পাকিস্তান ক্রিকেট

বুড়ো হাড়ে ফাওয়াদের ব্যাটিং দৃঢ়তা

তাসফিক শাহরিয়ার পলক

তাসফিক শাহরিয়ার পলক
প্রকাশের তারিখ: 18:35 বৃহস্পতিবার, 28 জানুয়ারি, 2021

|| ডেস্ক রিপোর্ট ||

বয়স ৩৫ এর কোঠা ছুঁয়েছে। সাধারণত এই বয়সে ব্যাট-প্যাড তুলেও রাখার চিন্তায় থাকেন যে কোন ক্রিকেটারই। কিন্তু ফাওয়াদ আলমের ক্রিকেট ক্যারিয়ার যে এখনো তরুণ। পাকিস্তানের হয়ে তিনি টেস্ট ম্যাচ খেলেছেন সবেমাত্র ৮টি। তৃতীয় টেস্টের পর চতুর্থ টেস্ট খেলতে বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যানের সময় লেগেছে ১০ বছর ২৫৮ দিন! আর ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি ছুঁতে ফাওয়াদ অপেক্ষা করেছেন ৪ হাজার ২ শত ১৮ দিন বা ১১ বছর।

দিন আর বছরের হিসেবে বুড়ো ফাওয়াদের ব্যাটিং দূঢ়তা বোঝানো অসম্ভব। এবার পরিসংখ্যানে যাওয়া যাক। ২০০৯ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তাদের মাটিতে ক্রিকেটের আভিজাত ফরম্যাটে অভিষেক ঘটে ফাওয়াদের। লঙ্কানদের বিপক্ষে অভিষেক ম্যাচের দ্বিতীয় ইনিংসেই তিনি খেলেছিলেন ১৬৮ রানের ইনিংস। একইসঙ্গে ঢুকে যান রেকর্ডের পাতায়। দেশের বাইরে অভিষেক ম্যাচে সেঞ্চুরি করা পাকিস্তানের প্রথম ক্রিকেটার এই ফাওয়াদই।

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৩ ম্যাচ টেস্ট সিরিজের বাকি দুটি টেস্ট ম্যাচও খেলেছিলেন এই ব্যাটসম্যান। যেখানে চার ইনিংসে করেছেন ৬৬ রান। এরপর দীর্ঘ ১০ বছর আর ফাওয়াদকে পাকিস্তানের স্কোয়াডেই খুঁজে পাওয়া যায়নি। এরমধ্যে ৪০ জন ক্রিকেটারকে টেস্ট অভিষেক করিয়েছে পাকিস্তান। দলটিও খেলে ফেলেছে ৮৮টি টেস্ট। ১০ বছর পর কেন আবারও ফাওয়াকেই জাতীয় দলে ফিরিয়ে আনা হল?

একজন ক্রিকেটারকে জাতীয় বাদ দেয়ার বিভিন্ন কারণই থাকতে পারে। কিন্তু তাঁকে ফিরিয়ে আনার কারণ একমাত্র পারফরম্যান্স। ফাওয়াদের ক্ষেত্রেও সেটার ব্যাতিক্রম ঘটেনি। ২০০৯ সালে জাতীয় দল থেকে বাদ পরার পর ফাওয়াদ ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলেছেন মোট ১১১ টি ম্যাচ। ৫৬.৪৮ গড়ে তাঁর ব্যাট থেকে এসেছে ৭ হাজার ৯ শত ৬৫ রান। যেখানে সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন ২৬টি আর হাফ সেঞ্চুরির সংখ্যা ৩৩টি।

ঘরোয়া ক্রিকেট এই ধরণের পারফরম্যান্স এক দশক পর ইংল্যান্ড সফরে আবারো জাতীয় দলে ফেরায় ফাওয়াদকে। প্রথম টেস্টে সুযোগ পেয়েই দুই ইনিংসে শূন্য রানে ফেরেন এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। পরের টেস্টে করেন মাত্র ২১। ঘরোয়া ক্রিকেটের এই সেরা পারফর্মার জাতীয় দলে ফিরে আবারো জায়গা নিয়ে শঙ্কার পড়েন। কিন্তু ফাওয়াদকে ফেরানোর কারিগর মিসবাহ উল হক তাঁর ওপর আস্থা হারাননি।

