বাংলাদেশ - আয়ারল্যান্ড সিরিজ

‘যত সময় যাবে তাসকিন-হাসানরা তত ভয়ঙ্কর বোলার হয়ে উঠবে’

আকরাম খান

আকরাম খান
প্রকাশের তারিখ: 23:38 সোমবার, 27 মার্চ, 2023

টি-টোয়েন্টিতে আমাদের যে এপ্রোচে খেলা উচিত, যে ধরনের পারফরম্যান্স করা উচিত ছিল আমরা কিন্তু তা আগে করতাম না। মাঝে মাঝে তামিম ইকবাল করেছে। কিন্তু ১৬০ বা ১৫০ এর বেশি স্ট্রাইক রেট কিন্তু কারো ছিলই না। সেটা কিন্তু আমরা সর্বশেষ ইংল্যান্ড সিরিজ থেকেই দেখছি। ভারতের বিপক্ষেও দেখেছি এখনও দেখছি। আমার মনে হয় টি-টোয়েন্টিতে যদি আমরা এইভাবে খেলি তাহলে আমাদের যে একটা বদনাম ছিল আমরা ভালো করতে পারি না। সেই জিনিসটা মুছে যাবে।

এটার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলো সবার আত্মবিশ্বাসের মাত্রাটা বাড়াতে হবে। এটা হুট করে একদিনে হবে না। সেটার পেছনে আমাদের নিয়মিত কাজ করে যেতে হবে। বিশেষ করে এখন যে টিম স্টাফরা এসেছে, আমাদের ক্যাপ্টেন সাকিব আছে, আমার মনে হয় এই আত্মবিশ্বাসটা ওরা ছেলেদের দিতে পারলে ধারাবাহিকতা থাকবে। সেই কাজটা যে হচ্ছে তা কিন্তু আমরা গত দুই সিরিজে খানিকটা দেখে ফেলেছি। এখন শুধু ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে।

টি-টোয়েন্টিতে আমাদের কি সমস্যা সেটা মনে হয় আমরা ধরতে পেরেছি। আমরা বেশিরভাগ ম্যাচে প্রথম ছয় ওভারে আমরা রান করতে পারতাম না। ১৫ থেকে ২০ ওভারেও আমাদের অনেক দুর্বলতা ছিল। এখন দেখছি যে ওপেনিংয়ে আমাদের যে সমস্যা ছিল সেটা আমরা কাটিয়ে উঠছি। এটা অনেক ভালো। যদি আমরা ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে চাই তাহলে ১৫০ এর বেশি স্ট্রাইক রেটের এক-দুজন ব্যাটার থাকলে ভালো। এরকম দু-একজন প্লেয়ার পেয়ে গেলে আমরা এই সমস্যা থেকে কাটিয়ে উঠতে পারবো।

ভালো জিনিস হলো আমরা এখন প্রথম ছয় ওভারের সুবিধা নিতে পারটা শিখে ফেলেছি। এটা বুঝতে যদিও আমাদের অনেক দেরি হয়েছে। তবে এখন থেকেও কন্টিনিউ করতে পারলে ভবিষ্যতে আমাদের ভালো করার সুযোগ বাড়বে। এখন ১৫-২০ ওভারের জন্য যদি এমন দু-একজন ব্যাটার পেয়ে যাই তাহলে এই সমস্যাটা আর হবে না। আমরা ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে পারবো। প্রথম ৬ ওভারে আমরা যদি ৫০-৬০ করি তাহলে শেষ ৫ ওভারেও কিন্তু আমরা ৫০-৬০ করতে পারবো।

সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে আপনাকে প্রথম ৬ ওভারে ডমিনেট করতে হবে, শেষ পাঁচ ওভারে আপনাকে ভালো বোলিং করতে হবে। এই সব জায়গায় আমাদের উন্নতি করতেই হবে। তাহলেই টি-টোয়েন্টি দল বদলে যাবে। দেখুন, আয়ারল্যান্ডের বোলাররা চমৎকার স্লোয়ার বল করেছে। এগুলোও কিন্তু আমাদের বোলারদের উন্নতি করতে হবে। সাকিব যেটা বললো প্লেয়াররা কিন্তু ঘাবড়ায় না। ও (সাকিব) প্রমাণ করছে, তরুণ প্লেয়ারদের সে আগে পাঠাচ্ছে, ব্যাটিং করার জন্য সুযোগ দিচ্ছে। সেটা কিন্তু তরুণদের জন্য ভালো সুযোগ।

