বাংলাদেশ-ইংল্যান্ড সিরিজ

'আনঅর্থডক্স' অনুশীলনে বাংলাদেশের অনুপ্রেরণা যেন জেসন রয়

আবিদ মোহাম্মদ

আবিদ মোহাম্মদ
প্রকাশের তারিখ: 20:58 শনিবার, 11 মার্চ, 2023

|| ক্রিকফ্রেঞ্জি করেসপন্ডেন্ট ||

সাকিব আল হাসানের স্বাধীনতায় টি-টোয়েন্টিতে চট্টগ্রামে নতুন বাংলাদেশকে দেখা গেছে। ব্যাটিং, বোলিং বা ফিল্ডিং, তিন বিভাগেই বাংলাদেশের কাছে পাত্তা পায়নি ইংল্যান্ড। ইংলিশদের বিপক্ষে প্রথমবার টি-টোয়েন্টি জয়, সুযোগ আছে সিরিজ জেতারও। শেষ দুই ম্যাচের একটি জিততে পারলেই প্রথমবার ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিপাক্ষিক কোনো সিরিজ জিতবে সাকিবরা। সিরিজ জিততে নামার আগে প্রতিপক্ষের কৌশল ভেস্তে দেয়ার পরিকল্পনায় চান্দিকা হাথুরুসিংহে।

শিষ্যরা সাড়া দিয়েছে প্রধান কোচের পরিকল্পনায়। দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টির আগে হাথুরুসিংহের পরিকল্পনার অনেকটা অংশ জুড়ে আদিল রশিদ-মঈন আলীরা। ইংলিশ স্পিনারদের স্পিনারদের বিপক্ষে সফল হতে লিটন দাস-নাজমুল হোসেন শান্তদের নিয়ে বাড়তি কাজ করেছেন এই লঙ্কান। সুইপ, রিভার্স সুইপ, কাট, স্কয়ার কাটসহ স্কুপের মতো আন-অর্থডক্স শটসে বাড়তি সময় পার করেছেন বাংলাদেশের ব্যাটাররা।

ওয়ানডেতে ইংল্যান্ডকে সিরিজ জেতানো ম্যাচে সাকিব-তাইজুল ইসলামদের সামলাতে সুইপ আর রিভার্স সুইপ শট খেলার পথ বেছে নিয়েছিলেন জেসন রয়। তাতে সাফল্যও পেয়েছিলেন ইংলিশ এই ওপেনার। খেলেছিলেন ম্যাচ ও সিরিজ জেতানো সেঞ্চুরি। দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টির আগে শিষ্যদের রয়ের পথে হাঁটিয়েছেন হাথুরুসিংহে। শুধু তাই নয়, প্রথম ম্যাচে রশিদের গুগলি বুঝতে না পেরে বোল্ড হওয়া রনি তালুকদারকে এই ভ্যারিয়েশনের বিপক্ষেই বেশি বেশি নেটে ব্যাটিং করিয়েছেন এই লঙ্কান।

একাডেমি মাঠে হাথুরুসিংহে শুরুর দিকে ব্যস্ত ছিলেন লিটনকে নিয়ে। এই ওপেনারকে বেশি সময় দিয়েছেন তিনি। সুইপ-রিভার্স সুইপের ক্ষেত্রে হয়ত বলের লাইন বুঝতে পারছিলেন না এই ক্রিকেটার, তাই শিষ্যকে নিজেই শ্যাডো করে দেখাচ্ছিলেন একাধিকবার। বল কোন লেংথে পড়লে পা কতখানি আগাবে, সামনে পড়লে কতখানি শরীর নিচে দিতে হবে বা কোন বলের ক্ষেত্রে এক পা মাটিতে দিয়ে সুইপ করতে হবে তা হাতে ধরে ধরে দেখাচ্ছিলেন হাথুরুসিংহে।

শুধু যে সুইপ নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন লিটন তা নয়। রিভার্স সুইপ নিয়েও বাড়তি কাজ করেছেন এই ব্যাটার। নেটের মাঝে দাঁড়িয়ে অফ স্টাম্পে পায়ের কাছে বলগুলো রিভার্স সুইপ খেলছিলেন তিনি। আবার শরীরের পজিশন নিয়ে যে কয়েকবার সমস্যা হচ্ছিল লিটনের, সে কবারই হাথুরুসিংহে গিয়ে গিয়ে এই ক্রিকেটারকে শ্যাডো করে দেখিয়েছেন।

লিটন ছাড়াও শান্তকে নিয়ে আলাদা করে সময় পার করেছেন হাথুরুসিংহে। তবে শান্ত সুইপ-রিভার্স সুইপেই নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখেননি। কাট, স্কোয়ার কাট, ড্রাইভ এসব নিয়েও বাড়তি কাজ করেছেন এই ক্রিকেটার। এছাড়া হাফ লেংথে পড়া বল ব্যাকফুটে গিয়ে ডিপ স্কয়ার অঞ্চলে বারবার উড়িয়ে মারার চেষ্টায় ছিলেন তিনি।

