ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ ২০২৩

রসুলের চোখে শেখ জামাল অবিশ্বাস্য, সোহেল ‘কারিগর’

আবিদ মোহাম্মদ

আবিদ মোহাম্মদ
প্রকাশের তারিখ: 10:23 সোমবার, 15 মে, 2023

|| ক্রিকফ্রেঞ্জি করেসপন্ডেন্ট ||

কাশ্মীরকে বলা হয়ে থাকে পৃথিবীর স্বর্গভূমি, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আধার। যেখানে ক্ষণে ক্ষণে আপনি বিমোহিত হবেন। এর বাইরেও মিশে আছে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা আর সহিংসতার গল্প। এসবের মাঝে থেকেও উঠে এসেছিলেন পারভেজ রসুল। জীবনে অনেকে বাঁক বদল পেরিয়ে এসে খেলেছেন ভারতের জার্সিতেও। বলা হয়ে থাকে ‘কাশ্মীর’ এর ট্যাগ লেগে থাকায় নামের পাশে লেগেছে নানা বিতর্ক।

কখনও জাতীয় সঙ্গীত চলাকালীন চুইংগাম চিবিয়ে খবরের শিরোনাম হয়েছেন, আবার কখনও তার বিরুদ্ধে উঠেছে চুরির অভিযোগ। এসব ছাপিয়ে খেলেছেন ভারতের জার্সিতে। ২০১৪ সালে জাতীয় দলের হয়ে অভিষেক, তবে খুব বেশিদিন ভারতের জার্সি গায়ে জড়াতে পারেননি পারভেজ রসুল। সমান একটি করে ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টিতেই থেমে গেছে এই স্পিন অলরাউন্ডারের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার।

যদিও ঘরোয়াতে নিজেকে বারংবার প্রমাণ করেছেন রসুল। তার জীবনের বাঁকবদল শুরু হয় ২০১২-১৩ মৌসুমে। সেবার রঞ্জিতে ৭ ম্যাচে ৫৪ গড়ে করেছিলেন ৫৯৪ রান, অফ স্পিনে পেয়েছিলেন ৩৩ উইকেট। পরের মৌসুমেও ছিলেন দুর্দান্ত। ৯ ম্যাচে ৬৬৩ রান করার সঙ্গে বল হাতে উইকেট নিয়েছিলেন ২৭টি। এরপর জাতীয় দলের জার্সি গায়ে জড়ান। ভারতের হয়ে খেলার বছর তিনেক পর খেলতে আসেন ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে (ডিপিএল)।

২০১৭ সালে গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্সের খেলতে এসেছিলেন তিনি। এরপর অবশ্য পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি রসুলকে। ঘর বদলে খেলেছেন লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জের হয়ে। সবশেষ দুেই মৌসুমে রসুল ছিলেন শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্রিকেট ক্লাবে। গেল মৌসুমে শেখ জামালের শিরোপা জেতার পেছনে বড় অবদান ছিল রসুলের। এবার দলকে শিরোপা জেতাতে পারেননি। তবে পারফরম্যান্সে ভারতীয় এই অলরাউন্ডার ছিলেন স্পট অন।

রানার্স আপ শেখ জামালের হয়ে সর্বোচ্চ ৩৩ উইকেট নিয়েছেন ডানহাতি এই অফ স্পিনার। ব্যাট হাতে অবশ্য খুব বেশি সুবিধা পাননি। ২ হাফ সেঞ্চুরিতে রসুলের রান ২৫৭। ক্রিকফ্রেঞ্জির সঙ্গে একান্ত আলাপকালে শুনিয়েছেন ডিপিএলে সফলতার গল্প। সেই সঙ্গে অলিখিত ফাইনালে হেরে আবাহনী লিমিটেডের কাছে শিরোপা খোয়ানোর আক্ষেপও করেছেন তিনি।

রসুল বলেন, ‘প্রথমে আমি আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করতে চাই। যখনই বাংলাদেশে এসেছি, দারুণ অনুভূতি নিয়ে ফিরেছি। ডিপিএলে পাঁচ মৌসুম খেললাম, কখনই এমন হয়নি যে ২-৩ ম্যাচ খেলে চলে গেছি। গত মৌসুমে ২৮ উইকেট নিয়েছি। এই বছর ৩৩ উইকেট নিয়েছি। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, দল ভালো খেলেছে। এটাই পারফরম্যান্সের মজা। দল ভালো না করলে মজাটা আসে না। এই বছর আমরা অল্পের জন্য শিরোপা হাতছাড়া করেছি।’

‘গত বছর আমরা শিরোপা জিতেছি। দলের এই ধারাবাহিকতা অবশ্যই ভালো লাগছে। পেশাদার ক্রিকেটার হিসেবে দল থেকে আপনাকে যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, সর্বোচ্চ দেওয়ার চেষ্টা করেছি। সাধারণত আমি পাঁচে ব্যাটিং করি। কিন্তু এখানে কখনো ৭-৮ নাম্বারে ব্যাটিং করেছি। আমি পাওয়ার প্লেতে বোলিং করেছি, ডেথে করেছি। যখনই সোহানের ভাইয়ের (নুরুল হাসান সোহান) মনে হয়েছে আমাকে দায়িত্ব দিয়েছেন, আমার ওপর বিশ্বাস রেখেছেন। পেশাদার ক্রিকেটার হিসেবে এখানেই একজন খেলোয়াড়ের তৃপ্তি, ভালো লাগা।’

