ভারতীয় ক্রিকেট

ওয়ার্নের ভিডিওই চাহালের সম্বল

মমিনুল ইসলাম

মমিনুল ইসলাম
প্রকাশের তারিখ: 18:18 শুক্রবার, 08 জানুয়ারি, 2021

|| ডেস্ক রিপোর্ট ||

বলা হয়ে থাকে লেগস্পিন একটি শিল্প এবং লেগস্পিনাররা শিল্পী। ক্রিকেটের শুরু থেকেই লেগস্পিনাররা ব্যাটসম্যানদের বোকা বানাচ্ছেন। তবে লেগস্পিন বিষয়টা একেবারে সহজ বিষয় নয়। লেগস্পিনকে আয়ত্ত করতে অনেক কাঠ-খড় পোড়াতে হয় বোলারদের। সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কয়েকজন লেগস্পিনার বিশ্ব ক্রিকেট মাতিয়ে বেড়াচ্ছেন। তাঁদের মাঝে একজন ভারতের যুবেন্দ্র চাহাল।

ভারতের সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটের দলে নিয়মিত মুখ ডানহাতি এই লেগস্পিনার। সময়ের পরিক্রমায় ক্রমশই নিজেকে পরিশালিত করছেন তিনি। সব মানুষ কিংবা খেলোয়াড়, সবারই কোনো না কোনো আইডল থাকে। ভিন্নতা নেই চাহালের ক্ষেত্রেও। ক্রিকেটার হওয়ার রশদ হিসেবে অস্ট্রেলিয়ার কিংবদন্তি লেগস্পিনার শেন ওয়ার্নকে বেছে নিয়েছিলেন তিনি। ওয়ার্নের খেলার ভিডিও দেখে দেখে লেগস্পিনার হওয়ার স্বপ্ন বুনেছিলেন চাহাল। সম্প্রতি এমন তথ্য জানিয়েছেন চাহাল নিজেই।

এ প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, 'একটা সময় আমি শেন ওয়ার্ন স্যারের ভিডিও দেখতে শুরু করি। লেগস্পিন কী জিনিস তাকে দেখেই বুঝতে পারি। উনিই আমার আদর্শ। তাঁর মতোই হতে চেয়েছি। তাঁর মতোই বোলিং করতে চেয়েছি। সব সময়ই শেন ওয়ার্ন শিরোনামে থাকতেন। উনি যেভাবে ব্যাটসম্যানদের ফাঁদে ফেলতেন, সেই ভিডিও দারুণ উপভোগ করেছি। তার বিরাট গুণ ছিল ফ্লাইট নিয়ন্ত্রণ করা। সেটা সব সময় তাঁর ভিডিও দেখেই আমি শিখেছি।’

ওয়ার্নের সব ভিডিওই দেখতেন চাহাল। তবে মাইক গ্যাটিংকে আউট করার ভিডিও বেশি দেখতেন বলে জানিয়েছেন। ১৯৯৩ সালের অ্যাশেজে গ্যাটিংকে আউট করেছিলেন ওয়ার্ন। যেটাকে শতাব্দীর সেরা বল হিসেবেও আখ্যা দেয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে চাহালের ভাষ্য, ‘তার সব ভিডিওই আমি দেখতাম। বিশেষ করে তার সেই গ্যাটিংকে আউট করার বলটা। আমার তো মনে হয় যে কোনও লেগস্পিনারের কাছে ওটা একটা স্বপ্নের বল। আমারও মনে হতো, একদিন ওই রকম বলে কাউকে আউট করব। হয়তো সেটা খানিকটা সত্যি হয়েছিল নিউজ়িল্যান্ডে মার্টিন গাপটিলের উইকেটটা নেওয়ার সময়। আমার ধারণা, ওটাই আমার জীবনের স্মরণীয় একটা বল।’

ওয়ার্নকে দেখার পরই ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসা তৈরি হয় চাহালের। তাঁর বাবার আইনজীবী বন্ধুরা কোনো ম্যাচের আয়োজন করলে সেখানে গিয়ে খেলতেন তিনি। যদিও শুরুর দিকে একাদশে জায়গা পেতে বেগ পোহাতে হতো তাঁকে। যে কারণে জায়গা না পেলে মাঝে মাঝে আম্পায়ারের দায়িত্ব পালন করতেন তিনি। খেলার প্রতি তাঁর আগ্রহ দেখে পরবর্তীতে সিনিয়ররাই তাঁকে খেলতে নিয়ে যেতো বলে জানিয়েছেন।

