বাংলাদেশ- শ্রীলঙ্কা সিরিজ

শেষ বিকেলের ব্যাটিং হতাশার ছায়ায় সকালের সৌরভময় বোলিং

ক্রিকফ্রেঞ্জি ডেস্ক

ক্রিকফ্রেঞ্জি ডেস্ক
প্রকাশের তারিখ: 09:37 শুক্রবার, 22 মার্চ, 2024

|| ডেস্ক রিপোর্ট ||

উইকেটে সবুজ ঘাসের ছোঁয়া থাকায় সকালের শুরু থেকেই সুইং পেলেন বাংলাদেশের পেসাররা। সেটা বেশ ভালোভাবে কাজেও লাগালেন সৈয়দ খালেদ আহমেদ, শরিফুল ইসলামরা। দারুণ লাইন লেংথ বজায় রেখে করা বোলিংয়ে সকালের শুরুতে নিশান মাদুশকা, দিমুথ করুনারত্নে, কুশল মেন্ডিস, অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস, দীনেশ চান্দিমালকে সাজঘরে পাঠান খালেদরা। দিনের প্রথম সেশনে খালেদ তিনটি আর শরিফুল নিয়েছেন একটি উইকেট। এদিকে উইকেট না পেলেও গতিময় বোলিংয়ে লঙ্কান ব্যাটারদের ভীতি ধরিয়েছেন নাহিদ রানা।

৫৭ রানে ৫ উইকেট হারানো সফরকারীরা ঘুরিয়ে দাঁড়িয়েছে ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা এবং কামিন্দু মেন্ডিসের সেঞ্চুরিতে। দিনের শেষ ভাগে নাহিদের গতিতে পরাস্ত হয়ে ২৮০ রানে অল আউট হয় শ্রীলঙ্কা। শেষ বিকেলে ব্যাটিংয়ে নেমে বাংলাদেশকে হতাশায় ডুবিয়েছেন জাকির হাসান, নাজমুল হোসেন শান্ত, মুমিনুল হকরা। দ্রুতই তিন উইকেট হারিয়ে মাত্র ৩২ রান তোলে স্বাগতিকরা। শ্রীলঙ্কার চেয়ে ২৪৮ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় দিন ব্যাটিংয়ে নামবেন মাহমুদুল হাসান জয় ও তাইজুল ইসলাম। শেষে বিকেলের ব্যাটিং হতাশায় মিলিয়ে গেছে সকালের সৌরভময় বোলিং।

সিলেটে আগে বোলিং করতে নেমে দিনের শুরুতেই সাফল্য পায় বাংলাদেশ। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে বাংলাদেশকে উইকেট এনে দেন খালেদ। ডানহাতি এই পেসারের ফুল লেংথ ডেলিভারিতে ড্রাইভ করতে গিয়ে এজ হয়ে স্লিপে ক্যাচ দিয়েছেন নিশান মাদুশকা। তৃতীয় স্লিপে দাঁড়িয়ে দারুণ এক ক্যাচ নিয়েছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। মাদুশকাকে ফিরতে হয় ২ রানে। তিনে নেমে করুনারত্নের সঙ্গে জুটি গড়ার চেষ্টা করেন মেন্ডিস। যদিও তাদের জুটি বড় হতে দেননি খালেদ।

ডানহাতি এই পেসারের শরীর বরাবর বাউন্সারে কাট করবেন নাকি ছেড়ে দেবেন এমন দ্বিধায় থাকা মেন্ডিসের ব্যাটে বল লেগে তা চলে যায় গালিতে। জাকির ক্যাচ নিলে শ্রীলঙ্কার অধিনায়ককে ফিরতে হয় ১৬ রানে। একই ওভারের শেষ বলে ফিরেছেন করুনাত্নেও। খালেদের অফ স্টাম্পের বাইরের ডেলিভারিতে ড্রাইভ করতে গিয়ে বলের লাইন মিস করেছিলেন লঙ্কান ওপেনার। তবে ব্যাট-প্যাডের মাঝে ফাঁকা থাকায় সেখান দিয়ে বল আঘাত হানে স্টাম্পে। খালেদের দারুণ ডেলিভারিতে বোল্ড হয়ে করুনারত্নেকে ফিরতে হয় ১৭ রানে।

শ্রীলঙ্কার রান পঞ্চাশ হওয়ার আগে অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউসকেও ফিরিয়েছে বাংলাদেশ। খালেদের হালকা লাফিয়ে ওঠা বল কভারে ঠেলে দিয়েই রানের জন্য দৌড় দেন চান্দিমাল। অভিজ্ঞ এই ব্যাটারের ডাকে সাড়াও দেন ম্যাথিউসও। মিড অফ থেকে দৌড়ে এসে দারুণ থ্রোতে স্ট্রাইক প্রান্তের স্টাম্প ভাঙেন শান্ত। স্টাম্প ভাঙার আগে পৌঁছাতে পারেননি ম্যাথিউস। অভিজ্ঞ এই ব্যাটারকে ফিরতে হয় মাত্র ৫ রানে। চান্দিমাল ফিরেছেন একটু পরই। শরিফুলের লেগ স্টাম্পের ওপর করা ব্যাক অব লেংথ ডেলিভারিতে গ্ল্যান্স করতে গিয়ে মিরাজের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন।

