বল টেম্পারিং কান্ড

পার্শ্বনায়ক থেকে নায়ক, অতঃপর খলনায়ক

সৈয়দ সামি

সৈয়দ সামি
প্রকাশের তারিখ: 02:52 বৃহস্পতিবার, 29 মার্চ, 2018

১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১০ 
মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ড। 

অস্ট্রেলিয়া বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে লেগ স্পিনার হিসেবে অভিষেক হয় এক তরুণের। অভিষেকে ব্যাটও করা হয়নি তার। তবে নিজের প্রধান কাজ বোলিংয়ে উইকেট নিয়েছিলেন মাত্র ২টি। বাংলাদেশ হলে, সেই ম্যাচেই হয়তো ভাগ্য নির্ধারণ হয়ে যেতো তার। তবে দলটি অস্ট্রেলিয়া বলেই ভরসা রেখেছিল তার ঘুর্নিতে।

১৩ জুলাই, ২০১০ 
লর্ডস ক্রিকেট স্টেডিয়াম।
অস্ট্রেলিয়া বনাম পাকিস্তান, টেস্ট ম্যাচ।

অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ৪১৫ তম ব্যাগিগ্রীণ ক্যাপটি মাথায় মাথায় উঠে এক তরুণের। লেগ স্পিনার হিসেবে খেলতে নামা সেই তরুণের নাম স্টিভ স্মিথ। সাদা পোষাকের ক্রিকেটে অবশ্য ব্যাট করার সুযোগ পেয়েছিলেন। তাও নয় নম্বরে। দুই ইনিংস মিলিয়ে মোট রান ১৩ আর উইকেট নিয়েছিলেন ৩টি। যেকোনো বোলারই এমন সাদামাটা অভিষেকের পর বোলিংয়ে বাড়তি নজর দেবেন। ভোরের সূর্য যেমন পুরো দিনের পূর্বাভাস দেয় না। তেমনি এই লেগ স্পিনারের ক্যারিয়ারও অন্য বোলারদের মত হয়নি। কে জানতো একজন ‘লেগ স্পিনার’ ব্যাটসম্যানদের টেস্ট র‍্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বরে রীতিমতো খুঁটি গেড়ে বসবেন ক্যারিয়ারের চতুর্থ বছরে এসে?

২০১৪-১৫ বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফি,

অস্ট্রেলিয়া
ক্রিকেটার ফিলিপ হিউজকে হারিয়ে শোকে কাতর ক্রিকেট বিশ্ব। ঘরের ছেলেকে হারিয়ে শোকাচ্ছন্ন অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট। অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট বোর্ড ঘোষণা দিয়েছিল যে কেউ সেই সিরিজ থেকে নাম প্রত্যাহার করে নিতে পারে। তবে কেউই নাম প্রত্যাহার করেনি। তবে,  ইনজুরি কেড়ে নেয় দলের সবচেয়ে বড় ব্যাটিং স্তম্ভ অধিনায়ক মাইকেল ক্লার্ককে। ক্লার্কের অবর্তমানে ২৪ বছরের এক তরুণের কাঁধে নেতৃত্ব ভার তুলে দেয় অস্ট্রেলিয়া। তিনি আর কেউ নন স্টিভ স্মিথ।

লেগস্পিনকে পুঁজি করে ক্রিকেট শুরু করা স্মিথ ততদিনে ব্যাটসম্যান হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছেন। তবে খোলস থেকে বের হতে পারছিলেন না। এই অধিনায়কের দায়িত্বই স্মিথকে সেই খোলস থেকে বের করে আনলো। যেখানে আগের ২২ টেস্টে মাত্র ৪ টি সেঞ্চুরি করেছেন, অধিনায়কের আর্মব্যান্ড পাওয়ার পর টানা চার টেস্টে চার সেঞ্চুরি। সেই থেকেই নায়ক হয়ে পথ চলা স্টিভ স্মিথের।

