বাংলাদেশকে বাস্তবতা দেখালো আয়ারল্যান্ড

ক্রিকফ্রেঞ্জি ডেস্ক

ক্রিকফ্রেঞ্জি ডেস্ক
প্রকাশের তারিখ: 12:17 বৃহস্পতিবার, 06 এপ্রিল, 2023

|| ডেস্ক রিপোর্ট ||

মিরপুর টেস্টের তৃতীয় দিন অবশ্যই ভুলে যেতে চাইবে বাংলাদেশ। অন্যদিকে লরকান টাকারের সেঞ্চুরিতে স্মরণীয় একটি দিন পার করার সঙ্গে ১৪৩ রানের লিড নিয়ে দিন শেষ করেছে আয়ারল্যান্ড। তিন সেশনে মাত্র ৩ উইকেট নিতে সক্ষম হয়েছেন বাংলাদেশের বোলাররা। টাকার ছাড়াও হাফ সেঞ্চুরি পেয়েছেন অ্যান্ডি ম্যাকব্রাইন ও হ্যারি টেক্টর। 

এদিন শুরুতেই উইকেটের সম্ভাবনা জাগিয়েছিলেন তাইজুল ইসলাম। তবে বল তালুবন্দি করতে পারেননি লিটন দাস। ক্যাচ দিয়েও বেঁচে গিয়েছেন ট্যাক্টর। তাইজুলের ফুল লেংথে বাতাসে ঝুঁলিয়ে করা ডেলিভারি সামনের পায়ে ডিফেন্ড করেছিলেন টেক্টর।

টার্নের মুখে তার ব্যাটের কানা ছুঁয়ে বল চলে যায় উইকেটের পেছনে। তবে বেশ জোরের ওপর যাওয়া বল ধরতে পারেননি লিটন। এরপর পিটার মুরকে নিয়ে উইকেটে থিতু হয়ে লড়াই চালিয়ে গিয়েছেন টেক্টর। এমনকি প্রথম আধ ঘণ্টায় কোনো বিপদ ঘটতে দেননি দুজন। এই সময়ের মধ্যে ১০ ওভারে ১৯ রান তুলেছেন তারা।

এছাড়া তিন ওভার করে আক্রমণ থেকে সরে যান সাকিব। তার জায়গায় আসেন মেহেদী হাসান মিরাজ। তাইজুল-মিরাজের বোলিংয়ে বেশ কয়েকবার পরাস্ত হন টেক্টর ও মুর। তবে কোনোটিতেই আউটের জোরাল সম্ভাবনা জাগেনি। উল্টো আলগা ডেলিভারি পেলেই শট খেলেছেন টেক্টর।

তাইজুলকে লং অন দিয়ে মেরেছেন ছক্কা। মিরাজের বলে রিভার্স সুইপে আদায় করে নিয়েছেন বাউন্ডারি। ব্যাক ফুট পাঞ্চে চার মেরেছেন মুরও। তবে এই দুজনের কঠিন প্রতিরোধে বাধা হয়ে দাঁড়ান শরিফুল ইসলাম। দিনের ১৩ ওভার পর বাঁহাতি পেসারের হাতে বল তুলে দেন সাকিব আল হাসান।

নিজের দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলেই দলকে আনন্দে ভাসালেন শরিফুল। অফ স্টাম্পে পিচ করা শর্ট অব লেংথ ডেলিভারিটি অ্যাঙ্গেলে আরও বেরিয়ে যাচ্ছিল। পেছনের পায়ে দাঁড়িয়ে স্কয়ার কাট খেলার চেষ্টা করেন মুর। ব্যাটের বাইরের কানায় লাগা বল অনায়াসে তালুবন্দি করেন নেন লিটন ।

১৬ রানে সাজঘরে ফেরেন মুর। তার বিদায়ে ভাঙে ১৫৪ বল স্থায়ী ৩৮ রানের জুটি। সঙ্গী হারালেও টেক্টর ক্রিজে আরও মন্থর হয়ে ওঠেন। লর্কান টাকারকে নিয়ে দেখে শুনে খেলে কোনো প্রকার বিপদে পড়তে দেননি দলকে। বাংলাদেশের বোলারদের মাথার ঘাম পায়ে ফেলে এই জুটি লাঞ্চ বিরতিতে যায় এই সেশনে ৬৬ রান নিয়ে।

লাঞ্চের পর নেমে বাংলাদেশকে আরও ভোগাতে থাকে দুই আইরিশম্যান। মন্থর ব্যাটিংয়ে দেখে শুনে খেলে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন টেক্টর। খালেদ আহমেদের অফ স্টাম্পের বাইরের বল শরীরের দূর থেকেই খেলেন তিনি। অল্পের জন্য স্লিপ ও গালির মাঝে দিয়ে বল চলে বাউন্ডারিতে। একই শটে নিজের পাশাপাশি লরকান টাকারের সঙ্গে জুটিরও পঞ্চাশ পূরণ করেন টেক্টর।