এ প্রসঙ্গে তাঁর ভাষ্য, ‘তাকে দেখার আবেগটা থেকেই নিজের এলাকায় আমি ক্রিকেট খেলতে শুরু করি। আমার তো মনে হয় সবার ক্ষেত্রেই এ রকম হয়। পরে বাবার আইনজীবী বন্ধুরা ম্যাচের আয়োজন করলেই আমি চলে যেতাম। সেখানে এমনকি আম্পায়ারিং পর্যন্ত করতাম। আসল কথা মাঠে থাকতেই দারুণ লাগত। এভাবেই খেলাটার প্রতি আমার আগ্রহ ক্রমশ বেড়েছিল। একটা সময়ের পরে সিনিয়ররাই আমাকে খেলতে নিয়ে যেত। ওরাই নানা রকম প্রশিক্ষণ দিত। আমি যা চাই তা করতে দিতো। আমার শুরু বলা যায় এভাবেই।’

মাঠে যেতে যেতে একটা সময় দলেও সুযোগ পেয়েও যান তিনি। তাঁর বয়স তখন কেবল ১০। ওই বয়সেই সিনিয়রদের সঙ্গে পটৌডি ট্রফিতে খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। বেশ কয়েকজন সিনিয়র ক্রিকেটার সময় মতো না আসায় একাদশে জায়গা হয় তাঁর। সুযোগ পেয়েই নিজেকে একেবারে উজাড় করে দিয়েছিলেন তিনি। সেই ম্যাচে তিনটি উইকেট পেয়েছিলেন ডানহাতি এই লেগস্পিনার।

ওই সময়ের স্মৃতিচারণ করে চাহাল বলেন, ‘মনে আছে সেই ম্যাচটায় আমি তিন উইকেট নিয়েছিলাম। তার পরেই অনূর্ধ্ব ১৪ দলে সুযোগ পেয়ে যাই। তখনই বুঝতে পারি, আমি ঠিকঠাক শুরু করতে পেরেছি। এবং তখন খেলাটাতেও পুরোপুরি মন দিতে পেরেছিলাম। প্রথমবার ভারতীয় শিবিরে সুযোগ পাই এনসিএর অনূর্ধ্ব ১৭-তে। সেই দু’মাস যা যা শিখেছিলাম, তার সবই প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলার সময় আমার কাজে লেগেছে। তখন থেকেই স্বপ্ন ছিল, দেশের হয়ে খেলার!’

টেনিস বলে পাড়ার গলিতে ক্রিকেট খেলেই অবশ্য তাঁর শুরুটা হয়েছিল। বর্তমানে তিনি একজন লেগস্পিনার হলেও স্কুল ক্রিকেটে একজন মিডিয়াম পেসার হিসেবে ক্রিকেট জীবন শুরু করেছিলেন তিনি। তবে শারীরিক গঠন পেসারদের জন্য আদর্শ না হওয়ায় তাঁকে স্পিনার হওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন তাঁর বাবা। এরপর আস্তে আস্তে পাড়ার ক্রিকেট থেকে স্কুল ক্রিকেট তারপর দীর্ঘপথ পেরিয়ে ভারত জাতীয় দলে।

মিডিয়াম পেসার থেকে লেগস্পিনার হওয়া প্রসঙ্গে চাহাল বলেন, ‘শুরুতে স্কুলে আমি মিডিয়াম পেস বল করতাম। পরে বাবা বলেছিলেন যে মিডিয়াম পেসার হওয়ার জন্য উপযুক্ত শরীর লাগে এবং এতে চোটের ঝুঁকিও আছে। পরবর্তীতে আমি জানি না এটা কিভাবে আমার উপকারে এসেছিল এবং আমি লেগস্পিন শুরু করি। আমরা আমাদের পার্শ্ববর্তী গলিতে টেনিস বল নিয়ে খেলতাম, এবং সেখানে মিডিয়াম পেস বল করতাম। ক্লান্ত হয়ে পড়লে আমি অফ স্পিন বা লেগস্পিন করতাম।’

‘আমি এটা বুঝতে পেরেছিলাম যে লেগস্পিনে বল অনেক টার্ন করছে যা ব্যাটসম্যানদের সমস্যায় ফেলতে পারে। এটি আমাকে লেগস্পিন বোলিং করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করিয়েছে। আমি মনে করি আমার বাবা আমাকে বুঝতে পেরেছিল। আমার মনে হয় মিডিয়াম পেসার কিংবা লেগস্পিনের মাঝে যে বিষয়টা বেশি উপভোগ করেন সেটাতে বেশি সময় ব্যয় করা উচিত; তিনি আরও যোগ করেন।’