মাঝে কাউন্টি ক্রিকেট খেলার বেশকটি প্রস্তাব পেয়েছিলেন রসুল। তবে ইংল্যান্ড না গিয়ে ভারতীয় অলরাউন্ডার বেছে নেন ডিপিএলকে। প্রথম তিনবার আলাদা দুই দলের হয়ে খেললেও সবশেষ দুই মৌসুমে রসুল ছিলেন শেখ জামালে। ডিপিএলের ক্লাব নিয়ে লম্বা সময় ধরে খুব ভালো কোনো খবর না থাকলেও রসুল জানিয়েছেন নিজের অভিজ্ঞতার কথা। শেখ জামালকে যে তার মনে ধরেছে সেটা বলতেও ভুলেননি তিনি ।

রসুল বলেন, ‘শেখ জামালের সঙ্গে এটা আমার দ্বিতীয় মৌসুম। তারা যেভাবে খেলোয়াড়দের দেখভাল করে, এটা অবিশ্বাস্য। আমি অনেক দলে খেলেছি, ওইগুলোও ভালো দল। তবে একটা দলের যে পেশাদার ব্যাপার থাকে, খেলোয়াড়দের মূল্য বুঝতে পারা-এটা তারা (শেখ জামাল) বোঝে।’

‘আমাদের দলে সেরকম কোনো বড় তারকা ছিল না। কিন্তু এ নিয়ে দুই মৌসুম আমরা শিরোপার লড়াই করেছি। দলের খেলোয়াড়দের মধ্যে বন্ধন থাকাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নাহলে সেরাটা কখনোই বেরিয়ে আসবে না। সোহান ভাই এবং আরও যারা আছে আমরা একটা পরিবারের মতো খেলেছি। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হচ্ছে, আমি উপভোগ করেছি' যোগ করেন তিনি।’

বেশ কবছর ধরেই ঘরোয়া ক্রিকেটে কোচিং করাচ্ছেন সোহেল ইসলাম। কাজ করেছেন বাংলাদেশের সঙ্গেও। যদিও সেটা কেবলই সিরিজ ভিত্তিক। তবে জাতীয় দলের স্পিনারদের কাছে বেশ কদর আছে সোহেলের। গত বছর শেখ জামালকে শিরোপা জেতানোর মাষ্টার মাইন্ড ছিলেন তিনি। এবারও তাই প্রধান কোচের দায়িত্বটা সামলেছেন সোহেল। কমাস আগে কাজ করেছেন বিপিএলের দল রংপুর রাইডার্সের হয়ে।

কোচ হিসেবে সোহেল কতটা ভালো, রসুল সেই গল্প শুনিয়েছেন নিজে থেকেই। সবশেষ মৌসুমে দলের সঙ্গে থাকলেও ম্যাচ পাননি স্পিনার আরিফ আহমেদ। তবে রসুলের চাওয়ায় তাকে নিয়ে কাজ করেন সোহেল। যেটার সাফল্য হাতেনাতে পেয়েছে শেখ জামাল। তাদের হয়ে এবারের মৌসুমে ১৬ ম্যাচে ২১ উইকেট নিয়েছেন আরিফ।

অন্য কোচদের সঙ্গে সোহেলের পার্থক্য তুলে ধরে রসুল বলেন, ‘গত বছর বাঁহাতি স্পিনার আরিফ (আরিফ আহমেদ) আমাদের দলে ছিল। একটা ম্যাচও খেলে নাই। একদিন নেটে আমাকে বোলিং করেছে। সেশন শেষে আমি সোহেল স্যারকে বলি, এই ছেলে দারুণ বোলিং করে। একে নিয়ে যদি আপনি কাজ করলে আরও ভালো স্পিনার হয়ে উঠবে। ও কিন্তু ক্রিকেট বলে আগে খেলে নাই। এ বছর ও আমাদের হয়ে ২১ উইকেট নিয়েছে। (১৬ ম্যাচ)। আমি সোহেল ভাইকে এজন্য পুরো কৃতিত্ব দেব। তিনি কাজ করেছেন বলে এই মৌসুমে ও এতোগুলো উইকেট নিয়েছে।’

‘অন্য কোচদের দেখেন, তারা ভালো খেলোয়াড়দের সঙ্গে মিল রেখে চলে। কিন্তু যে কোচ খেলোয়াড় তৈরি করেন, তিনি আলাদা। এ বছর যেমন তিনি একজন লেগ স্পিনার নিয়ে কাজ করছেন। এই জিনিসগুলো আমার ভালো লেগেছে। আমি ম্যানেজমেন্টকেও বলেছি। তিনি খেলোয়াড় তৈরি করেন। সোহান ভাইও দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। বিশেষ করে সুপার লিগে। ম্যাচের বিভিন্ন পরিস্থিতিতে আমাদের নিয়মিত অভিজ্ঞতা বিনিময় হয়েছে।’