বিপিএল

‘আমাদের গোল্ডেন জেনারেশন এখনও শেষ হয়ে যায়নি’

মমিনুল ইসলাম

মমিনুল ইসলাম
প্রকাশের তারিখ: 00:56 রবিবার, 25 ফেব্রুয়ারি, 2024

|| ক্রিকফ্রেঞ্জি করেসপন্ডেন্ট ||

সত্তর কিংবা আশির দশকে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে বলা হতো ক্রিকেটের সর্বজয়ী। ক্যারিবীয় ক্রিকেটের স্মৃতির পাতায় রঙিন খামে মোড়ানো আছে ক্লাইভ লয়েড, ভিভ রিচার্ডস, ম্যালকম মার্শাল, অ্যান্ডি রবার্টসদের নাম। আশির দশকে টেস্ট ক্রিকেটে টানা ২৭ ম্যাচ অপরাজিত ছিল লয়েডের ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সোনালি সময় পেরিয়ে খানিকটা হোঁচট খাওয়ার পর টি-টোয়েন্টির কল্যাণে আবারও ঘুরে দাঁড়ায় তারা।

কাইরন পোলার্ড, ক্রিস গেইল, ডোয়াইন ব্রাভো, মারলন স্যামুয়েলস, ড্যারেন স্যামিরা হয়ে উঠেছিলেন টি-টোয়েন্টির রাজা। যদিও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ফিকে হয়ে গেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেট। বিশ্ব জুড়ে ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে দাপট বহমান আন্দ্রে রাসেল, সুনীল নারিনদের। টি-টোয়েন্টির যুগে রাসেলদের বিপক্ষে অভিযোগ তাদের পছন্দের তালিকায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের চেয়ে ঢের এগিয়ে ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ।

অধিনায়ক শাই হোপ অবশ্য সবাইকে আগলে রাখলেন। সব অভিযোগ যেন তুরি মেরে উড়িয়ে দিতে চাইলেন। খুলনা টাইগার্সের জার্সিতে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) খেলতে এসে ক্রিকফ্রেঞ্জির প্রতিনিধি মমিনুল ইসলাম এর সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে হোপ শুনিয়েছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেটের গল্প, বিপিএল খেলার অভিজ্ঞতা, ওয়ানডেতে নিজের সাফল্যের কথা, দিয়েছেন রাসেল, নারিনদের নিয়ে অভিযোগের ব্যাখ্যাও।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: সিপিএলের বাইরে এবারই প্রথম কোন ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ খেললেন, কেমন উপভোগ করলেন?

হোপ: এটা হতাশার যে আমরা শেষ চারে জায়গা করে নিতে পারিনি। তবে বিপিএলের এই অভিজ্ঞতাটা আমার জন্য ভালো। এটাই সিপিএলের পর কোন ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ যেখানে আমি খেলেছি। বিপিএল আমাকে সুযোগ করে দিয়েছে বিদেশি ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে নিজেকে বাজিয়ে দেখার এবং খেলোয়াড় হিসেবে নিজেকে আরও উন্নত করার সুযোগ পেয়েছি। ভবিষ্যতে এটি আমাকে আরও ভালো করতে সহায়তা করবে।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: বাংলাদেশের মানুষ এবং খাবার কেমন লাগছে?

হোপ: এখানকার মানুষ খুবই অতিথিপরায়ণ। তারা সবসময় ক্রিকেট নিয়ে মেতে থাকে। এটা দেখে ভালো লাগছে যে বাংলাদেশের মানুষ বিপিএল নিয়ে বেশ রোমাঞ্চিত। তোমাদের এখানের খাবার দুর্দান্ত, সকালের নাস্তা তো মুখে লেগে থাকার মতো। বাংলাদেশে এসে সকালের নাস্তা খেতেই সবচেয়ে ভালো লেগেছে। কাল সকালেও খাওয়ার অপেক্ষায় আছি (হাসি)।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: ওয়ানডেতে আপনার ব্যাটিং পরিসংখ্যান খুবই ভালো। বাংলাদেশেরবিপক্ষে আপনার গড় ৭০ এর বেশি, তিনটা সেঞ্চুরি, প্রায় এক হাজারের কাছে রান। আপনার কি মনে হয় বাংলাদেশি বোলারদের খেলাটা সহজ?

