বিপিএল

'বিশ্বাস রাখলে সেই খেলোয়াড়ও কিছু দেয়ার চেষ্টা করবে'

আবিদ মোহাম্মদ

আবিদ মোহাম্মদ
প্রকাশের তারিখ: 21:26 শনিবার, 02 মার্চ, 2024

|| ক্রিকফ্রেঞ্জি করেসপন্ডেন্ট ||

বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) এবারের আসরে ফিনিশার হিসেবে নিজের সক্ষমতা প্রমাণ করেছেন জাকের আলী অনিক। ধারাবাহিক পারফরম্যান্স করে নজর কেড়েছেন  জাতীয় দলের নির্বাচকদেরও। আলিস আল ইসলামের চোটে তার বদলি হয়ে জাতীয় দলে ডাক পেয়েছেন এই হার্ড হিটার ব্যাটার। স্বপ্নের মতো বিপিএলের পর জাতীয় দলে ফিরে অলীক কল্পনায় ভাসছেন এই ক্রিকেটার। নিজের অনুভূতির কথা জানিয়েছেন ক্রিকফ্রেঞ্জিকে। পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো পুরো সাক্ষাৎকার।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: প্রথমেই অভিনন্দন, অবশেষে জাতীয় দলে ফিরলেন। কেমন লাগছে?

জাকের আলী অনিক: আলহামদুলিল্লাহ, ভালো লাগছে। জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার মতো আনন্দের তো আর কিছু নেই। এখন সুযোগ এলে নিজের সেরাটা দেয়ার চেষ্টা করবো।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: বিপিএলে ভালো করায় বাড়তি চাপ থাকবে কিনা...

জাকের: আমি আসলে এভাবে ভাবছি না। খুব বেশি চাপ নিতে চাই না। নিজের স্বাভাবিক খেলাটাই খেলতে চাই। প্রক্রিয়াটা মেনে চলতে পারলে এমনিতেই রেজাল্ট আসবে।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: পুরো মৌসুমে দারুণ খেললেন। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সও দাপুটে পারফরম্যান্সই করে আসছিল কিন্তু শেষ পর্যন্ত শিরোপা জিততে পারলেন না...

জাকের: আলহামদুলিল্লাহ সবকিছু ভালোভাবেই হয়েছে। আমি আমার সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। আমরা দল হিসেবে হয়তো সেরা ফলটা পাইনি। হ্যাঁ, এটি ঠিক যে চ্যাম্পিয়ন হতে পারলে ভাল লাগতো। কিন্তু যেটা হয়নি সেটা নিয়ে ভেবে তো আর লাভ নেই।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: তবুও নিশ্চই খারাপ লাগা কাজ করে?

জাকের: খারাপ তো লাগবেই, এটা খুবই স্বাভাবিক। এখানে সবাই টুর্নামেন্ট চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্যই আসে। কেউ রানারআপ হতে আসেনি। আমরাও চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্যই এসেছিলাম, দূর্ভাগ্যবশত সেটি হয়নি। পরেরবার নিশ্চই হবে।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: পুরো টুর্নামেন্টে ১৪১.১৩ স্ট্রাইক রেটে ব্যাটিং করেছেন। ফাইনালে এসে সেটা ৮৬.৯৬। নিজের ইনিংসটা নিয়ে যদি বলতেন....

জাকের: আজকে শুরু থেকেই একটু স্ট্রাগল হয়েছে। কিন্তু আমি প্যানিক হইনি। যেটা আগেও বলেছি, আমি ডট বল নিয়ে কখনও চিন্তা করি না। নিজের মাঝে আত্মবিশ্বাস ছিল, আমি জানতাম দুটো ছয় মারতে পারলেই হয়ে যাবে কিন্তু হয়নি। দেখুন, প্রতিদিন আপনার (ব্যাটে) লাগবে না। তবে চেষ্টা থাকবে পরবর্তীতে যখন এমন পরিস্থিতিতে খেলবো তখন যেন ভালো করতে পারি।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: নিজের স্ট্রাইক নিয়ে নিশ্চই খুশি?

জাকের : দেখুন, আমি এগুলা নিয়ে কখনই চিন্তা করি না। স্ট্রাইক রেট বলেন বা অ্যাভারেজ– আমি এসব নিয়ে চিন্তাই করি না। দল আমার কাছে কী চায়, সেটাই আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। আমিও সেটাই করার চেষ্টা করি।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: দুই মৌসুম ধরেই বেশ আক্রমণাত্বক ব্যাটিং করছেন। আপনার ছক্কা মারা কিংবা কম বলে বেশি রান করার প্রবণতা চোখে পড়ছে। পাওয়ার হিটিং নিয়ে আলাদাভাবে কোন কাজ করেছেন?

