আইপিএল

হেড-অভিষেক-শাহবাজদের তাণ্ডবে হায়দরাবাদের আরেকটি জয়

ক্রিকফ্রেঞ্জি ডেস্ক

ক্রিকফ্রেঞ্জি ডেস্ক
প্রকাশের তারিখ: 20:51 শনিবার, 20 এপ্রিল, 2024

|| ডেস্ক রিপোর্ট ||

অভিষেক শর্মা ও ট্রাভিস হেডের ঝড়ো শুরুর পর মাঝে ছন্দ হারিয়ে ফেলে সানরাইজার্স হায়দরাবাদ। তবে নীতিশ রেড্ডি ও শাহবাজ আহেমেদের দারুণ ব্যাটিংয়ে ২৬৬ রান তোলে তারা। যেখানে ২২টা ছক্কা হাঁকান হায়দরাবাদের ব্যাটাররা। জবাবে জেক ফ্রেজার-ম্যাকগার্ক এবং অভিষেক পোরেলের ঝড়ো ব্যাটে মাঝে কিছুটা সময় ম্যাচে থাকলেও বিশাল লক্ষ্য তাড়ায় শেষ পর্যন্ত ম্যাচ থেকেই ছিটকে গেছে দিল্লি ক্যাপিটালস। দলটি হেরেছে ৬৭ রানে।

চলতি আইপিএলে এ নিয়ে তিনটি ম্যাচে আড়াইশ রানের বেশি করা হায়দরাবাদ মোট দশ পয়েন্ট নিয়ে তালিকার দ্বিতীয় স্থানে উঠে গেল। অপরদিকে ছয় নম্বরেই থাকল ঋষভ পান্তের দিল্লি। লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে দুই ওভারের মধ্যে ২৫ রান তুললেও দুই ওপেনারের উইকেট হারায় দলটি।

ওয়াশিংটন সুন্দরের বলে কাভারে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান ৫ বলে ১৬ রান করা পৃথ্বী। ভুবনেশ্বর কুমারের বলে মিড অফে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান ৩ বলে ১ রান করা ডেভিড ওয়ার্নার। তারপর ফ্রেজার-ম্যাকগার্ক এবং পোরেলের জুটিতে কিছুটা আস্থা পায় দিল্লি।

মাত্র ১৫ বলে হাফ সেঞ্চুরি করে সেই আস্থায় প্রতিদান দিতে শুরু করেছিলেন ফ্রেজার-ম্যাকগার্ক। যদিও সপ্তম ওভারেই ফিরে যান তিনি। মায়াঙ্ক মারকান্ডেকে একই ওভারে তিনটি ছক্কা হাঁকানোর পর উইকেটরক্ষক হেনরিখ ক্লাসেনকে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান তিনি।

পোরেলের সঙ্গে সল্প সময়ে তার ৮৪ রানের জুটিটি ভাঙলে আবারও বিপদে পড়ে দিল্লি। সেই মারকান্ডে একটু পর বিদায় করেন পোরেলকেও। ২২ বলে ৪২ রান করে স্টাম্পিং হয়ে ফিরে যান তিনি। তারপর ঋষভ পান্তের ব্যাটে কিছুটা এগিয়ে গেলেও কেবল পরাজয়ের ব্যবধানই কমাতে পেরেছে দলটি।

৩৫ বলে ৪৪ রান করে শেষ উইকেট হিসেবে শেষ ওভারে বিদায় নেন পান্ত। দিল্লি অলআউট হয় ১৯.১ ওভারে ১৯৯ রান করে। হায়দরাবাদের হয়ে ১৯ রান খরচায় চার উইকেট নেন টি নাটারাজান। দুটি করে উইকেট নেন মারকান্ডে এবং নিতিশ কুমার।

রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর বিপক্ষে ম্যাচের প্রথম ইনিংস শেষে ট্রাভিস হেড জানিয়েছিলেন, তাদের পরবর্তী লক্ষ্য তিনশ রান করা। সেই লক্ষ্য তাড়া করতেই যেন দিল্লির বিপক্ষে তাণ্ডব চালান অভিষেক শর্মা এবং হেড। ইনিংসের প্রথম ওভার থেকেই ছক্কা বৃষ্টিতে ভাসাতে শুরু করেন দিল্লির অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামকে। দুই প্রান্ত থেকেই সমান তালে ছক্কা-চার মারছিলেন হায়দরাবাদের দুই ওপেনার। বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে ইনিংসের তৃতীয় ওভারে এসে মাত্র ১৬ বলে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন হেড।

