বাংলাদেশ ক্রিকেট

কারও মানসিকতা বদলাতে পারব না, মুখও বন্ধ করতে পারব না: লিটন

আবিদ মোহাম্মদ

আবিদ মোহাম্মদ
প্রকাশের তারিখ: 19:10 মঙ্গলবার, 23 মে, 2023

|| ক্রিকফ্রেঞ্জি করেসপন্ডেন্ট ||

লিটন দাস যত রান করবেন পণ্যের উপর তত শতাংশই ডিসকাউন্ট দেয়া হবে। ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ম্যাচের ছন্দে না থাকা লিটনকে নিয়ে এমন বিজ্ঞাপন দিয়েছিল একটি প্রতিষ্ঠান। বিশ্বকাপের পর দল থেকে জায়গাও হারিয়েছিলেন তিনি। তবে কয়েকমাসের ব্যবধানে বদলে যায় দৃশ্যপট। বছর বদলাতেই যেন বদলে যেতে থাকেন লিটন।

পুল, কাট, স্ট্রেইট ড্রাইভের মতো বাহারি সব শটের পসরা সাজিয়ে রঙিন তুলির আঁচড় দিয়ে সব ইনিংস খেলতে থাকেন ডানহাতি এই ওপেনার। বাজে সময় কাটিয়ে ২০২২ সালে বাবর আজমের পর সবচেয়ে বেশি রান তুলেছেন লিটন। বাংলাদেশের জার্সিতে তার চেয়ে বেশি রান ছিল আর কারও। বছরখানেকের ব্যবধানে লিটন হয়েছেন সবার প্রিয়, পছন্দের।

অথচ নিজের খারাপ সময়ে তার চারপাশটা ছিল অন্ধকারে ঢাকা। ক্রিকফ্রেঞ্জির সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে নিজের ভালো-খারাপ সময়ের গল্পই শুনিয়েছেন লিটন। এ ছাড়া বিশ্বকাপ, ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ আর আফগানিস্তানের বিপক্ষে টেস্টে নেতৃত্ব দেয়া নিয়েও কথা বলেছেন তিনি।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: গত বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থাকায় বেশি বেশি টি-টোয়েন্টি খেলা হয়েছে, এবছর ওয়ানডে খেলছেন। কিন্তু মাঝে মাঝে একটি বা দুটি টেস্ট খেলতে হচ্ছে। দ্রুত কিভাবে নিজেকে শিফট করেন বা টেস্ট খেলার জন্য নিজেকে কিভাবে মোটিভেট করেন?

লিটন- একটা প্লাস পয়েন্ট হচ্ছে যে আমাদের হাতে সময় আছে একটা টেস্ট খেলার মতো। এরপর ঈদের একটা বিরতিও আছে। আমার মনে হয় প্রতিটা খেলোয়াড়ই মানসিকতা বদলে খেলতে পারবে। আফগানিস্তান আবার ভারতে যাবে খেলতে। তাই ওই বিরতি আমরা সব বদলে ফেলতে পারব। আপনি যখন পেশাদার ক্রিকেট খেলতে যাবেন তখন অনেক জায়গায় অনেক কিছু হয়। ধরেন আজকে টেস্ট শেষ করলেন, মাঝে খেলা নেই। দুইদিন পর ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ খেলতে চলে গেলেন। একজন খেলোয়াড় হিসেবে এগুলা আপনাকে মানিয়ে নিতে হবে।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগের কথা বললেন, আপনারা মাঝে মধ্যে সুযোগ পেলেও সেভাবে ছাড়া হচ্ছে না। লিগগুলোর জন্য বোর্ডের আরও উদার হওয়া উচিত কিনা যাতে করে ক্রিকেটাররা নিজেদের আরও উন্নতি করতে পারে...

লিটন- এই বিষয়ে মতামত দেয়া আমার উচিত হবে না। আমরা যে সবাই আছি সবাই বোর্ডের অধীনে আছি। বোর্ডের খেলাকেই প্রাধান্য দিচ্ছি, যদি সুযোগ আসে তাহলে অবশ্যই সবাই খেলবে।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: বিশ্বকাপে হয়ত আপনি আর তামিম ইকবালই ওপেন করবেন। দল হিসেবে আপনারা ভালো খেললেও আপনাদের জুটিটা বোধহয় জমছে না। এটা নিয়ে আপনাদের মাঝে কথা হয় কিনা কিংবা টিম ম্যানেজমেন্টের মাঝে দুশ্চিন্তা কাজ করছে বলে মনে হয়?

