টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ২০২২

বিরক্তি, শাসন ও বাহবা...

আবিদ মোহাম্মদ

আবিদ মোহাম্মদ
প্রকাশের তারিখ: 14:30 রবিবার, 16 অক্টোবর, 2022

|| ব্রিসবেন-অস্ট্রেলিয়া থেকে, আবিদ মোহাম্মদ ||

অ্যালেন বোর্ডার ফিল্ডের ঠিক পেছনে দুটি রাগবি মাঠ। স্পোর্টস কমপ্লেক্স হওয়ায় বড় এলাকা জুড়ে রয়েছে নানা সুযোগ-সুবিধা। তবে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) বিধি-নিষেধ থাকায় প্রথম দিন বাংলাদেশের অনুশীলন দেখতে হয়েছে রাগবি মাঠের একটি উঁচু জায়গায় দাঁড়িয়ে। দূরত্ব বেশি না হলেও, ব্যাটারদের পেছন থেকেই দেখতে হচ্ছিল। যেখানে বাংলাদেশ দল অনুশীলন করেছে তা অ্যালেন বোর্ডার ফিল্ডের পাশেই, একেবারে খোলা আকাশের নিচে ৬টি নেটে। এক পাশে ৪টি, অপরপাশে ২টি।

আপাতত এই পাশের ৪ নেটেই ব্রিসবেনে প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচের অনুশীলন সেরেছে দল। ঐচ্ছিক অনুশীলন হওয়ায় ছিলেন না সাকিব আল হাসান ও লিটন দাস। স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় শুরু হওয়া অনুশীলনে ক্রিকেটাররা শুরু থেকেই ব্যস্ত ছিলেন নিজেদের ঝালাই করে নেয়ায়। তবে আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচের আগের দিন নেটে চোখ বারবার আটকে যাচ্ছিল সৌম্য সরকারের দিকেই।

বিশ্বকাপের ঠিক আগে স্কোয়াডে 'ওয়াইল্ড কার্ড এন্ট্রি' পেয়েছেন সৌম্য। এশিয়া কাপ ও নিউজিল্যান্ড সিরিজসহ মোট ৪ ম্যাচে ব্যর্থ সাব্বির রহমান বাড়ির পথ ধরলে ভাগ্য খোলে এই বাঁহাতি ব্যাটারের। টেকনিক্যাল কনসালটেন্ট শ্রীধরন শ্রীরামের সঙ্গে বাড়তি সময় নেটে পার করেন সৌম্য। এমন নয় যে অস্ট্রেলিয়ার কন্ডিশন তার কাছে নতুন। ২০১৫ বিশ্বকাপে এখানে ৬ ম্যাচ খেলেছেন তিনি, অনেকটা কাছাকাছি কন্ডিশন নিউজিল্যান্ডেও খেলা হয়েছে একাধিকবার।

সেখানে লাল বলে সেঞ্চুরিও আছে তার। আবার অস্ট্রেলিয়ায় আসার আগে নিউজিল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজে ২টি ম্যাচও খেলেছেন তিনি। তাই উইকেট ও কন্ডিশন বুঝতে বেশি সময় লাগার কথা না সৌম্যর। কিন্তু বাজে ফর্মের কারণে জাতীয় দলে আসা-যাওয়ায় ব্যস্ত এই ক্রিকেটার নিজেকে প্রমাণের আরেকটি সুযোগ পাচ্ছেন এই বিশ্বকাপে। গতি ও বাউন্সের পরীক্ষায় তাকে সফল হতে দিতে হবে কঠিন পরীক্ষা। যে পরীক্ষার শুরুটা বিশ্বকাপের দুটি প্রস্তুতি ম্যাচেই। তাই তো শিষ্যকে প্রস্তুত করতে এক বিন্দু পরিমাণ ছাড় দিতে নারাজ শ্রীরাম।

ভুল করলে সৌম্যকে দেখিয়ে দিচ্ছেন, প্রয়োজনে কাছে ডেকে বোঝাচ্ছেন আবার ধমকের সুরেও কথা বলতে দেখা গেছে তাকে। দূর থেকে দেখে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছিল সৌম্যকে বিশ্বকাপের জন্য প্রস্তুত করতে এক বিন্দুও ছাড় দিতে নারাজ এই ভারতীয় কোচ। অনুশীলনে ডক স্টিক দিয়ে সৌম্যর কোমর সোজা বার বার বল ছুড়ছিলেন শ্রীরাম। কখনও দিচ্ছিলেন বাউন্সও।

