দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট

আক্ষেপের নাম আব্রাহাম বেঞ্জামিন ডি ভিলিয়ার্স

তামজিদুর রহমান

তামজিদুর রহমান
প্রকাশের তারিখ: 17:34 বৃহস্পতিবার, 30 জুলাই, 2020

|| ডেস্ক রিপোর্ট ||

২০১৮ সালের ২৩ মে দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেট অঙ্গনে নেমে আসে ঘোর অমানিশা। কারণ এদিন সকলকে হতবাক করে দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে বিদায়ের ঘন্টি বাজিয়ে দেন এবি ডি ভিলিয়ার্স।

এবি ডি ভিলিয়ার্স বলতেই চোখের সামনে ভেসে উঠে এক মারকুটে ব্যাটসম্যানের ছবি। পুরো গ্রহের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান হিসেবে যার পরিচিতি, নান্দনিক ব্যাটিং স্টাইল দিয়ে কোটি ক্রিকেট প্রেমীর মন যিনি জয় করে নিয়েছেন এক লহমায়, সেই ডি ভিলিয়ার্সের আকস্মিক বিদায় নিতান্তই বেদনার এবং মেনে নেয়া কষ্টসাধ্য। 

এমন যদি হতো ফর্ম পড়তির দিকে কিংবা বয়সের ভারে নুইয়ে পড়েছেন, সেক্ষেত্রে ডি ভিলিয়ার্সের অবসরের যুক্তিসঙ্গত ব্যাখ্যা থাকতো। কিন্তু প্রোটিয়া তারকা যে ব্যাট হাতে ছন্দেই ছিলেন বেশ। অবসর নেয়ার আগের বছরেই বাংলাদেশের বিপক্ষে পার্লে ১৭৬ রানের ইনিংস খেলেন তিনি। 

শুধু তাই নয়, ক্রিকেট খেলার বয়সও অতিবাহিত হয়নি ডি ভিলিয়ার্সের। বর্তমানে ৩৬ বছর বয়সী এই প্রোটিয়ার চেয়ে বয়সে বড় অনেক ক্রিকেটারই মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। যার চাক্ষুষ উদাহরণ ক্যারিবিয়ান ক্রিস গেইল। ওয়েস্ট ইন্ডিজের এই ব্যাটিং ঝড়ের বয়স ৪০ বছর। কিন্তু এখনও ঠিকই বিশ্ব ক্রিকেটে আধিপত্য দেখাচ্ছেন তিনি। 

হুট করে অবসরের কারণ প্রসঙ্গে শুরুতে ক্লান্তিকে দায়ী করলেও সেটি যে সঠিক নয় তা পরবর্তীতে বুঝা গেছে ক্রিকবাজকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে। জনপ্রিয় ধারাভাষ্যকার এবং ক্রিকেট বিশ্লেষক হার্শা ভোগলের সঙ্গে আলাপচারিতার এক পর্যায়ে নিজের অবসরের ব্যাপারে মুখ খোলেন মিস্টার ৩৬০ ডিগ্রি খ্যাত এবিডি।

২০১৫ সালের বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক ছিলেন ডি ভিলিয়ার্স। সেবার নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেমিফাইনালে বৃষ্টি বিঘ্নিত ম্যাচে পরাজিত হয়ে স্বপ্নভঙ্গ হয় প্রোটিয়াদের। তবে যতটা সহজে বলা হলো, বিষয়টি মোটেই সহজ ছিল না। 

তীরে এসে তরী ডোবার সেই ক্ষত টানা তিন বছর বয়ে বেড়ান তৎকালীন অধিনায়ক ডি ভিলিয়ার্স। শেষ পর্যন্ত ২০১৮ সালে এসে আরেকটি বিশ্বকাপের আগে অবসরের ঘোষণা দেন তিনি। হার্শা ভোগলকে দেয়া সাক্ষাৎকারেও উঠে এসেছে সেই প্রসঙ্গ, 

'সমালোচনার দৃষ্টিকোণ থেকে বলব না যে প্রভাব ছিল। তবে, ব্যক্তিগত দিক থেকে বললে এটা অনেক বড় ভূমিকা রেখেছিল। ...আমাদের আবার নতুন করে শুরু করতেই হতো এবং করেছিলামও, কিন্তু আমার মনে হলো, না, আমি এই বিশ্বকাপ খেলতে পারব না। এটা খুব বেদনাদায়ক ছিল। এই ধরনের ব্যাপারগুলো আমার অনুভূতি, উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও অন্যান্য ব্যাপারগুলোতে অনেক বড় প্রভাব ফেলে,' বলেছেন বিশ্বের অন্যতম সেরা এই ব্যাটসম্যান। 