চান্দিমাল বিদায় নিয়েছেন ৯ রানে। অভিজ্ঞ এই ব্যাটারের বিদায়ে ৫৭ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে বিপাকে পড়ে শ্রীলঙ্কা। সকালের ধাক্কা সামাল দিতে জুটি গড়ে তোলেন কামিন্দু ও ধনাঞ্জয়া। যদিও কামিন্দুকে শুরুতেই ফেরাতে পারত বাংলাদেশ। নিজের খেলা প্রথম বলেই দ্বিতীয় স্লিপে ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন কামিন্দু। কিন্তু সেটা লুফে নিতে পারেনি মাহমুদুল হাসান জয়। জীবন পেয়ে অবশ্য আর পেছন ফিরে তাকাননি বাঁহাতি এই ব্যাটার।

প্রথম সেশনের ধাক্কা সামলে দ্বিতীয় সেশনে কাউন্টার অ্যাটাক করে শ্রীলঙ্কা। লাঞ্চের পর বাংলাদেশের বোলারদের ওপর রীতিমতো ঝড় বইয়ে গেছে। দারুণ ব্যাটিংয়ে ৫২ বলে পঞ্চাশ ছুঁয়েছেন ধনাঞ্জয়া। আরেক ব্যাটার কামিন্দু হাফ সেঞ্চুরি করেছেন ৫৮ বলে। দিনের দ্বিতীয় সেশনে কোন উইকেট না হারিয়ে ২৭ বলে ১২৫ রান তোলে সফরকারীরা। চা বিরতির পর এসে ১২৬ বলে সেঞ্চুরি করেছেন কামিন্দু। সেঞ্চুরি পাওয়ার পর অবশ্য বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি বাঁহাতি এই ব্যাটার। ধনাঞ্জয়ার সঙ্গে কামিন্দুর ২০২ রানের জুটি ভাঙেন নাহিদ রানা।

সিলেট টেস্টে অভিষেক হওয়া এই পেসারের বাউন্সারে খোঁচা মারতে গিয়ে উইকেটকিপার লিটন দাসের গ্লাভসে ক্যাচ দিয়েছেন ১২৭ বলে ১০২ রান করা কামিন্দ। আরেক সেঞ্চুরিয়ান ধনাঞ্জয়া একশ ছুঁয়েছেন ১২৭ বলে। শ্রীলঙ্কার অধিনায়ককেও সেঞ্চুরির পরই ফিরিয়েছেন নাহিদ। ডানহাতি এই পেসারের শর্ট ডেলিভারিতে পুল করতে গিয়ে ডিপ স্কয়ার লেগ ধরা পড়েছেন মিরাজের হাতে। ধনাঞ্জয়াও ফিরেছেন ১০২ রানে। এরপর প্রবাথ জয়াসুরিয়া, বিশ্ব ফার্নান্দো এবং লাহিরু কুমারা দ্রুতই বিদায় নিলে ২৮০ রানে অল আউট হয় শ্রীলঙ্কা। বাংলাদেশের হয়ে তিনটি করে উইকেট নিয়েছেন খালেদ ও নাহিদ।

শেষ বিকেলে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতেই উইকেট হারায় বাংলাদেশ। ইনিংসের তৃতীয় ওভারে ফার্নান্দোর ভেতরে ঢোকা ডেলিভারিতে লেগ বিফোর উইকেট হয়েছেন জাকির। বাঁহাতি এই ওপেনার রিভিউ নিলেও আম্পায়ার্স কলের গ্যাঁড়াকলে বিদায় নিতে হয়েছে। তিনে নেমে টিকতে পারেননি শান্তও। ফার্নান্দোর অফ স্টাম্পের বাইরে পড়ে ভেতরে ঢোকা নিচু হওয়া ডেলিভারিতে বলের লাইন মিস করেছিলেন বাংলাদেশের অধিনায়ক। বল প্যাডে আঘাত হানতেই আবেদন করেন লঙ্কান ফিল্ডাররা। আম্পায়ার আউট দেয়ার পর রিভিউ নিয়েও লাভ হয়নি।

শান্তকে ফিরতে হয়েছে ৫ রানে। শেষের দিকে বাংলাদেশের বিপদ আরও বাড়িয়েছে মুমিনুল হকের বিদায়। কাসুন রাজিথার অফ স্টাম্পের বাইরের ব্যাক অব লেংথ ডেলিভারিতে ব্যাক ফুট ডিফেন্স করতে গিয়ে তৃতীয় স্লিপে ক্যাচ দিয়েছেন বাঁহাতি এই ব্যাটার। কামিন্দু ক্যাচ নিতেই মুমিনুলকে ফিরতে হয় ৫ রানে। তাইজুল ইসলামকে সঙ্গে নিয়ে বাকি সময়টা কাটিয়ে দিয়েছেন ৯ রানে অপরাজিত থাকা জয়। শ্রীলঙ্কার হয়ে ফার্নান্দো দুটি এবং রাজিথা নিয়েছেন একটি উইকেট।