বাংলাদেশকে ৬ রানে হারিয়ে সিরিজ জিতে নিল যুক্তরাষ্ট্র

ছবি:

|| ডেস্ক রিপোর্ট ||
সিরিজের প্রথম ম্যাচ জিতে সিরিজে আগেই এগিয়ে গিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। প্রথম ম্যাচে হারকে নিছক 'অঘটন' প্রমাণ করতে বাকি দুই ম্যাচে জিতলেই হতো বাংলাদেশের। তবে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে ৬ রানে হেরে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে শঙ্কার বার্তাই দিল টাইগাররা।
জিততে হলে শেষ ওভারে বাংলাদেশের প্রয়োজন ছিল ১২ রান। সেই রান নিতে পারেননি রিশাদ হোসেন ও মুস্তাফিজুর রহমান। আলী খানের প্রথম বলটি মুস্তাফিজ মিস করলেও একটি বাই রান পেয়ে যায় বাংলাদেশ। পরের বলে কাউ কর্নার দিয়ে চার মেরে বাংলাদেশকে আশা দেখান রিশাদ। তৃতীয় বলে স্কুপ করতে রিশাদ গিয়ে কট বিহাইন্ড যুক্তরাষ্ট্র ঐতিহাসিক জয় পায়।
মাঝারি লক্ষ্যে খেলতে নেমে ভালো শুরু পায়নি বাংলাদেশ। ইনিংসের চতুর্থ বলেই সৌম্য সরকারকে হারিয়েছে তারা। সৌরভ নেত্রাভালাকারের বলে ড্রাইভ করতে গিয়ে বোলারকেই ক্যাচ দিয়ে আউট হয়েছেন তিনি। এরপর ওপেনার তানজিদ হাসানের সঙ্গে যোগ দেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত।
দুজনে মিলে বাংলাদেশের ইনিংস টানছিলেন। এই দুজনের জুটি ভেঙেছেন আফগান পেসার জাসদীপ সিং। এই পেসারের গুড লেংথ ডেলিভারতে সামনে এগিয়ে পুল করতে গিয়েছিলেন তানজিদ। তবে বল ব্যাট মিস করে চলে যায় সোজা স্টাম্পে। ফলে ১৫ বলে ১৯ রান করে ফিরে যেতে হয় তাকে।
আগের ম্যাচে তাওহীদ হৃদয়ের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউট হয়েছিলেন সাকিব আল হাসান। দ্বিতীয় ম্যাচে এই ব্যাটারের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউট হতে হয়েছে শান্তকে। ভালো শুরু করার পর শান্তকে আউট হতে হয়েছে ২৪ বলে ৩৬ রান করে।

