বাংলাদেশ-ভারত সিরিজ

বৃথা গেল রোহিতের ভাঙা আঙুলের লড়াই, সিরিজ বাংলাদেশের

ক্রিকফ্রেঞ্জি ডেস্ক

ক্রিকফ্রেঞ্জি ডেস্ক
প্রকাশের তারিখ: 11:35 বুধবার, 07 ডিসেম্বর, 2022

|| ডেস্ক রিপোর্ট ||

বাউন্ডারি লাইনে আফিফ হোসেন শ্রেয়াস আইয়ারের ক্যাচ নিতেই সবার দৌড়। উইকেটে থিতু হওয়া এই ব্যাটারের বিদায়েই যেন স্বস্তি ফেরে বাংলাদেশ শিবিরে। এরপর বাকিরা আসা-যাওয়ার মাঝে থাকলেও রোহিত শর্মার 'ওয়াইল্ড কার্ড' এন্ট্রিতে জমে ওঠে ম্যাচ।

শেষের দিকে তার ২৭ বলে ৫৩ রানের ঝড়ো ইনিংস ম্যাচে রোমাঞ্চ জাগালেও স্নায়ু চাপে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে বাংলাদেশ। ৫ রানের জয়ে ২০১৫ সালের পর ফের ভারতকে ঘরের মাঠে সিরিজ হারাল বাংলাদেশ। ৩৫ রানের জয়ে এখন ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল লিটন দাসের দল। 

২৭২ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নামা ভারত এদিন ওপেনিংয়ে পায়নি রোহিত শর্মাকে। স্লিপে এনামুলের হক বিজয়ের ক্যাচ ধরতে গিয়ে বাঁহাতের বুড়ো আঙুলে চোট পেয়ে মাঠ ছেড়েছিলেন ভারতীয় দলপতি। ফলে শিখর ধাওয়ানের সঙ্গে ওপেনিংয়ে নামেন বিরাট কোহলি। তবে প্রথম ম্যাচের মতো এদিনও ব্যর্থ হন তিনি।

এবাদত হোসেনের অফ স্টাম্পের বাইরের শর্ট বল খেলতে গিয়ে ইনসাইড এজ হয়ে বোল্ড হয়েছেন কোহলি। সময়ের অন্যতম সেরা এই ব্যাটার আউট হয়েছেন ব্যাক্তিগত ৫ রানে। কোহলি আউট হওয়ার পরের ওভারে সাজঘরে ফিরেছেন ধাওয়ানও। মুস্তাফিজুর রহমানের বুক বরাবর বাউন্সারে মেহেদি হাসান মিরাজকে ক্যাচ দিয়েছেন ৮ রান করা বাঁহাতি এই ওপেনার।

এরপর জুটি গড়ার চেষ্টা করেন শ্রেয়াস আইয়ার এবং ওয়াশিংটন সুন্দর। তবে সেটা বড় করতে দেননি সাকিব আল হাসান। পাওয়ার প্লের শেষ এবং নিজের প্রথম ওভারে বোলিংয়ে এসেই ওয়াশিংটনকে ফিরিয়েছেন বাঁহাতি এই স্পিনার। সাকিবের অফ স্টাম্পের বাইরের বল মিড উইকেটে খেলতে গিয়ে লিটন দাসের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন ১৯ বলে ১১ রান করা ওয়াশিংটন।

তার বিদায়ে ক্রিজে নেমে আইয়ারের সঙ্গে জুটি বাঁধতে শুরু করেন লোকেশ রাহুল। দলের সংগ্রহ পঞ্চাশের উপরে নিয়ে গেলেও দলীয় ৬৫ রানে মেহেদি হাসান মিরাজের সোজা বল লাইনের বিপক্ষে খেলতে গিয়ে লেগ বিফোর উইকেটের ফাঁদে পড়েন এই ব্যাটার। ২৮ বলে ১৪ করে ফেরেন তিনি।

৪ ব্যাটারকে হারিয়ে ধুঁকতে থাকা ভারতকে সেখান থেকে টেনে নিতে থাকেন শ্রেয়াস ও অক্ষর প্যাটেল। তাদের ব্যাটে দলীয় ১০০ পার করে ভারত। এর সঙ্গে দেখে শুনে রানের চাকা সচল রাখে এই জুটি। তাদের ব্যাটেই দলীয় দেড়শোর ঘরেও পৌঁছে যায় টিম ইন্ডিয়া। 

নিজেদের মধ্যে শতরানের জুটিও গড়ে তোলেন তারা। এরই মাঝে মিরাজকে ৩৫তম ওভারে সামনে এগিয়ে ছক্কা হাঁকান আইয়ার। এর এক বল পর আবারও ছক্কা হাঁকানোর লোভে মিরাজের ফাঁদে পড়ে বাউন্ডারি লাইনে আফিফের তালুবন্দি হন আইয়ার। ১০২ বলে ৮২ রান করে সাজঘরে ফেরেন এই ভারতীয়।

