কুমিল্লাকে হারিয়ে বিপিএল চ্যাম্পিয়ন বরিশাল

ছবি:

|| ডেস্ক রিপোর্ট ||
বছর দুয়েক আগে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের বিপক্ষে তীরে এসে তরী ডুবেছিল ফরচুন বরিশালের। মাত্র এক রানের জন্য শিরোপা ছুঁয়ে দেখা হয়নি তাদের। এবার অবশ্য সুযোগ হাত ছাড়া করেনি বরিশাল। বোলারদের দাপুটে পারফরম্যান্সে কুমিল্লাকে মাত্র ১৫৪ রানে আটকে দেয় তামিম ইকবালের দল। সহজ লক্ষ্য তাড়ায় তামিম ও মেহেদী হাসান মিরাজ মিলে প্রত্যাশিত শুরুই এনে দিলেন। মাঝে কাইল মেয়ার্স ঝড় শিরোপায় চুমু এঁকে দেয়ার সুযোগ করে দিয়েছে বরিশালকে। সবশেষ দুই মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন হওয়া কুমিল্লার সুযোগ ছিল হ্যাটট্রিক শিরোপা জেতার। তবে কুমিল্লার হ্যাটট্রিক শিরোপা থামিয়ে প্রথমবারের মতো বিপিএলে চ্যাম্পিয়ন বরিশাল।
ফাইনালের শিরোপা জিততে বরিশালকে ১৫৫ রানের লক্ষ্য দেয় কুমিল্লা। সেই লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নামা বরিশাল প্রথম ওভারেই পায় ১২ রান। যার ১১ রানই আসে এক্সট্রা। এরপরের ওভারে মেহেদি হাসান মিরাজ ও তামিম ইকবাল মিলে স্কোরবোর্ডে যোগ করেন আরও ১৫ রান। দুই ওভারে ২৭ রানের পুঁজি নিয়েও থামেনি বরিশাল। তৃতীয় ওভারে তানভীর ইসলামকে জোড়া ছক্কা হাঁকান তামিম।
৩ ওভারে ৪১ রানের পুঁজি পেয়ে পাওয়ার প্লেতে ৫৯ রানের সংগ্রহ পায় বরিশাল। সেখান থেকে দুই ওপেনারে ব্যাটেই এগোতে থাকে তারা। সেখান থেকে আরও আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠেন তামিম। ইনিংসের অষ্টম ওভারে মঈন আলীর বিপক্ষে জোড়া চার ও ছক্কা হাঁকান বরিশালের অধিনায়ক। কিন্তু ওভারের শেষ বলে এই স্পিনারকে সামনে এগিয়ে মারতে গিয়ে বোল্ড হন বাঁহাতি এই ব্যাটার। ২৬ বলে ৩৯ রান করে সাজঘরে ফেরেন তিনি।

