আইপিএল

পন্টিংয়ের এক মেসেজ ও ভিন্ন দুনিয়ায় ম্যাকগার্কের অভিষেক

ক্রিকফ্রেঞ্জি ডেস্ক

ক্রিকফ্রেঞ্জি ডেস্ক
প্রকাশের তারিখ: 11:44 শনিবার, 13 এপ্রিল, 2024

|| ডেস্ক রিপোর্ট ||

আগ্রাসী মানসিকতা ও ঝড়ো ব্যাটিং দিয়ে অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটে বেশ আগেই ‘নতুন ম্যাক্সওয়েল’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন জ্যাক ফ্রেজার-ম্যাকগার্ক। তিনি যে উদীয়মান তারকা হতে চলেছেন, সেটা মাস ছয়েক আগেই জানান দিয়েছিলেন। গত বছরের অক্টোবরে অস্ট্রেলিয়ার ঘরোয়া টুর্নামেন্ট দ্য মার্শ কাপে করেছিলেন ২৯ বলে সেঞ্চুরি, যা লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে দ্রুততম। এরপর সুযোগ আসে বিগ ব্যাশে। সেখানে দারুণ খেলে জায়গা করে নেন অস্ট্রেলিয়া দলেও। এবার এই বিধ্বংসী ব্যাটারের অভিষেক হয়ে গেলে আইপিএলেও।

বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় এই ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে অবশ্য নিলামে দল পাননি ম্যাকগার্ক। বদলি ক্রিকেটার হিসেবে দিল্লি ক্যাপিট্যালসে সুযোগ আসে এই অজির। তরুণ এই ক্রিকেটারদের বড় ভক্ত রিকি পন্টিং। দিল্লির কোচ তাই ম্যাকগার্ককে আইপিএলে নেয়ার সুযোগটা হাতছাড়া করেননি। দ্য রুস্টার খ্যাত এই ক্রিকেটার দিল্লিতে সুযোগ পেয়েছেন লুঙ্গি এনগিদির বদলি হিসেবে।

ম্যাকগার্ক অবশ্য আইপিএলে খেলার প্রস্তাবটা পেয়েছিলেন প্লেনে বসেই। অস্ট্রেলিয়ার ঘরোয়া টুর্নামেন্টে খেলতে এক শহর থেকে আরেক শহরে যাচ্ছিলেন তিনি। সে সময়েই রিকি পন্টিংয়ের মেসেজ পান এই অজি। সঙ্গে সঙ্গেই পন্টিংকে জানিয়ে দেন আইপিএল খেলতে আগ্রহী ২২ বছর বয়সী এই ব্যাটার।

পরশু টিম হোটেলে সতীর্থদের সঙ্গে ২২তম জন্মদিনের কেক কেটেছেন ফ্রেজার–ম্যাগার্ক। তবে টিম ম্যানেজমেন্ট তাকে আসল ‘সারপ্রাইজ’ দিয়েছে জন্মদিনের পরদিন, অর্থাৎ শুক্রবার তাকে জানানো হয় লক্ষ্ণৌর বিপক্ষে আইপিএল অভিষেক হচ্ছে তার। ম্যাকগার্ক জানিয়েছেন, এই সুযোগের অপেক্ষাতেই ছিলেন তিনি, ‘আমি ৫–৬ ম্যাচ সাইডলাইনে বসে পার করেছি। মাঠে নামার জন্য মুখিয়ে ছিলাম।’

এই দলে কোচ হিসেবে তিনি যেমন পেয়েছেন পূর্বসূরী পন্টিংকে, তেমনি ‘মেন্টর’ হিসেবে পেয়েছেন ভারতীয় গ্রেট সৌরভ গাঙ্গুলিকে। তাদের কাছ থেকে শেখার চেষ্টা করছেন তিনি। ম্যাচের পর জানালেন, প্রথম ম্যাচে নিজের সীমার ভেতর থাকার চেষ্টাই করেছেন তিনি। ম্যাকগার্ক বলেন, ‘খুব বেশি কিছু করার চেষ্টা না করা, ভারসাম্য না হারানো… ব্যাটের মাঝখানে লাগানোর চেষ্টা করা। বল দেখে সেভাবেই সাড়া দেওয়া…। গত ১২ মাসে এভাবেই চেষ্টা করে গেছি। সেটি বদলাচ্ছি না।’

ম্যাকগার্কের জীবন অবশ্য বদলেছে গত ৭-৮ মাসে। ব্যাটিংয়ে আলো ছড়িয়ে হয়েছেন অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেটের সবচেয়ে আলোচিত নাম। তবে ১৭ বছর বয়সে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট ও লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে অভিষেক তার ভিক্টোরিয়ার হয়ে। দুটিতেই করেছেন ফিফটি। খেলেছেন ২০২০ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে।

ঘরোয়া ক্রিকেটে অসাধারণ ফিল্ডিং দিয়ে নজর কাড়লেও ব্যাটিংয়ে জ্বলে উঠতে পারছিলেন না ম্যাকগার্ক। নতুন মৌসুমে ভিক্টোরিয়া ছেড়ে সাউথ অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি জমিয়েই যেন বদলে যান তিনি। এবি ডি ভিলিয়ার্সের ৩১ বলের রেকর্ড পেছনে ফেলে লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটের ইতিহাসের দ্রুততম সেঞ্চুরি হাঁকান দ্যা রুস্টার খ্যাত এই ক্রিকেটার। ১০ চার ও ১৩ ছক্কায় সেদিন তিনি করেন ৩৮ বলে ১২৫।

বিগ ব্যাশে করেন ২৫৭ রান। যেখানে তার স্ট্রাইক রেট ছিল ১৫৮.৬৪ স্ট্রাইক রেটে। এরপর দেশের বাইরের ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে অভিষেক হয়ে যায় তার সংযুক্ত আরব আমিরাতে আইএল টি-টোয়েন্টিতে। সেখানে অভিষেকে ২৩ বলে ৫৫ রানের ইনিংস খেলেন ৭ ছক্কায়।

‘নতুন ম্যাক্সওয়েল’ তকমা ততদিনে আরও জোরাল হয়ে গেছে তার সঙ্গে। কাকতালীয়ভাবে গ্লেন ম্যাক্সওয়েলকে বিশ্রাম দেওয়াতেই জানুয়ারির শেষ দিকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের অস্ট্রেলিয়া দলে সুযোগ পেয়ে যান এই ব্যাটার। সেই সিরিজে দুটি ওয়ানডে খেলে রান করেন ৫১। তবে ব্যাটিং করেন ২২১.৭৩ স্ট্রাইক রেটে।

এসবের পরই আসে আইপিএলে সুযোগ। আইপিএল অভিষেক রাঙিয়ে নিজের আগমনী বার্তা জানান দিলেও ম্যাকগার্কের কাছে এই টুর্নামেন্ট যেন ভিন্ন এক দুনিয়া। তিনি বলেন, ‘এখানে থাকতে পেরে আমি এত বেশি খুশি… ক্রিকেটের দিক থেকে এটা যেন পুরো ভিন্ন এক দুনিয়া। এরকম কিছু জীবনে কখনও দেখিনি আগে। শুনেছি অনেক, কিন্তু নিজে কখনও অভিজ্ঞতাটা পাইনি। নিজে এই স্বাদটা পেয়েছি এবং আট সপ্তাহ বা আরও বেশি সময় এখানে থাকতে পারছি, এটা বলতে পারাটাও দারুণ… ভারতে এই সময়টা কাটাতে পারা এবং এই স্পেশাল লিগে খেলা…. অসাধারণ ব্যাপার।’