টেস্ট ক্রিকেটকে বিদায় বলে দিলেন কোহলি

ছবি: বিরাট কোহলি, ফাইল ফটো

যেভাবে এলেন-
ভারতের বিপক্ষে খেললে কোহলিকে মিস করবেন লিটন
১২ মিনিট আগে
২০১১ সালের মাঝামাঝি ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে টেস্ট অভিষেক হয়েছিল কোহলির। শুরুটা ছিল বেশ নীরব। কিংস্টনে প্রথম ম্যাচে করেছিলেন মাত্র ৪ ও ১৫ রান। পুরো সফরে পাঁচ ইনিংসে করেন ৭৬ রান। তবে সে বছরের শেষদিকে মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৫২ ও ৬৩ রানের দুটি ইনিংস খেলে টেস্টে নিজের সামর্থ্যের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন তিনি।
যেভাবে ‘বড়’ হতে থাকলেন-
এরপর ২০১১-১২ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়া সফরে ব্যাট হাতে ধুঁকলেও শেষ টেস্টে অ্যাডিলেডে করেন নিজের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি। তবে কোহলির আসল উত্থান ২০১৪-১৫ অস্ট্রেলিয়া সফরেই। সেই সিরিজে অ্যাডিলেডে দুটি সেঞ্চুরি, এরপর মেলবোর্ন ও সিডনিতে আরও দুটি সেঞ্চুরি—সিরিজজুড়ে ৮৬.৫০ গড়ে ৬৯২ রান করেন তিনি। তখনই টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পান। কেননা মহেন্দ্র সিং ধোনি প্রথম টেস্টে চোটে পড়েছিলেন। পরে ধোনি তৃতীয় টেস্ট শেষে টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর নিলে পূর্ণাঙ্গ নেতৃত্ব কোহলির কাঁধে আসে।
নেতৃত্বে যেভাবে বিশ্বকে রাঙালেন-
কোহলির অধিনায়কত্বে ভারতের টেস্ট দলের এক স্বর্ণযুগের সূচনা হয়। তার অধীনে ৬৮ ম্যাচে ভারত জিতেছে ৪০টি, হেরেছে মাত্র ১৭টি। এতে তিনি হয়ে ওঠেন ভারতের সবচেয়ে সফল টেস্ট অধিনায়ক, পেছনে ফেলেন ধোনি (৬০ ম্যাচে ২৭ জয়) ও সৌরভ গাঙ্গুলিকে (৪৯ ম্যাচে ২১ জয়)। বিশ্বের সফলতম টেস্ট অধিনায়কদের তালিকায়ও তিনি চতুর্থ। শীর্ষে রয়েছেন গ্রায়েম স্মিথ (১০৯ ম্যাচে ৫৩ জয়)।
ক্যারিয়ারের যে সময়টায় কোহলি ‘কিংবদন্তি’-

