টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ২০২২

তারকা ক্রিকেটার পেতে চাইলে বিপিএলের সময় বদলাও: ক্লিঙ্গার

আবিদ মোহাম্মদ

আবিদ মোহাম্মদ
প্রকাশের তারিখ: 20:38 শুক্রবার, 28 অক্টোবর, 2022

|| আবিদ মোহাম্মদ, ব্রিসবেন থেকে ||

চন্ডিকা হাথুরুসিংহের জন্য অপেক্ষা তখনও ফুরোয়নি। বাংলাদেশের সাবেক কোচের জন্য অপেক্ষার প্রহর গুনতে গুনতেই মাইকেল ক্লিঙ্গারের সঙ্গে দেখা। নিউ সাউথ ওয়েলস ক্রিকেট একাডেমির টি-শার্ট গায়ে দেয়া ক্লিঙ্গার হেঁটে চলছিলেন কফি হাতে। খানিকটা দূরে থাকলেও চিনতে খুব বেশি সময় লাগেনি। কাছে গিয়ে বাংলাংদেশের সাংবাদিক পরিচয় দিতেই একটু হেসে উঠলেন অস্ট্রেলিয়ার সাবেক এই ক্রিকেটার।

যদিও স্বল্প সময়ের কথার গল্পে উদঘাটন করা যায়নি তার হাসির রহস্য। তবে ক্লিঙ্গার যে বাংলাদেশিদের বেশ ভালো করেই চেনেন সেটা তার চোখে মুখে স্পষ্ট ছিল। কথা বলতে বলতে সেটা আরও স্পষ্টতা পেয়েছে। বিশ্ব জুড়ে খুব বেশি নামডাক না থাকলেও বাংলাদেশের সঙ্গে তার খানিকটা সম্পর্ক রয়েছে। অজিদের হয়ে খুব বেশি ম্যাচ খেলার সুযোগ না হলেও ঘরোয়া ক্রিকেটে বরাবরই দাপট দেখিয়েছেন ক্লিঙ্গার।

বিগ ব্যাশের পাশাপাশি অজিদের সাবেক এই ব্যাটারের ছাপ পড়েছে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) ও ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল)। অ্যাডিলেড স্ট্রাইকার্স এবং মেলবোর্ন স্টারসের হয়ে খেলা ক্লিঙ্গার ছিলেন বিগ ব্যাশের প্রথম আসরের শিরোপা জয়ী অধিনায়ক। এদিকে কচি টাস্কার্স কেরেলার হয়ে আইপিএল খেলা এই ব্যাটার ৪ ম্যাচে সেভাবে নিজের ছাপ রাখতে পারেননি।

আইপিএল খেলার পর বছর ছয়েক পর বাংলাদেশে এসেছিলেন ক্লিঙ্গার। খুলনা টাইটান্সের হয়ে সেবার মাতিয়েছিলেন বিপিএল। সেই মৌসুমে ৭ ম্যাচে কোন হাফ সেঞ্চুরি না পেলেও ব্যাট হাতে করেছিলেন ১৫৪ রান। সেবার ঢাকার পাশাপাশি গিয়েছিলেন চট্টগ্রামেও। তারকায় ঠাসা বিপিএলের সেই মৌসুমে তার সতীর্থ ছিলেন জোফরা আর্চার, রাইলি রুশো, ডেভিড উইসেরা। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের নেতৃত্বে সেবার সেমিফাইনাল খেলেছিল খুলনা।

২০১৭ সালের বিপিএল খেলার স্মৃতিচারণ করে ক্রিকফ্রেঞ্জিকে ক্লিঙ্গার বলেন, ‘আমি ২০১৭ সালে খুলনার হয়ে বিপিএল খেলেছিলাম। খুব উপভোগ করেছিলাম মৌসুমটা। প্রথম বাংলাদেশে গিয়ে সেখানকার পরিবেশ খুব মনে ধরেছিল। দেশটির সংস্কৃতি সম্পর্কে জানার চেষ্টা করেছিলাম, উপভোগ্য সময় ছিল।’

