সাকিব 'সাকিব' হয়ে থাকার জন্যই নেই!

ছবি: ছবি - ক্রিকফ্রেঞ্জি

|| ক্রিকফ্রেঞ্জি করেসপন্ডেন্ট ||
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সাকিব আল হাসান হওয়া সহজ কথা নয়। খেলার জগতে কোন বাংলাদেশি সাকিব আল হাসানের উচ্চতায় পৌঁছায় নি এবং তাঁর ধারেকাছেও কেউ নেই। যার কারণে সাকিব নড়নচড়নও খবরও শিরোনামে ধরা পড়ে।
একজন ক্রিকেটার হিসেবে মাঠে ও মাঠের বাইরে মহাতারকার ইমেজের সাথে মানিয়ে চলতে হয়ে তাঁকে। ২০১৮ সালটি সাকিবের জন্য একরকম রোলারকস্টারের মত যাচ্ছে। বছরের শুরুতে ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে হাতের ইনজুরির শিকার হওয়ার পর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দুই টেস্টের সিরিজে খেলতে পারলেন না তিনি।
হাই ভোল্টেজ নিদাহাস ট্রফির প্রথম দুই ম্যাচেও খেলা হয় নি তাঁর। শতভাগ ফিট না থাকলেও সাকিব নিদাহাস ট্রফির শেষ দুই ম্যাচ খেলেছিলেন। অংশ নিয়েছিলেন আইপিএলের এগারোতম আসরে।
আইপিএল দল হায়দ্রাবাদকে ফাইনাল পৌঁছে দিয়ে দুই দিনের বিশ্রাম নিয়েই আফগানিস্তানের বিপক্ষে টি-টুয়েন্টি সিরিজ খেলতে দলের সাথে যোগ দেন। সিরিজের আগে জাতীয় দলের বাকি ক্রিকেটাররা অনুশীলন ক্যাম্পে যোগ দিলেও দেড় মাস আইপিএল খেলে আসা সাকিবকে পায় নি স্কোয়াডের সদস্যরা।
আফগানদের বিপক্ষে ব্যর্থ সিরিজ শেষে দেশে এসেই বিসিবির কাছে ছুটি চেয়ে ফের বিদেশ সফরে যান সাকিব। যুক্তরাষ্ট্রে পরিবার সহ ঈদ পালন করেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। ঈদের পরেই গুরুত্বপূর্ণ ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত ছিল সাকিবের সতীর্থরা।

টেস্ট ও টি-টুয়েন্টি দলের অধিনায়ক হয়েও অনুশীলনে ছিলেন না তিনি। তাঁকে ছাড়াই বড় সিরিজের প্রস্তুতি নিয়েছে বাংলাদেশ দল। ওয়েস্ট ইন্ডিজে টেস্টে ব্যর্থ হলেও ওয়ানডে ও টি-টুয়েন্টিতে বাংলাদেশ ছিল দুর্দান্ত। কোন প্রস্তুতি ক্যাম্প না করেই সফর জুড়ে রান করেছেন সাকিব, আঙ্গুলের ব্যথা থাকার পরও নিজের সেরা পারফর্মেন্স নিংড়ে দিয়েছেন তিনি।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের সাফল্যের রেশ কেটে ওঠার আগেই ফের দেশের বাইরে উড়াল দেন তিনি। এবারও এশিয়া কাপের প্রস্তুতি এড়িয়ে পবিত্র হজ পালন করতে সৌদি আরব সফর করেন তিনি। বলা চলে, জানুয়ারিতে হাতের ইনজুরির পর কোন অনুশীলন ক্যাম্পে যোগ দেন নি সাকিব।
বরাবরই, সাকিবের অনুপস্থিতিকে বাঁকা চোখে দেখা হয়েছে, গত বছর টেস্ট ক্রিকেট থেকে সাকিবের ছয় মাসের ছুটি চাওয়ার পর থেকেই এমনটি হয়ে আসছে। বলা হচ্ছে, অনুশীলন ক্যাম্পে সাকিবের না থাকা ক্রিকেটারদের মধ্যে কোন নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
কোচ স্টিভ রোডসের অবশ্য সাকিব ইস্যুতে ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি। 'না, এতে দলের ওপর কোন প্রভাব পড়ছে না। আমার কোচিং এর ভাবনা মূলত দল সম্পর্কিত। ছেলেরা একে অপরের জন্য খেলুক, এইটাই চাই। সাকিব দলের বাকিদের কাছে খুবই সম্মানিত ব্যক্তিত্ব। তাঁরা সাকিবকে সম্মান করে ও বুঝে। পরিবারের সাথ সময় কাটানো গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে সাকিবের ক্ষেত্রে।
'কারণ সে অনেক ক্রিকেট খেলে এবং খেলে এসেছে। সে শুধু ব্যাট করে না, সে বল করে, ফিল্ডিং করে এবং দলের নেতৃত্ব দিয়ে থাকে। সে তিন ফরম্যাটেই একই কাজ গুলো করে। সাকিব তাঁর সেরা ক্রিকেট সম্পূর্ণ প্রাণবন্ত অবস্থায় খেলুক, সেই জন্যই আমরা তাঁকে পরিবারের সাথে সময় কাটানোর সুযোগ করে দিচ্ছি। এটা তাঁকে আরও ভালো প্লেয়ারে পরিনত করবে।
'সে তাঁর যত অনুশীলন করা দরকার সেটা করে নিয়েছে, যখন সে তরুন ছিল। সে ক্রিকেট মাঠেই সব করে এসেছে, টেস্ট ম্যাচে ৫০ ওভারের মত বলও করে এসেছে সে। সে জানে সঠিক লাইন লেন্থ কি হওয়া উচিত। সবসময় তাঁর অনুশীলনের প্রয়োজন নেই।
খুব বেশি অনুশীলন ছাড়াই যে দুর্দান্ত ক্রিকেট খেলা যায় সেটা ওয়েস্ট ইন্ডিজে সে করে দেখিয়েছে। সে খুবই সচেতন মানুষ, সে জানে কি কখন কি করতে হবে। আমি আত্মবিশ্বাসী, এটা দলে কোন প্রভাব ফেলে না।'
সাকিব আল হাসান বিশ্বের অন্যতম ব্যস্ত ক্রিকেটারদের একজন। ক্যারিয়ারের অধিকাংশ সময় ক্রিকেটের তিন বিভাগেই তাঁর দলের সেরা পারফর্মার ছিলেন ৩০ বছর বয়সী সাকিব।
মাঠের খেলার সাথে অনুশীলনেও কঠোর পরিশ্রম করা সাকিবের জন্য বাড়তি চাপ হয়ে যায়। বিষয়টি সম্পর্কে ভালোই অবগত বিসিবি। জাতীয় দলের জার্সিতে ক্ষুধার্ত সাকিবকেই পেতে চাইবে বাংলাদেশ।