এখন প্রশ্ন উঠতে পারে দুই ওপেনারকে নিয়ে হাথুরুসিংহের এই অনুশীলনের রহস্য কী? এর উত্তর হতে পারে মিরপুরের উইকেট! সিরিজ এখানে ফেরায় দ্বিতীয় ম্যাচের উইকেট হতে পারে একটু ধীরগতির, বল কিছুটা থেমেও আসতে পারে যেটা টাইমিংয়ের ক্ষেত্রে সমস্যা হতে পারে। যে কারণে এই মন্ত্রে সফল হতে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে রয়ের ভরসা ছিল সুইপ-রিভার্স সুইপই।

রয়ের সেই পরিকল্পনাই হয়ত দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে কাজে লাগানোর ভাবনায় আছে বাংলাদেশ। তাই রশিদ-মঈনদের বিপক্ষে সফল হতে শিষ্যদের এই মন্ত্র শিখিয়ে দিচ্ছিলেন তিনি। পরিকল্পনার সফল হওয়ার পর সেদিন সংবাদ সম্মেলনে রয় বলেছিলেন, ‘যেমন টার্ন হচ্ছিল, তাতে এটাই পরিকল্পনা ছিল। পয়েন্টের ওপর দিয়ে খেলা আমার জন্য সবচেয়ে নিরাপদ ছিল। কাভারের ওপর দিয়ে কয়েকবার মারতে চেয়েছিলাম, তবে গতি ছিল না।’

‘বাঁকও অনেক বেশি থাকায় সেগুলো সফল হয়নি। সেটি থেকে দ্রুতই সরে এসেছি। সাকিব যখনই আন্ডার-কাটার পাচ্ছিল, আমার হয়ত সাইটস্ক্রিনের ওপর দিয়ে মারা উচিত ছিল, কিন্তু আমি সুইপের চেষ্টা করেছি। সেটা একটু বাজে সিদ্ধান্ত ছিল। বাউন্ডারি মারার ক্ষেত্রে পরিকল্পনা সরল রাখতে হয়, যেখানে সবচেয়ে বেশি রান পাবেন সেখানেই মারবেন। সুইপ ও রিভার্স সুইপই আমার বাউন্ডারির একমাত্র উপায় ছিল আজ’ যোগ করেন রয়।

তাদের ছাড়াও রনিকে নিয়েও আলাদা করে কাজ করেছেন হাথুরুসিংহে। গুগলির বিপক্ষে তার ব্যাট ও প্যাডের মাঝে গত ম্যাচে যে গ্যাপ ছিল তাই দূর করার চেষ্টা করছিলেন তিনি। শুধু তাই নয় নেটে রিশাদ হোসেনকে বার বার হাথুরুসিংহে বলছিলেন রনির বিপক্ষে গুগলি ছাড়তে। এছাড়া এই ব্যাটারের শটস খেলার ক্ষেত্রে ব্যাট ও শরীরের মাঝে দূরত্ব থেকে যায়, হাথুরুসিংহে এই ওপেনারকে সেটা শুধরানোর উপায় দেখাচ্ছিলেন।

এ ছাড়া তৌহিদ হৃদয়-মেহেদি হাসান মিরাজও অনুশীলনে ভিন্নতা আনার চেষ্টায় ছিলেন। পেস বোলিংয়ের বিপক্ষে স্কুপ ও রিভার্স স্কুপের দিকে বিশেষ মনোযোগ ছিল দুজনের। পাশাপাশি মিরপুরের মূল মাঠে ডেথ ওভারের ব্যাটিং অনুশীলনটাও করেন সাকিব আল হাসান, হৃদয়রা। তবে হিটিংয়ের ক্ষেত্রে তাদের পুরো লক্ষ্যই ছিল কাও কর্নার, লং অফ, লং অন ডিপ এক্সট্রা কভার ও মিড উইকেট অঞ্চল।

ক্রিকেটারদের এমন ভিন্নধর্মী অনুশীলন শেষে সংবাদ সম্মেলনে আসা হাসান মাহমুদ জানিয়েছেন, দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টির ক্ষেত্রে ভালো উইকেটই আশা করছে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ম্যাচেই ইংলিশদের হারিয়ে সিরিজ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে মাঠে নামবে বাংলাদেশ। হাসানের ভাষ্যমতে, 'আমি মনে করি মিরপুরে যেহেতু খেলা, ভালো উইকেটই হবে। এখন পর্যন্ত আমরা খুব ভালো খেলেছি। ওদেরকে চট্টগ্রামে হারিয়েছি। চেষ্টা থাকবে এখানেও ওদের হারানোর। প্রথম ম্যাচে যেহেতু হারিয়েছি। মোমেন্টামটা আমাদের দিকে। চেষ্টা থাকবে সেটা ধরে রাখার।'