পিএসএল

মুলতানের হ্যাটট্রিক ফাইনাল হার, শেষ ওভারের রোমাঞ্চে চ্যাম্পিয়ন ইসলামাবাদ

ক্রিকফ্রেঞ্জি ডেস্ক

ক্রিকফ্রেঞ্জি ডেস্ক
প্রকাশের তারিখ: 02:06 মঙ্গলবার, 19 মার্চ, 2024

|| ডেস্ক রিপোর্ট ||

আব্বাস আফ্রিদির লেংথ ডেলিভারিতে সিঙ্গেল নিয়ে নিজের রানের খাতা খোলেন ইমাদ ওয়াসিম। সবশেষ তিন ম্যাচে ইসলামাবাদ ইউনাইটেডকে জেতানো ইমাদকে ধারাভাষ্য কক্ষ থেকে স্বাগত জানালেন ‘ক্রাইসিস ম্যান’ হিসেবে। ফাইনাল জিততে তখনও ৫৭ রান দূরে শাদাব খানের দল। আজম খান, ফাহিম আশরাফ, হায়দার আলী দ্রুতই বিদায় নেয়ার পর পুরো দায়িত্ব এসে পড়ে ইমাদের কাঁধে। তবে ইফতিখার আহমেদের ওভারে চার ও ছক্কা মেরে বাঁহাতি এই ব্যাটারের দায়িত্ব কমিয়ে দিয়েছেন নাসিম শাহ।

তখনও ম্যাচ জিততে শেষ দুই ওভারে ইসলামাবাদের প্রয়োজন ছিল ১৯ রান। ক্রিস জর্ডানের করা অফ স্টাম্পের বাইরের লেংথ ডেলিভারিতে টানা দুই চার মেরে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেন ইমাদ। ইংলিশ পেসারের করা সেই ওভার থেকে আসে ১১ রান। প্রথম চার বলে ৭ রান নেয়ার পর পঞ্চম বলে ফিরে যান নাসিম। শেষ বলে যখন ১ রান প্রয়োজন তখন মোহাম্মদ আলীর স্লোয়ারে থার্ডম্যান দিয়ে চার মেরে ২ উইকেটের জয় নিশ্চিত করেন হুনাইন শাহ।

২০১৮ সালের পর এবারই প্রথম পাকিস্তান সুপার লিগের (পিএসএল) শিরোপা জিতল ইসলামাবাদ। তাদের তৃতীয় শিরোপার দিনে টানা তিন ফাইনাল হারল মুলতান। সবশেষ চার মৌসুমের ফাইনালে উঠলেও একবারের বেশি চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি তারা। ২০২২ এবং ২০২৩ সালের পর আরও একবার ফাইনাল হার হৃদয় ভাঙল মোহাম্মদ রিজওয়ানের দলের।

করাচিতে জয়ের জন্য ১৬০ রান তাড়ায় আক্রমণাত্বক শুরু করেন কলিন মুনরো। ডেভিড উইলির করা প্রথম ওভারে টানা তিন বলে তিন চার মারেন বাঁহাতি এই ব্যাটার। মুলতানের পথের কাঁটা হয়ে ওঠার আগেই মুনরোকে ফিরিয়েছেন খুশদিল শাহ। বাঁহাতি এই স্পিনারের মিড উইকেটে খেলতে চেয়েছিলেন মুনরো। তবে শর্ট মিড উইকেটে দাঁড়িয়ে থাকা ইফতিখার আহমেদ ডানদিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে দুর্দান্ত ক্যাচ নিলে ১৭ রানে ফিরতে হয় তাকে।

পাওয়ার প্লে শেষ হওয়ার আগে সালমান আলী আঘাকেও বিদায় করেছেন খুশদিল। বাঁহাতি এই স্পিনারের বলে স্ট্রেইট ড্রাইভ করেছিলেন সালমান। তবে ফলো থ্রুতে দারুণ ক্যাচ লুফে নিলে ১০ রান করা সালমানকে ফিরতে হয় খুশদিলের শিকার হয়েছে। এদিকে চারে নেমে থিতু হতে পারেননি শাদাব। ইফতিখারের বিপক্ষে সুইপ করতে গিয়ে বলের লাইন মিস করে বোল্ড হয়েছেন ইসলামাবাদের অধিনায়ক।

ইনিংসের ১১তম ওভারে উসামা মীরকে দুই ছক্কা ও এক চার মেরে ১৮ রান নিয়ে এসেছেন গাপটিল। দারুণ ব্যাটিংয়ে হাফ সেঞ্চুরিও তুলে নিয়েছেন তিনি। আব্বাস আফ্রিদির স্লোয়ার ডেলিভারিতে এক রান নিয়ে ৩০ বলে পঞ্চাশ ছুঁয়েছেন গাপটিল। নিউজিল্যান্ডের এই ব্যাটারকে দারুণভাবে সঙ্গ দিতে থাকেন আজম। তবে নিজেদের ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউটে কাটা পড়তে হয়েছে গাপটিলকে।