মাইলফলকে পৌঁছে অবশ্য ইনিংস বেশি লম্বা করতে পারেননি টেক্টর। এলবিডব্লিউ হয়ে ড্রেসিং রুমে ফেরেন অভিষেকে জোড়া ফিফটি করা আইরিশ এই মিডল-অর্ডার ব্যাটসম্যান। তাইজুলের ফুল লেংথ ডেলিভারি প্যাডেল সুইপ করতে চেয়েছিলেন টেক্টর। ব্যাট ফাঁকি দিয়ে বল আঘাত হানে প্যাডে।

জোরাল আবেদনে সঙ্গে সঙ্গে আঙুল তুলে দেন আম্পায়ার। রিভিউ নিয়েও নিজের উইকেট বাঁচাতে পারেননি টেক্টর।প্রথম ইনিংসে ঠিক ৫০ রান করা টেক্টর এবার খেলেছেন ১৫৯ বলে ৫৬ রানের ইনিংস। ৭ চার ও ১ ছয়। তার বিদায়ে ভাঙে ১৪৫ বল স্থায়ী ৭২ রানের ষষ্ঠ উইকেট জুটি।

সঙ্গী হারিয়ে অবশ্য পথহারা হননি টাকার। ইনিংস ব্যবধানে হার এড়ানোর লড়াইয়ে আয়ারল্যান্ডকে এগিয়ে নিচ্ছেন লরকান টাকার। দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে অভিষেক টেস্টে নিজের দ্বিতীয় ইনিংসে করেছেন ফিফটি। ৯২ বলে পঞ্চাশ করার পথে টাকারের ব্যাট থেকে আসে ছয়টি চার।

মাইলফলক স্পর্শ করে অ্যান্ড্রু ম্যাকব্রােইন নিয়ে রান যোগ করে যাচ্ছেন টাকার। দলকে দুইশোর পথে নিয়ে যাওয়ার সঙ্গে নিজেও হাঁটছেন সেঞ্চুরির পথে। ৪৪ রানের লিড নিয়ে চা বিরতিতে গিয়েছেন দুজন। টাকার অপরাজিত আছেন ৮৯ রানে।

বিরতি থেকে ফিরে দেখে শুনে সেঞ্চুরির পথে হাঁটতে থাকা টাকার তাইজুলকে কভার ড্রাইভ খেলে তুলে নেন ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি। দ্বিতীয় আইরিশ ক্রিকেটার হিসেবে এই কীর্তি গড়েন তিনি, এর আগে কেভিন ও ব্রাইন আইরিশদের হয়ে টেস্টে সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন। 

মাইলফলকে পৌঁছে ইনিংস বড় করতে গিয়ে অবশ্য নতুন বলে এবাদতের শিকার হন টাকার। ১০৮ রানে তিনি ফিরে গেলেও ম্যাকব্রাইন তুলে নেন হাফ সেঞ্চুরি। মার্ক অ্যাডায়ার সঙ্গে জুটি গড়ে দলকে নিয়ে যান আড়াইশোর ঘরে। তবে ৪৯ বল খেলার পর তাইজুলের বলে উইকেটের পেছনে তালুবন্দি হন টাকার। 

সঙ্গী হারালেও গ্রাহাম হিউমকে নিয়ে রানের চাকা সচল রাখেন ম্যাকব্রাইন। সঙ্গে দলের লিড নিয়ে যান ১০০'র ওপর। শেষ পর্যন্ত ৮ উইকেটে ২৮৬ রান নিয়ে দিনের খেলা শেষ করে আইরিশরা। ম্যাকব্রাইন অপরাজিত থাকেন ৭১ রানে, হিউম ৯ রানে চতুর্থ দিন ব্যাটিংয়ে নামবেন। ৪টি উইকেট নিয়েছেন তাইজুল। 

সংক্ষিপ্ত স্কোর-

আয়ারল্যান্ড (প্রথম ইনিংস)- ২১৪/১০ (৭৭.২ ওভার) (ট্যাক্টর ৫০, টাকার ৩৭; তাইজুল ৫/৫৮)

বাংলাদেশ (প্রথম ইনিংস)- ৩৬৯ অল আউট (৮০.৩ ওভার) (মুশফিক ১২৬, সাকিব ৮৭, মিরাজ ৫৫*; ম্যাকব্রাইন ৬/১১৮)

আয়ারল্যান্ড (দ্বিতীয় ইনিংস)- ২৮৬/৮ (১০৭ ওভার) (টাকার ১০৮, ম্যাকব্রাইন ৭১*; তাইজুল ৪/৮৬)