বাংলাদেশ-ইংল্যান্ড সিরিজ

বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডের কাছে সবকিছুই 'ডাজেন্ট রিয়ালি ম্যাটার'

আবিদ মোহাম্মদ

আবিদ মোহাম্মদ
প্রকাশের তারিখ: 18:48 মঙ্গলবার, 28 ফেব্রুয়ারি, 2023

|| ক্রিকফ্রেঞ্জি করেসপন্ডেণ্ট ||

অ্যাকাডেমি মাঠে সেন্টার উইকেট জস বাটলারের টানা ৪০ মিনিট উইকেটকিপিং অনুশীলন। সামনে একজন ইংলিশম্যানকে শ্যাডোতে রেখে দুই বাংলাদেশি স্পিনারকে নিয়ে চলে এই অনুশীলন। তবে দুই স্পিনারই উইকেট থেকে বাড়তি স্পিন করানোর চেষ্টায় ছিলেন, বিশেষ করে বেশি বেশি লেগ স্পিন করে উইকেট থেকে বল টার্ন করাচ্ছিলেন। শ্যাডোতে থাকা ব্যাটার বারবারই চেষ্টা করেছেন বাটলারকে বোকা বানানোর, তবে প্রতিটি বলই তালুবন্দি করতে সক্ষম হন ইংলিশ এই অধিনায়ক।

অপরদিকে অ্যাকাডেমি মাঠেরই ৩টি নেটে ব্যাটিং অনুশীলন করছিলেন ডেভিড মালান, ক্রিস ওকস ও জেসন রয়। তাদের বিপক্ষে বোলিংয়ে ছিলেন মঈন আলী, উইল জ্যাকস, আদিল রশিদসহ কয়েকজন বাংলাদেশি নেট বোলার। তবে বিশেষ করে বাঁহাতি অর্থডক্স বোলারদের প্রাধান্য ছিল প্রতি নেটেই। 

ইংলিশদের এমন অনুশীলনই জানান দিচ্ছিল, বাংলাদেশের বিপক্ষে স্পিন নিয়ে তারা আলাদা করে ভাবছেন। ভাববেনই না কেন? স্পিনের কাছেই তো ২০১৬ সালে টেস্ট হেরেছিল ইংল্যান্ড। এ ছাড়া ২০২১ সালে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডকে স্লো-লো ও টার্নিং উইকেট নিয়ে ঘায়েল করেছিল বাংলাদেশ। তাই ঘরের মাঠে স্পিন দিয়ে সাকিব-তাইজুলরা কি করতে সক্ষম জানা প্রতিটি ইংলিশ ক্রিকেটারেরই।

ম্যাচের আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে এসে মঈন জানালেন, স্পিনের বিপক্ষে তাদের ভাবনা। উপমহাদেশে খেলতে আসলে যে স্পিনের বিপক্ষে বড় পরীক্ষা দিতে হয় তা দলের সবারই জানা। তাই সাকিবদের বিপক্ষে সফল হতেই নেটে বাঁহাতি স্পিনার ও ডানহাতি অফ স্পিনারদের বিপক্ষে অনুশীলন করেছে জস বাটলার-উইল জ্যাকসরা।

মঈন বলেন, 'আপনি যখন উপমহাদেশে খেলতে আসবেন, এমনটা ভেবেই আসতে হবে যে ভালো স্পিন বোলিংয়ের বিপক্ষে পরীক্ষা দিতে হবে। বাংলাদেশ দল হিসেবে খুব ভালো, বিগত কয়েক বছরে দল হিসেবে তারা অনেক উন্নতি করেছে।'

'শুধু স্পিনাররাই না তাদের পেসাররাও মানসম্মত। আমরা আমাদের সেরা প্রস্তুতি নিয়েই খেলতে নামব। নেটে বাঁহাতি স্পিনার ও ডানহাতি অফ স্পিনারদের বিপক্ষে অনুশীলন করেছি, আমরা তাদের শক্তি সম্পর্কে অবগত। সেভাবেই প্রস্ততি নিয়েছি' যোগ করেন তিনি।

