বাংলাদেশ - শ্রীলঙ্কা সিরিজ

বাংলাদেশের পেসারদের তোপে লিডের পরও বিপর্যয়ে শ্রীলঙ্কা

ক্রিকফ্রেঞ্জি ডেস্ক

ক্রিকফ্রেঞ্জি ডেস্ক
প্রকাশের তারিখ: 12:20 শনিবার, 23 মার্চ, 2024

|| ডেস্ক রিপোর্ট ||

ব্যাটিং ব্যর্থতার পর বোলাররা বাংলাদেশকে চট্টগ্রাম টেস্টে লড়াইয়ে ফিরিয়েছেন। লঙ্কানদের করা ২৮০ রানের জবাবে বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস গুটিয়ে গেছে ১৮৮ রানে। ৯২ রানের লিড নিয়ে খেলতে নামা লঙ্কানদের স্বস্তি দিচ্ছেন না বাংলাদেশের বোলাররা। তারা দ্বিতীয় দিনে ৩৬ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে ১১৯ রান নিয়ে দিন শেষ করেছে। বাংলাদেশের চেয়ে তারা এগিয়ে আছে ২১১ রানে। ধনঞ্জয়া ডি সিলভা ২৩ ও বিশ্ব ফার্নান্দো ২ রান করে অপরাজিত আছেন।

৯২ রানের লিড নিয়ে খেলতে নেমে শুরুটা ভালো হয়নি শ্রীলঙ্কার। চা বিরতির আগেই নিজেদের প্রথম উইকেট হারিয়েছে শ্রীলঙ্কা। নাহিদ রানার অফ স্টাম্পের বাইরের বলে ডিফেন্স করতে চেয়েছিলেন নিশান মাদুশকা। তবে বল ব্যাটের কানায় লেগে চলে যায় উইকেটরক্ষক লিটন দাসের হাতে। সহজ ক্যাচ হাতছাড়া করেননি তিনি।

ফলে ২০ বলে ১০ রান করেই ফিরতে হয় এই ওপেনারকে। দ্বিতীয় সেশন শেষে শ্রীলঙ্কার সংগ্রহ দাঁড়ায় ১ উইকেট হারিয়ে ১৯ রান। চা বিরতির পর আবারও লঙ্কান শিবিরে আঘাত হেনেছিলেন রানা। লেগ স্টাম্পের ওপর করা বাউন্সারে পুল করতে গিয়ে বিভ্রান্ত হয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়েছেন ৩ রান করা কুশাল মেন্ডিস।

এরপর শ্রীলঙ্কার হয়ে প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেন দিমুথ করুনারত্নে ও অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস। টানা ১৭ ওভার পেসারদের বোলিং করানোর পর স্পিনার নামিয়েই উইকেট তুলে নিয়েছে বাংলাদেশ। তাইজুল আউট করেন ম্যাথিউসকে। তাইজুলের অফ স্টাম্পের বাইরে টার্ন করে লাফিয়ে ওঠা বলে কট বিহাইন্ড হন ২২ রান করা ম্যাথিউস। 

এর ফলে করুনারত্নের সঙ্গে তার ২৮ রানের জুটি ভাঙে। এরপর দীনেশ চান্দিমালকে থিতু হতে দেননি মেহেদী হাসান মিরাজ। নিজের প্রথম বলেই তিনি আউট করেছেন এই লঙ্কান ব্যাটারকে। মিরাজের অফ স্পিন ডেলিভারি অন সাইডে খেলতে চেয়েছিলেন চান্দিমাল। তবে ব্যাটে-বলে করতে পারেননি। বল আঘাত হানে প্যাডে। সঙ্গে সঙ্গেই জোরালো আবেদন করেন বাংলাদেশের ফিল্ডাররা।

যদিও সাড়া দেননি আম্পায়ার। রিভিউ নেবেন নাকি নেবেন না সন্দিহান ছিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক শান্ত। তবে শেষ মুহূর্তে রিভিউয়ের সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ। রিপ্লেতে দেখা যায় বল লেগ স্টাম্পে আঘাত করত। ফলে থার্ড আম্পায়ার আউটের ঘোষণা দেন। এরপর লঙ্কানদের ইনিংস ধরে রেখেছিলেন করুনারত্নে ও ধনঞ্জয়া ডি সিলভা।

শেষ বিকেলে বাংলাদেশকে সাফল্য এনে দিয়েছেন পেসার শরিফুল ইসলাম। তার শর্ট অব লেংথ ডেলিভারিতে পুল করতে চেয়েছিলেন করুনারত্নে। তবে ব্যাটে-বলে ঠিক মতো করতে পারেননি। বল চলে যায় ফাইন লেগে। সেখানে ঝুঁকে সহজ ক্যাচ নিয়েছেন রানা। ফলে পঞ্চম উইকেটের পতন হয় লঙ্কানদের। এরপর নাইট ওয়াচম্যান বিশ্ব ফার্নান্দোকে নিয়ে দিনের খেলা শেষ করে এসেছেন ধনঞ্জয়া।

