বিপিএল ২০২২

মাশরাফির ৩০ মিনিটের 'বিশেষ ক্লাসে' খালেদ

আবিদ মোহাম্মদ

আবিদ মোহাম্মদ
প্রকাশের তারিখ: 19:29 বুধবার, 19 জানুয়ারি, 2022

|| ক্রিকফ্রেঞ্জি করেসপন্ডেন্ট ||

সময় গড়িয়ে বেলা তখন ২টার একটু বেশি। একাডেমি মাঠের সেন্টার উইকেটে চার-ছক্কা হাঁকাতে ব্যস্ত তামিম ইকবাল। একই মাঠে সেসময় মিনিস্টার গ্রুপ ঢাকার সঙ্গে অনুশীলন করছে খুলনা টাইগার্সও। তামিমের ঠিক পাশের নেটেই প্রায় ১০ মিনিটের মতো একাই বোলিং করছিলেন সৈয়দ খালেদ আহমেদ। আর চেয়ারে বসে ডানহাতি এই পেসারের বোলিং খুব মনোযোগ দিয়ে দেখছিলেন মাশরাফি বিন মর্তুজা।

মাশরাফি এবারের বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) খেলবেন তামিমের দলেই। এই দলে আরও আছেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ-এবাদত হোসেনরা। সদ্য নিউজিল্যান্ড থেকে আসমান ছোঁয়া সফলতা নিয়ে দেশে ফিরে ভিন্ন ফরম্যাটে লড়তে নিজেকে প্রস্তুত করছেন এবাদতও। তিনি বোলিং করতে ব্যস্ত তামিমকে, সঙ্গে আছেন শুভাগত হোম।

এর আগে অবশ্য তামিমকে মিনিট পাঁচেক বোলিং করেছেন মাশরাফি। কিন্তু বারবারই কোমড়ে হাত দিচ্ছিলেন, কারণ মঙ্গলবার বোলিং করতে গিয়ে ব্যথা পেয়েছিলেন কোমড়ে। শেষ পর্যন্ত আর বোলিং না করে চেয়ারে বসে খালেদ বোলিং মনোযোগ দিয়ে দেখতে থাকেন সাবেক এই অধিনায়ক।

তামিম একপাশে যখন বড় শটস খেলায় ব্যস্ত, ঠিক তার পাশের নেটে অনেকক্ষণ ধরে কিছু একটা করার চেষ্টা করছিলেন খালেদ। খুলনার এই পেসার টানা চেষ্টা করেও যেন সফল হচ্ছিলেন না, তারপরও টানা বোলিং করে যাচ্ছিলেন। তার চেষ্টা দেখেই হয়তো মাশরাফি উঠে দাঁড়িয়ে গেলেন তার কাছে।

মাশরাফির সাথে গেলেন এবাদতও। দুজন মিলে খালেদকে স্পট বোলিং করতে সাহায্য করতে শুরু করলেন। প্রথম দুটি বল জায়গা মতো পড়েনি, তবে তৃতীয়টি একদম ইয়র্কার লেন্থে ফেললেন এই পেসার। সঙ্গে বেজে উঠল এবাদতের করতালি। চতুর্থ বলটিও ইয়র্কার লেন্থে ফেলে স্টাম্পে আঘাত করেন তিনি।

চার বল পর মার্কার সরিয়ে মাশরাফি নিজের জুতা এনে দিলেন সেখানে। যেন বোলার বুঝতে পারেন ব্যাটসম্যান কোথায় দাঁড়িয়ে আছেন। সেই বলটিও জায়গা মতো ফেললেন খালেদ। তবে প্রত্যেকটি বল শেষ করে আসার পর সাবেক ওয়ানডে দলপতি বার বার বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন তাকে।