২০১৪ সাল জুড়ে ৫ সেঞ্চুরি আর ৪ ফিফটিতে ১ হাজার ১৪৬ রান করেছিলেন। ২০১৫ সালে ৬ সেঞ্চুরি আর ৫ ফিফটিতে ১৪৭৪ রান। এর মধ্যে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে কিংস্টনে ১৯৯ রানে আউট হয়েছিলেন তিনি। এরপর ইংল্যান্ডে অ্যাশেজ খেলতে গিয়ে কিংস্টনের ঝাল  লর্ডসে মিটিয়ে হাঁকালেন ২১৫ রান।

গত চার বছরে সবচেয়ে কম সেঞ্চুরি করেছেন ২০১৬-তে। মোট ১০৭৯ রান করার বছরে সেঞ্চুরি ‘মাত্র’ ৪টি। আর ২০১৭ সালে আবারও ৬ সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে নিজেকে আধুনিক ক্রিকেটের সেরাদের একজনে পরিণত করেছন স্মিথ। ৬ সেঞ্চুরি আর ৩ ফিফটিতে ১৩০৫ রান করেছেন তিনি। এর মধ্যে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ক্যারিয়ার-সেরা ২৩৯ রান আর ভারতের বিপক্ষে ধর্মশালায় ১১১ রানের কথা আলাদা বলতে হবে।
 

২৪ মার্চ, ২০১৮

ক্যাপ টাউন, দক্ষিণ আফ্রিকা

ক্যাপ টাউন টেস্টের তৃতীয় দিনে, বল টেম্পারিং করতে গিয়ে ধরা পড়েন অজি ওপেনার ক্যামেরণ ব্যানক্রফট। দিনের খেলা শেষে অপরাধের কথা শিকার করে নেন অজি অধিনায়ক স্টিভ স্মিথ। মূহুর্তেই অস্ট্রেলিয়া সহ সকল দেশের সংবাদ মাধ্যমের সামনে খল নায়ক বনে যান স্মিথ। এই ঘটনায় তিনি ছাড়াও দলের লিডারশীপ গ্রুপ জড়িত ছিল বলে জানান।

২৮ মার্চ, ২০১৮

অস্ট্রেলিয়া

ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার প্রধাণ নির্বাহী জেমস সাদারল্যান্ড স্টিভেন স্মিথকে ১ বছরের জন্য নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। তার সঙ্গী ডেভিড ওয়ার্নারকেও ১ বছরের জন্য নিষিদ্ধ করে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট বোর্ড। আর বল টেম্পারিংয়ের মূল হোতা ব্যানক্রফট নিষিদ্ধ হন ৯ মাসের জন্য। মূলত অধিনায়ক হিসেবে বল টেম্পারিংয়ের বিষয়টিকে প্রশ্রয় দেয়ার জন্যই শাস্তি হয়েছে স্মিথের।

স্মিথ ক্রিকেটের চেতনা ধুলোয় মিশিয়ে দিয়ে খলনায়ক হয়েছেন ঠিকই। কিন্তু আবেগের বশে ভুল করে ফেলা এক তরুণ যোদ্ধার ভুলের মাশুল নিজের কাঁধে নিয়েছেন স্মিথ। স্মিথ এই দায় ভার নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার কালিমার অনেকটাই নিজের দিকে টেনে নিয়েছেন সঙ্গে বাঁচিয়ে দিয়েছেন মাত্র ৮ টেস্ট খেলা এক সম্ভাবনাময় তরুণের ক্রিকেট ক্যারিয়ারও।

এখন দেখার বিষয় এক বছর পর, নিষেধাজ্ঞা থেকে ফিরে আবারও সরূপে ফিরতে পারেন নাকি স্মিথ। নাকি খলনায়ক হয়েও বেঁচে থাকেন আজীবন। যার পুরো ক্যারিয়ারই দারুণ এক চিত্রনাট্যে গড়া, তার জমকালো ক্যারিয়ারের শেষটা দেখতে মুখিয়ে থাকবেন সত্যিকারের ক্রিকেট প্রেমীরা।

মাহবুব এলাহীর পোস্ট থেকে অনুপ্রাণিত।