আব্বাসের বলে কভারে ঠেলে দিয়ে এক রান নিতে চেয়েছিলেন গাপটিল। অভিজ্ঞ এই ব্যাটারের ডাকে সাড়াও দিয়েছিলেন আজম। তবে বল সরাসরি ইফতিখারের হাতে চলে যাওয়ায় রান নেয়া থেকে নিজেকে ফিরিয়ে নেন পাকিস্তানের এই ব্যাটার। কিন্তু ততক্ষণে উইকেটের মাঝ পথে এসে পড়েছিলেন গাপটিল। স্ট্রাইক প্রান্তে ফেরার আগেই স্টাম্প ভেঙে দেন রিজওয়ান। তাতে ৩২ বলে ৫০ রানের কার্যকরী ইনিংস খেলে ফিরে যেতে হয় তাকে।

ইসলামাবাদকে এগিয়ে নিতে থাকা আজমকে রিভিউ নিয়ে ফিরিয়েছে মুলতান। উসামার অফ স্টাম্পের বাইরের বলে কাট করেছিলেন আজম। রিজওয়ান আবেদন করলেও তাতে সাড়া দেননি অনফিল্ড আম্পায়ার ক্রিস গাফানি। খানিকটা সময় নিয়ে রিভিউ নেন রিজওয়ান। টিভি রিপ্লেতে দেখা যায় বল উইকেটকিপারের গ্লাভসে যাওয়ার আগে তা ব্যাট ছুঁয়ে গেছে। ফলে ২২ বলে ৩০ রান করে সাজঘরে ফিরতে হয় আজমকে। দলকে বিপদে ফেলে বিদায় নিয়েছেন হায়দার আলীও।

উইলির অফ স্টাম্পের বাইরের বলে কাট করতে গিয়ে এজ হয়ে রিজওয়ানের গ্লাভসে ক্যাচ দিয়েছেন। নাসিম ৯ বলে ১৭ রানের ক্যামিওতে জয়ের সমীকরণ সহজ হয় ইসলামাবাদের। ‘ক্রাইসিস ম্যান’ খ্যাতি পাওয়া ইমাদ শেষ পর্যন্ত অপরাজিত ছিলেন ১৭ বলে ১৯ রান করে। মুলতানের হয়ে দুটি করে উইকেট নিয়েছেন ইফতিখার এবং খুশদিল। একটি করে উইকেট শিকার করেছেন উসামা, উইলি এবং মোহাম্মদ।

এর আগে টস জিতে ব্যাটিং করতে নেমে ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই উইকেট হারায় মুলতান। ইমাদের ঝুলিয়ে দেয়া ডেলিভারিতে ডাউন দ্য উইকেটে এসে খেলতে গিয়ে টাইমাল মিলসের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন ইয়াসির খান। লোয়ার অর্ডারে ব্যাটিং করলেও এদিন প্রমোশন দিয়ে তিনে নামিয়ে দেয়া হয় উইলিকে। তবে নিজের সুযোগ লুফে নিতে পারেননি ইংলিশ এই ক্রিকেটার।

৬ রান করা উইলিকেও ফিরিয়েছেন ইমাদ। ১৪ রানে ২ উইকেট হারানোর পর জুটি গড়ে তোলেন রিজওয়ান ও উসমান খান। তাদের দুজনের ৫৩ রানের জুটি ভাঙেন শাদাব। ডানহাতি এই লেগ স্পিনারের পঞ্চম স্টাম্পের ফুলার লেংথ ডেলিভারিতে কাউ কর্নার দিয়ে খেলতে গিয়ে গাপটিলের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন। মুলতানের অধিনায়ক আউট হয়েছেন ২৬ বলে ২৬ রানের ধীরগতির ইনিংস খেলে। দ্রুতই বিদায় নিয়েছেন জনসন চার্লস এবং খুশদিল।

তাদের দুজনের উইকেটই তুলে নিয়েছেন ইমাদ। শেষ দিকে ক্রিস জর্ডানের উইকেট তুলে নিয়ে ৫ উইকেট শিকার করেন বাঁহাতি এই স্পিনার। দারুণ বোলিং ৪ ওভারে মাত্র ২৩ রান দিয়েছেন ইমাদ। শেষদিকে ২০ বলে ৩২ রানের ইনিংস খেলে মুলতানকে লড়াইয়ের পুঁজি এনে দিয়েছেন ইফতিখার। যদিও ১৫৯ রানের বেশি করতে পারেনি তারা। ইসলামাদের হয়ে ইমাদের পাশাপাশি তিনটি উইকেট নিয়েছেন শাদাবও।