হোপ: না না, এমন কিছু না (হাসি)। আপনি এটা কখনই বলতে পারবেন না যে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সহজ। টেলিভিশনে দেখা এবং মাঠের খেলার মধ্যে পার্থক্য অনেক। টেলিভিশনে দেখে মানুষ ভাবতেই পারে ছেলেটা অসাধারণ খেলে। এটার জন্য আপনাকে অনেক পরিশ্রম করতে হয়, অনেক ডেডিকেশন থাকতে হয়। তাই আমি বলবো না যে বাংলাদেশি বোলারদের খেলা সহজ।

আমার মনে হয় তাদের বিপক্ষে বেশ কয়েকটি ম্যাচে আমি ভালো খেলেছি। কিন্তু এটা সত্য যে আমি বাংলাদেশে ব্যাটিং করতে পছন্দ করি। তাই বলে এটা বলবো না যে তাদের খেলাটা আমার জন্য সহজ। এটা অনেক সময় হয় যে আপনি কোন একটা প্রতিপক্ষের বিপক্ষে খুব বেশি রান করছেন। আমারটা হয়ত বাংলাদেশের বিপক্ষে হচ্ছে। এর চেয়ে বেশি কিছু না।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: এটা কি বলা যায় বাংলাদেশ আপনার সবচেয়ে প্রিয় প্রতিপক্ষ?

হোপ: প্রিয় প্রতিপক্ষ? এমনটা বলবো না। তবে হ্যাঁ এখানে এসে খেলতে আমার ভালো লাগে। এখানকার আউটফিল্ড অনেক ফাস্ট, বাউন্ডারি তুলনামূলক ছোট, মারলে সহজেই ছক্কা বা চার হয়। সাদা বলের ক্রিকেটের জন্য উইকেট বেশ মানানসই। তাই বলবো না যে খুব প্রিয় কিন্তু আসতে ভালো লাগে।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: ওয়ানডে ক্রিকেটার হিসেবে আপনার পরিচিতি থাকলেও আপনি টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি খেলছেন। এখন তো ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগেও দেখা যাচ্ছে। যখন অন্য ফরম্যাট খেলেন তখন কী ধরনের পরিবর্তন করতে হয়?

হোপ: সত্যি বলতে, আমার মনে হয় না খুব বেশি কিছু পরিবর্তন করতে হয়। একমাত্র জিনিসটা হলো আপনি যে পরিস্থিতির মাঝে আছেন সেটার দিকে ফোকাস করা। তাই পরিস্থিতি যাই হোক না কেন আমি যখন ব্যাটিং করি তখন এটাই আমাকে সামনে এগিয়ে যেতে সাহায্য করে। সেটাই নির্দেশ করবে আমি কিভাবে ব্যাটিং করবো। ধরুন, আমাকে এখন ২৫০ স্ট্রাইক রেটে ব্যাটিং করতে হবে, আমি নিজেও সেটাই চেষ্টা করবো।

