আক্ষেপকে সঙ্গী করে স্বপ্ন ছুঁতে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের মেয়েরা

নারী ক্রিকেট
আক্ষেপকে সঙ্গী করে স্বপ্ন ছুঁতে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের মেয়েরা
বিশ্বকাপে যাওয়ার আগে ফটোসেশনে বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল, বিসিবি
Author photo
ক্রিকফ্রেঞ্জি করেসপন্ডেন্ট
· ১ মিনিট পড়া
শেষ ম্যাচে থাইল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়েস্ট ইন্ডিজ জিতলেও নেট রান রেট মেলাতে না পারায় ক্যারিবীয়দের পরিবর্তে নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপের টিকিট কনফার্ম হয় বাংলাদেশের মেয়েদের। পাকিস্তান থেকে ফিরে কদিন ছুটি কাটিয়েছেন ক্রিকেটাররা। বিশ্বকাপের ভাবনায় অবশ্য খুব বেশি ছুটি কাটানোর সুযোগ হয়ে উঠেনি তাদের। প্রায়শই অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে নিজের ছবি আপলোড করেন নিগার সুলতানা জ্যোতি। বেশিরভাগ সময়ই শাড়ী পড়া ছবি নয়ত অনুশীলনের খণ্ডচিত্রগুলো ভক্তদের সঙ্গে শেয়ার করেন তিনি। চলতি বছরের ১৪ মে তেমনই একটি ছবি আপলোড করেন বাংলাদেশের অধিনায়ক।

বাংলাদেশের দলের মতো বিচ বাইকেও ড্রাইভিং সিটে জ্যোতি। ডানহাতি উইকেটকিপার ব্যাটারের ডানপাশে ফাহিমা খাতুন আর বাঁ পাশে বসে আছেন রিতু মনি। বাংলাদেশের নারী ক্রিকেটাররা কক্সবাজারে আছেন সেটা অনুমান করা যাচ্ছিল সহজেই। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) কয়েকটি রিলস আপলোড দিলে সেটা আরও খানিকটা পরিস্কার হওয়া যায়। সেই ভিডিওগুলোতে দেখা যায় কক্সবাজারে স্টেডিয়ামে অনুশীলন করছেন ক্রিকেটাররা। সানজিদা আক্তার মেঘলাকে তো বিচে একা দৌড়াতেও দেখা যায়।

সাধারণ কোনো সিরিজের আগে ক্রিকেটাররা ক্যাম্প করে থাকেন। অনেক সময় বিশ্বকাপের ভাবনাতেও হয়ে থাকে বিশেষ ক্যাম্প। জ্যোতি, মেঘলারা যখন কক্সবাজারে অনুশীলন করছেন তখনো বিশ্বকাপ শুরু হতে চার মাসের বেশি সময় বাকি। ক্রিকেটারদের অনুশীলন ক্যাম্প শুধু কক্সবাজারেই থেমে থাকেনি। কখনো ঢাকার মিরপুর, কখনো বিকেএসপি আবারও কখনো ক্যাম্প হয়েছে সিলেটে। সবশেষ কয়েক মাস মেয়েদের কেটেছে এই শহর থেকে ওই শহরে ঘুরতে ঘুরতেই।

অনুশীলন করেছেন, ফিটনেস, ব্যাটিং, বোলিং কিংবা ফিল্ডিং নিয়ে বিশেষ কাজও করেছেন। তবে বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়ার আগে প্রস্তুতির জন্য যা প্রয়োজন সেটা কতটা মেয়েরা পেয়েছেন প্রশ্নটা সেখানেই। কদিন আগে বিকেএসপি তিন দলের টুর্নামেন্ট খেলেছেন জ্যোতি, নাহিদা আক্তাররা। বিসিবি নারী সবুজ ও লাল দলের সঙ্গে ছিলেন ছেলেদের অনূর্ধ্ব-১৫ দল। ম্যাচ খেলেছেন সিলেটেও। তবুও প্রশ্ন থাকছে ওয়ানডে বিশ্বকাপের জন্য কতটা প্রস্তুত হতে পেরেছেন ক্রিকেটাররা।