লিটন- দেখেন এটা আসলে ভুল ধারণা যে ওপেনিংই আপনাকে ম্যাচ জেতাবে। শেষ সিরিজে আমি-তামিম ভাই রান পাইনি তো শান্ত কি ম্যাচ জেতায়নি? এটা আমাদের বাঙালিদের একটা নেতিবাচক চিন্তা যে মিডল অর্ডার কলাপ্স করলে ওরা রান পাচ্ছে না। ওপেনিং ভালো না করলে ওপেনাররা রান পাচ্ছে না। পেসাররা উইকেট না পেলে তারা ফর্মে নেই। জিনিসটা এমন না, প্রতিটা খেলোয়াড়ের প্রতিদিন একরকম যাবে না। আপনি যদি একই রকমভাবে উল্টাভাবে দেখেন আয়ারল্যান্ডের সাথে বাংলাদেশের যখন খেলা হয়েছে তখন মিডল অর্ডার ব্যাটাররা সুযোগ পায়নি।

আমি আর তামিম ভাই খেলা শেষ করেছি। বিষয়গুলো এমন না, আসলে প্রতিটা ব্যাটারের সময় একরকম যাবে না। বলা যায় না দেখবেন দুইদিন পর আমরাই ওপেনাররা ভালো খেলতে পারি, তখন কি আপনারা মিডল অর্ডার ব্যাটারদের গিয়ে প্রশ্ন করবেন যে ওরা কেন সুযোগ পাচ্ছে না? জিনিসটা এমন না, প্রতিটা আলাদা আলাদা খেলোয়াড়ের দায়িত্ব আছে, ১১জন যখন মাঠে নামে প্রত্যেকের দায়িত্ব আছে। এটা টিম গেইম, দল হিসেবে ভালো খেললে ম্যাচ জিতিয়ে দেবে।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: মিডল অর্ডারে তাওহীদ হৃদয়, মুশফিকুর রহিমরা বেশ ভালো করছেন। একটা জিনিস চোখে পড়েছে যে তারা এসেই রান তোলায় মনোযোগ দিচ্ছেন যাতে করেন দল তিনশর বেশি রান করতে পারে। হাথুরুসিংহ আসায় এই পরিবর্তনটা এসেছে?

লিটন- জিনিসটা এমন না, আপনি কোন উইকেটে খেলছেন এটা অনেক বড় ব্যাপার। আপনি যদি মিরপুরে খেলেন রান কিন্তু বেশি হবে না। তবে বিদেশে ধরেন আয়ারল্যান্ডে খেলা, তখন কিন্তু ৩০০-৩২০ রান হবে। আপনি যখন জানেন উইকেট এমন, তখন শরীর বা মানসিকতা সেখানেই যাবে। জিনিসটা এমন না যে কেউ বলছে বা বলেনি। উইকেট দেখেই ব্যাটাররা খেলে।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: সবশেষ কয়েক বছরে আপনারা ঘরের মাঠেই বেশি ম্যাচ খেলেছেন। যেখানে মিরপুরের উইকেট বলতে গেলে স্লো এবং টার্নিং। যার কারণে যখন ব্যাটিং উইকেটে খেলেন তখন মানিয়ে নিতে একটু বেশি সময় লাগে কিনা...

লিটন- তেমন কোন কিছু না, আপনি যদি বড় মাঠে খেলেন। এর আগে ২-১ দিন অনুশীলন করলে আপনি বুঝতে পারবেন। আমার মনে হয় না যারা আমরা এখন খেলতেছি কেউ ১৫ বছর ধরে খেলছে, কেউ ৭-৮ বছর ধরে খেলছে। আমার মনে হয় না কারও সমস্যা হবে।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: এখন হয়ত ভালো খেলছেন, সবাই প্রশংসা করছে। একটা সময় তো আপনাকে নিয়ে সমালোচনা হয়েছে ট্রল হয়েছে। সমালোচকদের কি বার্তা দিতে চান?

