এমসিসি

টেস্টেও আসছে স্লো-ওভার রেটের শাস্তি, গুনতে হবে জরিমানাও

আবিদ মোহাম্মদ

আবিদ মোহাম্মদ
প্রকাশের তারিখ: 19:14 শুক্রবার, 02 সেপ্টেম্বর, 2022

|| ডেস্ক রিপোর্ট ||

নির্ধারিত সময়ে ম্যাচ শেষ করার জন্য কত রকমের নিয়মই না এসেছে ক্রিকেটে। পরিকল্পনা বাস্তবায়ন না হওয়ায় বছর-বছর তাতে আবার এসেছে পরিবর্তনও। এমনই এক নতুন নিয়মের দেখা মিলেছে চলমান এশিয়া কাপেও। যে শাস্তি পাচ্ছে ফিল্ডিংয়ে থাকা দল। স্লো-ওভার রেটের কারণে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ফিল্ডিংয়ে থাকা দল ইনিংসের শেষ ওভারের প্রথম বল করতে না পারলেই শাস্তি!

শাস্তিস্বরূপ ইনিংসের বাকি ওভারগুলোতে ৩০ গজের বাইরে একজন কম ফিল্ডার রাখতে হবে। যা ইতোমধ্যে পেয়ে গিয়েছে পাকিস্তান, ভারত বা বাংলাদেশের মতো দলগুলো। এমনকি এই ভুলে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে খেসারতও দিয়েছে বাংলাদেশ। সুযোগ কাজে লাগিয়ে জয় পেয়ে সুপার ফোরের টিকিট পেয়ে গেছে লঙ্কানরা।

ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টির পর এবার টেস্টেও আসতে যাচ্ছে স্লো ওভার রেট নিয়ে নতুন বিধি-নিষেধ। মেরিলিবোন ক্রিকেট ক্লাব (এমসিসি) বিশ্ব ক্রিকেট কমিটির মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সংস্থাকে (আইসিসি) বার্তা পাঠিয়েছে, ডিআরএস রিভিউ'র পর দ্রুত খেলা শুরু করতে। এমনকি ডিআরএসকে আরও মজবুত করার মাধ্যমে দ্রুত খেলা শুরু করে স্লো-ওভার রেটের সমাধান খুঁজতে চাইছে সংস্থাটি।

এমসিসির এক গবেষণায় উঠে এসেছে, জুনে অনুষ্ঠিত নিউজিল্যান্ড-ইংল্যান্ডের মধ্যকার টেস্ট সিরিজে প্রতিদিন গড়ে প্রায় সাড়ে ৩১ মিনিটের মত সময় নষ্ট হয়েছে। এছাড়া নতুন নিয়মে আরও যুক্ত হতে পারে পেনাল্টি রানও। পাশাপাশি নেয়া যাবে না অহেতুক পানি বিরতিও!

ডিআরএসের ক্ষেত্রে দুটি প্রস্তাব দিয়েছে এমসিসি। প্রথমটি, খেলোয়াড়রা যেন এর জন্য সময় নষ্ট না করেন। দ্বিতীয়টিতে বলা আছে, সিদ্ধান্ত নিতে আম্পায়াররা যেন অপ্রয়োজনীয় কোন পদক্ষেপ না নেয়। এমসিসি এক বিবৃতিতে জানায়, 'বাইরে থেকে কোন বদলি খেলোয়াড় গ্লাভস-পানি নিয়ে যখন-তখন মাঠে প্রবেশ করতে পারবে না।'

'আম্পায়ারের সফট সিগন্যাল যদি নট আউট থাকে তাহলে ফিল্ডিং দল পজিশনে চলে গিয়ে পরের বলের জন্য প্রস্তুতি নেবে। ব্যাটারকেও পরের বল খেলার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। কোন খেলোয়াড় পানি নিয়ে মাঠে প্রবেশ করতে পারবে না। যদি সিদ্ধান্ত ফিল্ডিং দলের পক্ষেও যায় তারপরও তারা উদযাপন করার সময় পাবে।'  

