নিশানকা-আসালাঙ্কার ব্যাটে শ্রীলঙ্কার সমতা

ছবি:

|| ডেস্ক রিপোর্ট ||
দ্রুতই তিন উইকেট হারানোর পর প্রথম ম্যাচে অবিচ্ছিন্ন ১৬৫ রানের জুটি গড়ে বাংলাদেশকে জিতিয়েছিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত এবং মুশফিকুর রহিম। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে প্রায় একই পরিস্থিতিতে পড়েছিল শ্রীলঙ্কাও। সেখান থেকে বাংলাদেশের কাছ থেকে ম্যাচ ছিনিয়ে নিয়েছেন চারিথ আসালাঙ্কা এবং পাথুম নিশানকা। তাদের দুজনের ১৮৫ রানের জুটিতে জয়ের খুবই কাছেই ছিল সফরকারীরা। সেঞ্চুরিয়ান নিশানকা ও ৯১ রানের ইনিংস খেলা আসালাঙ্কা ফেরার পর জানিথ লিয়ানাগেও আউট হয়েছেন। তাতে খানিকটা শঙ্কা তৈরি হলেও শেষ পর্যন্ত ম্যাচের দৃশ্যপট পাল্টানো যায়নি। বাংলাদেশকে ৩ উইকেটে হারিয়ে সিরিজে সমতায় ফিরল শ্রীলঙ্কা।
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে জয়ের জন্য ২৮৭ রান তাড়ায় প্রথম ওভারেই উইকেট হারায় শ্রীলঙ্কা। আভিস্কা ফার্নান্দোকে ফিরিয়ে বাংলাদেশকে দারুণ শুরু এনে দেন শরিফুল ইসলাম। বাঁহাতি এই পেসারের অফ স্টাম্পের বাইরের বলে ক্রিজ থেকে বেরিয়ে এসে ডিফেন্ড করতে গিয়ে প্রথম স্লিপে ক্যাচ দিয়েছেন আভিস্কা। লঙ্কান ওপেনারকে ফিরতে হয়েছে রানের খাতা খোলার আগেই।
তানজিম হোসেন সাকিবের ওপর খানিকটা চড়াও হয়েছিলেন কুশল মেন্ডিস ও নিশানকা। যে কারণে তানজিমকে সরিয়ে তাসকিন আহমেদকে বোলিংয়ে আনেন শান্ত। অধিনায়কের আস্থার প্রতিদান দিয়েছেন দ্রুতই, নিজের করা প্রথম ডেলিভারিতে ফিরিয়েছেন মেন্ডিসকে। তাসকিনের লেংথে পড়ে বেরিয়ে যাওয়া ডেলিভারিতে এজ হয়ে উইকেটের পেছনে মুশফিককে ক্যাচ দিয়েছেন লঙ্কান অধিনায়ক। আগের ম্যাচে হাফ সেঞ্চুরি করা মেন্ডিস এদিন ফিরেছেন ১৪ রানে।
সাদিরা সামরাবিক্রমাকেও দ্রুতই ফিরিয়েছে বাংলাদেশ। শরিফুলের অফ স্টাম্পের বাইরের বলে ডিপ ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে মিরাজের হাতে ক্যাচ দিয়েছিলেন সামরাবিক্রমা। মেহেদী হাসান মিরাজ দারুণভাবে ক্যাচ লুফে নিলে ডানহাতি এই ব্যাটারকে ফিরতে হয় ৪ বলে ১ রান করে। ৪৩ রানে ৩ উইকেট হারানোর পর শ্রীলঙ্কার হাল ধরেন নিশানকা এবং আসালাঙ্কা। তারা দুজনে মিলে দলকে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন।
সেই সঙ্গে হাফ সেঞ্চুরিও তুলে নেন নিশানকা। প্রথম ম্যাচে ভালো শুরু পেয়েও ইনিংস বড় করতে না পারা ডানহাতি এই ওপেনার এদিন পঞ্চাশ ছুঁয়েছেন বলে। পাঁচে নেমে শুরু থেকেই দ্রুত রান তুলতে থাকা আসালাঙ্কা হাফ সেঞ্চুরি করেছেন ৫০ বলে। সময় যত যাচ্ছিল বাংলাদেশের কাছ থেকে ম্যাচ ততই ছিনিয়ে নিচ্ছিলেন আসালাঙ্কা ও নিশানকা। শিশিরের প্রভাবে বল গ্রিপ করতে না পারা মিরাজ-তাইজুল আহমেদদের বেধড়ক মারছিলেন তারা দুজন।