আবার যখন দেখেশুনে খেলতে হবে তখন আমি সেটাই করবো। উদাহরণ হিসেবে আমি আপনাকে টেস্টের কথা বলতে পারি। দেখুন, টেস্ট বাঁচাতে কখনও কখনও আপনাকে সারাদিন ব্যাটিং করতে হতে পারে। আপনাকে তখন ঠিক সেটাই করতে হবে। তাই সেই নির্দিষ্ট পরিস্থিতির সঙ্গে আপনাকে খাপ খাইয়ে নিতে হবে এবং নিশ্চিত করতে হবে ব্যাটার হিসেবে আপনার ভিত্তিটা শক্তিশালী। মাঠে গিয়ে দলের জন্য অবদান রাখতে সঠিক কাজটা করতে হবে। ব্যাস, আর কিছু না।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: পরিসংখ্যান বলছে আপনার অর্ধেক সেঞ্চুরি এসেছে পরে ব্যাটিং করে। গড়, স্ট্রাইক রেট প্রায় সবই সমানে সমান। আপনি যখন বড় রান তাড়া করেন তখন আপনার মাথায় ঠিক কি চলে?

হোপ: আমার কাছে মনে হয় এই জিনিসটা বোঝা যে কাজটি করার জন্য আপনার কাছে কি কি উপায় আছে। আমি সবসময় চেষ্টা করি বর্তমান পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসার। আমাদের যদি শেষ ওভারে ১৩ রান প্রয়োজন থাকে তাহলে নিজের উপর বিশ্বাস রাখি এই রানগুলো আমাকে করতে হবে এবং আমি পারবো। এসব করার জন্য আপনার ড্রেসিং রুম, ম্যানেজমেন্ট এবং প্রত্যেককে সমর্থন করতে হবে। আমার কাছে বিষয়টি সময়ের। কারণ আমি বিশ্বাস করি আপনার কাছে ধারণার চেয়ে বেশি সময় আছে। বিশেষ করে একজন ব্যাটারের কাছে।

আমরা অনেক সময় খুব দ্রুতই আতঙ্কিত হয়ে পড়ি। আপনাকে এটা বুঝতে হবে এরপর কি হতে চলেছে। প্রতিপক্ষের সঠিক বোলারকে টার্গেট করতে হবে। আপনাকে উইকেটের কন্ডিশন বুঝতে হবে এবং বাউন্ডারি কতটুকু সেটাও বুঝতে হবে। তাহলেই আপনি জিততে পারবেন। এগুলো হয়ত খুবই ছোট ছোট জিনিস। কিন্তু এগুলো আপনাকে রান তাড়ার কাজটা সহজ করে দেবে। আমি সবসময় এভাবে চিন্তা করি যে আমাকে যতটা সম্ভব শান্ত থাকতে হবে। খুব বেশি তাড়াহুড়ো করা যাবে না। অনেক সময় দেখি এটা করতে গিয়ে আমরা আতঙ্কিত হয়ে যাই। তখন দেখবেন আপনি হেরে গেছেন। সত্যি বলতে আপনাকে সবসময় লড়াইয়ে টিকে থাকতে হবে।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: আপনি তো মহেন্দ্র সিং ধোনির সঙ্গে কথা বলেছিলেন। রান তাড়া করা নিয়ে আপনাকে বিশেষ কোন পরামর্শ দিয়েছিল?

হোপ: হ্যাঁ, আমি যা বললাম সেও ঠিক তাই বলেছে। সে আমাকে বলেছিল, ‘ আক্ষরিক অর্থে আমরা যতটা ভাবি তার চেয়ে বেশি সময় আমাদের কাছে থাকে।’ সে যখন আমার ধারণা ভেঙে দেয় তখন এটা আমার অনেক উপকারে আসে। অনেক সময় তার কথা থেকে ফায়দা পেয়েছি, বিশেষ করে আমরা যখন খেলা নিয়ে খুব বেশি ভেবেছি। ধরুন, আপনি এমন একটা রান তাড়া করছেন যখন প্রতি ওভারে ১০ রান করতে হবে। আপনি যদি ওভারে ১০ রান করেন তাহলে শেষ ওভারে গিয়ে ম্যাচ জিততে আপনাকে ১০ রান করতে হবে।

