বাংলাদেশ-ইংল্যান্ড সিরিজ

বাংলাদেশের বিপক্ষে মালান একাই 'একশ', সিরিজে এগিয়ে ইংল্যান্ড

আবিদ মোহাম্মদ

আবিদ মোহাম্মদ
প্রকাশের তারিখ: 13:04 বুধবার, 01 মার্চ, 2023

|| ক্রিকফ্রেঞ্জি করেসপন্ডেন্ট ||

স্পিনারদের চেষ্টায় জেগেছিল সিরিজে এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন। কিন্তু ডেভিড মালানের সেঞ্চুরিতে তা হলো ম্লান। ব্যাটারদের আসা-যাওয়ার মিছিলে এই ইংলিশ ক্রিকেটার হয়ে দাঁড়ান ঢাল। তার একার লড়াইয়ে বাংলাদেশের হাত থেকে ম্যাচ ছিনিয়ে নিয়ে সফরকারীদের ৭ উইকেটের জয় উপহার দেন মালান।  

২১০ রানের লক্ষ্য ডিফেন্ড করতে শুরুতেই সাকিব আল হাসানকে বোলিংয়ে নিয়ে আসেন তামিম ইকবাল। ওভারের প্রথম বলেই তৈরি হয়েছিল হাফ চান্স, এমনকি জেসন রয়কে পরের দুটি বলেও চাপে রাখার চেষ্টা করেন সাকিব। কিন্তু চতুর্থ বলে দারুণ এক কাটে রানের খাতা খোলেন সদ্য পিএসএল থেকে আসা রয়। কিন্তু ওভারের শেষ বলে বাড়তি আক্রমণ করতে গিয়ে ইংল্যান্ডের বিপদ ডেকে আনেন এই ওপেনার।

সাকিবকে সামনে এগিয়ে মারতে গিয়ে ব্যাটের কানায় লেগে বল ওঠে যায় ওপরে। মিড-অফে দাঁড়িয়ে সহজ ক্যাচটি লুফে নেন তামিম। শুরুতেই ধাক্কা খাওয়া ইংল্যান্ডকে বিপদ থেকে উদ্ধারের দায়িত্ব কাঁধে নেন ফিল সল্ট ও ডেভিড মালান। সে লক্ষ্যে আগাতেও থাকলেও সল্টকে বোল্ড করেন তাইজুল। দলীয় ৩৫ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারিয়ে বসা ইংলিশদের আরও বিপদে ফেলেন এই তাইজুলই। এই স্পিনারকে সামনে এগিয়ে মারতে গিয়ে স্টাম্পিং হন জেমস ভিন্স।

এরপর ক্রিজে নেমে জস বাটলারও মালানকে বেশিক্ষণ সঙ্গ দিতে পারেননি। দুজনের ব্যাটে দলীয় রান ৫০ পার হলেও তাসকিন আহমেদর বলে ১৭তম ওভারে স্লিপে শান্তর হাতে ক্যাচ দিয়ে বসেন বাটলার। ১০ বলে ৯ রান করে ইংলিশ অধিনায়ক বিদায় নিলে অভিষিক্ত উইল জ্যাকস ক্রিজে এসে মালানের সঙ্গে জুটি বাঁধেন। স্পিন-পেস দুটিকেই সামাল দিয়ে এই জুটি দলকে নিয়ে যায় ১০০'র ওপর। কিন্তু তখনই বাংলাদেশকে ব্রেক-থ্রু এনে দেন মিরাজ।

৩১ বলে ২৬ রানে থাকাকালীন আফিফের তালুবন্দি হন জ্যাকস। ১০৩ রানে সঙ্গী হারালেও মালান তুলে নেন হাফ সেঞ্চুরি। মঈন আলীকে নিয়ে দলের পক্ষে লড়াই করতে থাকলেও মিরাজের ঘুর্নিতে স্টাম্প ভাঙে মঈনের। ১৪ রানে এই অলরাউন্ডার ফিরে গেলেও ক্রিস ওকসকে নিয়ে দলকে নিয়ে যান দেড়শর ঘরে। দারুণ ব্যাটিংয়ে মালান পৌঁছে যান ৮০'র ঘরে। কিন্তু ৩৯তম ওভারে এসে বাংলাদেশের হাসি ফিরিয়ে আনেন তাইজুল। ওকসকে ৭ রানে ফিরিয়ে দেন এই বাঁহাতি ওপেনার।