এ প্রসঙ্গে ফাওয়াদ বলেন, 'ইংল্যান্ডে আমার দুটি খারাপ ইনিংস ছিল। আমি অনুভব করেছিলাম যে, আমি দল থেকে বাদ পড়তে পারি তবে তিনি (মিসবাহ) আমার প্রতি বিশ্বাস হারাননি। আমাকে উৎসাহিত করে চলেছেন। তিনি আমার মধ্যে সম্ভাবনা দেখেছিলেন এবং আমাকে নিউজিল্যান্ডে আরেকটি সুযোগ উপহার দেন। কোচের এই নির্দিষ্ট সমর্থন আপনাকে ক্রিজে খেলতে আত্মবিশ্বাস যোগাবে।'

ফলস্বরূপ নিউজিল্যান্ডের সফরের স্কোয়াডে টিকে যান ফাওয়াদ। এবার গল্পটা শুধুই তাঁর। মাউন্ট মঙ্গানুয়ে প্রথম টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসেই পেয়ে যান ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি। অনেক ধৈর্যের, অনেক অপেক্ষার, অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষায় এক সেঞ্চুরি। বুড়ো ফাওয়াদ দেখিয়ে দেন তাঁর অসামান্য ব্যাটিং দূঢ়তা।

এদিকে দীর্ঘ ১২ বছর পর পাকিস্তান সফরে এসেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। কাগিসে রাবাদা, লুঙ্গি এনগিডিদের বলে ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা স্বাগতিকদের। প্রথম ইনিংসে ২৭ রানেই নেই ৪ উইকেট। পঞ্চম উইকেটে ক্রিজে নেমে আবারো নিজের ব্যাটিং প্রতিভার প্রমাণ দিলেন ৩৫ বছর বয়সী ফাওয়াদ। রাবাদা ও এনগিডির গতিতে কয়েকবার পরাস্ত হয়েও হারিয়ে যাননি। শারীরিকভাবে জখমের শিকার হয়ে মাঠে দাঁড়িয়ে ছিলেন দেয়াল হয়ে। মনযোগে ব্যাঘাত ঘটতে দেননি একটুও।

মাঠের চারপাশে অনায়াসে চার-ছয়ের পসরা সাজিয়ে আদর্শ টেস্ট ইনিংসের পথেই এগিয়েছেন ফাওয়াদ। আড়াইশোর মতো বল মোকাবেলা করেও তাকে একবারের জন্যও ক্লান্ত মনে হয়নি। দারুণ ক্ষিপ্রতার পরিচয় দিয়েছেন। প্রতিপক্ষের স্লেজিং আমলে না নিয়ে প্রাণপণে লড়ে গেছেন। ফলস্বরূপ ঘরের মাঠে প্রোটিয়া বোলারদের অদ্ভুতুড়ে ব্যাটিং স্ট্যান্ট দেখিয়ে আদায় করে নেন টেস্ট ক্রিকেটে নিজের তৃতীয় সেঞ্চুরি।

এই সেঞ্চুরির পিছনে ফাওয়াদ ভাগ্যকেই কৃতিত্ব দিচ্ছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, 'আমি কখনও কাউকে দোষ দেইনি। আমি সবসময়ই বলে এসেছি যে ভাগ্য আমার পক্ষেই কথা বলে। ওটি (সেঞ্চুরি) যদি আমার নিয়তির মধ্যে থাকে তবে কেউ এটাকে আমার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে নিতে পারত না। আমি কেবল যে সুযোগই পাব তার সদ্বব্যবহার করতে মনোনিবেশ করছিলাম, এমনকি যদি তা ঘরোয়া ক্রিকেটও।'