বাংলাদেশ ক্রিকেট

'স্বাগতম বাংলাদেশের জান, বাংলাদেশের প্রাণ'

আবিদ মোহাম্মদ

আবিদ মোহাম্মদ
প্রকাশের তারিখ: 16:52 শুক্রবার, 06 নভেম্বর, 2020

|| ক্রিকফ্রেঞ্জি করেসপন্ডেন্ট ||

৫ নভেম্বর, রাত তখন প্রায় একটা। চোখের কোনায় হালকা ঘুম, শরীরে ক্লান্তির ছাপ, এরপরও যেন বড় কিছুর অপেক্ষা সব কিছুকে ছাপিয়ে যাচ্ছে। এই অপেক্ষা আর কারো জন্য নয়, বাংলাদেশ ক্রিকেটের পোস্টার বয় সাকিব আল হাসানের জন্য, মুক্ত সাকিবের জন্য।

এর আগেও অনেক খেলোয়াড় বিদেশ থেকে ফিরেছেন, সাকিব নিজেও এসেছেন অনেকবার। কিন্তু এবারের ফেরাটা একেবারেই ব্যাতিক্রম। ব্যাতিক্রম শুধু বিশ্বের অন্যতম সেরা এই অলরাউন্ডারের জন্যই নয়, বিমানবন্দরে উপস্থিত সাংবাদিক, সাকিবের ভক্ত বা নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সবার জন্যই। কারণ দেশের গ্ল্যামার বয় যে ফিরে এসেছেন আবারো দেশের মাটিতে পুরোপুরি মুক্ত হয়ে। 

রাত যত ঘনিয়ে আসছে ততই অপেক্ষা বাড়ছে। আগে জানা ছিল ঠিক রাত ২টায় বিমান থেকে নামবেন সাকিব, পরবর্তী জানা গেল ২টা নয়, ১০ মিনিট দেরিতে অবতরণ করবেন তিনি। মাঝের সময়টুকুতে সাংবাদিকদের আরও কয়েকটি গাড়ি চলে এলো বিমানবন্দরে। দুই এক-জন তো গাড়ি থেকে নেমেই জিজ্ঞেস করলেন, 'কি চলে এসেছে নাকি?' 

সাংবাদিকদের মধ্যেও কিছুটা উত্তেজনা কাজ করছিল। কারণ এক বছর পর সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হবেন সাকিব। সর্বশেষ ২৯ অক্টোবর নিষিদ্ধ হওয়ার দিন মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন সাকিব। সেদিনের সন্ধ্যা ছিল নিস্তব্ধ, হতাশা এবং আবেগে পরিপূর্ণ। সেসময় সাকিবের পাশে ছিলেন বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। 

এক বছর পরের চিত্রটা ঠিক উল্টো। ২টা ১৫মিনিটে সাকিব গেট দিয়ে বেরিয়ে এলেন। ততক্ষণে ঠিক হয়ে গেছে তিনি কোথায় বসবেন, সামনের চেয়ারে থাকবে টেলিভিশনের বুম, মোবাইল ফোন বা স্পিকার। বিসিবির বিমানবন্দর সমন্বয়ক ওয়াসিম খান আগেই সবার সঙ্গে কথা বলে সব ঠিক করে রাখেন। নির্দিষ্ট সময় তাঁর সঙ্গেই গেট দিয়ে বের হয়ে এলেন সাকিব।

আশে-পাশে যে যেখানে ছিলেন সবাই ছুটে এলেন। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখেই সাকিব বসলেন চেয়ারে। কথা বলার জন্য ফেসশিল্ড সরিয়ে নিলেন প্রথমে। এরপর দুটো মাস্ক পরেই কথা বলা শুরু করলেন। চললো সাংবাদিকদের একের পর এক প্রশ্ন। অনেকটা নির্লিপ্ত এবং স্বাভাবিক ভঙ্গীতেই উত্তর দিলেন বিশ্বের সেরা অলরাউন্ডার।

সাংবাদিকদের বিশাল ঢল দেখে সাবেক এই অধিনায়ক একটা সময় বলেই বসলেন, সকলকে একসঙ্গে এতোদিন পর দেখে ভালোই লাগছে তাঁর। মাঝের এক বছরে বিদেশ থেকে ফিরলেও মনের কোনায় ছিল অস্বস্তি। এবার যে অনেকটাই স্বস্তি নিয়ে ফিরেছেন সেটি নিজেই জানালেন সাকিব। 

সাকিব বলেন, 'আপনাদের দেখে ভালো লাগছে। সবাই এখানে। অবশ্যই এবার যখন দেশে এসেছি একটা স্বস্তি নিয়ে এসেছি। এর আগে যখন এসেছি তখন তো এরকম স্বস্তিতে ছিলাম না। কিন্তু এখন সে জায়গা থেকে অনেকটা রিলিফ। এখন আমার দায়িত্ব হচ্ছে সবার এই ভালোবাসা, দোয়া ও সমর্থনের প্রতিদান দেওয়া।'

'অবশ্যই ব্যতিক্রম একটা ব্যাপার, অন্যান্য বার হয়তো কোন জায়গা থেকে খেলে আসি বা কোনো জায়গা থেকে ঘোরা শেষে দেশে ফিরি। এবারও হয়তো কোন একটা কাজ শেষে আসলাম দেশে। কিন্তু এবার মাথার উপর যে চাপ ছিল সেটা ঝেড়ে আসতে পারলাম,' আরও যোগ করেন তিনি।  

সাকিব দেশে ফিরবেন বলে বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন তাঁর কয়েকজন ভক্তও। 'স্বাগতম বাংলাদেশের জান বাংলাদেশের প্রাণ'- এই ব্যানার হাতে ঘন্টা তিনেক দাঁড়িয়ে থাকার পর সাকিবের সঙ্গে সাক্ষাত হলো সেই ভক্তদের। গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপ শেষে ফুলের তোরা দিয়ে সাকিবকে বরণ করলেন তারা। 

এমন ভক্ত সমর্থকদের ভালোবাসার প্রতিদান দেয়ার বিষয়ে সাকিব বলেন, 'সেটাই বললাম এসবের প্রতিদান দেওয়াই আমার বড় দায়িত্ব এখন। আপনারা এখানে রাত জেগে আছেন, আরও যারা আছে সবাইকে ধন্যবাদ জানাবো সমর্থন দেওয়ার জন্য। বারবার একই কথা বলতে হচ্ছে আমাকে যে আমি চেষ্টা করবো যেন এটারই প্রতিদান দিতে পারি'।

গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা শেষে বের হওয়ার আগে বিমানবন্দরে নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকা এক কর্মীর কণ্ঠে শোনা যায়, 'সাকিবকে দেখতে অনেক ফ্রেশ লাগছে, সে এবার আরও ভালো খেলবে মনে হচ্ছে, আরও রান করুক।' 

জুয়াড়ির দেয়া প্রস্তাব আইসিসিকে না জানানোয় গত বছরের ২৯ অক্টোবর নিষিদ্ধ হন সাকিব আল হাসান। তাঁর এক বছরের সেই নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে গত মাসেই। এরপর থেকেই অপেক্ষা ছিল যুক্তরাষ্ট্র থেকে কবে দেশে ফিরবেন তিনি। অবশেষে সেই অপেক্ষার অবসান ঘটেছে বৃহস্পতিবার (৫ নভেম্বর)।