ডিআরএস রিভিউয়ের গতি বাড়াতে এমসিসি প্রস্তাব দিয়েছে, 'টিভি প্রডাকশন যখন বুঝে যাবে যে নট আউট তখনই সিদ্ধান্ত জানাতে হবে। উদাহরণ হিসেবে, অনেকক্ষেত্রে নট আউটের রিভিউতে অনেক সময় নষ্ট হয়। শুধু এটা দেখতেই যে বল ব্যাটে লেগেছে কিনা, অথবা স্টাম্পের লাইন মিস করেছে না। যদি নট আউট থাকে দ্রুত আম্পায়ারকে জানিয়ে দিতে হবে।'  

সময় অপচয়ের জন্য রান জরিমানা, এমসিসি চাইছে আম্পায়াররা এই ক্ষেত্রে আরও কঠোর হয়ে উঠুক। ধারা ৪১.৯ ও ৪১.১০ অনুযায়ী একসাথে ব্যাটিং ও বোলিং দল সময় নিলে আম্পায়াররা আগে হুঁশিয়ারি করতে পারবে। তবে যদি পরবর্তীতেও কোন ওভার অনেক স্লো হয় বা কোন কারণে এরপর সময় অপচয় হয় তাহলে ৫ রান জরিমানা করা যেতে পারে। 

ধারা ১.৯ এ বলা আছে 'যদি কোন বোলার ওভার চলাকালীন সময় অপচয় করে সেক্ষেত্রে অধিনায়ককে অবগত করে আম্পায়াররা বোলারকে ম্যাচে বোলিং করা থেকে নিষিদ্ধ করতে পারবে। সেই বোলার ওই ইনিংসে আর কোন বল করতে পারবে না। পানি বিরতির ক্ষেত্রে এমসিসি আরেকটি গবেষণা করেছে।

যেখানে দেখা যায়, নির্ধারিত সময়ে খেলোয়াড়রা পানি বিরতি নিলেও, উইকেট পড়া বা রিভিউয়ের সময়েও বিরতি নিচ্ছে। এক্ষেত্রে নতুন নিয়মে শুধু নির্ধারিত সময়েই পানি বিরতি নেয়া যাবে। 'নির্ধারিত সময় বেধে দেয়ার পর যদি উইকেট পড়ে বা রিভিউ নেয়া হয় তখনই পানি বিরতি নেয়া যাবে। যদি এ দুটো না হয় তাহলে যে সময় নির্ধারণ করে দেয়া আছে সে সময়েই শুধু পানি বিরতি নেয়া যাবে।' 

ইংল্যান্ড-নিউজিল্যান্ড সিরিজ চলাকালীন এমসিসি যে গবেষণা চালিয়েছিল তাতে যে সব বিষয় আরও উঠে এসেছে তা হলো:

  • প্রান্ত বদলে সময় লেগেছে ২০ মিনিট
  • রিভিউতে সময় নষ্ট হয়েছে অন্তত ৪ মিনিট
  • বল হারিয়ে গেলে, বল চেক বা পরিবর্তনের ক্ষেত্রে সময় লেগেছে ৩ মিনিট
  • খেলোয়াড়ই সরঞ্জাম পরিবর্তনে সময় অপচয় হয়েছে আড়াই মিনিট
  • সাইট স্ক্রিন ঠিক করতে লেগেছে আড়াই মিনিট

এমসিসির সেই গবেষণায় আরও উঠে এসছে, 'কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশিপের তুলনায় প্রতি ওভারের ক্ষেত্রে টেস্ট ক্রিকেটে ১০-১৫ সেকন্ড সময় বেশি লাগছে। গড়ে ওভার প্রতি (নতুন ব্যাটার বা বোলার ছাড়া) ৫৫ সেকন্ড সময় যাচ্ছে, যেখানে কাউন্টিতে লাগছে ৪৫ সেকেন্ড।'

এমসিসি সময় অপচয় নিয়ে আরও বলছে, ডিআরএসের জন্য পুরো সিরিজে অন্তত ৬৪ মিনিটের মতো সময় অপচয় হয়েছে। এর মধ্যে খেলোয়াড়দের আলোচনা করে রিভিউ নেয়নি (৬ মিনিট), আলোচনায় রিভিউ নিয়েছে (৪৭ মিনিট) ও আম্পায়াররা নিয়েছে (১১ মিনিট)। 'রিভিউ নেয়ার পর ফিল্ডিং দলের গড়ে ২৫ সেকেন্ড সময় লেগেছে নতুন বল করতে, যদিও সেটা শুধু ডিআরএসে আম্পায়ারের নট আউট সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রেই।'