দারুণ ব্যাটিংয়ে সেঞ্চুরিও পেয়ে যান নিশানকা। তানজিমের শর্ট লেংথ ডেলিভারিতে পুল করে এক রান নিয়ে ১০০ বলে সেঞ্চুরি ছুঁয়েছেন লঙ্কান ওপেনার। সেঞ্চুরির পর যদিও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি তিনি। মিরাজের বলে স্লগ করতে গিয়ে অনেকটা হাওয়ায় ভাসিয়েছিলেন নিশানকা। ডিপ মিড উইকেটে দাঁড়িয়ে কোন ভুল না করে লিটন দাস ক্যাচ লুফে নিলে নিশানকাকে ফিরতে হয় ১১৪ রানের ইনিংস খেলে।
নিশানকা সেঞ্চুরি পেলেও তিন অঙ্ক ছোঁয়ার আগেই আউট হয়েছেন আসালাঙ্কা। তাসকিনের অফ স্টাম্পের বাইরের বলে ডিফেন্স করতে গিয়ে এজ হয়ে মুশফিকের গ্লাভসে ক্যাচ দিয়েছেন। অনফিল্ড আম্পায়ার মাসুদুর রহমান মুকুল আউট না দিলেও শব্দ হওয়ায় দ্রুতই রিভিউ নেন শান্ত। টিভি রিপ্লেতে দেখা যায় বল মুশফিকের গ্লাভসে যাওয়ার আগে তা আসালাঙ্কার ব্যাট ছুঁয়ে গেছে। পলে ৯৩ বলে ৯১ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলে ফিরতে হয় বাঁহাতি এই ব্যাটারকে।
এরপর থিতু হতে যাওয়া জানিথ লিয়ানাগেকে ফিরিয়েছেন তানজিম। ডানহাতি এই পেসারের বলে অফ স্টাম্পে এসে লেগ সাইডে খেলতে চেয়েছিলেন তিনি। তবে বলের লাইন মিস করায় তা আঘাত হানে প্যাডে। অনফিল্ড আম্পায়ার মাসুদুর আউট দিলেও রিভিউ নেন লিয়ানাগে। তবে শেষ পর্যন্ত বেঁচে যাওয়া হয়নি ৯ রান করা এই ব্যাটারের। জয় থেকে ২ রান দূরে থাকতে আউট হয়েছে ২৫ রান করা ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা। তবে দুনিথ ওয়াল্লালাগে লঙ্কানদের জয় নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে এই ম্যাচেও টসে জিতেছিল শ্রীলঙ্কা। তবে আগের মতো আগে ব্যাটিং করেনি তারা। উল্টো বাংলাদেশকে ব্যাটিংয়ে পাঠায়। ব্যাটিংয়ে নেমে ভালো শুরু পায়নি বাংলাদেশ। আগের ম্যাচের মতো এই ম্যাচেও শূন্য রানে আউট হন লিটন দাস। দিলশান মাদুশঙ্কার লেগ স্টাম্প বরাবর করা বল ফ্লিক করেছিলেন লিটন। বল চলে গিয়েছিল সোজা স্কয়ার লেগে। সেখানে সহজ ক্যাচ নিয়েছেন দুনিথ ওয়েলালাগে। এরপর দ্বিতীয় উইকেটে বাংলাদেশের ইনিংস টেনেছেন আরেক ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান নাজমুল হোসেন শান্ত ও ওপেনার সৌম্য সরকার।
এই দুজনে যোগ করেন ৭৫ রান। অবশ্য এই জুটি ভেঙেছে শান্ত ফেরাতে। বাংলাদেশ অধিনায়ক দিলশান মাদুশঙ্কার অফ স্টাম্প ঘেঁষা দারুণ এক লেংথ বলে লেগ সাইডে খেলতে গিয়ে ব্যাটের কানায় লেগে মেন্ডিসকে সহজ ক্যাচ দিয়েছেন। শান্ত আউট হয়েছেন ব্যক্তিগত ৪০ রানে। এরপর তাওহীদ হৃদয়কে নিয়ে ইনিংস টানছিলেন সৌম্য। ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গাকে সুইপ করে চার মেরে ৫২ বলে ফিফটি পূর্ণ করেন সৌম্য। মনে হচ্ছিল আরও অনেকদূর যাবেন এই ব্যাটার। তবে তাকে ফিরিয়ে ৫৫ রানের জুটি ভেঙেছেন হাসারাঙ্গাই। লঙ্কান এই লেগ স্পিনারের বলে রিভার্স সুইপ করেছিলেন সৌম্য।