তার বিদায়ে ক্রিজে এসেছেন শার্দুল ঠাকুর। তবে যাকে সঙ্গ দিতে এসেছিলেন সেই অক্ষরই দ্রুত রান তুলতে গিয়ে এবাদতের ওভারে ৫৬ রানে সাকিব আল হাসানের তালুবন্দি হন দলীয় ১৮৯ রানে। এরপর শার্দুল ও দিপক চাহার মিলে দলকে ২০০'র ওপর নিলেও ২১৩ রানের মাঝেই বিদায় নেন দুজন।

কিন্তু সপ্তম উইকেট পতনের পর ক্রিজে এসে এবাদতের ওভারে দুই ছক্কা ও এক চার হাঁকিয়ে ব্যবধান কমিয়ে আনেন রোহিত। কিন্তু পরের দুই ওভারে মাহমুদউল্লাহ ও মুস্তাফিজ নিয়ন্ত্রিত বোলিং করে ভারতকে উল্টো চাপে ফেলে দেন। ৪৯ তম ওভারের প্রথম বলে ছক্কা হাঁকিয়ে মাহমুদউল্লাহ'র ওপর চাপ তৈরির চেষ্টা করলেও এবাদতের ক্যাচ মিসে জীবন পান এই ভারতের অধিনায়ক।

এরপরের বলে ছক্কা হাঁকিয়ে ৯ বলে ২৩ রানের সমীকরণ নিয়ে আসেন রোহিত। চতুর্থ বলে ২ রান নিলে পঞ্চম বলে আবারও বাউন্ডারি লাইনে জীবন পান রোহিত। তবে সেখান থেকে আসে এক রান। শেষ বলে সিরাজকে বোল্ড করে সমীকরণ এক ওভারে ২০ রানে নিয়ে আসেন এই অলরাউন্ডার।

তবে শেষ ওভারের প্রথম বলে ডট বল দিয়ে রোহিতকে চাপে ফেলে দেন মুস্তাফিজ। কিন্তু দ্বিতীয় বলে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ৪ বলে ১৬ রানের সমীকরণে নিয়ে আসেন তিনি। তৃতীয় বলে স্কোয়ার কাটে আরও এক বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ম্যাচ আরও জমিয়ে তোলেন রোহিত।

পঞ্চম বলে ছক্কা হাঁকিয়ে মুস্তাফিজকে উল্টো চাপে ফেলেন রোহিত। ২৭ বলে হাফ সেঞ্চুরি পূরণ করেন তিনি। শেষ বলে দারুন মুস্তাফিজের দারুন এক ইয়র্কারে কোন রান নিতে না পারায় ৫ রানে জয় পায় বাংলাদেশ। ২-০ ব্যবধানে সিরিজ নিশ্চিত করে লাল-সবুজের দলটি।

এর আগে টসে জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে প্রথম ওভারে সাবধানী শুরু, পরের ওভারে টানা দুটি চার। এনামুল হক বিজয় আশা দেখাচ্ছিলেন ভালো কিছুরই। কিন্তু সেই ওভারেই মোহাম্মদ সিরাজের গতি সামাল দিতে না পেরে লেগ বিফরের ফাঁদে পড়ে প্যাভিলিয়নে ফিরেছেন এই ওপেনার।

৯ বলে ১১ রান করা এই ব্যাটার আউট হওয়ার আগের বলেই স্লিপে রোহিত শর্মার হাতে জীবনও পেয়েছিলেন। কিন্তু পরের বলেই তাকে ফিরতে হয় প্যাভিলিয়নে। সঙ্গী হারালেও নাজমুল হোসেন শান্তকে সঙ্গে নিয়ে লড়াই চালাতে থাকেন লিটন। 

তিনে নামা নাজমুল হোসেন শান্ত রানের চাকা সচল রাখলেও লিটন ধীরগতিতে ব্যাট করতে থাকেন। তবে ৪ রান রেটে রান তুলে গেলেও ইনিংসের দশম ওভারে এসে বিপদে আরেকটি উইকেট হারায় বাংলাদেশ।

এবারও উইকেট শিকারি সিরাজ। ফুল লেন্থে ফেলা সিরাজের ভেতরে আসা বল বুঝতে না পারায় স্টাম্প ভেঙে যায় লিটনের। ২৩ বলে ৭ রান করে সাজঘরে ফেরেন বাংলাদেশের অধিনায়ক। এরপর শান্তকে সঙ্গ দিতে ক্রিজে আসেন সাকিব আল হাসান।

