বাংলাদেশ- শ্রীলঙ্কা সিরিজ

বড় হারের দ্বারপ্রান্তে বাংলাদেশ, নেই ৫ উইকেট

ক্রিকফ্রেঞ্জি ডেস্ক

ক্রিকফ্রেঞ্জি ডেস্ক
প্রকাশের তারিখ: 12:11 রবিবার, 24 মার্চ, 2024

|| ডেস্ক রিপোর্ট ||

আগের ইনিংসের দুই সেঞ্চুরিয়ান ধনঞ্জয়া ডি সিলভা এবং কামিন্দু মেন্ডিস দ্বিতীয় ইনিংসেও সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন। তাদের ব্যাটে ভর করেই দ্বিতীয় ইনিংসে ৪১৮ রানের সংগ্রহ দাঁড় করিয়েছে শ্রীলঙ্কা। লিডসহ শ্রীলঙ্কার সংগ্রহ দাঁড়িয়েছে ৫১০ রান। জবাবে খেলতে নেমে শেষ বিকেলে ৫ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের সামনে চোখ রাঙাচ্ছে বড় ব্যবধানের হার। তৃতীয় দিন শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৫ উইকেট হারিয়ে ৪৭ রান।

বড় লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে প্রথম ওভারেই উইকেট হারিয়েছে বাংলাদেশ। ইনিংসের চতুর্থ বলেই মাহমুদুল হাসান জয়কে এলবিডব্লিউ করে আউট করেন বিশ্ব ফার্নান্দো। ফার্নান্দোর ফুলার লেংথ ডেলিভারিতে ফ্লিক করতে গিয়ে বল মিস করেছিলেন জয়। ফলে বল সোজা আঘাত হানে প্যাডে। লঙ্কানদের জোড়ালো আবেদনে আউট দিয়েছিলেন আম্পায়ার। তবে রিভিউ নিয়েছিলেন জয়। রিভিউতে দেখা যায় ইমপ্যাক্ট ও পিচিং ইন লাইন ছিল। উইকেটও হিটিং। ফলে ফিরে যেতে হয় জয়কে।

এরপর ৬ রান করে আউট হয়ে গেছেন নাজমুল হোসেন শান্তকে। তিনি কাসুন রাজিথার ফুলার লেংথ ডেলিভারিতে ড্রাইভ করতে গিয়ে আউট সাইড এজ হয়ে স্লিপে ক্যাচ দিয়েছেন দিমুথ করুনারত্নের হাতে। এরপর মুমিনুলকে নিয়ে বেশ ভালো ব্যাটিং করছিলেন জাকির হাসান। তার ব্যাট থেকে রানও আসছিল। জাকির আউট হয়েছেন কুমারার শিকার হয়ে। কুমারার গুড লেন্থের বলে ব্যাক ফুট পাঞ্চ করতে চেয়েছিলেন জাকির। তবে ব্যাটের কানা ছুঁয়ে বল চলে যায় উইকেটকিপারের হাতে।

শেষ বিকেলে আরও দুই উইকেট হারিয়েছে বাংলাদেশ। পরপর দুই বলে শাহাদাত হোসেন দিপু ও লিটন দাসকে আউট করেছেন ফার্নান্দো। দিপু আউট সাইজ এজ হয়ে কুশাল মেন্ডিসকে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়েছেন। আর লিটন আউট হয়েছেন দৃষ্টিকটুভাবে ডাউন দ্য উইকেটে এসে খেলতে গিয়ে। দলের ৪ উইকেট নেই। এমন সময় প্রথম বলেই এমন আত্মঘাতী শটে তিনি ক্যাচ দিয়েছেন কাভারে অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউসকে।

এরপর বাকি সময়টা নাইট ওয়াচম্যান তাইজুল ইসলামকে নিয়ে সামাল দিয়েছেন মুমিনুল। তিনি অপরাজিত আছেন ৭ রান করে। তাইজুল ৬ রান নিয়ে দিনের খেলা শেষ করেছেন। বাংলাদেশ এখনও লঙ্কানদের চেয়ে পিছিয়ে আছে ৪৬৪ রানে। 