স্পিন নিয়ে ভাবলেও ইংল্যান্ড দলে বিশ্বমানের পেসাররাও আছেন। মিরপুরে যেমন উইকেট আশা করছেন তিনি, তাতে স্পিনের মত পেসাররাও দারুণ কার্যকারী হবেন বলে আশাবাদী মঈন। ম্যাচের আগের দিন তাই তো মূল মাঠে এক স্টাম্প উইকেটে গেঁথে স্পট বোলিংসহ বিভিন্ন লেন্থে বোলিং করেছেন স্যাম কারান, জোফরা আর্চার, ক্রিস ওকস ও রিস টপলি।

সংবাদ সম্মেলনে এসে মঈন আরও ইঙ্গিত দিয়েছেন, একাদশে ৪ পেসার নিয়েও সাজাতে পারে ইংল্যান্ড। মঈনের ভাষ্যমতে, 'আমাদের দলে ৩জন স্পিনার আছে। তবে বাংলাদেশ বলে যে শুধু ৩জন স্পিনার এনেছি তা নয়। পেসারদের ক্ষেত্রে আমরা তাদের সবখানে নিয়ে যাই, কারণ তারা গতিময় বোলিং করে। যে কোন উইকেটে ফাস্ট বোলিং দলের জন্য বিলাসিতা। অনেক সময় এমন উইকেটে ফাস্ট বোলিং খেলতেও অসুবিধা হয় প্রতিপক্ষের। কারণ ওরা শুধু ফাস্ট বোলার না, খুব ভালো মানের ফাস্ট বোলার। এটাই বড় পার্থক্য গড়ে দেয়।' 

২০১৫ ওয়ানডে বিশ্বকাপের পর বদলে গিয়েছে ইংল্যান্ডের ক্রিকেট খেলার ধরণ। তিন ফরম্যাটেই আক্রমণাত্মক ব্যাটিং দিয়ে প্রতিপক্ষকে ব্যাকফুটে ঠেলে দেয়ার ক্ষমতা সম্পন্ন ব্যাটার আছে দলে। ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপ জয়ের পর দল এখন আরও আত্মবিশ্বাসী, তবে বাংলাদেশে যে চ্যালেঞ্জটা একটু ভিন্ন তা স্পষ্ট জানিয়েও দিয়েছেন মঈন। 

তাই পরিস্থিতি বুঝে পরিকল্পনা সাজিয়ে বাংলাদেশে সফল হওয়ার চেষ্টা করবে ইংল্যান্ড। মঈন বলেন, 'হ্যাঁ অবশ্যই, পুরো বিশ্বজুড়েই আমরা এমনটা করে আসছি। তবে এখানে চ্যালেঞ্জটা একটু ভিন্ন, হতে পারে ভিন্ন পরিকলনা সাজিয়ে মাঠে নামব। কিন্তু মানসিকতা একই থাকবে, কেউ বাজে বল দিলে যে কোন উইকেটে অবশ্যই সেটা সবাই কাজে লাগাবে। আমাদের এই মানের খেলোয়াড় আছে।'

সর্বশেষ সফরে টেস্ট সিরিজ ১-১ ব্যবধানে ড্র করলেও ওয়ানডে সিরিজ ২-১ ব্যবধানে জিতেছিল ইংল্যান্ড। তবে সাম্প্রতিক ফর্ম একটু খারাপ যাচ্ছে তাদের। শেষ ১০ ওয়ানডের ৮টিতেই হেরেছে ইংলিশরা। তবে বাংলাদেশের বিপক্ষে মাঠে নামার আগে নিজেদের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন আখ্যায়িত করে মঈন জানিয়েছেন, এসব কোন বিষয়ই না তাদের জন্য।

ইংল্যান্ডের এই অলরাউন্ডার বলেন, 'ডাজেন্ট রিয়ালি ম্যাটার (বিষয়টা এতো গুরুত্বপূর্ণ না) কে ফেভারিট। নিজেদের কন্ডিশনে বাংলাদেশ বরাবরি ভালো, আমরা শেষ ১০ ম্যাচে ৮টা হেরেছি কিন্তু আমরা বিশ্বচ্যাম্পিয়ন। লম্বা সময়ে আমরা আমাদের সেরা দলটা পায়নি। কিন্তু এখন উড আছে, জোফরা আছে। উইল জ্যাকসও দলে জয়েন করেছে। কিন্তু দিন শেষে কে ফেভারিট ডাজেন্ট রিয়ালি ম্যাটার (বিষয়টা এতো গুরুত্বপূর্ণ না)।'