আমাদের ফাইনাল আসবেই

ছবি:

আমাদের গলির মাঝখানে একটা বড় টেবিল এনে রাখা হয়েছিলো।
সেটার ওপর কোন বাসা থেকে টেলিভিশন এনে বসিয়ে খেলা দেখলো লোকেরা। একটা করে বল যায় আর উত্তেজনা বাড়ে। শেষ বলে ভারতের জয়ের জনর্য ৫ রান দরকার। মিছিলের প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছিলো লোকেরা। সেই ১৯৯৭ সালের পর প্রথম একটা ট্রফি নিয়ে উল্লাসের প্রস্তুতি ছিলো মনে।
কিন্তু হায়!
দিনেশ কার্তিক যে জাভেদ মিয়াদাদ হয়ে উঠবেন, তা কে কল্পনা করেছিলো। শেষ বলে সেই ছক্কা হাকিয়ে দিলেন। কী ভাগ্য! কয়েকটা ইঞ্চি বলটা এদিক ওদিক হলেও তো ম্যাচটা টাই হয়ে যেতো। কিংবা কার্তিকের ব্যাটে বলটা যদি নাই লাগতো!
আহা রে স্বপ্ন!
আরো একবার সেই স্বপ্নটা ভেঙে গেলো। আরও একবার ফাইনালে উঠে সেই স্বপ্ন ভঙ্গের বেদনা। দেশে কোটি কোটি মানুষ টিভির সামনে থেকে উঠতে ভুলে গেলো, কেউ কেউ শোকাচ্ছন্ন হয়ে এলোমেলো হেটে চললো রাস্তা ধরে। ক্রিকেটাররা পাথরের মতো স্থবির হয়ে পড়ে রইলো মাঠে।
এ সত্যিই শোকের সময়।
তবে এই শোকে আটকে থাকা তো শেষ কথা হতে পারে না। বারবার বলা কথাটা আবার বলতে হয়, ক্রিকেট এমনই।

একটু নিরপেক্ষ ভাবে দেখলে বাংলাদেশ অসাধারণ একটা টুর্নামেন্ট শেষ করলো। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে বাংলাদেশ কখনোই খুব ভালো দল ছিলো না। তারওপর সব ধরণের ক্রিকেটেই আমাদের সময়টা খারাপ যাচ্ছিলো। কোচ নেই, অধিনায়ক সাকিব ইনজুরিতে, একটার পর একটা শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হার; এমন একটা সময় সঙ্গী করে এই টুর্নামেন্টে আন্ডারডগ হয়ে খেলতে গিয়েছিলো বাংলাদেশ। তাদের তো ফাইনাল খেলারই কথা ছিলো না।
সেই দুয়ারটা খোলা শুরু হলো রেকর্ড করে আসা এক জয়ে। পরের ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে আবার হারালো বাংলাদেশ তুমুল উত্তেজনার ম্যাচে। আমাদের মুশফিক, রিয়াদ হয়ে উঠেছিলেন দুই ম্যাচে অতিমানব। ক্রিকেটের আরেকটা পিঠ জমা হয়েছিলো আমাদের জন্য। এই ফাইনালে এসে নিয়তি দিনেশ কার্তিককে বানিয়ে দিলো মুশফিক কিংবা রিয়াদ। সেদিন আমরা ছিলাম ওপাশে, আজ আমরা এ পাশে রয়ে গেলাম।
ক্রিকেট খেলার বা খেলাধুলার এটাই ট্রাজেডি। একদল যখন রূপকথা লিখবে, আরেকদল তখন কান্নার সঙ্গী হবে।
নইলে এই ফাইনালেও কী আমরা কম রূপকথা দেখলাম?
আমাদের শুরুতেই গাদা গাদা উইকেট পড়ে গেলো। সেখান থেকে সাব্বির মান বাচালেন। আর মিরাজ এসে স্কোরটা লড়াকু করলেন। তারপরও এই স্কোর ভারতকে আটকানোর জন্য কিচ্ছু না। এক রোহিত শর্মাই ম্যাচ বের করে নিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু ৩ ওভারে ১৩ রান দেওয়া রুবেল বাংলাদেশকে খেলায় রাখলেন। আর মুস্তাফিজ?
ঝুলিতে লুকিয়ে রাখা জাদুকরী এক ওভার দিয়ে বাংলাদেশের মুঠোয় এনে দিলেন ফাইনাল। আবার সেই রুবেলের হাত ধরে ফসকে যাচ্ছিলো ম্যাচ। পার্টটাইমার সৌম্য এসে জয়ের স্বপ্ন দেখালেন এবং তার হাতেই স্বপ্ন শেষ হলো।
এক ম্যাচে কতো গল্প! কিন্তু সব গল্পের পর আমরা সেই কান্নার দলে।
তবে সময় পার হয়ে যায়। কান্না নিয়ে বসে থাকার আর সময় নেই। এখন নতুন করে উঠে দাড়ানোর পালা। এই চোখ মুছে বাস্তবতাটা হিসেব করার পালা।
বাস্তবতা এই যে, আমরা দিনকে দিন বড় হয়ে উঠছি।
ওয়ানডে, টেস্ট আগেই ভালো খেলতে শুরু করেছি। টি-টোয়েন্টিতেও আমরা শুরু করলাম ভালো খেলার পথ চলা। পর পর কয়েকটা টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেললাম আমরা। এখন আমরা নিয়মিত ফাইনাল খেলছি। কেবল ট্রফিটা আসছে না।
আমি বারবার বলি, এইসব ফাইনালের পরাজয় কোথাও না কোথাও আমাদের জন্য জমা থাকছে। কোথাও না কোথাও আমাদের জন্য অপেক্ষায় আছে একটা বড় ফাইনাল। এইসব ছোট ছোট ফাইনালের জবাব নেবো আমরা বড় একটা ফাইনালে।
আজ বরং আসুন, সকলে উঠে দাড়াই। ক্রিকেটকে পাশে রেখে যার যার কাজে যাই। আর অপেক্ষায় থাকি সেই বিশাল এক ফাইনাল জয়ের।
আমাদের ফাইনাল আসবেই।