বাংলাদেশ-ভারত সিরিজ

মিরাজ-মুস্তাফিজের বীরত্বে বাংলাদেশের অবিশ্বাস্য জয়

ক্রিকফ্রেঞ্জি ডেস্ক

ক্রিকফ্রেঞ্জি ডেস্ক
প্রকাশের তারিখ: 11:33 রবিবার, 04 ডিসেম্বর, 2022

|| ক্রিকফ্রেঞ্জি করেসপন্ডেন্ট ||

প্রতিপক্ষ বিবেচনায় লক্ষ্য বেশি বড় ছিল না। তারপরও ভারত বলেই প্রয়োজন ছিল সাবধানী সূচনার। কিন্তু ওপেনিংয়ে নাজমুল হোসেন শান্ত'র ব্যর্থতার পরও লিটন-সাকিবের জুটি সিরিজে এগিয়ে যাওয়ার আশা দেখাচ্ছিল বাংলাদেশকে। কিন্তু মিডল অর্ডারের ধীরগতির ব্যাটিং ও অভিজ্ঞদের দ্রুত উইকেট ছুঁড়ে দেয়ার মিছিলে যেন খেই হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ। তরুণ আফিফ হোসেনের বিদায়ে পরাজয় হয়ে দাঁড়ায় সময়ের ব্যাপার। কিন্তু কে জানত এই সময় ত্রাতা হয়ে দাঁড়াবেন মেহেদি হাসান মিরাজ। মুস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে জুটি গড়ে অসধারণ এক ইনিংসে বাংলাদেশকে এক উইকেটের জয় উপহার দেন তিনি। ইতিহাসের পাতায় নাম লেখানোর দিন এই ব্যাটার শেষ উইকেটে যোগ করেন ৩৮ রান। ফিজের সঙ্গে ৫১ রানের জুটি গড়ে বাংলাদেশকে ১-০ লিড এনে দেন মিরাজ। 

সহজ লক্ষ্য তাড়ায় বাংলাদেশকে ভালো শুরু এনে দিতে পারেননি দুই ওপেনার নাজমুল হোসেন শান্ত এবং লিটন দাস। ইনিংসের প্রথম বলেই দীপক চাহারকে উইকেট দিয়ে এসেছেন শান্ত। ডানহাতি এই পেসারের অফ স্টাম্পের বাইরের বল খেলতে গিয়ে স্লিপে দাঁড়িয়ে থাকা রোহিত শর্মার হাতে ক্যাচ দেন তিনি। তাতে শূন্য রানেই ফিরে যেতে হয় শান্তকে।

শান্তকে ফিরিয়ে খানিকটা মোমেন্টাম পায় ভারত। দারুণ লাইন লেংথ বজায় রেখে বাংলাদেশের ব্যাটারদের চাপে রাখেন চাহার-মোহাম্মদ সিরাজরা। এদিকে নবম ওভারে চাহারের বল ব্যাটকে ফাঁকি দিয়ে এনামুল হক বিজয়ের প্যাডে আঘাত হানে। জোরালো আবেদনে সাড়া দিয়ে বিজয়কে আউট দেন আম্পায়ার। তবে ততক্ষণাৎ রিভিউ নেন ডানহাতি এই ব্যাটার। 

রিপ্লেতে দেখা যায় চাহারের বলটি লেগ স্টাম্প মিস করেছে। ফলে রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান বিজয়। তবে ইনিংস বড় করতে পারেননি তিনি। সিরাজের বলে ফ্লিক করার চেষ্টা করেছিলেন বিজয়। শর্ট মিড উইকেটে দাঁড়িয়ে ক্যাচ লুফে নেন ওয়াশিংটন সুন্দর। ফলে ২৯ বলে ১৪ রান করে ফিরে যেতে হয় তাকে। এরপর অবশ্য জুটি গড়ে তোলেন লিটন ও সাকিব আল হাসান। 

যদিও শুরু থেকেই ব্যাট হাতে ধুঁকছিলেন লিটন। তবে হাত খুলতে খেলা শুরু করতেই সাজঘরে ফিরতে হয় বাংলাদেশের অধিনায়ককে। ওয়াশিংটনের বলে লেগ সাইডে খেলতে গিয়ে উইকেটকিপার লোকেশ রাহুলের গ্লাভসে ক্যাচ দিয়ে আউট হন লিটন। হাফ সেঞ্চুরি করতে না পারার আক্ষেপ নিয়ে লিটনকে ফিরতে হয় ৪১ রানে। লিটনের বিদায়ে ভাঙে সাকিবের সঙ্গে ৪৮ রানের জুটি। 