শুরুর দিকে একটু ধুঁকলেও উইকেটের গতি ও বাউন্স বুঝতে বেশি সময় নেননি সৌম্য। খানিক পরই লেগ সাইডের অনেকটা ফুল লেন্থের বল দ্রুত শারীরিক পজিশন বদলে গ্লান্স শট খেললেন সৌম্য। তাতে আবার কোচের প্রশংসাও পেলেন। সাথে সাথে আবার একটু দেখিয়েও দিলেন এমন শটগুলো খেলতে হলে কোমড়ের পজিশন মুভমেন্ট কতটা জরুরি। এসবের মাঝে ম্যাচের আবাহাওয়া তৈরি করে সৌম্য অনুশীলন করাতে লাগলেন শ্রীরাম।

লক্ষ্য দিলেন ৩ বলে লাগবে ৮ রান। আর্ম থ্রোয়ারে ছোড়া গতিময় এক ইয়র্কারে দ্রুত ব্যাট নামিয়ে ব্লক করে বসলেন সৌম্য। তাতে বিরক্ত হলেন শ্রীধরন। কেন শট ব্লক করেছেন তা বোঝাতে সৌম্য বললেন, 'বুঝতে পারিনি ইয়র্কার আসবে।'  শ্রীরাম আরও বিরক্তি নিয়ে বললেন, 'বোলার তো তোমাকে বলে দিবে না, যে সে কোথায় বল করছে!' এরপর দেখিয়ে দিয়ে টেকনিক্যাল কনসাল্টেন্ট বললেন, 'একটু আগে পিক করে খানিকটা জায়গা বানিয়ে নাও। তাহলেই হাত খুলতে পারবে, অফ সাইডে বা মিড অফ দিয়ে কিংবা অন সাইডেও খেলতে পারবে।'

এরপর আবার শিষ্যকে নিয়ে কাজে লেগে পড়েন শ্রীরাম। পরের বলটিও দিলেন আবার ইয়র্কার ধরনের। এবার একটু জায়গা বানিয়ে মিড অফের ওপর দিয়ে তুলে মারলেন সৌম্য। শ্রীরাম এবার সন্তুষ্ট। বললেন, ‘গ্রেট শট…এবার হলো তো!’  সৌম্যকে সময় দেয়া শেষে বাকিদের কাছে গিয়েও খোঁজখবর নিতে থাকেন তিনি।  ঐচ্ছিক অনুশীলন হওয়ায় এদিন বোলাররাও ব্যাটিংটা ঝালাই করে নেয়ার সুযোগ পেয়েছেন।

অনুশীলন শেষে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে ব্যাটিং কোচ জেমি সিডন্স জানান, দলের স্বার্থে যাদের নেয়া প্রয়োজন মনে হয়েছে ম্যানেজম্যান্ট সেটাই করেছে। নিউজিল্যান্ডে ২টি ম্যাচে সুযোগ পেয়ে বড় ইনিংস না খেললেও দলের প্রয়োজন মিটিয়েছেন এই ব্যাটার। যেটা সাব্বিরের কাছে প্রত্যাশা করেছিল ম্যানেজমেন্ট।

সিডন্স বলেন, '১৭ জন ক্রিকেটার ছিল আমাদের দলে, ১৫ জন নিতে হতো। দলের স্বার্থে যে সিদ্ধান্ত নেওয়া আমাদের প্রয়োজন মনে হয়েছে, সেটাই করেছি আমরা। সৌম্য অবশ্যই ৫০ বা ৬০ রানের ইনিংস খেলেনি, সেটা সাব্বিরও করেনি। আশা করছি, সামনের দুটি প্রস্তুতি ম্যাচে ও বিশ্বকাপে দলের সবাইকে ভালো ফর্মে পাওয়া যাবে।'

নেটে ক্রিকেটারদের অনুশীলন সম্পর্কে সিডন্স বলেন, 'ওদেরকে নিয়ে আলাদা নেটে কাজ করলাম। টার্গেট ব্যাটিং করা হলো, ইয়র্কার ও স্লো বোলিংয়ে তাদের স্কিল নিয়ে কাজ হলো। ব্যাটসম্যানদেরও যেমন থ্রো ডাউন করানো হয়, আন্ডার আর্ম খেলানো হয়, সেরকমই স্কিল সেশন হলো ওদের। কালকে রাতে ওদের লম্বা ফ্লাইট ছিল, তাই খুব বেশি কাজ করাতে চাইনি।'