এটা দেখে আপনার মনে হতে পারে অনেক বড় রান তাড়া করতে হচ্ছে। শুধু তাই নয় আপনার নিজের কাজটাও বড় মনে হবে। কিন্তু আপনি যখন এই ধারণাটাকে ভেঙে দেবেন তখন কাজটা সহজ হবে। এবং নিজেই নিজেকে বলতে হবে কেউ একজন আপনার উপর সেই বিশ্বাসটা রাখছে যে আপনি ৬ বলে ১০ রান নিতে পারবেন। লক্ষ্যটা হলো এমন পরিস্থিতিতে শান্ত থাকা। তার এমন কথাগুলো আমার পুরো ক্যারিয়ারে কাজে দিয়েছে।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: ২০১২ থেকে ২০১৬; এই সময়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দুটি বিশ্বকাপ জিতেছে। কিন্তু মাঝে কয়েক বছর ক্যারিবিয়ানরা কোন শিরোপা জিততে পারেনি। এবার তো নিজেদের ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ, আপনার কি মনে হয় শিরোপা জেতার এবারই সেরা সময়?

হোপ: দেখুন, এটা এখন আমাদের জন্য অতীত হয়ে গেছে। সেখানে যারা ছিল তাদের বেশিরভাগই এখন নেই। আমরা সবসময় বিশ্বকাপ জেতা নিয়ে আলোচনা করি এবং কিভাবে ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ জেতা যায় সেসব নিয়ে কথা বলি। আমার মনে হয় এটা এমন একটা জিনিস যা করার জন্য আমরা সবাই মুখিয়ে আছি। নিজেদের মাটিতে বিশ্বকাপ, এটা নিশ্চিতভাবেই আমাদের আরও বেশি আত্মবিশ্বাসী করে তুলবে।

আমরা নিজেরা যেমন মুখিয়ে আছি আমি নিশ্চিত আমাদের সমর্থকরাও এটার জন্য অপেক্ষা করছে। হ্যাঁ, অতীতে আমাদের অনেক সাফল্য আছে। এটা নিয়ে অবশ্য আমরা সবসময় স্মৃতি রোমান্থন করতে পারবো। কিন্তু এখন এটা কেবলই অতীত। আমাদের সবাইকে সামনে তাকাতে হবে। আপনাকে এটা নিশ্চিত করতে হবে যে আমরা সঠিকভাবে পরিকল্পনা করছি। শুধু তাই নয় আমরা যে বিশ্বকাপের জন্য সঠিক প্রস্তুতি নিচ্ছি আপনাকে এটাও নিশ্চিত করতে হবে। সবাই যদি নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী খেলতে পারে তাহলে আমরাই বিশ্বকাপ জিততে চলেছি।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: লম্বা সময় পর আন্দ্রে রাসেল ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলে ফিরেছে। বিশ্বকাপে এটা নিশ্চয় দলকে আরও বেশি আত্মবিশ্বাসী করে তুলবে?

হোপ: হ্যাঁ, সেটা তো অবশ্যই। সে (আন্দ্রে রাসেল) তো এখন দারুণ ছন্দে আছে। তাকে দেখে মনে হচ্ছে সে বেশ ফিট এবং আরও বেশি শক্তিশালী দেখাচ্ছে। আমার মনে হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে নিজের কাজটা করার জন্য সে পুরোপুরি প্রস্তুত আছে। আমি চাইবো সে এটা যেন করতেই থাকে। আমাদের সবাই নিজেকে বিশ্বকাপের জন্য প্রস্তুত করছে। বিশ্বকাপ জিততে যা করা প্রয়োজন তার সবটাই করছে। আমাদের জন্য দারুণ একটা সময় অপেক্ষা করছে।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: সম্প্রতি জেসন হোল্ডার, কাইল মেয়ার্সের মতো ক্রিকেটাররা কেন্দ্রীয় চুক্তি থেকে সরে দাঁড়িয়েছে। অধিনায়ক হিসেবে আপনি এটাকে কিভাবে দেখেন?