বিশ্বকাপকে সামনে রেখে ভারতে সিরিজ খেলছে অস্ট্রেলিয়া। সাউথ আফ্রিকা এসেছে পাকিস্তান সফরে। অথচ এপ্রিলে লাহোরে বিশ্বকাপ বাছাই পর্ব খেলে আসার পর থেকেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নেই বাংলাদেশের মেয়েরা। অনুশীলন আর ক্যাম্পে কী তাহলে বাংলাদেশের আদর্শ প্রস্তুতি হলো? ভারত ও শ্রীলঙ্কায় যাওয়ার আগে জ্যোতিও অস্বীকার করলেন না প্রস্তুতির ঘাটতির কথা। তবে এমন একটা টুর্নামেন্ট খেলতে যাওয়ার আগে যা হয়নি সেটা নিয়ে ভাবতে চান না তিনি। যদিও তিনি মনে করেন, বড় দলের বিপক্ষে খেলতে পারলে প্রস্তুতিটা আরও ভালো হতো।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশের অধিনায়ক বলেন, ‘অবশ্যই (বড় দলের সঙ্গে খেলতে পারলে ভালো হতো)। আদর্শ প্রস্তুতি হয়তো হয়নি। তবে আমি মনে করি, বাংলাদেশে যত ধরনের ফ্যাসিলিটি আছে, সবগুলো আমরা পেয়েছি। এখন পর্যন্ত আমরা যতগুলো ক্যাম্প করেছি, সব সুযোগ-সুবিধা পেয়েছি। চেষ্টা তো করা হয়েছে। তবে যেটা হয়নি, সেটা নিয়ে চিন্তা করছি না। যেভাবে প্রস্তুত হওয়ার সুযোগ পেয়েছি, আমার মনে হয় ক্রিকেটাররা সর্বোচ্চ দেওয়ার চেষ্টা করেছে।’

আন্তর্জাতিক কোনো দলকে না পাওয়ায় মেয়েদের ম্যাচ প্রস্তুতির জন্য বিসিবির ভরসা ছিল ছেলেদের অনূর্ধ্ব-১৫ দল। সেই টুর্নামেন্টে গিয়ে যেন এক্সপোজ হয়েছেন মেয়েরা। বেশিরভাগ ম্যাচেই ছেলেদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পারেননি তারা। এমনকি অপ্রত্যাশিতভাবে হেরেও গেছেন জ্যোতি-নাহিদরা। তবে ভাগ করে খেলায় সেটাকে আসলে জাতীয় দল ধরার সুযোগও নেই। স্কোয়াডে থাকা ক্রিকেটাররা ছিলেন বিভক্ত। অনেকেদের ধারণা, একটা দল হয়ে খেলতে পারলে তো এমন কিছু নাও হতে পারতো।

ব্যাপারটা সামনে এনেছেন জ্যোতিও। যদিও বাংলাদেশের অধিনায়ক এটাকে অজুহাত হিসেবে না দেখে অকপটে স্বীকার করলেন তারা নিজেরাও আপ টু দ্য মার্ক পারফর্ম করতে পারেননি। তবে জ্যোতির কণ্ঠে ঘুরেফিরে এলো টানা ম্যাচ খেলতে না পারার আক্ষেপ। ডানহাতি এই উইকেটকিপার মনে করেন, ৩-৪ মাস পর পর না খেলে ধারাবাহিকভাবে খেলতে পারলে তারা নিজেরাও তাদের স্ট্যান্ডার্ডটা বোঝাতে পারবেন। বিশ্বকাপে যাওয়ার আগে তাই ম্যাচ বাড়ানোর তাগিদ দিয়ে গেলেন তিনি।