ভালো টাইমিং হলেও বল চলে গিয়েছিল মিড উইকেটে। সেখানে দৌড়ে এসে দারুণ ক্যাচ মুঠোবন্দি করেছেন মাদুশঙ্কা। ফলে ৬৬ বলে ৬৮ রান করে শেষ হয়েছে সৌম্যর ইনিংস। আউট হওয়ার আগে ১১টি চারের সঙ্গে মেরেছেন ১টি ছক্কা। এর আগে দ্রুততম বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসেবে ২ হাজার রানের মাইলফলক ছুঁয়েছেন সৌম্য। তিনি আউট হওয়ার দুই বল পর ফিরে গেছেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদও। আগের ম্যাচে ৩৭ রানের ইনিংস খেলা রিয়াদ আউট হয়েছেন শূন্যরানে। হাসারাঙ্গার গুগলিতে বিভ্রান্ত হয়ে স্টাম্পিং হয়ে আউট হয়েছেন তিনি। এরপর হৃদয় ও মুশফিকুর রহিম মিলে যোগ করেন ৪৩ রান।
মুশফিককেও আউট করেছেন হাসারাঙ্গা। এই লেগ স্পিনারের ফুল লেংথের বলে সুইপ করতে গিয়েছিলেন মুশফিক। তবে ব্যাটে বলে করতে পারেননি। বল আঘাত করেছিল সোজা প্যাডে। লঙ্কান ফিল্ডারদের জোরালো আবেদনে সাড়া দেননি আম্পায়ার মাসুদুর রহমান মুকুল। তবে শ্রীলঙ্কা রিভিউ নিলে দেখা যায় বল লেগ স্টাম্পে পিচ করে আঘাত করত লেগ মিডল স্টাম্পে। ফলে থার্ড আম্পায়ার আউট ঘোষণা দেন মুশফিককে। ২৮ বলে ২৫ রান করে ফিরে যেতে হয় তাকে। মেহেদী হাসান মিরাজকেও বেশিক্ষণ থিতু হতে দেননি হাসারাঙ্গা।
এই স্পিনারের বলে এগিয়ে গিয়ে খেলতে চেয়েছিলেন মিরাজ। তবে শেষ মুহূর্তে নিজের ভুল বুঝে ডিফেন্স করতে চেয়েছিলেন মিরাজ। তবে সেই বলে সোজা আঘাত করে স্টাম্পে। ১২ রান করেই ফিরে যেতে হয় মিরাজকে। লোয়ার অর্ডার ব্যাটারদের নিয়ে লড়াই চালিয়ে যাওয়া তাওহীদ হৃদয় ৭৪ বলে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন। শেষদিকে হৃদয়কে দারুণ সঙ্গ দিয়েছেন তানজিম হাসান সাকিব। এই দুজনের জুটি থেকে এসেছে ৪৭ রান। মাদুশঙ্কার ওপর চড়াও হতে গিয়ে ৩৩ বলে ১৮ রান করে আউট হয়েছেন সাকিব।
মাদুশঙ্কার লেংথ বলে বড় শট খেলতে গিয়ে মিড অফে হাসারাঙ্গার হাতে ক্যাচ দিয়ে আউট হতে হয়েছে তাকে। হৃদয়কে দারুণ সঙ্গ দিয়েছেন তাসকিন আহমেদও। এর মধ্যে প্রমোদ মাদুশানকে পরপর দুই বলে ছক্কা ও চার মারেন তাসকিন। লাহিরু কুমারাকে ইনিংসে শেষ দুই বলে ছক্কা হাঁকিয়ে শেষ পর্যন্ত ৯৬ রানে শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকেন হৃদয়। তাসকিন ইনিংস শেষ করেছেন ১০ বলে ১৮ রান নিয়ে। ফলে বাংলাদেশ ৭ উইকেট হারিয়ে ২৮৬ রানের বড় সংগ্রহ দাঁড় করিয়েছেন।