এরপর ইনিংস বড় করতে পারেননি হৃদয়ও। তিনি কোরি অ্যান্ডারসনের বলে বোল্ড হয়েছেন ফুলার লেন্থ বলে লেগ সাইডে খেলতে চেয়েছিলেন হৃদয়। তবে ব্যাটের কানায় লেগে বল স্টাম্প ভেঙে দেয়। ৯২ রানেই ৪ উইকেট হারানোর ফলে বাংলাদেশের জয় নিয়েও তৈরি হয় শঙ্কা।
আগের ম্যাচে দারুণ খেলা মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ এই ম্যাচে ব্যর্থ হয়েছেন। শ্যাডলে ভ্যানের বলে তিনি ডাউন দ্য উইকেটে এসে খেলতে গিয়ে বলের লাইন মিস করে বোল্ড হয়েছেন। আজের আলীও দুই অঙ্কে পৌঁছাতে পারেননি। ৪ রান করা এই ব্যাটারকেও ফিরতি ওভারে এসে আউট করেছেন শ্যাডলে।
এরপর আলী খান ১৮তম ওভারে এসে ৩০ রান করা সাকিব আল হাসান ও শূন্য রানে তানজিম হাসান সাকিবকে ফিরিয়ে দিলে বাংলাদেশ বিপাকে পড়ে যায়। শরিফুল ইসলাম আউট হয়েছেন মাত্র ৭ রান করে। শেষ ওভারের তৃতীয় বলে ৯ রান করা রিশাদ হোসেনকে আলী খান আউট করলে যুক্তরাষ্ট্র ঐতিহাসিক জয় তুলে নেয়।
এর আগে টস জিতে বোলিংয়ে নেমে ইনিংসের প্রথম ওভারে শরিফুল ইসলামের হাতে বল তুলে দেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। প্রথম পাঁচটি ডেলিভারি ভালো করলেও ওভারের শেষ বলে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্ট দিয়ে চার হজম করেছেন শরিফুল। দ্বিতীয় ওভারে বোলিংয়ে এসে তানজিম হাসান সাকিব দিয়েছেন মাত্র ২ রান। ব্যাটিংয়ে শুরু থেকেই সাবধানী ব্যাটিং করেছেন স্টিভেন টেলর ও মোনাক প্যাটেল। তবে সময় যত বাড়তে থাকে ততই রান তোলার চেষ্টা করেন তারা দুজন।
ইনিংসের পঞ্চম ওভারে বোলিংয়ে আনা হয় মুস্তাফিজুর রহমানকে। প্রথম পাঁচটি ডেলিভারিতে ডট দিয়ে মেইডেন ওভারের আশায় ছিলেন বাঁহাতি এই পেসার। তবে ওভারের শেষ বলে গুড লেংথে করা ডেলিভারিতে লং অনের উপর দিয়ে ছক্কা মেরেছেন টেলর। পরের ওভারে এক ছক্কা ও এক চারে সাকিব আল হাসান দিয়েছেন ১৫ রান। যার ফলে পাওয়ার প্লেতে কোন উইকেট না হারিয়ে ৪২ রান তোলে স্বাগতিক যুক্তরাষ্ট্র।
পাওয়ার প্লে শেষ হওয়ার পরের ওভারেই অবশ্য উইকেট হারায় তারা। বাংলাদেশকে প্রথম উইকেট এনে দেন রিশাদ হোসেন। ডানহাতি এই লেগ স্পিনারের লেংথ ডেলিভারিতে লং অনের উপর দিয়ে উড়িয়ে মারতে গিয়ে তানজিদ হাসানের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন ৩১ রান করা টেলর। একই ওভারে আন্দ্রে গুজকেও ফিরিয়েছেন রিশাদ। তরুণ এই লেগ স্পিনারের অফ স্টাম্পে পড়ে বেরিয়ে যাওয়া ডেলিভারিতে ডিফেন্স করতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়েছেন রানের খাতা খুলতে না পারা এই ব্যাটার।
এক ওভার দুই উইকেট হারানোর পর যুক্তরাষ্ট্রের হাল ধরেন মোনাক ও অ্যারন জোন্স। দ্রুত রান তুলতে না পারলেও উইকেট হারাতে দেননি তারা দুজন। সাবধানী ব্যাটিংয়ে তৃতীয় উইকেট জুটিতে ৬০ রান যোগ করেন। জোন্সের বিদায়ে ভাঙে তাদের এই জুটি। মুস্তাফিজের স্লোয়ার ডেলিভারিতে উড়িয়ে মারতে গিয়ে সাজঘরে ফেরেন ৩৪ বলে ৩৫ রানের ইনিংস খেলা জোন্স। এক প্রান্ত আগলে রাখলেও প্রত্যাশিত রান তুলতে পারেননি মোনাক। ১৯তম ওভারে বোলিংয়ে এসে উইকেটের দেখা পান শরিফুল।
বাঁহাতি এই পেসারের ফুলার লেংথ ডেলিভারিতে বলের লাইন মিস করে বোল্ড হয়েছেন ১১ রান করা কোরি অ্যান্ডারসন। একই ওভারে আউট হয়েছেন মোনাকও। আগের বলে লং অফের উপর দিয়ে ছক্কা মারা যুক্তরাষ্ট্রের অধিনায়ক পরের বলে স্কুপ করতে গিয়ে বোল্ড হয়েছেন। শরিফুলের বলে সাজঘরে ফেরা মোনাকের ব্যাট থেকে এসেছে ৪২ রান। গত ম্যাচে যুক্তরাষ্ট্রকে জেতানো হারমিত সিং এদিন রানের খাতাই খুলতে পারেননি। ফিরেছেন মুস্তাফিজের বলে সাকিবের হাতে ক্যাচ দিয়ে। শেষ পর্যন্ত ১৪৪ রানে থেমেছে যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশের হয়ে দুটি করে উইকেট নিয়েছেন মুস্তাফিজ, শরিফুল ও রিশাদ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর-
যুক্তরাষ্ট্র- ১৪৪/৬ (২০ ওভার) টেলর ৩১, মোনাক ৪২, জোন্স ৩৫; রিশাদ ২/২১, মুস্তাফিজ ২/৩১, শরিফুল ২/২৯)
বাংলাদেশ- ১৩৮/১০ (১৯.৩ ওভার) (তানজিদ ১৯, সৌম্য ০, শান্ত ৩৬, হৃদয় ২৫ সাকিব ৩০, আলী ৩/২৫, নেত্রাভালাকার ২/১৫)