আমার মন হয় তারা সাহসও পাবে। তরুণরা ভাববে যে আমাদের অধিনায়ক যে সুযোগ দিচ্ছে আমরা যেন সেটা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিই। আমার কাছে আজকে যেটা ভালো লেগেছে, বাংলাদেশের রানিং বিটুইন দ্য উইকেট। সবাই খুব দারুণ ছিল। ফিল্ডিং অনেক ভালো হচ্ছে। বোলিংও আগের চেয়ে এখন ভালো। আমাদের ছেলেরা যে উন্নতি করছে সেটা কিন্তু প্রতি ম্যাচেই দেখা যাচ্ছে। আমার কাছে মনে হয় এই ধরনের ছোটখাটো জিনিসগুলো যদি আমরা নিয়মিত উন্নতি করতে পারি তাহলে আমরা আরও ভালো দল হবো।

একটা সময় ছিল বাংলাদশের ব্যাটাররা যদি ভালো করতো রান করতো তাহলে আমরা জিততাম। ব্যাটাররা ভালো না করলে আমাদের জেতার কোনো সুযোগই থাকতো না। সম্প্রতি আমরা দেখছি যে আমাদের পেসাররা খুবই ভালো করছে। এটার একটাই কারণ, গত চার পাঁচ বছর থেকে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) উইকেটটা খুব ভালো বানাচ্ছে। যদি জাতীয় ক্রিকেট লিগ (এনসিএল) দেখেন, বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগ (বিসিএল) দেখেন সেখানে পেস বোলাররা কিন্তু ভালো করছে। তিন-চার বছরে আমরা সেটারই সুফল পাচ্ছি।

আমি আশা করছি আমরা যত ভালো উইকেট দিতে পারবো তত ভালো ভালো প্লেয়ার আসবে। আয়ারল্যান্ড হয়ত খানিকটা অবাক হয়েছে। কারণ ওরা হয়তো পরিকল্পনা করে এসেছিল আমাদের এখানে স্পিনিং উইকেটে খেলবে। ওরা স্পিনে বেশি মনোযোগ দিয়েছে। কিন্তু আমাদের এখানে কিন্তু পেসাররা চমৎকার বোলিং করেছে। তারপরও এখানও অনেক সময় আছে বলার এবং দেখার। ওরা এখন ভালো করছে। আশা করি ওরা ভবিষ্যতে আরও ভালো করবে। দেশে যারা ভালো করছে বাইরে গিয়ে কেমন করছে সেটাও দেখার বিষয়।

তাসকিন তো ওর ক্যারিয়ারের সবচেয়ে ভালো ফর্মে আছে। গত দুই-আড়াই বছর ধরে খুবই ভালো বোলিং করছে। ওর দুর্ভাগ্য যে ইনজুরিতে পড়ে যায়। দোয়া করছি যেন ও ইনজুরিতে না পড়ে। ওর এই বিষয়গুলো একটু ভালো দেখভাল করা উচিত, যত্ন নেয়া উচিত। আমার মনে হয় যত সময় যাবে ওরা আরও ভয়ঙ্কর বোলার হয়ে উঠবে। আশা করছি তাদের ওপর আমরা আস্থা রাখতে পারি। আর ভালো উইকেটে খেলাটা সবার জন্যই পরীক্ষা।

ভালো উইকেটে কিন্তু ভালো ব্যাটাররাও রান করে, ভালো বোলাররাও ভালো বল করে। এটা সব সময়ই চ্যালেঞ্জিং। এটা দেখতে আমাদের ভালো লাগছে যে বিদেশি দলের সঙ্গে এখন ভালো উইকেটে খেলছি এবং ভালো পারফরম্যান্স করছি। এটাতে অবশ্যই আমরা আত্মবিশ্বাস পাবো। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো সামনে আমাদের বিশ্বকাপ আছে। এই ধরনের উইকেটে আমরা যদি আরও কয়েকটি ভালো দলকে হারাতে পারি সেটা বাংলাদেশের জন্য খুবই ভালো হবে। ক্রিকেটারদের আত্মবিশ্বাসটাও অনেক উঁচুতে থাকবে। খেলার মানটাও বেড়ে যাবে। তাই ভালো উইকেটে খেলাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।