২০১৮ সালের ইংল্যান্ড সফর ছিল কোহলির ক্যারিয়ারের আরেকটি মাইলফলক। আগের সফরে ব্যর্থতা ভুলিয়ে দিয়ে তিনি পাঁচ টেস্টে করেছিলেন ৫৮৩ রান, গড় ছিল ৫৯.৩০। ওই বছরই তিনি এক পঞ্জিকাবর্ষে করেছিলেন সর্বোচ্চ ১৩২২ রান।
ওয়ানডে অবসর নিয়ে এখনই ভাবছেন না রোহিত
৫ ঘন্টা আগে
২০১৬ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত সময়টায় কোহলি ছিলেন অনবদ্য। ২০১৬ সালে তার গড় ছিল ৭৫.৯৩, ২০১৭ তে ৭৫.৬৪, ২০১৮ তে ৫৫.০৮, আর ২০১৯ এ ৬৮.০০। এই সময়ে তিনি ৩৫ টেস্টে ৩৫৯৬ রান করেছিলেন, গড় ছিল ৬৬.৫৯। এই সময়ের মধ্যে তার ব্যাটে এসেছিল ১৪টি সেঞ্চুরি ও ৮টি হাফ সেঞ্চুরি।
বিদায়ের ঘোষণায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইন্সটাগ্রামে কোহলি যা বললেন,
'টেস্ট ক্রিকেটে প্রথমবার বেগি নীল জার্সি গায়ে চাপানোর পর কেটে গেছে ১৪ বছর। সত্যি বলতে, এই ফরম্যাট আমাকে কোথায় নিয়ে যাবে, সেটা কখনও কল্পনাও করিনি। এটা আমাকে বারবার পরীক্ষা নিয়েছে, গড়ে তুলেছে, আর এমন কিছু শিক্ষা দিয়েছে যা সারাজীবন সঙ্গে থাকবে।'
'সাদা পোশাকে খেলার মধ্যে একটা ব্যক্তিগত আবেগ জড়িয়ে থাকে। নিরব পরিশ্রম, দীর্ঘ সময়ের লড়াই, আর কিছু ছোট ছোট মুহূর্ত—যেগুলো কেউ দেখে না, কিন্তু আজীবন মনে গেঁথে থাকে।'
'এই ফরম্যাট থেকে সরে দাঁড়ানো সহজ নয়, কিন্তু মনে হচ্ছে এটাই সঠিক সময়। আমি আমার সর্বোচ্চটা দিয়েছি, আর এই খেলা আমাকে ফিরিয়ে দিয়েছে তার চেয়েও অনেক বেশি।'
'আমার হৃদয় ভরে আছে কৃতজ্ঞতায়—এই খেলার জন্য, যেসব মানুষের সঙ্গে মাঠ ভাগ করেছি তাদের জন্য, আর প্রতিটি মানুষের জন্য যারা আমাকে পথচলায় পাশে থাকার অনুভব করিয়েছেন। আমি সবসময় টেস্ট ক্যারিয়ারের দিকে ফিরে তাকাবো এক প্রশান্তির হাসি নিয়ে।'
সাম্প্রতিক ফর্ম-
সাম্প্রতিক সময়ে টেস্টে কোহলির ব্যাট থেকে সেই ধারাবাহিকতা দেখা যায়নি। ২০২৪ সালের নভেম্বরে পার্থ টেস্টে শতক হাঁকানোর আগে তার শেষ শতক ছিল ২০২৩ সালের জুলাইয়ে, পোর্ট অব স্পেনে। ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস—২০১৯ সালে পুণেতে সাউথ আফ্রিকার বিপক্ষে অপরাজিত ২৫৪ রান করার পর তার গড় যেখানে ছিল ৫৫.১০, গত দুই বছরে তা নেমে এসেছে ৩২.৫৬ এ।
সবমিলিয়ে টেস্ট ক্রিকেটে কোহলি-
টেস্ট ক্যারিয়ারে ৩৬ বছর বয়সী কোহলি ১২৩টি ম্যাচ খেলেছেন। এর মধ্যে ৬৮টিতে ছিলেন অধিনায়ক। সবমিলিয়ে টেস্টে তার রান ৯ হাজার ২৩০, গড় ৪৬.৮৫। সেঞ্চুরি ৩০টি, হাফ সেঞ্চুরি ৩১টি।
ভারতের স্বর্ণযুগের অবসান-
রোহিত শর্মা এবং রবিচন্দ্রন অশ্বিনের পর টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর নিলেন কোহলি। চেতেশ্বর পূজারা ও আজিঙ্কা রাহানের দলে অনুপস্থিতি, মোহাম্মদ শামির ফর্ম নিয়ে অনিশ্চয়তা—সব মিলিয়ে ভারতের সোনালি টেস্ট যুগ যেন সত্যিই অবসানের পথে। এই মুহূর্তে লোকেশ রাহুল, রবীন্দ্র জাদেজা ও জাসপ্রিত বুমরাহই কেবল সেই সময়ের প্রতিনিধি হিসেবে দলে রয়ে গেছেন। এই প্রজন্ম নিয়ে পরপর দুটি ওয়ার্ল্ড টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনাল খেলে ভারত, যেখানে প্রথমটি ছিল কোহলির নেতৃত্বেই।