এর আগে বিশ্ব ফার্নান্দোকে অবশ্য দিনের শুরুর ভাগেই ফেরান খালেদ আহমেদ। দিনের তৃতীয় ওভারে খালেদের ফিফথ স্টাম্পে করা ডেলিভারিতে খোঁচা মেরে তৃতীয় স্লিপে মেহেদী হাসান মিরাজকে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ২৪ বলে চার রান করা বিশ্ব। মিরাজ ক্যাচটি একটু নিচু হয়ে লুফে নেয়ায় সেটি বুঝতে সিদ্ধান্ত নিতে একটু সময় নেন আম্পায়াররা।

তারপরই উইকেটে আসেন কামিন্দু মেন্ডিস। প্রথম ইনিংসে ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা ও কামিন্দু মিলে গড়েন ২০২ রানের জুটি। যা বাংলাদেশকে ম্যাচ থেকে দূরে ঠেলে দেয়। তৃতীয় দিনের শুরুর সেশনেও প্রথম ইনিংসের দুই সেঞ্চুরিয়ানের ব্যাটে হতাশায় সময় কাটায় বাংলাদেশের বোলাররা। লঙ্কান অধিনায়ক ক্যারিয়ারের ১৪তম হাফ সেঞ্চুরি করতে ৮২ বল খেলেন। সঙ্গে সমানতালে ব্যাট চালিয়ে যান কামিন্দু। দুজন মিলে ১২৭ বলে শতরানের জুটি পূর্ণ করেন।

শতরানের জুটি গড়ার পর হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন কামিন্দু। ৬৯ বলে দুই ম্যাচের ক্যারিয়ারে দ্বিতীয় হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন কামিন্দু। তার হাফ সেঞ্চুরির পরই শেষ হয় তৃতীয় দিনের প্রথম সেশন। দ্বিতীয় সেশনেও দাপট অব্যাহত থাকে শ্রীলঙ্কার। নব্বই পেরিয়ে অবশ্য জীবন পান ধনঞ্জয়া। মেহেদী হাসান মিরাজের লাফিয়ে ওঠা বলটি পেছনের পায়ে ভর দিয়ে খেলার চেষ্টায় পরাস্ত হন লঙ্কান দলপতি।

বলটি গ্লাভসে নিয়েই স্টাম্প ভাঙেন লিটন। স্টাম্পিংয়ের আবেদনও করেন তিনি। কিন্তু এর আগেই যে ধনাঞ্জয়ার গ্লাভস ছুঁয়ে তার হাতে গেছে বল, সেটি খেয়াল করেননি তিনি। ফলে আউটের জন্যে কেউই আবেদন করেননি। পরে রিপ্লেতে দেখা যায়, পরিষ্কারভাবে গ্লাভসে ছুঁয়ে যায় বলটি।

জীবন পাওয়ার একটু পরই সেঞ্চুরি তুলে নেন ধনঞ্জয়া। ১৬৪ বলে সেঞ্চুরির দেখা পান তিনি। শ্রীলঙ্কার ষষ্ঠ ব্যাটার হিসেবে এক টেস্টের দুই ইনিংসে সেঞ্চুরি পান তিনি। এরপর আবারও জীবন পান লঙ্কান অধিনায়ক। ৮০ ওভারে শরিফুল ইসলামের বলে সহজ ক্যাচ মিস করেন নাহিদ রানা। ১০১ রানে বেঁচে যান ধনঞ্জয়া। তবে একটু পর অবশ্য ফিরে যেতে হয় তাকে। মেহেদী হাসান মিরাজের দারুণ একটি ডেলিভারিতে পুল করতে শর্ট মিড উইকেটে জাকিরকে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি।

যাওয়ার আগে ধনঞ্জয়া করেন ১৭৯ বলে নয়টি চার ও দুটি ছক্কায় ১০৮ রান। তার বিদায়ে ভাঙে ১৭৩ রানের সপ্তম উইকেট জুটি। এক বল পরই তিনশ রানে পৌঁছায় শ্রীলঙ্কা। ধনঞ্জয়া বিদায় নিলেও লঙ্কান ইনিংসকে এগিয়ে নিতে থাকেন কামিন্দু। প্রায় দুই বছর পর টেস্টে ফিরে দুই ইনিংসে সেঞ্চুরি করেন তিনিও।