হোপ: দেখুন, এটা একান্তই তাদের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। আমি কোনদিন কখনও তাদের কারও বিপক্ষে যাব না। কারণ তাদেরও বাঁচতে হয়, তাদের পরিবার আছে, তাদেরকেও তো দেখাশোনা করতে হয়। কিন্তু আমাদের সকল ওয়েস্ট ইন্ডিজিয়ানদের জন্য এটা একটা চ্যালেঞ্জ। বিশেষ করে যখন আপনার সামনে ২০২৭ বিশ্বকাপ রয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি সঠিক ক্রিকেটারদের নিয়ে একটা পুল তৈরি করতে। যাতে করে আমরা দল হিসেবে আরও শক্তিশালী হতে পারি। আমি মনে করি না তারা ক্রিকেট খেলা ছেড়ে দিয়েছে। তবে হ্যাঁ, এটা অন্যদের জন্যও বড় সুযোগ যে পুলে জায়গা করে নিয়ে নিজেদের দক্ষতা দেখানো। আমার মনে হয় ২০২৭ বিশ্বকাপের আগে আমরা বড় একটা পুল তৈরি করতে পারবো, যা আমাদের কাজে দেবে।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: অধিনায়ক হিসেবে আপনার জন্য তো কাজটা কঠিন। আর সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ভালোও করছে না। এটা একটা বড় কারণ কিনা...

হোপ: এখানে অনেক কিছুই আছে। মানুষ আসলে সবসময় বর্তমানের উপর নির্দিষ্ট কিছু জিনিসের ওপর অভিযোগ করে। অনেক সময় তুমি তোমার সেরা ক্রিকেটও খেলতে পারোনি। এমন কিছুর জন্য এখন পর্যন্ত আমরা আমাদের নিজেদের দায়ী করতে পারি। আপনার হাতে যখন বল থাকে এবং আপনি সেটি নিয়ে দৌড় দেন তখন আপনাকে সেরা বলটা করতে হবে। সবসময় হয়তো এক্সিকিউশন ঠিক হবে না। অনেক সময় গুরুত্বপূর্ণ পরিস্থিতিতে নিজেরা নিজেদের হতাশ করি। আমাদের সেরা ক্রিকেট খেলতে হবে, যা আমাদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। আরও অনেক কিছুই আছে। আমাদেরকে আপাতত ভুল থেকে শিখতে হবে এবং যত দ্রুত পারি উন্নতি করতে হবে। কারণ সময় চলে যাচ্ছে।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেটারদের নিয়ে অভিযোগ যে তারা দেশের হয়ে খেলার চেয়ে ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। এই ব্যাপারে আপনার অভিমত কি?

হোপ: না, মোটেও এমন না। আমি বিশ্বাস করি যারা ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেট দেখেছে, আমাদের অতীতের গল্প ‍শুনে বড় হয়েছে কিংবা অতীতে এই দলের হয়ে হিরোদের খেলতে দেখেছে তারা সবাই ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে খেলতে ভালোবাসে। আমি নিজের সবকিছু বাজিতে জমা দিয়েও এটা বলতে পারি। তাই আমি কখনই বলবো না ছেলেরা ওয়েস্ট ইন্ডিজের চেয়ে ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগকে বেশি প্রাধান্য দেয় এবং তারা ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে খেলতে পছন্দ করে না। তারা অবশ্যই ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে খেলতে ভালোবাসে এবং আমি এটা সবসময় বলবো। আমরা দল হিসেবে খেলার চেষ্টা করছি। যখনই আমরা ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে খেলি তখনই নিজেদের সেরাটা দিই।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: একটা সময় ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে ক্লাইভ লয়েড, ভিভ রিচার্ড, ম্যালকম মার্শালরা খেলে গেছেন। অথচ সেই দলটা আইসিসির টুর্নামেন্টে ভালো করতে পারছে না। আপনারা কিভাবে আবারও সেই গোল্ডেন জেনারেশনটা ফিরিয়ে আনতে পারেন?