লিটনের পর আউট হয়েছেন সাকিবও। ওয়াশিংটনের বলে এক্সট্রা কভারের উপর দিয়ে খেলতে চেয়েছিলেন বাঁহাতি এই ব্যাটার। শটও খেলেছিলেন তবে বিরাট কোহলি দুর্দান্তভাবে ক্যাচ লুফে নিলে ফিরতে হয় সাকিবকে। বল হাতে ৫ উইকেট নেয়া সাকিব ব্যাট হাতে করেছেন ২৯ রান।

অভিজ্ঞ সাকিবের বিদায়ের পর ক্রিজে নেমে মুশফিককে সঙ্গ দেন মাহমুদউল্লাহ। দুই সিনিয়রের ব্যাটে দেখে শুনে ধীরগতিতে এগোতে থাকে বাংলাদেশ। নিজেদের মাঝে ৩৩ রানের জুটি গড়লেও বল খরচ করেন ৬৯টি। তবে দলীয় ১২৮ রানে বাস্তবতা টের পাচ্ছে বাংলাদেশ।

একই রানে পর পর দুই সিনিয়রকে হারিয়ে ব্যাকফুটে চলে গিয়েছে বাংলাদেশ। লেগ বিফোরের ফাঁদে মাহমুদউল্লাহ ফেরেন ৩৫ বলে ১৪ রানে, ইনসাইড এজে মুশফিক বোল্ড হন ৪৫ বলে ১৮ রানে। এই মুহূর্তে আফিফ হোসেনের সঙ্গে ক্রিজে আছেন মেহেদি হাসান মিরাজ। ৬ ব্যাটারের বিদায়ের চাপ নিতে পারেননি আফিফও।

ডিপ থার্ড ম্যানে কুলদিপ সেনের বল মারতে গিয়ে সিরাজের তালুবন্দি হন তিনি। এর একরান পর হিট আউটে স্টাম্প ভাঙেন এবাদত। ফেরেন ০ রানে। ততক্ষণে বাংলাদেশের পরাজয় মাত্র সময়ের ব্যাপার। সাকিব আউট হওয়ার পর মাঝের ১০৩ বলে কোন বাউন্ডারি আসেনি বাংলাদেশের ইনিংসে। নিচের দিকে মিরাজ ও মুস্তাফিজ ২ ছক্কা হাঁকিয়ে শুধু পরাজয়ের ব্যবধান কমিয়ে আনেন।

এরপর শুরু হয় মিরাজের 'ম্যাজিক'। চাহার, শার্দুল ঠাকুরদের বিপক্ষে সাহসী ব্যাটিং করে স্কুপ, পুল, ফ্লিক সব মিলিয়ে স্কোরবোর্ডে রান যোগ করতে থাকেন তিনি। মুস্তাফিজও তাকে দারুণ সঙ্গ দেন। প্রয়োজনে অনেক বলে সিঙ্গেলের সুযোগ পেয়েও নেননি তারা। 

শেষের দিকে দুজন মিলে পরাজয়ের ব্যবধান কমিয়ে আনেন ১০ রানে। সে সময়েও ম্যাচের মোড় কোন দিকে যাচ্ছে বলার উপায় ছিল না। কিন্তু শেষ উইকেটে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জুটি গড়ে ২৪ বল বাকি থাকতে বাংলাদেশকে এক উইকেটের জয় এনে দেন মিরাজ। ৩৯ বলে ৩৮ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি। ১১ বলে ১০ রান করেন মুস্তাফিজ। ৩২ রান দিয়ে ৩ উইকেট নেন মোহাম্মদ সিরাজ।

এর আগে টস ভাগ্য পক্ষে না গেলেও রোহিত শর্মা ও শিখর ধাওয়ান মিলে শুরুটা দেখে শুনেই করেন। শুরুর দিকে পেসারদের দিয়ে শুরু করলেও ৫ ওভারের আগেই মেহেদি হাসান মিরাজকে নিয়ে বোলিংয়ে নিয়ে আসেন লিটন। স্পিনের বিপক্ষে আক্রমণাত্মক খেলতে গিয়ে ফাঁদে পড়েন ধাওয়ান।