জাকের: হ্যাঁ, বিপিএল শুরুর আগেই স্যারের (কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিন) সঙ্গে পাওয়ার হিটিং নিয়ে কাজ করেছি। কয়েক জায়গায় কথা বলেছি। গতবারও আমি কুমিল্লায় খেলেছিলাম। সেই মৌসুম থেকেই স্যারের সঙ্গে কাজ করছি চেষ্টা ছিল সবটুকু দেওয়ার, আলহামদুলিল্লাহ।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: কোচ যেভাবে চেয়েছেন সেভাবেই খেলার কথা বলেছিলেন, এটা যদি ব্যাখ্যা করতেন—

জাকের: আসলে আমাকে যে রোল দেওয়া হয়, সেভাবেই খেলার চেষ্টা করি। ফাইনালে একটা ভিন্ন রোল দেওয়া হয়েছিল। ম্যাচের খুবই গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে ব্যাটিং করেছি। তখন আমাদের অনেকগুলো উইকেট পড়ে গিয়েছিল। চেষ্টা ছিল খেলাটা বিল্ডআপ করার। হয়তো শেষে পুরোপুরি পুষিয়ে দিতে পারিনি। তবে চেষ্টা করেছি। আমার আত্মবিশ্বাস ছিল শেষে হয়তো দুটো ছক্কা মারতে পারব। তখন এটা কাভার-আপ হয়ে যাবে। শেষ ওভারে স্ট্রাইক পাইনি। রাসেল (আন্দ্রে রাসেল) আমাকে বলেছিল, ‘কোনো সমস্যা নেই, আমি আছি।’

ক্রিকফ্রেঞ্জি: আন্দ্রে রাসেল তো বিধ্বংসী ব্যাটার হিসেবে পরিচিত। একই সাথে খেললেন, অনুশীলনে বিশেষ কিছু নিয়ে কথা হয়েছে কিংবা শিখেছেন?

জাকের: আন্দ্রে রাসেল আমার খেলা দেখেছে। আমার খেলা দেখে সে অনেক প্রশংসা করেছে। বিশেষ করে রিকভারির ক্ষেত্রে। আমার সঙ্গে প্রায়ই ওর রিকোভারি সেশন হতো। বলতো এই জিনিসটা অবশ্যই করবা। সামনে তোমার ভালো ভবিষ্যৎ আছে। এটা ধরে রেখো।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: কোচ সালাহউদ্দিন আপনাকে সবসময় আগলে রাখার চেষ্টা করেন। কেমন লাগে যখন তার মতো একজন এতটা বিশ্বাস রাখে।

জাকের: বিপিএলে এই প্রথম আমি সবগুলো ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছি। সবশেষ দুই বছর আমি বেঞ্চে কাটিয়েছি। এই জিনিসটা হয়তো আপনারা খেয়াল করেন নাই। ম্যাচ খেলার সুযোগ হয় নাই। নিজেকে মেলে ধরারও সুযোগ পাইনি। সালাউদ্দিন স্যারকে ধন্যবাদ এবং কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স, আমার ওপর বিশ্বাস রাখার জন্য। আপনি যখন কাউকে বিশ্বাস করবেন ওই খেলোয়াড়ও আপনাকে কিছু দেয়ার চেষ্টা করবে। এটার জন্য অবশ্যই ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: চট্টগ্রামে সংবাদ সম্মেলনে কোচ সালাহউদ্দিন বলেছিলেন আপনি এখন দেশের অন্যতম সেরা ফিনিশার। জাতীয় দলে কেন ডাকা হয় না সেটা নিয়েও প্রশ্ন ‍তুলেছিলেন। যখন কেউ এমনভাবে প্রশংসা করে তখন কেমন লাগে?

জাকের: একজন কোচ যখন প্রশংসা করে (অবশ্যই ভাল লাগে)। সালাউদ্দিন স্যার সচরাচর প্রশংসা করেন না। আবার খারাপ খেললেও ডিমোটিভেট করেন না উনি। ভাল করলেও মাথায় তুলে রাখেন না। এই প্রথম উনি আমাকে নিয়ে জনসম্মুখে এত প্রশংসা করেছেন। উনি আমার সামনে, এমনকি কোনো খেলোয়াড়ের সামনেও এত প্রশংসা করে না। খুবই ভাল লাগা কাজ করছে। তখন মনে হয়, আরও ভাল কিছু করা যায় কি না।