হোপ: আপনার কি মনে হয় আমাদের গোল্ডেন জেনারেশন শেষ হয়ে গেছে? আমার কাছে কিন্তু মনে হয় না। আমাদের এখনও অনেক কিংবদন্তি ক্রিকেটার আছে।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: কিন্তু আইসিসির টুর্নামেন্টে তো ওয়েস্ট ইন্ডিজের সেই ধারটা এখন আর দেখা যায় না...

হোপ: হ্যাঁ, এটা বলতে পারেন। কিন্তু ইংল্যান্ডের খেয়াল করে দেখুন। বিশ্ব ক্রিকেটে তারা খুবই ভালো দল। তারাও কিন্তু গত বিশ্বকাপে ভালো করতে পারেননি। কখনও কখনও এমনটা হয়। একটা দল জিততে পারে, আবার প্রত্যেকেই জিততে পারে। আপনাকে সঠিক সময়ে জ্বলে উঠতে হবে। কিন্তু আমাদের আরও অনেক উন্নতি করতে হবে। আমি নিশ্চিত আমরা সঠিক পথে থাকতে পারি তাহলে ওইখানে পৌঁছাতে পারবো।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: বেশ কয়েকজন ক্রিকেটারই বলেছে যে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে বাংলাদেশের উইকেটের মিল আছে। তাতে বিপিএল খেলায় বিশ্বকাপের জন্য লাভ হচ্ছে কিনা...

হোপ: আমার মনে হয় প্রত্যেকটা দিন আলাদা, উইকেটও আলাদা আচরণ করে। কারণ কোনদিন আপনি অতিরিক্ত বাউন্স পাবেন আবার কখনও দেখবেন সিম খুব বেশি মুভ করছে। কোন একদিন দেখছেন উইকেট ধীরগতির এবং বল টার্ন করছে। তাই আপনি যে পরিস্থিতিতে খেলবেন সেটা আপনাকে মানিয়ে নিতে হবে। খুব সম্ভবত অনেকটা মিল আছে। আমি এটা বলতে পারি যে বেশ কয়েকটি ভেন্যু আছে যেখানকার কন্ডিশন বাংলাদেশের সঙ্গে মিল আছে।

ক্রিকেটার হিসেবে দ্রুতই আপনাকে এসবের সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে, বিশেষ করে ব্যাটারদের। আমরা নির্দিষ্ট কোন ম্যাচ বা উইকেট নিয়ে কথা বলতে চাই না। আবার এটাও বলতে চাই না যে এই উইকেট এমন আচরণ করবে কিংবা প্রতিপক্ষের সঙ্গে এভাবে খেলতে হবে। এখনও আপনাকে কন্ডিশন সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে হবে এবং সেটির সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: এবার তো ওয়েস্ট ইন্ডিজে বিশ্বকাপ। সেখানে ভালো করতে বাংলাদেশকে কোথায় কোথায় উন্নতি করতে হবে বলে আপনার মনে হয়...

হোপ: আমি তোমাকে খুব বেশি গোপন তথ্য দিতে চাই না। কারণ আমি তোমাকে গোপন তথ্য দিলে বাংলাদেশ বাড়তি সুবিধা পাবে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সবসময় চ্যালেঞ্জিং। সবাই এই চ্যালেঞ্জের মধ্য ‍দিয়ে যেতে চায়। সবাই বিশ্বকাপের টুর্নামেন্টে খেলতে চায় এবং সেরাদের বিপক্ষে নিজেদের যাচাই করে নিতে চায়। আমি নিশ্চিত সবারই আলাদা আলাদা পরিকল্পনা আছে। তাদের প্রস্তুতিও থাকবে। আমি নির্দিষ্ট কাউকে নিয়ে বলতে চাই না। আমি তাদের সবার সঙ্গে খেলতে মুখিয়ে আছে।