১৩ চারে ১৭১ বলে মাইলফলক স্পর্শ করেন ধনঞ্জয়া। শ্রীলঙ্কার সপ্তম ব্যাটার হিসেবে এক টেস্টের দুই ইনিংসে সেঞ্চুরি পান তিনি। দেড়শ বছরের টেস্ট ইতিহাসে একই দলের দুই ব্যাটারের দুই ইনিংসে সেঞ্চুরি করার মাত্র তৃতীয় ঘটনা এটি। তবে এর আগে কখনোই একই ম্যাচে লঙ্কান কোনও ব্যাটার দুই ইনিংসে সেঞ্চুরির দেখা পাননি। 

একইসাথে বাংলাদেশের বিপক্ষেও এক টেস্টে দুই সেঞ্চুরির দেখা পাওয়া সপ্তম ব্যাটসম্যান তিনি। টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৭ নম্বরে নেমে সেঞ্চুরি করেন কামিন্দু। দ্বিতীয় ইনিংসে নামেন ৮ নম্বরে। টেস্ট ইতিহাসে ৭ বা তার নিচে নেমে একই ম্যাচের দুই ইনিংসে সেঞ্চুরি করা প্রথম ব্যাটার তিনি। সাত উইকেটে ৩৩৮ রান নিয়ে চা বিরতিতে যায় শ্রীলঙ্কা। 

বাংলাদেশের বোলার-ফিল্ডারদের হতাশায় ডুবিয়ে ১৭১ বলে দ্বিতীয় ইনিংসে নিজের সেঞ্চুরি স্পর্শ করেন কামিন্দু। সেঞ্চুরির পর প্রবাথ জয়াসুরিয়াকে নিয়ে ইনিংস টানছিলেন লঙ্কান এই ব্যাটার। তাদের জুটি ভেঙেছেন মিরাজ। এই টাইগার স্পিনারের ঝুলিয়ে দেয়া বলে স্লগ সুইপ করতে চেয়েছিলেন জয়াসুরিয়া। তবে ব্যাটে লাগাতে পারেননি। ফলে উড়ে গেছে অফ স্টাম্প।

ফলে ২৫ রান করে ফিরতে হয়েছে তাকে। অষ্টম উইকেটে জয়াসুরিয়া ও কামিন্দুর জুটি ভাঙে ৬৭ রানে। এর ঠিক পরের বলেই লাহিরু কুমারাকে আউট করেছেন মিরাজ। তার ভেতরে ঢোকা বল ব্যাটে লাগাতে পারেননি কুমারা। প্যাডে লাগতেই জোড়ালো আবেদনে সাড়া দিয়ে আউট দেন আম্পায়ার।

অবশ্য রিভিউ নিয়েছিলেন কুমারা। কাজে লাগেনি। অবশ্য শেষ উইকেটে বাংলাদেশের আক্ষেপ বাড়িয়েছেন কামিন্দু ও কাসুন রাজিথা। মিরাজের বলে ব্যক্তিগত ১৩৫ রানে জীবন পেয়েছেন কামিন্দু। তাও আবার লিটন দাসে ক্যাচ মিসের ফলে। এরপর নিরাপদেই দেড়শ তুলে নেন এই লঙ্কান ব্যাটার।

এগোচ্ছিলেন ডাবল সেঞ্চুরির দিকে। তবে তাইজুল ইসলামের বলে ছক্কা মারতে গিয়ে মিড উইকেটে মিরাজকে ক্যাচ দিলে তার ১৬৪ রানের ইনিংসে ইতি ঘটে। সেই সঙ্গে শ্রীলঙ্কার ইনিংসও গুটিয়ে যায়। ১৬ চার ও ৬ ছক্কায় ২৩৭ বলে নিজের এই ইনিংস সাজিয়েছেন কামিন্দু। দশম উইকেটে রাজিথাকে নিয়ে ৫২ রান যোগ করেছেন তিনি। তাতেই লঙ্কানদের লিড পাঁচশ পেরিয়ে যায়।