লিটন- বার্তা দেয়ার কিছু নেই। কারও মানসিকতা আমি বদলাতে পারব না, কারও মুখ আমি বন্ধ করতে পারব না। আপনি ইতিবাচক-নেতিবাচক যে কোন বার্তাই দিতে পারেন। আমরা খেলোয়াড়রা কোনদিন ইতিবাচক-নেতিবাচকের মাঝে যাই না। দিনশেষে জানি যা করতে হবে খেলোয়াড়দেরই করতে হবে। আমরা পরিশ্রম করি মাঠে ফলাফল নিয়ে আসার জন্য। এটাই চালিয়ে যাব। সবাই এটাই করে। মতামত মানুষ দেবেই, আপনি যখন একজন পরিচিত চেহারা হবেন একদিনে ভালো থাকবে একদিকে খারাপ থাকবে।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: ওই সময় কি ভেবেছিলেন জীবনটা এভাবে বদলে যাবে?

লিটন- ওই সময় কি ভাবতাম না ভাবতাম এটা বড় বিষয় না। আসলে সবসময় আপনি ভবিষ্যত নিয়ে ভাবতে পারবেন না। ওই সময় বর্তমানটা ছিলই এমন যে কিভাবে ঘুরে দাঁড়ানো যায়। আমি চেষ্টা করেছি এটা। আপনি যখন ভালোমত ঘুরে দাঁড়াবেন তখন ভবিষ্যৎ এমনেই ভালো হবে।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: কোচরা হয়ত স্কিলের সমস্যা হলে ঠিক করে দেন। কিন্তু একজন খেলোয়াড়ের নিজেকে নিয়ে চিন্তা করা কতটা ‍গুরুত্বপূর্ণ। আর আপনার নিজের মাঝে ওই উপলব্ধিটা এসেছিল বলেই কি এমন পরিবর্তন?

লিটন- আমার মনে হয় প্রতিটা খেলোয়াড়ই এটা ভাবে। আপনি চিন্তা করলেই যে সফল হবেন তা না। হয়তবা অনেকেই এখনও সফল হচ্ছে না, কিন্তু ভবিষ্যতে হবে। আমার মনে হয় প্রতিটা খেলোয়াড়ই চিন্তা করে। অবশ্যই করা উচিত, না করলে আপনার মানসিকতা বদলাবে না। আপনি কি ভাবতে চাচ্ছেন তা পারবেন না। প্রতিটা খেলোয়াড়ই করে, আমিও করি। জীবনে উথান-পতন থাকবেই। আপনি চিন্তা কখনও বাদ দিতে পারবেন না।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: আপনি আগেও বিশ্বকাপ খেলেছেন। তবে সবশেষ কবছরের পারফরম্যান্সের কারণে এবারেরটা একটু স্পেশাল কিনা আর কী ধরনের পরিকল্পনা করছেন।

লিটন- প্রতিটা খেলোয়াড়ই বিশ্বকাপ নিয়ে উজ্জীবিত হয়ে আছে যে খেলাটা কবে হবে। আমরা অনেকদিন ধরে এই ফরম্যাট খেলে আসছি, এছাড়া এশিয়ার কন্ডিশনে একটা ভালো দল নিয়ে যাব। আমার কাছে মনে সবার মাথায় এটাই থাকবে যে বিশ্বকাপে আমাদের জন্য বড় একটা সুযোগ আছে। যেহেতু সামনে একটা টেস্ট ম্যাচ, এখন এতো দূর চিন্তা করছি না। সামনের টেস্টটা কিভাবে ভালো খেলা যায় আপাতত এসব নিয়েই ভাবছি।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: সাদা পোশাকের কথা বললেন, টেস্টে আপনি সহ-অধিনায়ক, সাকিব আল হাসান ইনজুরিতে পড়ায় আফগানদের বিপক্ষে অধিনায়ক হিসেবে আপনারই থাকার কথা। যদিও কথা উঠেছে আপনি নেতৃত্ব দিতে চান না। বিষয়টা যদি একটু খোলাসা করতেন...

লিটন- না এমন কিছু না। বোর্ড এখনও সিদ্ধান্ত নেয়নি কিছু। আপনারা দুইদিন পরই জানতে পারবেন সবকিছু। তারা আমাকে যোগ্য মনে করলে সেটা তারাই সিদ্ধান্ত নেবে।