তামিমের দারুণ এক ক্যাচে এই অলরাউন্ডার ফেরেন ৭ রানে। কিন্তু মালানকে ফেরাতে তখনও আপ্রাণ চেষ্টা চালাতে থাকেন সাকিব, তাইজুল ও মিরাজ। কিন্তু কোনোকিছুতেই সফল হচ্ছিলেন না তারা। মালানও সুযোগে রান বের করে নিয়ে বল ও রানের ব্যবধান কমিয়ে আনেন। ছক্কা হাঁকিয়ে নব্বইয়ের ঘরে পা দিয়ে হাঁটতে থাকেন সেঞ্চুরির পথে। ৪৫ ওভারে ইংলিশদের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৭ উইকেটে ১৯০। সে সময় জয়ের জন্য প্রয়োজন ৩০ বলে ১৯ রান।

তাসকিনকে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে পরের ওভারেই সেঞ্চুরি তুলে নেন মালান। ১৩৪ বলে ৬ চার ও ৪ ছক্কায় ক্যারিয়ারের চতুর্থ সেঞ্চুরি পূরণ করেন এই ইংলিশম্যান। এরপর বাংলাদেশের পরাজয়টা হয়ে যায় মাত্র সময়ের ব্যাপার। ৪৯ তম ওভারে শান্তকে চার মেরে ইংল্যান্ডের জয় নিশ্চিত করেন মালান। ১৪৫ বলে ১১৪ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি, রশিদ করেন অপরাজিত ১৭ রান। তাউজুল ৫৪ রানে নেন ৩ উইকেট।

এর আগে টস জিতে শুরুতেই ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশের দলপতি তামিম। কিন্তু ব্যাটিংয়ে নেমে একপ্রান্তে তামিম রান তুলতে থাকলেও ইংল্যান্ডের বোলিং অ্যাটাকের বিপক্ষে কঠিন পরীক্ষা দিতে হয় লিটন দাসকে। ১৩ বলে মাত্র এক রান সংগ্রহ করলেও ক্রিস ওকসের বুক বরাবর আসা বাউন্সার পুল শটে ছক্কা হাঁকিয়ে চাপমুক্ত হন লিটন।

কিন্তু স্কয়ার লেগে ৮৫ মিটার ছক্কা হাঁকানোর পরের বলেই এই ব্যাটারকে লেগ বিফরের ফাঁদে ফেলেন ইংলিশ এই পেসার। ওকসের স্ক্র্যাম্বেল্ড সিমে ফেলা ডেলিভারিটি সোজা এলেও লাইন মিস করেন লিটন। পড়েন লেগ বিফরের ফাঁদে। আম্পায়ার আউট দিলে রিভিউ নিয়েও কাজ হয়নি শেষ পর্যন্ত। পঞ্চম ওভারে প্রথম উইকেট হারিয়ে ক্রিজে আসেন নাজমুল হোসেন শান্ত।

গতদিন সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে আক্রমণাত্মক ক্রিকেটের যে সংজ্ঞা দিয়েছিলেন, তা মাঠে প্রয়োগ করতে দেখা যায় ইংলিশদের। হাথুরুসিংহের মতে, আক্রমণাত্মক ক্রিকেট শুধু ব্যাটারদের জন্য বয়, বোলিং-ফিল্ডিংয়েও এর প্রয়োগ থাকতে হবে। ইংল্যান্ডও সেটাই করেছে।

শান্তকে চাপে ফেলতে জোফরা আর্চারের ওভারে ফিল সল্টকে শর্ট লেগে নিয়ে আসেন জস বাটলার। সঙ্গে রাখেন দুটি স্লিপ সহ, গালি ও পয়েন্টে ফিল্ডার। তাতে সফল হতে হতেও হয়নি ইংল্যান্ড। জোফরাকে কাট করতে গিয়ে পয়েন্টে জেসন রয়ের হাতে ক্যাচ তুলে দেন শান্ত। কিন্তু এই ইংলিশম্যানের দুর্দান্ত চেষ্টা হয় ব্যর্থ, হাত থেকে বল পড়ে যায় মাটিতে।

জীবন পান শান্ত। সঙ্গী জীবন পেলেও পাওয়ার প্লে'র শেষ ওভারে আউট হন তামিম। মার্ক উডের ভেতরে আসা গতিময় ডেলিভারিতে ইনসাইজড এজে বোল্ড হন বাংলাদেশ দলপতি। ২০২১ সালের পর ওয়ানডেতে এটিই এই ইংলিশ পেসারের প্রথম উইকেট।