জ্যোতি বলেন, ‘ ছেলেদের অনূর্ধ্ব-১৫ দলের বিপক্ষে কিন্তু আমাদের পুরো জাতীয় দল খেলেনি। সেখানে বাইরে থেকেও অনেক ক্রিকেটার খেলেছে এবং অনেক ক্রিকেটারকে ভিন্নভাবে সুযোগ তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। আর আমরা যারা খেলেছি, আপ টু দা মার্ক পারফর্ম করতে পারিনি। এর প্রভাব পরের ক্রিকেটারদের ওপরেও পড়েছে।’

তিনি যোগ করেন, ‘ধারবাহিকভাবে ক্রিকেট খেললে আপনি স্ট্যান্ডার্ডের বিষয়টা বুঝতে পারবেন। আমরা একটা সিরিজ খেলি, এরপর ৩-৪ মাস আর কিছু খেলছি না। ব্যাটিং ইউনিট একটা পর্যায়ে আসার পর, ওইটা ধরে রাখতে হলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলতে হবে, প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেট খেলতে হবে। এই জিনিসগুলো বাড়লে হয়তো আমাদের আরেকটু ভালো হবে।’

২০২২ সালে প্রথমবার নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পায় বাংলাদেশ। নিউজিল্যান্ডের চ্যালেঞ্জিং কন্ডিশনে নিজেদের পুরোদমে মেলে ধরতে পারেননি শারমিন আক্তার সুপ্তা, সোবহানা মোস্তারি, নাহিদারা। সেবার একমাত্র পাকিস্তানের বিপক্ষেই জিততে পেরেছিলেন তারা। বছর তিনেকের ব্যবধানে বাংলাদেশের নারী ক্রিকেট তুলনামূলক এগিয়েছে তাই প্রত্যাশাও বেড়েছে। উপমহাদেশের কন্ডিশনে খেলা হওয়ায় অতীতের ফলাফলকে পেরিয়ে যাওয়ার সুযোগ দেখছেন অনেকে। সরোয়ার ইমরানের ভাবনায় অবশ্য ম্যাচ বাই ম্যাচ।

শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানকে টার্গেট করলেও বাংলাদেশের লক্ষ্য নিয়ে প্রধান কোচ বললেন, প্রতিটা ম্যাচই তারা জেতার জন্য খেলবেন। সরোয়ার বলেন, ‘আমাদের টার্গেট হলো ম্যাচ বাই ম্যাচ খেলা ও ভালো খেলা। আমাদের দুইটা ম্যাচে ভালো সুযোগ আছে, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা। এছাড়া অন্যান্য দলের সঙ্গেও আমরা... কাউকে আমরা বড় করে দেখছি না। শতভাগ দিয়ে চেষ্টা করব। প্রতিটি ম্যাচই জেতার জন্য খেলব। তবু অস্ট্রেলিয়া বা আরও দুই-একটা দলের যে স্ট্যান্ডার্ড, তাদেরকে আমরা নিজেদের চেয়ে অনেক ওপরে দেখব না। আমাদের মতো ভাবব এবং জেতার জন্যই খেলব প্রতিটি ম্যাচ। গত বিশ্বকাপে আমরা পাকিস্তানকে হারিয়েছি। এবার আরও কিছু ম্যাচ জেতার জন্য যাচ্ছি।’

৩০ সেপ্টেম্বর পর্দা উঠতে যাচ্ছে নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপের। ২ অক্টোবর কলম্বোতে বাংলাদেশ প্রথম ম্যাচ খেলবে পাকিস্তানের বিপক্ষে। রাউন্ড রবিন পদ্ধতির টুর্নামেন্টে পরবর্তীতে শ্রীলঙ্কা, ভারত, সাউথ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গেও খেলবেন জ্যোতিরা। তবে বিশ্বকাপ শুরুর আগে সাউথ আফ্রিকা ও শ্রীলঙ্কার সঙ্গে। প্রস্তুতি নিয়ে আক্ষেপ থাকলেও মনে কোণে থাকা স্বপ্নটা ছুঁয়েই ফিরতে চাইবেন বাংলাদেশের মেয়েরা।

আরো পড়ুন: নারী ক্রিকেট