোলারের বিপক্ষে এই রান মোটেও সহজ ছিল না। 

ব্যাট হাতে সাফল্যের ধারাটা অব্যাহত থাকল সে বছর নিউজিল্যান্ড সফরেও। ৩ টেস্টে ৬৯.০ গড়ে করলেন ২০৭ রান। ততদিনে বিশ্বসেরা ফিল্ডার হিসেবে সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে সারা বিশ্বে।

১৯৬৪-৬৫ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচের হোম সিরিজে ৭১.৫০ গড়ে ৫৭২ রান তুলে আগের সাফল্যকে ছাপিয়ে গেলেন ব্ল্যান্ড। ২ ফিফটির সাথে সেঞ্চুরি ছিল ১টি। জোহানেসবার্গ টেস্টে খেলেছিলেন ১৪৪ রানের অনবদ্য 'ম্যাচ উইনিং' ইনিংস। 

১৯৬৫ সালে ইংল্যান্ডের মাটিতে ফিরতি সিরিজে ৪৭.৬৬ গড়ে ব্ল্যান্ডের ব্যাট থেকে আসে ২৮৬ রান; ১ সেঞ্চুরি আর ১ ফিফটিতে। ওভাল টেস্টে ১২৬ রানের 'সিরিজ ডিফাইনিং' নকটা ছিল নিঃসন্দেহে তাঁর ক্যারিয়ারের সেরা ইনিংস। 

ব্যাট হাতে বরাবরই ধারাবাহিক ছিল তাঁর পারফরম্যান্স। কিন্তু সিরিজজুড়ে ফিল্ডার হিসেবে তিনি ছিলেন অসাধারণের চাইতেও বেশি কিছু। আউটফিল্ডার হিসাবে অসামান্য দক্ষতা ও দুর্দান্ত স্কিলের প্রদর্শনীর জন্য ১৯৬৬ সালে পেয়ে যান 'উইজডেন ক্রিকেটার অফ দ্য ইয়ার' এর পুরস্কার।

উল্লেখ্য, উইজডেনের ইতিহাসে কলিন ব্ল্যান্ডই প্রথম ও একমাত্র ক্রিকেটার যিনি ব্যাটিং, বোলিং কিংবা কিপিং নয়; কেবল ফিল্ডিংয়ের জন্য বর্ষসেরা ক্রিকেটার মনোনীত হয়েছেন।

ব্যাট হাতে কখনও ভাল না করলেও ফিল্ডিংয়ে সেটা ঠিকই পুষিয়ে দিতেন ব্ল্যান্ড। তাঁর ব্যাটিং সামর্থ্য ও স্কিল সম্পর্কে উইজডেন লিখেছে, "A genuine world class batsman with brilliant drives and superb lofted shots. His Test average ended at 49.08 for 1669 runs in 21 Tests. That was class. And if we add the 20-30 runs he cut off in each innings on the field, the figures are more than formidable.”

তবে অনেক প্রতিশ্রুতি নিয়ে শুরু করলেও ক্যারিয়ারটা লম্বা করতে পারেন নি তিনি। ১৯৬৬-৬৭ সালে জোহানেসবার্গে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে অপ্রত্যাশিত এক দুর্ঘটনায় মারাত্মক ইনজুরিতে পড়েন তিনি। বাউন্ডারিতে ফিল্ডিংয়ের সময় বিজ্ঞাপনী বোর্ডের সাথে ধাক্কা খেয়ে তাঁর বাম হাঁটু মারাত্মকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়। ওই এক আঘাতেই মাত্র ২৮ বছর বয়সে শেষ হয়ে যায় তাঁর টেস্ট ক্যারিয়ার।

কলিন ব্ল্যান্ডের আগে ও পরে অনেক লিজেন্ডারি পর্যায়ের ও বিশ্বমানের আউটফিল্ডার দেখেছে ক্রিকেট বিশ্ব। ব্ল্যান্ডের পূর্বসূরিদের মধ্যে অ্যালেক ব্যানারম্যান, গিলবার্ট জেসপ, লেন ব্রাউন্ড, পার্সি চ্যাপম্যান, জ্যাক হবস, ভিক রিচার্ডসন, ডন ব্র‍্যাডম্যান, নেইল হার্ভে, ল্যারি কনস্ট্যানটাইন ও রাসেল এন্ডিনের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। 

কলিন ব্ল্যান্ডের সমসাময়িকদের মাঝে কেবল গ্যারি সোবার্সকেই বলা যায় বিশ্বমানের। তবে ব্ল্যান্ড পরবর্তী যুগে অনেকেই এসেছেন যারা বিশ্বসেরা হওয়ার যোগ্যতা রাখতেন। ক্লাইভ লয়েড, ভিভ রিচার্ডস, ডেরেক র‍্যান্ডাল, জন ডাইসন, রজার হার্পার, গাস লোগি, ব্রায়ান ইয়াং, মোহাম্মদ আজহারউদ্দীন, জন্টি রোডস, হার্শেল গিবস, এবি ডি ভিলিয়ার্সদের কথা না বললেই নয়। তবে এত এত প্রতিষ্ঠিত তারকাদের ভিড়েও সাবেক এই 'রোডেশিয়ান স্প্রিংবকের' নামটা সবার ওপরেই থাকবে। 

সাবেক স্প্রিংবক দলনেতা পিটার ভ্যান ডার মারউইয়ের মতে, "He revolutionised the attitude to fielding  and set a standard not yet equalled."
শেষ করব ১৯৬৫ সালের ইংল্যান্ড সফরের একটি ঘটনা দিয়ে। কেন্টের বিপক্ষে একটি প্রস্তুতি ম্যাচের পিচ ও আউটফিল্ড ভেজা থাকায় ম্যাচটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। কেন্টের অধিনায়ক কলিন কাউড্রে ব্ল্যান্ডকে অনুরোধ করেছিলেন দর্শকদের বিনোদনের জন্য কিছু একটা করতে। ব্ল্যান্ড সিদ্ধান্ত নিলেন ফিল্ডিংয়ের একটি ছোটখাটো প্রদর্শনীর আয়োজন করবেন। 

আউটফিল্ডের সুবিধাজনক একটা জায়গায় স্টাম্প পোঁতা হল। ভিন্ন ভিন্ন অ্যাঙ্গেল ও দুরত্ব থেকে ব্যাটসম্যানদের বলা হল সজোরে ড্রাইভ খেলতে। ২০-৩০ গজ দূর থেকে ছুটে গিয়ে ব্ল্যান্ড বলগুলো ধরছিলেন আর স্টাম্প বরাবর ডিরেক্ট থ্রো করতে লাগলেন। দর্শকরা এতে ভালই বিনোদিত হয়েছিল। কেননা ১৫ বারের প্রচেষ্টায় ১২ বারই যে সফলভাবে স্টাম্পে হিট করতে পেরেছিলেন সাবেক এই 'ফিল্ডিং জিনিয়াস'।

'শতাব্দীসেরা' ফিল্ডারের স্বীকৃতি পাওয়া সাবেক এই কিংবদন্তি পৃথিবী ছেড়ে বিদায় নিয়েছেন গত এপ্রিলে। দীর্ঘদিন ধরে বৃহদন্ত্রের ক্যান্সারের সঙ্গে যুদ্ধ করার পর লন্ডনের একটি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন কলিন ব্ল্যান্ড।