তামিমের বিদায়ে দলীয় ৫১ রানে ক্রিজে আসেন মুশফিকুর রহিম। একটি করে উইকেট নেন উড ও ওকস। ১৩ ওভারে বাংলাদেশের সংগ্রহ তখন ২ উইকেটে ৬৩ রান। ততক্ষণ পর্যন্ত মোট ৫৮টি ডট বল খেলেছিল বাংলাদেশ। শান্ত-মুশফিক মিলে এরপর দলকে নিয়ে যেতে থাকেন ১০০'র পথে। কিন্তু ছোট জুটি গড়েও আদিল রশিদের ওভারে স্টাম্পের সামনে পড়া বল স্লগ সুইপ মারতে গিয়ে মিড উইকেটে ওকসের তালুবন্দি হন মুশফিক।

৩৪ বলে ১৭ রানে তিনি ফিরলে একই ভঙ্গিতে মঈন আলীর বিপক্ষে আউট হন উইকেটে নতুন আসা সাকিব আল হাসানও। মঈনের মিডেল অ্যান্ড লেগে পড়া ডেলিভারিটি লাইনের বিপক্ষে স্লগ করতে গিয়ে বোল্ড হন সাকিব। ৮ রানে বিদায় নেন এই অলরাউন্ডার।

দুই সঙ্গীকে দ্রুত হারালেও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের সঙ্গে জুটি গড়ে দলকে বিপদমুক্ত করার সঙ্গে ৫০ রানের মাইলফলকে পৌঁছান শান্ত। আর্চারের ওভারে সিঙ্গেল নিয়ে তুলে নেন ক্যারিয়ারের প্রথম ওয়ানডে হাফ-সেঞ্চুরি। মাইলফলকে পৌঁছে দলকে দেড়শোর ঘরে নিয়ে গিয়ে রশিদকে উইকেট ছুঁড়ে দেন শান্ত।

৮২ বলে ৫৮ রানে জেসন রয়ের তালুবন্দি হন শান্ত। সঙ্গী হারানোর পর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদও প্যাভিলিয়নে ফিরতে বেশি সময় নেননি। উডকে লেগ সাইডে খেলতে গিয়ে ব্যাটের কানায় লেগে বাটলারের তালুবন্দি হন এই ব্যাটার। ৪৮ বলে ৩১ রানে তিনি ফিরলে দলকে আরও বিপদে ফেলেন আফিফ হোসেন।

উইল জ্যাকসের বলে রশিদের হাতে ক্যাচ দেন আফিফ। মেহেদি হাসান মিরাজ টেনেটুনে দলকে ১৮০' ঘরে নিলেও আর্চারের লাফিয়ে ওঠা বল খোঁচা মারতে গিয়ে বাটলারের হাতে ধরা পড়েন তিনিও। ১৪ রানে মিরাজ ফিরলেও তাসকিন আহমেদ ও তাইজুল ইসলাম মিলে দলকে কোনোমতে ২০০ রানের পুঁজি এনে দেন।

কিন্তু তাসকিনকেও বিদায় নিতে হয় আর্চারের গতি সামাল দিতে না পেরে। লাফিয়ে ওঠা বলকে থার্ড ম্যানে খোঁচা গিয়ে তিনিও বাটলারের তালুবন্দি হন ১৪ রানে। পরের ওভারে মঈনকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ফিরতি ক্যাচে সাজঘরে ফেরেন তাইজুলও। ২০৯ রানে থামে বাংলাদেশের ইনিংস। ২টি করে উইকেট নেন রশিদ, মঈন, আর্চার ও উড।  

সংক্ষিপ্ত স্কোর- 

বাংলাদেশ- ২০৯/১০ (৪৭.২ ওভার) (শান্ত ৫৮, মাহমুদউল্লাহ ৩১, তামিম ২৩; মঈন ২/৩৫, আর্চার ২/৩৭, উড ২/৩৪) 

ইংল্যান্ড- ২১২/৭ (৪৮.৪ ওভার) (মালান ১১৪*, জ্যাকস ২৬, রশিদ ১৭*) (তাইজুল ৩/৫৪, মিরাজ ২/৩৫, তাসকিন ১/২৬)