ডি ভিলিয়ার্সের বিদায়ের কারণ জানার জন্য যেমন উন্মুখ ছিলেন অনেক ক্রিকেট ভক্ত তেমন তাঁর শুরুর দিকের ক্রিকেটীয় জীবন সম্পর্কেও আগ্রহের কমতি নেই অনেকের। এই প্রতিবেদনে পাঠকদের জন্য 'মিস্টার ৩৬০ ডিগ্রির' ব্যক্তিগত কিছু বিষয়ও তুলে ধরা হয়েছে। 

১৯৮৪ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারী আব্রাহাম পি ডি ভিলিয়ার্স এবং মিলি দম্পতির কোল আলো করে জন্ম নেন আব্রাহাম বেঞ্জামিন ডি ভিলিয়ার্স। তাঁর বাবা ছিলেন পেশায় একজন ডাক্তার এবং চাকুরী করতেন একটি রিয়্যাল এস্টেট কোম্পানীতে। সবমিলিয়ে সম্ভ্রান্ত এক পরিবারেই বেড়ে উঠেছেন এবিডি। 

শৈশব থেকেই ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসা সৃষ্টি হয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকার এই পোস্টার বয়ের। ক্রিকেট বিধাতা হয়তো তখনই তাঁর ললাটে লিখে রেখেছিলেন দেশের হয়ে একদিন বিশ্ব দরবারে ছড়ি ঘোরাবেন তিনি। 

প্রিটোরিয়ার জনপ্রিয় সরকারী বিদ্যালয়ে পড়ার সময় নিজের ব্যাটিং প্রতিভা দেখান এবিডি। এরপর ক্রমান্বয়ে ঘরোয়া লিগের দল টাইটান্সে খেলার সুযোগ পান তিনি। সেখান থেকেই মূলত জাতীয় দলের দরজা খুলে যায় তাঁর। তাঁর সহপাঠীদের মধ্যে জ্যাক রুডলফ, ফাফ ডু প্লেসি এবং হিনো কুন খেলেছেন জাতীয় দলে। 

ক্রিকেট খেলাটিকে রীতিমত শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া ডি ভিলিয়ার্স দেশের হয়ে খেলেছেন  ১১৪ টেস্ট, ২২৮ ওয়ানডে ও ৭৮ টি-টোয়েন্টি। ৫০.৬৬ গড়ে টেস্টে তাঁর সংগ্রহ ৮ হাজার ৭৬৫ রান।  ২২টি সেঞ্চুরি এবং ৪৬টি হাফ সেঞ্চুরি করেছেন তিনি টেস্টে। 

অপরদিকে ৫৩.৫০ গড়ে ওয়ানডেতে ৯ হাজার ৫৭৭ রান করেছেন এবিডি। এই ফরম্যাটে ২৫টি সেঞ্চুরি এবং ৫৩টি হাফ সেঞ্চুরির মালিক তিনি। এছাড়া ২৬.১২ গড়ে টি-টোয়েন্টিতে এক হাজার ৬৭২ রানের মালিক এই প্রতিথযশা ব্যাটসম্যান। 

ক্রিকেটে বেশ কিছু রেকর্ড অর্জন করেছেন এবি ডি ভিলিয়ার্স। যেগুলো ভাঙা বেশ দুঃসাধ্য যেকোনো ব্যাটসম্যানের জন্যই। চলুন দেখে নেয়া যাক সেই রেকর্ডগুলোঃ 

১। একদিনের ক্রিকেটে দ্রুততম হাফসেঞ্চুরির মালিক এবিডি (১৬ বলে) 

২। একদিনের ক্রিকেটে দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ডের মালিকও এই প্রোটিয়া (৩১ বলে) 

৩। দক্ষিণ আফ্রিকার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ টেস্ট রান তাঁর (২৭৮*)।

৪। জ্যাক ক্যালিসের পর দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেটের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারী তিনি (৯৫৭৭)।

৫।  পাঁচটি ওয়ানডেতে ২৫তম ওভারের পরে নেমে সবচেয়ে বেশি ৫টি সেঞ্চুরির রেকর্ড ডি ভিলিয়ার্সের।