আইপিএল

নতুন ‘হার্দিক’ তকমা পাওয়া কে এই নীতিশ রেড্ডি?

ক্রিকফ্রেঞ্জি ডেস্ক

ক্রিকফ্রেঞ্জি ডেস্ক
প্রকাশের তারিখ: 12:48 বুধবার, 10 এপ্রিল, 2024

|| ডেস্ক রিপোর্ট ||

মারকুটে ব্যাটিংয়ের সঙ্গে মিডিয়াম পেস বোলিংটাও করতে পারেন নীতিশ কুমার রেড্ডি। সময়ের পরিক্রমায় ব্যাটিংয়ের সঙ্গে পেস বোলিংটা করতে পারেন এমন ক্রিকেটারের কদর বেড়েছে। ভারতের হার্দিক পান্ডিয়া থেকে ইংল্যান্ডের বেন স্টোকস, এমন তারকারা সেটারই প্রমাণ দিয়েছেন সবশেষ কয়েক বছরে। তাদের মতো একজন হতে চেয়ে আইপিএলের রঙিন শুরু করেছেন নীতিশ।

সবশেষ মৌসুমে সানরাইজার্স হায়দরাবাদের নেটে কাটিয়ে দেয়া তরুণ এই অলরাউন্ডারের কপাল খুলে এবারের আসরে মায়াঙ্ক আগারওয়ালের অসুস্থতায়। রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর বিপক্ষে ‘আনকোরা’ নীতিশকে খেলিয়ে দেয় হায়দরাবাদ। ৮ বলে সেদিন করেছিলেন অপরাজিত ১৪ রান। খানিকটা ঝলক দেখাতে পারায় অনুমেয়ভাবে সুযোগটা মেলে পরের ম্যাচেও। পাঞ্জাব কিংসের বিপক্ষে তো রীতিমতো সবাইকে চমকে দিয়েছেন নীতিশ।

ট্রাভিস হেড, হেনরিখ ক্লাসেন এবং এইডেন মার্করামদের ব্যর্থতার দিনে হায়দরাবাদকে একাই টানলেন ২০ বছর বয়সি এই ব্যাটার। ৩৭ বলে ৬৪ রানের ইনিংসের সঙ্গে বল হাতে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে নিয়েছেন জিতেশ শর্মার উইকেট। এমন পারফরম্যান্সের পর নীতিশকে প্রশংসায় ভাসিয়েছেন প্যাট কামিন্স। হায়দরাবাদ অধিনায়কের কাছে তরুণ এই ব্যাটার অসাধারণ একজন। হানুমা বিহারির কাছে অবশ্য নীতিশ ভারতের পরবর্তী সুপারস্টার। নিজের ‘এক্স’ অ্যাকাউন্টে প্রকাশ্যে সেটাই ঘোষণা দিয়েছেন ভারতের এই ক্রিকেটার।

তারকাদের এমন প্রশংসায় সবার মাঝে একটা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে কে এই নীতিশ রেড্ডি? ২০১৭-২০১৮ মৌসুমে বিজয় মার্চেন্ট ট্রফিতে ব্যাট হাতে আলোড়ন সৃষ্টি করেন। সেই মৌসুমে ১৭৬.৪১ গড়ে করেছিলেন ১ হাজার ২৩৭ রান। যা এখনও বিজয় মার্চেন্ট ট্রফিতে এক মৌসুমে সবচেয়ে বেশি রান করার রেকর্ড। সেবার একটি তিনশ, দুটি দুইশ এবং দুটি হাফ সেঞ্চুরি করেছিলেন নীতিশ। এমন পারফরম্যান্সে তাই ২০১৮ সালে অনূর্ধ্ব-১৬ বিভাগের সেরা ক্রিকেটার নির্বাচিত হয়েছিলেন।

পেস বোলিং অলরাউন্ডার হিসেবে ২০২০ সাল থেকে সিনিয়র দলে খেলছেন নীতিশ। ২০২১ সাল থেকে খেলছেন অন্ধ্র প্রদেশের হয়ে সব ফরম্যাটেই। রঞ্জি ট্রফির সবশেষ মৌসুমে ৩৬.৬০ গড়ে ৩৬৬ রান করেছিলেন তিনি। বল হাতে ১৮.৭৬ গড়ে নিয়েছিলেন ২৫ উইকেট। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ৫৬৬ রানের সঙ্গে নীতিশের শিকার ৫২ ‍উইকেট এবং লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে ১৪ উইকেটের সঙ্গে করেছেন ৪০৩ রান।

ছোটবেলা থেকেই টপ অর্ডারে ব্যাটিং করতেন ২০ বছর বয়সি এই ক্রিকেটার। সেই সঙ্গে পেস বোলিংয়ে ইনিংসের শুরুটাও করতে মিডিয়াম এই পেসার। যার ফলে শারিরীকিভাবে চাপে পড়তে হচ্ছিল তাকে। এমন সময় চাপ কমাতে নীতিশকে মিডল অর্ডারে ব্যাটিংয়ের পরামর্শ দিয়েছিলেন অন্ধ্র প্রদেশের কোচ নির্মল কুমার। তার পর থেকেই ১৩০ কিলোমিটার গতির পেস বোলিংয়ের সঙ্গে মিডল অর্ডার কিংবা লোয়ার অর্ডারে ব্যাটিং করেন তরুণ এই অলরাউন্ডার।

নীতিশের অলরাউন্ডার হওয়াটা আরও পোক্ত হয়েছে হার্দিকের কথায়। নীতিশের বাবা মুতিয়ালা জানান, বেঙ্গালুরুর জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে একবার হার্দিকের সঙ্গে দেখা হয়েছিল তার ছেলের। সেই সময় পেস বোলিং অলরাউন্ডার হতে তরুণ এই ক্রিকেটারকে অনুপ্রাণিত করেন হার্দিক। এখন তার বিপক্ষেই খেলার সুযোগ মিলছে তার। হার্দিকের কথায় অনুপ্রাণিত হলেও নীতিশের আদর্শ বিরাট কোহলি।

সময়ের অন্যতম সেরা ক্রিকেটারকে দেখে বড় হয়েছেন নীতিশ। সেই কোহলির বিপক্ষেই বেঙ্গালুরুর ম্যাচে খেলেছেন এবং তার বিপক্ষে বোলিংও করেছেন। ম্যাচে শেষে কোহলির সঙ্গে ছবি তুলে তরুণ এই অলরাউন্ডার জানান, তাকে বোলিং করাটা স্বপ্নের মতো ছিল। অথচ কোহলির সঙ্গে ছবি তুলতে গিয়ে নিরাপত্তারক্ষীর বাধার মুখে পড়েছিলেন নীতিশ। ২০১৮ সালে যখন তিনি অনূর্ধ্ব-১৬ পর্যায়ে সেরা ক্রিকেটার হয়েছিলেন তখন সেই অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন কোহলিও।

নিজের আদর্শকে সামনে পেয়ে ছবি তোলার সুযোগ হারাতে চাননি। তবে তাকে ভারতের সাবেক অধিনায়কের কাছে যেতে দেননি দায়িত্বে থাকা নিরাপত্তাকর্মীরা। অথচ সেই কোহলির সঙ্গে ছবি তুললেন, তার বিপক্ষে বোলিংও করলেন। জীবন তো এমনই। লেগে থাকলে স্বপ্নও একদিন হাত ছোঁয়া দূরত্বে এসে দাঁড়ায়। তখন সেই স্বপ্নের কাছে যাওয়া যায়, ছুঁয়েও দেখা যায়। নীতিশই তো সেটার প্রমাণ।