পাশে দাঁড়িয়ে শেখার চেষ্টা করছিলেন মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ৬ উইকেট নেয়া এবাদতও। ৫ বল করার পর খালেদকে ওভার দ্যা উইকেটে ব্যাটসম্যানে পা সই করে বল করতে বললেন তিনি। জিজ্ঞেসও করলেন, 'তুই কি এই দিক দিয়ে বোলিং কম করিস'?।

মাশরাফির কথামত খালেদ পাশের সাইড থেকেও বোলিং করলেন কিছুক্ষণ। সেখানেও অনেকটা সফল হয়েছেন। ইয়র্কার দীক্ষা দেয়া শেষে বোলিংয়ের ছাড়ার পয়েন্ট এবং কাটার কিভাবে টানা ছাড়তে হয় তাও দেখিয়ে দিচ্ছিলেন বাংলাদেশের সবচেয়ে সফলতম এই অধিনায়ক।

সিলেটের এই দুই পেসারের সঙ্গে প্রায় আধা ঘন্টার মতো চলে মাশরাফি ক্লাস। ক্লাসের একদম শেষ পর্যায়ে এসে লাল বলে কিভাবে সফল হওয়া যায় তাও দেখিয়ে দেন তিনি। ক্রিকফ্রেঞ্জির সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় এসব জানিয়েছেন খালেদ।

ক্রিকফ্রেঞ্জিকে খালেদ বলেন, 'বোলিংয়ে কিছু জায়গায় সমস্যা হচ্ছিল। বিশেষ করে ইয়র্কারটার ক্ষেত্রে। তো মাশরাফি ভাইকে বললে তো উনি না করবেন না। উনি তাই দেখিয়ে দিচ্ছিলেন। আমি-এবাদত দুজনই ছিলাম। ও দেখছিল আমার সাথে, আমি বোলিং করে করে শিখে নিচ্ছিলাম। আমার চোখ থাকতো স্টাম্পের উপরে, উনি সেটা মাঝখানে রাখতে বলেছেন তাহলে ইয়োর্কার জায়গা মতো হবে। এমন ২-৩দিন করলে ঠিক হয়ে যাবে।'

'আরেকটা যেটা দেখাচ্ছিলেন সেটা লাল বলের জন্য। বল বাইরে করার জন্য। লাস্ট দুইটা সিরিজ খেললাম না, সেখানে আমরা বল বাতাসে জোড়ে জোড়ে ছাড়ছিলাম। উনি সেটায় অতো প্রেশার দিতে না করেছেন। প্রতিপক্ষ দল আসতে করেছে আমরা জোড়ে করেছি। এটাই দেখিয়ে দিচ্ছিলেন।'

মাশরাফির কাছ থেকে এদিন আরও ভালোভাবে কিভাবে কাটার ছাড়তে হয় তাও শেখার চেষ্টা করেছেন এবাদত। তবে সময়ের অভাবে পুরোপুরি সে সম্পর্কে ধারণা নেয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন তিনি। ডানাহাতি এই পেসার বলেন, 'উনার থেকে কাটারটাও একটু ভালোভাবে শেখার চেষ্টা করছিলাম। সবাই তো জানে উনি কতভালো কাটার ছাড়তে পারেন। তো আজকে গ্রিপটা সেভাবে শেখা হয়নি। উনি বলেছেন আরেকদিন দেখিয়ে দেবেন।'

খালেদ-এবাদতের ক্লাস নেয়ার একদম শেষ পর্যায়ে ঢাকার পেসার শফিউল ইসলাম এবং বোলিং কোচ ডলার মাহমুদও যোগ দেন মাশরাফির ক্লাসে। আর ক্লাস শেষে খালেদ ডাগ আউটে ফেরার পর মুশফিকুর রহিমও জানার আগ্রহ দেখান। খালেদও অনেকটা হাসিমুখেই এই উইকেটরক্ষককে দেখাচ্ছিলেন মাশরাফির থেকে কি শিখেছেন তিনি। এর ৫ মিনিট পর মাশরাফিও এসে তাদের আড্ডায় যোগ দেন।