এর আগে দ্বিতীয় দিনের শুরুতে ৩২ রানে ৩ উইকেট নিয়ে ব্যাটিংয়ে নামে বাংলাদেশ। আগের দিন অপরাজিত থাকা মাহমুদুল হাসান জয় এবং তাইজুল ইসলাম দিন শুরু করেন। সকালের শুরুতে খানিকটা সাবধানী ব্যাটিং করছিলেন তারা দুজন। তবে এদিন দুজনের জুটি ৫ ওভারের বেশি টিকতে দেয়নি শ্রীলঙ্কা। প্রথম সেশনে প্রথমবারের মতো বোলিংয়ে এসেই জয়কে নিজের শিকার বানিয়েছেন লাহিরু কুমারা। ডানহাতি এই পেসারের অফ স্টাম্পের বাইরের বলে খোঁচা মেরে তৃতীয় স্লিপে থাকা ধনাঞ্জয়া ডি সিলভাকে ক্যাচ দিয়েছেন জয়।

অনেকটা সময় টিকে থাকা জয়কে ফিরতে হয় ৪৬ বলে ১২ রানের ইনিংস খেলে। তাইজুল ইসলামকে সঙ্গে নিয়ে শুরু থেকেই ইতিবাচক ব্যাটিং করছিলেন শাহাদাত হোসেন দিপু। সুযোগ পেলেই চার মেরে রান বের করার চেষ্টা করেছেন তিনি। তবে শাহাদাত দিপুকে থিতু হতে দেননি লাহিরু। ডানহাতি এই পেসারের অফ স্টাম্পের বাইরে পড়ে ভেতরে ঢোকা ডেলিভারিতে ডিফেন্স করলেও বাড়তি বাউন্সের কারণে এজ হয়ে স্লিপে ক্যাচ দিয়েছেন। তরুণ এই ব্যাটারকে ফিরতে হয়েছে ১৮ রানে।

শাহাদাত দিপুর মতো শুরু করেছিলেন লিটন দাসও। তবে অন্যদের মতো তিনিও বড় ইনিংস খেলতে পারেননি। লাঞ্চে যাওয়ার কিছুক্ষণ আগে লিটনকে ফেরায় শ্রীলঙ্কা। লাহিরুর অফ স্টাম্পের বাইরে পড়ে ভেতরে ঢোকা ডেলিভারিতে বলের লাইন মিস করে বোল্ড হয়েছেন বাংলাদেশের এই উইকেটকিপার ব্যাটার। লিটন দাস ২৫ রানে ফিরলে আরও বিপাকে পড়ে বাংলাদেশ।

লাঞ্চ থেকে ফিরে আউট হয়েছেন তাইজুলও। রাজিথার অফ স্টাম্পের বাইরের ডেলিভারিতে ড্রাইভ করতে গিয়ে উইকেটের পেছনে মেন্ডিসকে ক্যাচ দিয়েছেন বাঁহাতি এই ব্যাটার। নাইটওয়াচম্যান হিসেবে খেলতে নেমে দারুণ ব্যাটিং করলেও শেষ পর্যন্ত ৩ রানের জন্য হাফ সেঞ্চুরি না পাওয়ার আক্ষেপে পুড়তে হয়েছে তাইজুলকে। আউট হয়েছেন ৪৭ রানের কার্যকরী ইনিংস খেলে। তাইজুলের পর মিরাজকেও নিজের শিকার বানিয়েছেন রাজিথা।

ডানহাতি এই পেসারের লেগ স্টাম্পের বলে ফ্লিক করতে গিয়ে টপ এজ হয়ে পয়েন্টে ক্যাচ দিয়েছেন ১১ রান করা মিরাজ। এরপর খালেদ এবং শরিফুল মিলে যোগ করেন ৪০ রান। শরিফুলের বিদায়ে ভেঙেছে এই জুটি। শরিফুল ১৫ রান করে ফেরার পর শেষ ব্যাটার হিসেবে ২২ রানে আউট হয়েছেন খালেদ। ফলে বাংলাদেশ অল আউট হয় ১৮৮ রানে। শ্রীলঙ্কার হয়ে ফার্নান্দো চারটি উইকেট নিয়েছেন। তিনটি করে উইকেট শিকার করেছেন লাহিরু এবং রাজিথা।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

শ্রীলঙ্কা (প্রথম ইনিংস) - ২৮০/১০ (৬৮ ওভার) (ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা ১০২, কামিন্দু মেন্ডিস ১০২; খালেদ ৩/৭২, নাহিদ রানা ৩/৮৭)

বাংলাদেশ (প্রথম ইনিংস) - ১৮৮/১০ (৫১.৩ ওভার) (তাইজুল ৪৭, লিটন ২৫, শাহাদাত দিপু ১৮, খালেদ ২২, শরিফুল ১৫; লাহিরু ৩/৩১, ফার্নান্দো ৪/৪৮, রাজিথা ৩/৫৬)

শ্রীলঙ্কা (দ্বিতীয় ইনিংস) -  ১১৯/৫ (৩৬.০ ওভার) (করুনারত্নে ৫২, ম্যাথিউস ২২, ধনঞ্জয়া ২৩*; রানা ২/৪২, তাইজুল ১/১২)