মিরাজকে রিভার্স সুইপ খেলতে গিয়ে বোল্ড হন এই ওপেনার। ১৭ বলে ৭ রান করে এই ওপেনার ফিরলে রোহিতকে সঙ্গ দিতে ক্রিজে আসেন বিরাট কোহলি। তাদের ব্যাটেই প্রথম পাওয়ার প্লে শেষ করে ভারত। এরপর বোলিংয়ে এসে দারুন এক ডেলিভারিতে রোহিতকে বোল্ড করেন সাকিব। ব্যাট ও প্যাডের মাঝে গ্যাপ দিয়ে বোল্ড হন ভারতীয় অধিনায়ক।

৩১ বলে ২৭ রান করে রোহিত ফেরার দুই বল পরেই সাকিবের ফ্লাইটেড ডেলিভারিতে অসাধারণ এক ক্যাচে বিরাটকে প্যাভিলিয়নের পথ দেখতে হয়। এক্সট্রা কভার অঞ্চলে উড়ন্ত এক ক্যাচ নিয়ে ৯ রানে কোহলিকে সাজঘরে ফেরান লিটন।

৪৯ রানে তিন উইকেট পড়ার পর হাল ধরেন লোকেশ রাহুল এবং শ্রেয়াস আইয়ার। দলের রান আস্তে আস্তে বাড়াতে থাকেন দুজন। কিন্তু এই দুজনের জুটি বেশিক্ষণ স্থায়ী হতে দেননি এবাদত হোসেন। ২০তম ওভারের শেষ বলে ৩৯ বলে ২৪ রান করা আইয়ারকে ফেরান তিনি। তাতে রাহুল-আইয়ারের ৪৩ রানের জুটি ভাঙে।

এবাদতের বলে লেগ সাইডে পুল করতে গিয়ে বল উপরে তুলে দেন আইয়ার। উইকেটের পেছন থেকে ক্যাচ লুফে নেন মুশফিকুর রহিম। ৯২ রানে ৪ উইকেট গেলেও ওয়াশিংটন সুন্দর ও লোকেশ রাহুল মিলে দলের হাল ধরেন। দুজন মিলে দলকে ১০০'র ওপর নিয়ে যাওয়ার সঙ্গে জুটি গড়েন ৬০ রানের।

তবে দলীয় ১৫২ রানে ওয়াশিংটনকে বিদায় করে দলকে ব্রেক থ্রু এনে দেন সাকিব। ১৫২ থেকে ১৫৬ রানের মাঝে আরও ৩ ব্যাটারকে হারিয়ে বসে ভারত। এবাদত একটি নিলেও বাকি দুটি উইকেট ছিল সাকিবের। ৫ উইকেট নিয়ে ক্যারিয়ারের চতুর্থবারের মত পঞ্চম উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করেন তিনি।

এরপর অবশ্য ভারতের রান বাড়ানোর চেষ্টা করেন রাহুল। তবে সেটা করতে দেননি এবাদত। ডানহাতি এই পেসারের শর্ট অব লেংথ ডেলিভারিতে এজ হয়ে ফাইন লেগে থাকা এনামুল হক বিজয়ের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন রাহুল। ডানহাতি এই ব্যাটার আউট হয়েছেন ৭৩ রানে। 

মোহাম্মদ সিরাজ এবং কুলদীপ সেনকে জুটি বড় করতে দেননি এবাদত। ডানহাতি এই পেসারের শর্ট ডেলিভারিতে খেলতে গিয়ে ডিপ কভারে থাকা মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন সিরাজ। তাতে ১৮৬ রানে অল আউট হয় ভারত। যা বাংলাদেশের বিপক্ষে ভারতীয় দ্বিতীয় সর্বনিম্ন দলীয় সংগ্রহ।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

ভারত: ১৮৬/১০ (৪১.২ ওভার) (রাহুল ৭৩) (সাকিব ৫/৩৬, এবাদত ৪/৪৭)

বাংলাদেশ: ১৮৭/৯ (৪৬ ওভার)  (মিরাজ ৩৮* লিটন ৪১) (সিরাজ ৩/৩৭)