এর দুই ওভার পর মঈনের ঘুর্নিতে ফেরেন মেহেদি হাসান মিরাজও। দলীয় ৮২ রানে মিরাজ ফিরে গেলে মেয়ার্সকে সঙ্গ দিতে আসেন মুশফিকুর রহিম। তারা দুজনে মিলে যোগ করেন ৪৯ রান। আন্দ্রে রাসেলের বিপক্ষে রীতিমতো তাণ্ডব চালান মেয়ার্স। যদিও শেষ পর্যন্ত হাফ সেঞ্চুরি পাওয়া হয়নি তার। মুস্তাফিজুর রহমানের বলে পুল করতে গিয়ে মঈনের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন ৩০ বলে ৪৬ রানের ইনিংস খেলা মেয়ার্স।
এরপর আউট হয়েছেন মুশফিকও। সেই মুস্তাফিজের বলে ম্যাথু ফোর্ডের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন তিনি। বরিশালের উইকেটকিপারের ব্যাট থেকে এসেছে ১৩ রান। এরপর বরিশালের শিরোপা জয় নিশ্চিত করেছেন ডেভিড মিলার এবং মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। মিলার ৮ এবং মাহমুদউল্লাহ অপরাজিত ছিলেন ৭ রানে। কুমিল্লার হয়ে দুটি করে উইকেট নিয়েছেন মুস্তাফিজ এবং মঈন।
এর আগে টস হেরে ব্যাটিং করতে নেমে প্রথম ওভারেই উইকেট হারায় কুমিল্লা। কাইল মেয়ার্সের তৃতীয় বলে জীবন পেলেও সেটা কাজে লাগাতে পারেননি সুনীল নারিন। একই ওভারের পঞ্চম বলে ডানহাতি এই মিডিয়াম পেসারের ফুলার লেংথ ডেলিভারিতে ফ্লিক করতে গিয়ে শর্ট ফাইন লেগে থাকা ম্যাকয়ের দুর্দান্ত ক্যাচে ফিরেছেন নারিন। তিনে নেমে ভালো শুরু করেছিলেন তাওহীদ হৃদয়। যদিও ইনিংস বড় করতে পারেননি দারুণ ছন্দে থাকা এই ব্যাটার।
খানিকটা পরিকল্পনার ফাঁদে ফেলেই হৃদয়ের উইকেট তুলে নিয়েছেন পেসার ফুলার। লেগ সাইডে বেশি শট খেলা হৃদয়কে প্রথম দুটি বলই করেছেন অফ স্টাম্পের অনেকটা বাইরে ওয়াইড লাইনে। ফুলারের দ্বিতীয় বলটি ওয়াইড হয়েছিল। তৃতীয় ডেলিভারিও ছিল একই লাইনে। ওয়াইডে লাইনের বলে খেলতে গিয়ে থার্ডম্যানে থাকা মাহমুদউল্লাহর হাতে ক্যাচ দিয়েছেন হৃদয়। দারুণ ছন্দে থাকা এই ব্যাটার আউট হয়েছেন ১৫ বলে ১৫ রান।
এমন সময় দলকে টেনে নেয়ার দায়িত্ব ছিল লিটনের কাঁধে। তবে সেটা পারেননি কুমিল্লার অধিনায়ক। ফুলারের আগের বলে স্কয়ার লেগে ফ্লিক করে চার মারেন লিটন। পরের বলটা ফুলার করেছিলেন শর্ট লেংথে এবং অফ স্টাম্পের অনেকটা বাইরে। এমন ডেলিভারিতে কাট করতে গিয়ে হৃদয়ের মতো একই জায়গায় মাহমুদউল্লাহর হাতে ক্যাচ দিয়েছেন ১৬ রান করা লিটন। তাতে পাওয়ার প্লেতে ৩ উইকেট হারিয়ে ৪৯ রান তোলে কুমিল্লা।
পুরো টুর্নামেন্টে জ্বলে উঠতে না পারা জনসন চার্লসের সুযোগ ছিল কুমিল্লাকে টেনে তোলার। তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের এই ব্যাটারকে সেটি করতে দেননি ম্যাকয়। বাঁহাতি এই পেসারের স্লটের ডেলিভারিতে মিড অফের উপর দিয়ে খেলতে গিয়ে টাইমিংয়ে গড়বড় করে তামিমের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন। চার্লসের ব্যাট থেকে এসেছে মাত্র ১৫ রান। ব্যাট হাতে ব্যর্থ হয়েছেন মঈন আলীও। মেহেদী হাসান মিরাজের দারুণ থ্রোতে রান আউট হয়ে ফিরেছেন ইংল্যান্ডের এই ব্যাটার।
এরপর অঙ্কন এবং জাকের মিলে কুমিল্লাকে এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেন। তবে দ্রুত রান তুলতে পারেননি তারা দুজনে। ধীরগতির ইনিংস খেলে ১৭তম ওভারে আউট হয়েছেন অঙ্কন। সাউফউদ্দিনের বলে স্কুপ করতে গিয়ে বোল্ড হয়েছেন ৩৫ বলে ৩৮ রান করা এই ব্যাটার। শেষ পর্যন্ত আন্দ্রে রাসেল ও জাকেরের ব্যাটে ১৫৪ রানের পুঁজি পেয়েছে কুমিল্লা। রাসেল ২৭ এবং জাকের ২০ রানে অপরাজিত ছিলেন। বরিশালের হয়ে দুটি উইকেট নিয়েছেন ফুলার।