বাংলাদেশ ক্যাম্পে বাউন্সার ভীতি

ছবি: ছবিঃ সংগৃহীত

|| ক্রিকফ্রেঞ্জি করেসপন্ডেন্ট ||
বিশ্বকাপে প্রতিপক্ষকে শর্ট বলে কুপোকাত করার মিশনে নেমেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। টুর্নামেন্টে এখন পর্যন্ত প্রতিপক্ষের ২৪ উইকেট নিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সবক'টি উইকেটই তুলে নিয়েছেন ক্যারিবিয়ান ফাস্ট বোলাররা। যেখানে সিংহভাগ উইকেট এসেছে বাউন্সার কিংবা ভালো লেন্থের শর্ট বলে। পাকিস্তানকে শর্ট বলেই পরাস্ত করেছে ওশানে থমাস, জেসন হোল্ডাররা। ১০৫ রানে অলআউট হওয়া পাকিস্তান সাতটি উইকেটই বিলিয়েছে শর্ট বলে। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে পাঁচ উইকেট বাউন্সারে পেয়েছে দলটি। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বাউন্সার ভীতি ছড়িয়ে পড়েছে বাংলাদেশ শিবিরেও।
ক্যারিবিয়ানদের বিপক্ষে ম্যাচের আগে পাওয়া দিনগুলোতে অনুশীলনে বাউন্সারের বিপক্ষে নিজেদের ঝালিয়ে নিচ্ছে টাইগার ব্যাটসম্যানরা। নেট সেশনের প্রথম রাউন্ডে তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম, সাকিব আল হাসান এবং দ্বিতীয় রাউন্ডে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ এবং সৌম্য সরকার ব্যাটিং অনুশীলন করেছেন। তাদের সাথে ছিলেন দলের ব্যাটিং কোচ নিল ম্যাকেঞ্জি, যিনি সাইড আর্ম থ্রো করছিলেন।
বলের পিছনে গিয়ে খেলা, বল নিচু করে খেলা এগুলোই বেশি অনুশীলন করছিলেন তাঁরা। সৌম্য সরকার ছিলেন আগ্রাসী। কয়েকটি বল মাঠের বাইরে পাঠিয়েছেন আবার টপ এজও হয়েছেন বেশ কয়েকবার। দলের অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান সাকিব, তামিম এবং মুশফিকের অনুশীলনে আক্রমণাত্মক এবং রক্ষণাত্মক দুই ধরণের ব্যাটিংই ছিল। মাহমুদুল্লাহ দাগের পেছনে গিয়ে বল পায়ের কাছেই রাখার চেষ্টায় ছিলেন।

ম্যাকেঞ্জির থ্রো'র বিপক্ষে অনুশীলনের সময় কিছু ফুলটস এবং হাফভলির মোকাবেলা করতে হয়েছে বাঁহাতি ব্যাটসম্যান তামিমকে। কারণ প্রথম ১৫ ওভারে গতিময় বাউন্সারের সাথে কিছু বাজে বলও পাবে ব্যাটসম্যানরা, জানা আছে সকলের। আর এমন বলে উইকেট না খুইয়ে রান বের করার অনুশীলন করেছেন সাকিব-তামিমরা।
কারণ গত বছরের জুলাইয়ে ক্যারিবিয়ান সফরে শ্যানন গ্যাব্রিয়েল, কিমার রোচ এবং হোল্ডারদের বাউন্সার ভীতিতে ফুল এবং লেন্থ বলেই উইকেট বিলিয়েছে টাইগাররা। কারণ বাউন্সারের ভয় বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের বাধ্য করেছিল ব্যাকফুটে খেলতে। মাত্র পাঁচটি উইকেট পড়েছিল শর্ট বলে, পনেরো উইকেট বাংলাদেশ হারিয়েছে ফুল লেন্থ ডেলিভারিতে।
যদিও আয়ারল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ত্রিদেশীয় সিরিজে এই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বোলিং লাইন আপের বিপক্ষেই সফল হয়েছিল সাকিব-তামিমরা। বিশ্বকাপের গুরুত্বপূর্ণ এই ম্যাচের আগে নিজেদের সেইভাবেই প্রস্তুতি করছেন তামিম-মুশফিকরা। প্রস্তুতি নিয়ে তামিমের ভাষ্য, 'যেকোনো ম্যাচের আগে আপনি চেষ্টা করবেন যে প্রতিপক্ষ যে বিষয়ে লক্ষ্য করে আপনার দিকে আগায়, সেই দিকে মনোযোগ দিতে। ওরা প্রচণ্ড পরিমানে শর্ট বলের উপরে মনোযোগ দিচ্ছে। উইন্ডিজ প্রথম ১০-১৫ ওভারে যে কারো সাথেই এমন করে, সেটা হোক অস্ট্রেলিয়া, শ্রীলংকা বা বাংলাদেশ।
'পাকিস্তানের সাথেও দেখলাম। এই জিনিসের উপরে ওরা বেশি জোর দেয়। শর্ট বলের পাশাপাশি রান করার মতো বলও ওরা দেয়। কালকের ম্যাচেও যদি দেখেন ওরা অনেক বল দিয়েছে যেখানে রান করা যায়। আমাদের দুইটার জন্যই প্রস্তুতি নিচ্ছি। একারণেই আমরা কঠোর পরিশ্রমের চেষ্টা করছি। যেন এগুলো দেখে আমরা অবাক না হই।'
বিশ্বকাপে প্রতিপক্ষকে যে বাউন্সার দিয়েই ঘায়েল করবেন এটা আগেই জানিয়েছেন ক্যারিবিয়ান দলপতি জেসন হোল্ডার। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এই বাউন্সারই কাল হয়ে দাঁড়িয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের জন্য। তবুও নিজেদের পরিকল্পনায় অটুট থাকতে চান হোল্ডার। শর্ট বল ফর্মুলায় বিফল হলেও কোন ধরণের অনুশোচনা হচ্ছে না কাপ্তান হোল্ডারের।
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আট উইকেটের পরাজয় শেষে সংবাদ সম্মেলনে এসে হোল্ডার বলেছিলেন, 'এটা শুধু বাজে দিনগুলোর একটি। আমার মনে হয় সূর্য দ্বিতীয় ভাগে বেশি দেখা গিয়েছে এবং উইকেটটি ব্যাটিং সহায়ক করে দিয়েছে। আমরা আজ নতুন বলের উইকেট পাইনি। চার ম্যাচের মধ্যে এটি প্রথম হয়েছে যেখানে আমরা নতুন বলের উইকেট পাইনি। আমি মনে করি বোলাররা চেষ্টা করেছে। আমাদের চেষ্টার কোন কমতি ছিল না। টুর্নামেন্টে আমরা কি করতে যাচ্ছে তাঁর হালকা ঝলক দেখিয়েছি এখন পর্যন্ত। প্রথমত আমাদের সামর্থ্যকে একত্র করতে হবে এবং পারফর্মেন্সে ধারাবাহিক হতে হবে।'
আগামীকাল (সোমবার) শক্তিশালী ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে নামতে যাচ্ছে বাংলাদেশ দল। ওয়েস্ট ইন্ডিজ পেসারদের শর্ট বলের বিপক্ষে কেমন করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ দল সেটাই এখন দেখার অপেক্ষা। বাংলাদেশ সময় বিকাল সাড়ে তিনটায় টনটনে মাঠের লড়াইয়ে নামবে দুই দল।