অ্যানরিখ নরকিয়ার ফুলার লেংথ ডেলিভারিতে বোলার মাথার উপর দিয়ে ছক্কা মেরে পঞ্চাশ ছুঁয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার বাঁহাতি এই ওপেনার। অভিষেকের সঙ্গে যৌথভাবে হায়দরাবাদের হয়ে সবচেয়ে দ্রুততম হাফ সেঞ্চুরি করেছেন হেড। ওভার হিসেবে ইনিংসের ১৮ বলের সময় পঞ্চাশ করেছেন তিনি। এর আগে দলীয় ১৭ বলের সময় হাফ সেঞ্চুরি করার কীর্তি আছে যশস্বী জয়সাওয়াল ও লোকেশ রাহুলের।

ছক্কা-বৃষ্টিতে পাওয়ার প্লে শেষে হায়দরাবাদের রান দাঁড়ায় বিনা উইকেটে ১২৫। আইপিএলের ইতিহাসে পাওয়ার প্লেতে এটিই সর্বোচ্চ রান। ২০১৭ সালে বেঙ্গালুরুর বিপক্ষে করা সুনীল নারিন ও ক্রিস লিনের করা ১০৫ রান ছিল সর্বোচ্চ। শুধু আইপিএল নয় স্বীকৃত টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটেই রেকর্ড গড়েছেন হায়দরাবাদের দুই ওপেনার। ২০১৭ সালে ডারহামের বিপক্ষে নটিংহামশায়ারের করা ১০৬ রানের রেকর্ডও ভেঙেছেন হেড ও অভিষেক।

পাওয়ার প্লে শেষ হওয়ার পরের ওভারেই উইকেট হারায় হায়দরাবাদ। কুলদীপ যাদবের অফ স্টাম্পের বাইরের ঝুলিয়ে দেয়া ডেলিভারিতে উড়িয়ে মারতে গিয়েছিলেন অভিষেক। তবে টাইমিংয়ে গড়বড় হওয়ায় অক্ষর প্যাটেলের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরতে হয় মাত্র ১২ বলে ৪৬ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলা বাঁহাতি এই ওপেনারের। একই ওভারে আউট হয়েছেন এইডেন মার্করামও। কুলদীপের লেংথ ডেলিভারিতে ড্রাইভ করতে গিয়ে বুঝে উঠতে পারেননি তিনি। এক্সট্রা কভারে থাকা সেই অক্ষরের হাতেই ধরা পড়তে হয় তিনে নামা এই ব্যাটারকে।

১৬ বলে হাফ সেঞ্চুরি করা হেড ছুটছিলেন দ্রুততম সেঞ্চুরির পথে। তবে শেষ দিকে গিয়ে দ্রুত রান তুলতে পারেননি। এমনকি শেষ পর্যন্ত সেঞ্চুরিও পাওয়া হয়নি তার। কুলদীপের সোজা ডেলিভারিতে লং অনের ওপর দিয়ে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ধরা পড়েছেন ট্রিস্টিয়ান স্টাবসের হাতে। ঝড়ো ব্যাটিং করা হেডকে ফিরতে হয় ৩২ বলে ৮৯ রানে। ইনিংসটি খেলতে ১১টি চার এবং ছয়টি ছক্কা মেরেছেন হেড। পরের ওভারে ফিরেছেন হেনরিখ ক্লাসেনও। মারকুটে এই উইকেটকিপারকে বোল্ড করেছেন অক্ষর। পাওয়ার প্লেতে কোন উইকেট না হারানো হায়দরাবাদ পরের চার ওভারে হারিয়েছে ৪ উইকেট।

১০ ওভারে শেষে হায়দরাবাদের রান ৪ উইকেটে ১৫৮। আইপিএলের ইতিহাসে প্রথম ১০ ওভারে এত রান করতে পারেনি আর কোনো দল। ভেঙেছেন নিজেদের রেকর্ডই। চলতি আইপিএলে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের বিপক্ষে প্রথম ১০ ওভারে ২ উইকেটে ১৪৮ রান করেছিল প্যাট কামিন্সের দল। কয়েক ওভারের মাঝে চারটি উইকেট হারালেও শুরুর ধারা বজায় রেখে দ্রুত রান তুলতে থাকেন নীতিশ রেড্ডি ও শাহবাজ আহমেদ।

তারা দুজনে মিলে যোগ করেন ৪৭ বলে ৬৭ রান। দারুণ ব্যাটিংয়ে ৩৭ রান করা নীতিশ ফিরে গেলেও একপ্রান্তে দ্রুত রান তুলতে থাকেন শাহবাজ। মুকেশ কুমারের বলে চার মেরে আইপিএলে প্রথমবারের মতো হাফ সেঞ্চুরি করেন তিনি। বাঁহাতি এই ব্যাটার অপরাজিত ছিলেন ২৯ বলে ৫৯ রানের ইনিংস খেলে। শেষ পর্যন্ত ২০ ওভারে ২৬৬ রান তোলে হায়দরাবাদ। সারের পর দ্বিতীয় দল হিসেবে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে তৃতীয়বার আড়াইশ পেরোনো পুঁজি পেয়েছে তারা।