তবে সাকিবকে বেশিক্ষণ সঙ্গ দেয়া হয়নি শান্তর। দলীয় ৫০ পূরণের পরই উমরান মালিকের গতিময় বলে উড়ে যায় শান্তর স্টাম্প। ৩৫ বলে ২১ রান করে বিদায় নেন তিনি। দলীয় ৬৬ রানে বিদায় নেন সাকিব আল হাসানও। ওয়াশিংটন সুন্দরের বল স্লগ সুইপ করতে গিয়ে একটু দ্রুত খেলে ফেলেন সাকিব। যার কারণে ক্যাচ উঠে যায় উপরে। স্লিপে দাঁড়ানো শিখর ধাওয়ান ক্যাচটি লুফে নেন। যদিও স্বাচ্ছন্দ্যের সঙ্গে ক্যাচটি নিতে পারেননি ধাওয়ান।

মুশফিক বিদায় নেয়ার পরের বলে ক্রিজে নেমেই আউট হন আফিফ হোসেন। ০ রানে তাকে বিদায় করেন সুন্দর। তবে ৬৯ রানে ৬ উইকেট হারানো বাংলাদেশের ত্রাতা হয়ে দাঁড়ান মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও মেহেদি হাসান মিরাজ। তাদের ব্যাটে দলীয় ১০০ পার করে বাংলাদেশ।

শুধু একশোই না, এই জুটি মিলে ভারতের বোলারদের দাপটের সুঙ্গে খেলে দলকে নিয়ে যান ভালো অবস্থানে। তাদের ব্যাটে দলীয় দেড়শোর ঘরেও পৌঁছে যায় বাংলাদেশ। সেই সঙ্গে টানা দুই ম্যাচে দলের বিপদে পাশে দাঁড়িয়ে এই ম্যাচে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন মেহেদি হাসান মিরাজ।

হাফ সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে মিরাজ ছুটে চলেন নিজ গতিতে। তার সঙ্গী মাহমুদউল্লাহও তুলে নেন ৭৪ বলে হাফ সেঞ্চুরি। মাইলফলকে পৌঁছে দ্রুত গতিতে রান তুলতে থাকেন এই অভিজ্ঞ ক্রিকেটার। মাঠের চারদিকেই রান নেয়ার চেষ্টায় ছিলেন তিনি। তবে উমরান মালিকের বাউন্সারে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে বসেন মাহমুদউল্লাহ।

৭৬ বলে ৭৫ রান করে মাহমুদউল্লাহ বিদায় নিলেও নাসুম আহমেদকে নিয়ে দলকে আড়াইশোর ঘরে নিয়ে যান মিরাজ। মাঠের চারদিকে রান তোলার সঙ্গে নিয়মিত বাউন্ডারি হাঁকাতে থাকেন। শেষ ওভারে দলীয় রান গিয়ে দাঁড়ায় ২৫৫, মিরাজ অপরাজিত ৮৫। সেঞ্চুরির সুযোগ থাকলেও পরিস্থিতি কঠিন ছিল তার জন্য।

ইনিংসের দ্বিতীয় বলে ছক্কা হাঁকিয়ে নব্বইয়ের ঘরে পা রাখেন মিরাজ। ৪ বলে সেঞ্চুরি পূরণ করতে তার প্রয়োজন ছিল ৯ রানের। তৃতীয় বল মিস করলেও চতুর্থ বলে আবারও ছক্কা হাঁকিয়ে ৯৭ রানে পৌঁছে যান তিনি। ২ বলে সেঞ্চুরি পূরণ করতে ৩ রান।

পঞ্চম বলে ২ রান নিয়ে ৯৯ রানে পৌঁছে যান এই অলরাউন্ডার। শেষ বলে সিঙ্গেল নিয়ে দলকে ২৭১ রানের পুঁজি এনে দেয়ার সঙ্গে ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি পূরণ করেন মিরাজ। ৮৩ বলে ৮ চার ও ৪ ছক্কায় তিনি অপরাজিত থাকেন ১০০ রানে। শেষ ৪ ওভারে বাংলাদেশ দলের স্কোরবোর্ডে যোগ হয় ৬৮ রান। এই জুটিতে ২৩ বলে ৫৫ রান যোগ করেন নাসুম-মিরাজ। নাসুম অপরাজিত থাকেন ১৮ রানে।

সংক্ষিপ্ত স্কোরঃ

বাংলাদেশ: ২৭১/৭ (৫০ ওভার) (মিরাজ ১০০*, মাহমুদউল্লাহ ৭৬, শান্ত ২১, নাসুম ১৮*; ওয়াশিংটন ৩/৩৭, উমরান ২/৫৮)

ভারত- ২৬৬/৯ (৫০ ওভার) (কোহলি ৫, ধাওয়ান ৮, শ্রেয়াস ৮২, সুন্দর ১১, রাহুল ১৪, অক্ষর ৫৬, রোহিত ৫৩*)