‘আমার মনে আছে দল সেমিফাইনাল পর্যন্ত গিয়েছিল। মাহেলা (জয়াবর্ধনে) আমাদের কোচ ছিল, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ অধিনায়ক ছিল। এছাড়া রাইলি রুশো, জোফরা আর্চার, ডেভিড উইসেদের সাথে ড্রেসিং রুম শেয়ার করেছিলাম। ভালো সময় কেটেছিল। এর আগে ভারতে আইপিএল খেলেছিলাম, উপমহাদেশে খেলার অভিজ্ঞতার দিক দিয়ে বাংলাদেশ ছিল দ্বিতীয়।’

বিপিএলে এক মৌসুম খেললেও ঢাকার উইকেটে খেলতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয়েছিল ক্লিঙ্গারকে। স্পিন সহায়ক উইকেটে মানিয়ে নিতে কষ্ট হলেও চট্টগ্রামে ভালো সময় কেটেছিল তার। সে জন্যই ঢাকার উইকেটকে কঠিন বলে আখ্যা দিয়ে ক্লিঙ্গার বলেন, ‘আমি ঢাকার উইকেট বুঝতে পারছিলাম না শুরুতে। স্পিন সহায়ক উইকেট ছিল, খেলতে কষ্ট করতে হচ্ছিল। তবে চট্টগ্রামের উইকেটে তা হয়নি। দুইটা ভিন্ন কন্ডিশন ছিল একদম।’

আগামী বছরের শুরুতে বসতে যাচ্ছে বিপিএলের আরও একটি আসর। তবে গেল আসরগুলোর তুলনায় এবার কঠিন পরিস্থিততেই পড়তে হয়েছে টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টটির আয়োজকদের। একই সময়ে বিগ ব্যাশ, আরব আমিরাতের ইন্টারন্যাশনাল লিগ টি-টোয়েন্টি, সাউথ আফ্রিকার এসএ২০ ও পিএসএল থাকায় তারকা ক্রিকেটারদের পাওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে বিপিএল ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিকদের জন্য।

ক্লিঙ্গার অবশ্য মনে করছেন, বিপিএলকে উন্নতি করতে এসবের সঙ্গে টক্কর দিতে হবে। টুর্নামেন্টের মান বাড়ানোর সঙ্গে অর্থও খরচ করতে হবে। পাশাপাশি বড় ক্রিকেটারদের পেতে ভিন্ন সময়ে বিপিএল আয়োজন করা গেলে তা বাংলাদেশের জন্য লাভজনক হবে মনে করছেন এই অজি।

২০১৭ সালে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে অভিষেক হওয়া ক্লিঙ্গার বলেন, ‘বিপিএল নিয়ে আলাদা করে বলতে হলে এটাই বলব, সামনে টুর্নামেন্টটিকে কঠিন লড়াই করতে হবে। এখন একই সময়ে একাধিক টুর্নামেন্ট চলবে। বিপিএল কর্তৃপক্ষকে এর পেছনে অর্থ খরচ করতে হবে। পাশাপাশি যদি সুযোগ থাকে ভিন্ন সময়ে এই টুর্নামেন্ট আয়োজন করতে হবে, যাতে বড় মানের ক্রিকেটাররা খেলতে পারেন।’

মিনিট পাঁচেক আলাপ শেষে ক্লিঙ্গার কফি হাতে নিয়ে চলে যান ভেতরে। এই মুহূর্তে নিউ সাউথ ওয়েলস ক্রিকেট একাডমির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান হিসেবে কাজ করছেন তিনি। থাকতে চান ক্রিকেটার তৈরির এই কারখানাতেই। গেল বছর মেলবোর্ন রেনেগেডের প্রধান কোচের চাকরি ছেড়ে দেয়ার পর আপাতত কোচিং নিয়ে ভাবছেন না ৪২ বছর বয়সী সাবেক এই অজি ক্রিকেটার।